হযরত আলী (আ.)-এর বাণী- নাহজুল বালাগা থেকে
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৬, ২০১৪

হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘দুনিয়াতে দু’ধরনের কার্য স¤পাদনকারী মানুষ রয়েছে : এক শ্রেণির মানুষ দুনিয়া হাসিল করার জন্য দুনিয়াতে কাজ করে। তাদেরকে দুনিয়ার ভাবনা আখিরাতের বিষয়ে গাফেল করে ফেলেছে। এরা পরবর্তী সন্তান-সন্ততির দরিদ্র হওয়ার ব্যাপারে শঙ্কাগ্রস্ত। নিজের ক্ষতি সাধন করে এরা পরবর্তীগণকে নিরাপদ করে। ফলে এরা অন্যের স্বার্থে নিজের জীবন নিঃশেষ করে দেয়। আর অন্য এক প্রকার কার্য সম্পাদনকারী দুনিয়াতে থেকে পরকালের জন্য কাজ করে। এদের নিকট কর্ম প্রেরণা ছাড়াই দুনিয়ার যেটুকু এদের জন্য নির্ধারিত তা পৌঁছে যায়। ফলে এরা এক সঙ্গে দুটি হিস্যা পেয়ে যায়। আর ইহ ও পরকালের মালিক হয়ে যায়। এরা আল্লাহ তাআলার নিকট সম্মান পায়। এরা আল্লাহর নিকট যে কোন প্রয়োজনের জন্য কিছু চাইলে তিনি তা অবশ্যই পূরণ করে দেন।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬১
এরূপ বর্ণিত আছে যে, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাবের আমলে কাবা গৃহে সঞ্চিত মালামাল (অলংকারাদি) অধিক হয়েছে বলে তাঁর নিকট আলোচনা করা হয়। কিছুসংখ্যক লোক হযরত উমরকে বলে : ‘এ মালামাল নিয়ে যদি আপনি মুসলমানদের সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন তাহলে অধিক পুণ্যের কাজ হবে। অলংকার দিয়ে কাবা ঘর কি করবে?’ তখন হযরত উমর তা-ই করতে ইচ্ছা করেন। আর এ ব্যাপারে হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে তিনি জিজ্ঞাসা করেন। আমীরুল মুমিনীন তাঁকে বলেন : ‘নবী করিম (সা.)-এর প্রতি কুরআন নাযিল হওয়ার কালে চার প্রকার মাল ছিল : (১) মুসলমানদের ব্যক্তিগত মাল; তা তিনি ওয়ারিসগণের মাঝে ফারায়েযের (উত্তরাধিকার) আইন মোতাবেক বণ্টন করেছেন। (২) যুদ্ধলব্ধ মালামাল। এ মাল তিনি প্রাপকগণের মধ্যে বিতরণ করেছেন। (৩) যুদ্ধলব্ধ মালামালের পঞ্চমাংশ। আল্লাহ এ মাল যে খাতের জন্য রেখেছেন তিনি সে খাতেই তা ব্যয় করেছেন। (৪) সাদাকাত। আল্লাহ সাদাকাতকে যে খাতে রাখার ইচ্ছা করেছেন সে খাতেই রেখেছেন। তখনও কাবাগৃহে অলংকার মজুদ ছিল। আল্লাহ তাআলা এ সম্পদ যথা অবস্থায় রেখেছেন। তিনি ভুল করে এরূপ করেননি। আর আল্লাহর জন্য কোন স্থানই অজানা থাকে না। তাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল যে অবস্থায় এই মাল রেখেছেন আপনিও তা-ই করুন।’ তখন হযরত উমর বললেন : ‘আপনার উপস্থিতি না হলে আমরা লজ্জা পেয়ে যেতাম।’ অতঃপর তিনি এই মালামাল পূর্বাবস্থায় রেখে দেন।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬২
হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘যুদ্ধের এ পিচ্ছিল অবস্থানে আমার পদযুগল টিকে গেলে বহু (বিকৃত) বিষয় আমি পরিবর্তন করে ফেলব।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ২৬৬
হযরত আলী (আ.) আত্মপ্রীতির অনিষ্ট সম্পর্কে বলেছেন : ‘নিজেকে উত্তম বলে ধারণা করলে অগ্রগতি ব্যাহত হয়।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৫৮
দুনিয়া এবং দুনিয়াবাসীদের মায়ামমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে না যাওয়ার জন্য হযরত আলী (আ.) বলেছেন : ‘পরলোক গমনের নির্দেশ অতীব নিকটে। আর বন্ধু-বান্ধবের সাহচর্য হচ্ছে ক্ষণিকের ব্যাপার।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৫৯
হযরত আলী (আ.) আরও বলেছেন : ‘চক্ষুষ্মান ব্যক্তির জন্য ঊষা আলোকময়।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৬০
(অর্থাৎ একজন চক্ষুষ্মান জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট সত্যিকারের দীন এবং সঠিক পথ দিবালোকের মতো উজ্জ্বল এবং সে কখনো অন্ধের মতো সে ব্যাপারে সন্দিগ্ধ ও কপটাচারী হবে না)
হযরত আলী (আ.) আরো বলেছেন : ‘লোকেরা যে বিষয়ে জানে না অর্থাৎ অবগত নয়, তার প্রতি বৈরীভাব পোষণ করে থাকে।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৬৩
(অর্থাৎ সাধারণত কোন জিনিস যদি লোকদের হস্তগত না হয় তাহলে তারা তা অস্বীকার করে থাকে)।
হযরত আলী (আ.) আরো বলেছেন : ‘সত্যের (হক) পরিচয় লাভের পর সে বিষয়ে আমার সন্দেহ সৃষ্টি হয়নি।’- নাহজুল বালাগা, উক্তি নং ১৭৫
(অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়সমূহ ও শাখা-প্রশাখার ক্ষেত্রে জ্ঞান লাভের পর সে বিষয়ে আমার আর কোন সংশয় সৃষ্টি হয়নি।)
(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)