শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সম্পাদকীয়

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৮, ২০১৬ 

ইসলামী বিপ্লবের গৌরবময় অভিযাত্রার ছত্রিশ বছর
১১ই ফেব্রুয়ারি ইরানের মহান ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের ছত্রিশতম বার্ষিকী। এখন থেকে ছত্রিশ বছর আগে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের এ দিনে মহান দ্বীনী নেতা ওয়ালীয়ে কামেল হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ইরানের ইসলামপ্রিয় জনগণ আড়াই হাজার বছরের স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার পদলেহী তৎকালীন শাহের ইসলামবিরোধী ও গণদুশমন সরকারকে উৎখাত করে মহান ইসলামী বিপ্লবকে বিজয়ী করেন। এ বিজয়ের অব্যবহিত পরেই ইরানী জনগণ প্রায় সর্বসম্মত রায়ে ইরানের বুকে একটি পূতপবিত্র আদর্শ দ্বীনী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
মানুষের ইহ ও পরকালীন জীবনের সর্বোত্তম কল্যাণ ও সাফল্য নিশ্চিতকারী দ্বীন ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ এ বিপ্লবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অভিযাত্রায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানী জনগণের দ্বীনী ও চারিত্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি পার্থিব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং আট বছরব্যাপী চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও বলদর্পী শক্তিবর্গের চাপিয়ে দেয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশকে স্বনির্ভরতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেÑ যা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের কারণ হয়েছে।
বিগত পঁয়ত্রিশ বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহ সার্বিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি ও অগ্রগতি হাসিল করেছে, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সাক্ষরতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, মোবাইল, বিজ্ঞানগবেষণা, বিশেষত আইটি, পরমাণু বিজ্ঞান, ন্যানো-টেকনোলজি, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে এবং এগুলোর মধ্য থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উন্নতির গতি বা হারের দিক থেকে বিশ্বের বুকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শীর্ষস্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ইসলামী ইরান অবিশ্বাস্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। ইসলামী নৈতিক মান রক্ষা করে ইরানে নির্মিত বহু চলচ্চিত্র সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং এমনকি পাশ্চাত্য জগতেও বহু পুরস্কার লাভ করেছে।
তবে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সবচেয়ে বড় সাফল্য সারা দুনিয়ার মানুষকে ইসলামের সঠিক রূপের সাথে অধিকতর পরিচিত করানো এবং ইসলামী উম্মাহ্কে ঐক্যের পথে আরো বেশি অগ্রসর হতে উদ্বুদ্ধকরণ। সারা দুনিয়ার ইসলামপ্রিয় মানুষ আজ ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করছেন এবং বর্তমান যুগেও যে ইসলামী আদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা করে জাতির আদর্শিক ও পার্থিব উন্নতি নিশ্চিত করা সম্ভব তার দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁরা ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন। শুধু তা-ই নয়, ইরানের ইসলামী বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হয়ে ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সার্বিক সহায়তায় ফিলিস্তিন ও লেবাননের মুসলিম জনগণ হামাস ও হিযবুল্লাহ্র নেতৃত্বে অবৈধ যায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের বিরুদ্ধে কঠিন ও সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলে এক নতুন ইতিহাস গড়ে তুলেছেন- যার ফলে ইসলামের প্রথম ক্বিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস সহ সমগ্র পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে সমগ্র মানব জাতির ইহ-পরকালীন মুক্তির জন্য নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। কিন্তু মানবতার দুশমনরা সব সময়ই এ মুক্তির আদর্শ থেকে বিশ্ববাসীকে দূরে সরিয়ে রাখার লক্ষ্যে সর্বাত্মকভাবে অপচেষ্টা তথা ইসলামের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর অপ্রপচার চালিয়ে আসছে এবং সাম্প্রতিককালে সেই সাথে নতুন ষড়যন্ত্র যুক্ত হয়েছে; তারা পরিকল্পিতভাবে অজ্ঞ মুসলমানদের মধ্যে উগ্র ধর্মান্ধতা বপন করে তাদের মধ্য থেকে ইসলামের নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী তৈরি করেছে যারা শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে অন্য মুসলমানদেরকে হত্যা করছে এবং একে বাহানা হিসেবে ব্যবহার করে ইসলামের দুশমনরা ইসলামকে একটি সন্ত্রাসবাদী ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ববাসীর মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টির ও তাদেরকে মহান দ্বীন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিস্ময়কর সাফল্য এবং প্রকৃত ইসলামের প্রচারকদের অক্লান্ত প্রচারতৎপরতার কারণে অমুসলিমদের মধ্যে, বিশেষ করে পাশ্চাত্য জগতে ইসলাম গ্রহণের হার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধারাক্রমে সম্প্রতি ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী এক খোলা চিঠিতে ইসলাম সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়ে এ দ্বীন সম্পর্কে সরাসরি এর মূল সূত্র থেকে জানার জন্য পাশ্চাত্যের যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং এ আহ্বানে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। আশা করা যায়, ইসলামী ইরানের প্রচেষ্টার ফলে বিশ্ববাসী অচিরেই প্রকৃত ইসলামের সাথে অধিকতর পরিচিত হতে সক্ষম হবে এবং তা বিশ্বপরিস্থিতির গতিপ্রকৃতিকে এক আলোকোজ্জ্বল নতুন পথের দিকে ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হবে।
ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ছত্রিশতম বার্ষিকীতে আমরা দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ইরানী জনগণ, বিশ্বের মুক্তিকামী মুস্তায্‘আফ্ জনগণ, ইসলামী বিপ্লবের সমর্থকগণ, ইসলামী ইরানের শুভানুধ্যায়িগণ ও নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণের প্রতিম আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং এ বিপ্লবের স্থায়িত্ব, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বিক উন্নয়ন তৎপরতায় অধিকতর গতি সঞ্চার ও বিশ্ববাসীকে ইসলামের সঠিক রূপের সাথে পরিচিত হবার তাওফীক প্রদানের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করছি।