সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১, ২০১৬
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ওফাত বার্ষিকী
৩ জুন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ২৭তম ওফাত বার্ষিকী। ২৭ বছর আগে ১৯৮৯ সালের এ দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাই এ দিনটি ইরানি জাতির জীবনে গভীর শোকাবহ দিনসমূহের অন্যতম। ইরানি জাতির জন্য তিনি যে অবদান রেখে গেছেন সে কারণে তারা তাঁকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করে, তবে স্বভাবতঃই এ দিনটিতে ইরানি জনগণ, বিদেশস্থ ইরানি মিশনসমূহ, প্রবাসী ইরানিগণ এবং বহির্বিশ্বে ইসলামি বিপ্লবের সমর্থকগণ তাঁকে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সহকারে বিশেষভাবে স্মরণ করেন।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) তাঁর অনন্য অবদানের দ্বারা শুধু ইরানি জনগণকেই নয়; বরং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে ও বিশ্বের সকল অধিকারবঞ্চিত জনগণকে চিরদিনের জন্য কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে রেখে গিয়েছেন।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে ইরানি জনগণ যে বিপ্লবকে বিজয়ী করে তোলেন তা ইরানি জাতিকে একই সাথে যেমন জাহেলিয়াতের নাগপাশ থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ইসলামি পরিবেশে জীবন যাপন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়, একই সাথে তাদেরকে আড়াই হাজার বছরের স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের গোলামি ও বিজাতীয় বলদর্পী শক্তির তাঁবেদারি থেকে মুক্তি দেয়। এভাবে ইরানি জনগণ তার হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো আক্ষরিক অর্থেই প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার অধিকারী হয় এবং হযরত ইমামের (রহ্.)-এর পথনির্দেশ অনুযায়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ফলতঃ ইরান আধিপত্যবাদী বলদর্পী শক্তির রক্তচক্ষু ও কঠিন চাপকে উপেক্ষা করে বিপ্লব বিজয়ের পর থেকে বলয়মুক্ত প্রকৃত স্বাধীন পথে চলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়Ñ যা বিশ্বের মুসলিম ও অধিকারবঞ্চিত জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) একদিকে যেমন ছিলেন খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের পতাকাবাহী মুজতাহিদ, দ্বীনী ও আধ্যাত্মিক নেতা, অন্যদিকে ছিলেন অনন্যসাধারণ সমাজবিপ্লবী। ফলে শুরু থেকেই কেবল ইরানেরই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের রাজনীতি ও তার গতিধারা প্রতিনিয়ত তাঁর নখদর্পণে ছিল। এ কারণে দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে বিশ্বের পর্যবেক্ষক মহলকে বিস্মিত করেছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, আগামী দিনের বিশ্ব হবে ইসলামের বিশ্ব এবং এর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান, আর তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি মুসলমানদেরকে ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানান এবং ইসলামের দুশমন শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। তিনি ইসলামের দুশমনদের ক্রীড়নক সালমান রুশ্দীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করেন যাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ কণ্ঠ মিলায়, ফলে রুশ্দীকে কেন্দ্র করে দুশমনদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র পুরোপুরি নস্যাৎ হয়ে যায়। এছাড়া হযরত ইমাম কর্তৃক ঘোষিত ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ ও ‘কুদ্স্ দিবস’ উম্মাহ্র ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি শিয়া-সুন্নি বিভক্তি সৃষ্টি যে ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্র তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। ফলে ইসলামের দুশমনদের বহু বিলিয়ন ডলারের এ ষড়যন্ত্র তাদেরকে তাদের আশানুরূপ ফল দিতে সক্ষম হয় নি।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ফিলিস্তিন সমস্যাকে মুসলিম উম্মাহ্র এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এর একমাত্র সমাধান নির্দেশ করেন অবৈধ যায়নবাদী ইসরাইলকে উৎখাত করে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড জুড়ে অখণ্ড ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। প্রথমে অনেকেই এটাকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও ইসরাইলকে এক অপরাজেয় শক্তি মনে করলেও হযরত ইমামের (রহ্.) প্রেরণায় গড়ে ওঠা হিযবুল্লাহ্ ও হামাস ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে, হযরত ইমামের এ স্বপ্ন বাস্তবসস্মত।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ শক্তির বদৌলতে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করেছে। তিনি বলেছিলেন যে, এরপর থেকে কমিউনিজমকে ইতিহাসের জাদুঘরে খুঁজতে হবে; বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। তিনি সাদ্দাম ও হুসনী মোবারকসহ মুসলিম জাহানের একনায়কতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন; এর মধ্যে বেশ কয়েকটির পতন ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে এবং সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় যেগুলো টিকে আছে সেগুলোর অবস্থাও বর্তমানে খুবই নড়বড়ে এবং অদূর ভবিষ্যতে সেগুলোরও পতন অবশ্যম্ভাবী।
আমরা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর সমুন্নত মর্যাদার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি।