শহীদের এক সন্তানের আর্তি
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৫
মুহাম্মাদ ফরিদ উদ্দীন খান
মাগো কিচ্ছা বলো
মাগো ঘুম আসে না কেন?
রাত কাটে না আর?
মাগো কিচ্ছা বলো-
বালিশে আর মুখ রেখো না গুঁজে-
তুমিও যে জেগে আছো
কাঁপছো ক্ষণে ক্ষণে!
দিয়ো না আর ফাঁকি মোরে
আছো বলে ঘুমে,
বালিশ তোমার ভেজা কেনো
এত গরম রাতে?
বলো বলো কিচ্ছা বলো
রাত পোহাবার তরে-
কেমন করে বর্গী এলো নৌবহরে চড়ে
কেমন করে দেও-দানব মানবরূপ ধরে
কেমন করে ইয়াঙ্কীরা রক্ত পান করে
কেমন করে ফিরিঙ্গীরা সোনা চুরি করে
কেমন করে মানবপুরী ঘুমে ঢলে পড়ে
মাগো কিচ্ছা বলো-
ঘুম আসে না যে
চারদিকেতে কোলাহল কুরআন শুধু বাজে,
রাত পোহাবে করে মা ঘুম আসে না যে।
রেডিওটা এত রাতে অন্ কেন আজ,
শুধু শুধু কুরআন কেনো বারে বারে বাজে।
ওমা ও জননী!
কাঁপছো কেন এত?
ঘুমের মাঝে দেখছো নাকি খোয়াব
কি হলো মা! মুখ রেখ না গুঁজে-
বুঝছি মাগো, বুঝছি চাতুরী-
বুঝাতে চাও আছো ঘুমের পুরী।
আজ রাতে কি বাবা এসেছিল
রক্তজবা মালাখানি ছিলো কি তার গলে-
ওমা আজ এমন কেন হলে?
সত্যি কি আজ ঘুমের ঘোরে?
বাবা তোমায় ডাকছে কাছে যেতে?
বাবার হাতে এখনও কি লাল নিশান উড়ে?
সেই আজদাহা এখনো কি আসছে হা করে
বাবার হাতের বর্শা কি বিঁধছে ওর বুকে
মা আমার!
ওগো মা তাকাও মোর দিকে-
আমার যে বড্ড ভয় লাগে
দেও-দানব যে আজদাহার পিঠে পড়ে হাকে
যাদুর বান ছুঁড়ে ওরা মারছে মানুষেরে-
বাগদাদী ওই আজদাহাটা গোগ্রাসে গিলে-
ওমা সইতে আমি পারি না যে আর-
পিলে আমার আঁতকে আঁতকে ওঠে-
ঘুম পাড়ানী কিচ্ছা ফের বলো নতুন করে
কেমন করে নূরানী পীর আসমান বেয়ে আসে
কেমন করে মানবপুরে ঈসায়ী দম মারে
গভীর ঘুমের মানুষগুলো একে একে জাগে
বলো বলো নূরানী পীর পরশ কেমন বুলায়-
মুর্দা মানুষ কেমন করে খাড়া হয়ে ওঠে
ছুটে কেমন ভীম বেগে দানব দলের পিছু
কেমন করে দেশ থেকে তাড়ায় লাখো ভূত
ওমা কাঁদছো কেন জোরে
নড়ছে কেনো দেহ তোমার থেকে থেকে আজ
তুমিও কি পাচ্ছ এখন ভয়-
আজদাহা আর দেও-দানব আসছে নাকি ধেয়ে-
ভয় করো না মা, ডাকো বাবাকে
বাবারা সব ছুটবে দেখো তেড়ে-
ডাকো তোমার নূরানী পীর-
বলো তারে গিয়ে-
মারুক জোরে মুছার লাঠি-
দেও-দানব আর আজদাহাদের পরে
মুছার লাঠি গিলবে ওদের ধরে
তখন দেখো ভয় বিপদ কেমন কাটে জোরে
ওমা কাঁদছো কেন এমন?
নূরানী পীর নেই কি মানবপুরে?
নাকি রাতে আসমানে গায়েব হয়ে গেছে-
সে কি আজ বাবাদের দলে মিশে গেছে-
ওই যে দূরের সেতারায় বিলীন হয়ে গেছে,
না না মা ওকথা এনো না আর মুখে-
এই দেখো মা কানে দিলাম তুলা
এমন কিচ্ছা শুনবো নাকো মোরা
নূরানী পীর চলে গেলে বাঁচবো কেমন করে-
বাবাকে যে ভুলে আছি কিচ্ছা তারই শুনে
বাবার আদর পাই যে তারই কোলে,
এই মা এসো আমার কাছে,
কেঁদো না আর মোটে,
বাবার হাতের বর্শাটা দাও আমার হাতে তুলে
পীরের দেয়া তসবিহ তাবীজ বেঁধে দাও গলে,
ছুটবো দেখো কেমন তেড়ে
দিগবিদিক জুড়ে
ভয় করো না মা, সাজবো মহাবীর-
বাবার খুন গাযে আমার-
দেখ কেমন লড়ি
নূরানী পীর আয়াত গেছেন ফুঁকি
সব শাহেদের* কানে
উম্মতের অন্তরে
খোদার নিশান এ আকাশে উড়বে চিরন্তন
নতুন নতুন কিচ্ছা তখন বলবো তোমার কানে।
*শাহেদ- শহীদদের সন্তানদের শাহেদ নামে অভিহিত করা হয়।