শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

রাবিতে ড. কালিম সাহসারামির স্মরণে আলোচনা সভা

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২২, ২০১৯ 

news-image

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজী ভবনে গত ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ড. কালিম সাহসারামির স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ওসমান গণির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. ফজলুল হক। ‘ফারসি এবং উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে ড. কালিম শাহসারামির অবদান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম খান।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রফেসর ড. ফজলুল হক বলেন, এমন একজন মানুষকে নিয়ে আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন যিনি আমাদের সবার প্রিয় মানুষ ছিলেন। একজন ভালো মানুষের যত গুণ রয়েছে প্রায় সবকটি গুণই তাঁর মধ্যে ছিল। ড. কালিম জ্ঞানচর্চা নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। যেকোনো আলোচনা অনুষ্ঠান বা সভা-সমাবেশে কবিতার দু’চারটি চরণ দিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করতেন। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে সবার কাছে পরিচিত হয়েছেন। ড. কালিম সাহসারামির কর্মের ধারাবাহিকতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ আজ সবার কাছেই প্রশংসিত। বিভাগের শিক্ষকরা সবাই পর¯পরের বন্ধু। এই বিভাগের উন্নয়নে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত বলেন, ড. কালিম সাহসারামি ফারসি সাহিত্যের একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। আমি ড. কালিম সাহসারামির মতো একজন ফারসি-প্রেমিকের স্মরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তবে আমার প্রশ্ন কেন আমরা কারো স্মরণে অনুষ্ঠান তার মৃত্যুর পর করি, তার জীবদ্দশায় কেন করি না?
এখানে যারা ফারসি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা সবাই এক একজন কালিম সাহসারামি। তাঁরা তাঁদের জীবদ্দশায় অনেক কিছু করছেন, অথচ আমরা তাঁদের জন্য কিছুই করছি না। আর সেই দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখেই আমরা ইরানের বিখ্যাত কবি পারভিন এহতেসামিকে স্মরণ করার একইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. কুলসুম আবুল বাসার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক শামীম বানুর কর্মের প্রতি সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি এবং ফারসি সাহিত্যে আরো যারা অবদান রেখে চলেছেন ভবিষ্যতে তাঁদের নিয়েও এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। 

ড. শামীম খান তাঁর প্রবন্ধে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক যুগে এমন কতক লোককে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেন যাঁদের নাম ও কীর্তি আলেম, জ্ঞানী মহল, কবি, সাহিত্যিক ও মনীষীদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকে। ড. কালীম সাহসারামি এ ধরনের একজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তি ছিলেন। সম্ভবত তাঁর মতো লোকদের সম্বন্ধেই একজন উর্দুভাষী কবি বলেছেন,
কে বলেছে, মৃত্যু আসার সাথে সাথে আমি মরে যাব
আমি তো সেই নদী, সাগর মহাসাগরের সাথে মিশে যাব।
ড. কালীম সাহসারামি এমন এক শিক্ষাবিদ, যিনি বাংলাদেশে ফারসি ও উর্দু ভাষা ও সাহিত্য বিস্তারের পেছনে ৩৪ বছরের দীর্ঘ জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের  গণ্ডিতে  নন; বরং পাক-ভারত উপমহাদেশেও একজন গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি ফারসি ও উর্দু সাহিত্যের বিষয়ে নিজস্ব মত ও চিন্তার অধিকারী গবেষক এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর মূল্যবান রচনাবলি জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তির প্রতি আগ্রহীদের জন্য দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে। 

অনুষ্ঠানে আঞ্জুমানে ফারসি বাংলাদেশের সভাপতি ড. ঈসা শাহেদী বলেন, ড. কালিম সাহসারামি একজন বড় মাপের সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমি যখন ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মরত ছিলাম তখন তিনি প্রায়ই সেখানে যেতেন। তাঁর ‘খেদমত গোজারানে ফারসি দার বাংলাদেশ’ বইটি রচনার ক্ষেত্রে আমি তাঁর সাথে থাকতে পেরেছিলাম এবং এজন্য আজও নিজেকে ধন্য মনে করি। বইটিতে আমার দুটি কবিতা আছে। একটি কবিতা হলো ড. কাযেম কাহদূয়ীকে নিয়ে। তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন ফারসির উজাড় বাগান ছিল। উনি আসার সাথে সাথে বাগানে ফুল ফুটল। বুলবুলিরা আসল। গান করল। এমন বিষয় নিয়ে আমি দীর্ঘ কবিতা লিখেছি।

অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করছেন আঞ্জুমানে ফারসি বাংলাদেশের সভাপতি ড. ঈসা শাহেদী

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাযেম কাহদূয়ী বলেন, ড. কালিম সাহসারামি দীর্ঘ সময় ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের জন্য খেদমত করেছেন। এই ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি তাঁর যে কত গভীর ভালোবাসা ছিল তা আমি কাছে থেকে দেখেছি। তিনি একজন বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তিনি যখন রাস্তা দিয়ে যেতেন তখন দেখে মনে হতো যেন একটা জ্ঞানের সাগর বয়ে যাচ্ছে। তিনি সবসময় গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর ‘খেদমত গোজারানে ফারসি দার বাংলাদেশ’ বইটি সম্পাদনা করার সুযোগ আমার হয়েছে।

ড. শামীম বানু বলেন, এমন একজন ব্যক্তির স্মরণে আঞ্জুমানে ফারসি বাংলাদেশ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে যাঁর সুনাম, সুখ্যাতি কেবল বাংলাদেশে নয়, দেশের বাইরেও ছড়িয়ে আছে। তিনি আমাদের সবার প্রিয় ড. কালিম সাহসারামি। তবে যে ভাষা ও সাহিত্য তাঁর গবেষণাকর্মকে উচ্চ স্থানে নিয়ে গেছে তা হলো মিষ্টি ভাষা ফারসি। ফারসি ভাষায় তাঁর অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে আঞ্জুমানে ফারসি বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে এই ধরনের অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এই মিষ্টি ভাষার সুবাতাস সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। আশা করছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ভাষা ইন্সটিটিউটসহ সবার সহযোগিতায় আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হব।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, প্রফেসর ড. আব্দুস সবুর খান, বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল কালাম সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. হামেদানি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল হুদা প্রমুখ।