ভাষার গল্প
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৩১, ২০১৮
বিএম বরকতউল্লাহ্ :
‘তোমাদের ভাষা আমরা ঠিক বুঝি না। এখন থেকে আমাদের ভাষায় কথা বলতে হবে তোমাদের’, বললো রাজাপাখিটি।
‘না, না, না। তা হবে না রাজা মশাই! আপনি রাজা বলে আমরা আপনার অনেক কথাই মেনে চলেছি। কিন্তু এ কথা তো আমরা মেনে নিতে পারব না। আমরা কথা বলব আমাদের ভাষায়। আমাদের মায়ের ভাষায়।’ বললো বনের ছোট ছোট প্রজাপাখিরা।
‘রাজার ভাষাই হবে প্রজার ভাষা। তোমাদের তাই মেনে নিতে হবে রাজা যা বলেন। রাজার কথায় রাজ্য চলে; ভাষা চলবে না কেনো?’ রাজা আরো শক্তভাবে বলে দিলো, ‘আমরা যা বলব তা-ই হবে আর সেটা যতো তেতোই হোক। রাজার কথা না শুনলে প্রজাদের কপালে কত রকমের দুঃখ আর দুর্গতি নেমে আসতে পারে সেটা কি তোমরা আন্দাজ করতে পারছ?’
‘খুব পারছি। তবে যত দুঃখ আর কষ্টই আসুক না কেনো, আমরা আমাদের মুখের ভাষা ছাড়ব না। এটা আমাদের মায়ের ভাষা। আমরা কথা বলব আমাদের ভাষায়। আমরা লিখব আমাদের ভাষায় আর পড়ব আমাদের ভাষায়। আমাদের ভাষা যদি কেউ বুঝতে না পারে তবে সেটা তার সমস্যাÑ আমাদের না।’ খুব তেজ দেখিয়ে রাজাকে শুনিয়ে দিলো রাজ্যের প্রজাপাখিরা।
গর্জে উঠলো রাজা। ‘এত বড় দুঃসাহস! মুখে মুখে কথা! মুখ থাকলে তো মুখের ভাষা থাকবে!’ এ কথা বলেই রাজা তার সৈন্যদের লেলিয়ে দিলো নিরীহ প্রজাদের ওপর।
শুরু হলো লড়াই।
নিষ্ঠুর রাজার সৈন্যরা প্রতিবাদকারী কয়েকজন প্রজাকে ঠুকরে ঠুকরে আর খামচিয়ে মেরে ফেললো। দমল না প্রজারা। তারা আরো শক্তিশালী হয়ে উঠলো। সবাই এক হয়ে গেলো। তাদের কিচির-মিচির শব্দ আরো তীব্র হলো, কেঁপে উঠলো বন। মনে হলো বনের মাটি, গাছপালারাও প্রতিবাদ করছে।
প্রজাদের পক্ষে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে কালো রঙ্গের লম্বা লেজওয়ালা দুঃসাহসী ফিঙ্গে। তার ভাষণে, নেতৃত্বে, লড়াইয়ে সারা বন উথাল-পাথাল। বনের সব প্রজা এক হয়ে গেলো। ভাষার দাবিতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল আন্দোলনে। চলছে তুমুল আন্দোলন।
‘প্রজারা অকাতরে জীবন দিয়ে দিচ্ছে, তবু ভাষার দাবি ছাড়ে না। কি আশ্চর্য ব্যাপার!’ একা একা বললো রাজা।
ভাষার দাবিতে আন্দোলন দিনে দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠলো। ভাষার দাবি এতো ভয়ানক হতে পারে তা ভাবতেই পারে নি রাজা! কোনো কিছুতেই দমাতে পারছে না প্রজাদের! তারা জীবন দেবে, কিন্তু ভাষা দেবে না!
কেঁপে উঠল রাজা। রাজা বাধ্য হয়ে মেনে নিলো প্রজাদের দাবি।
প্রজাদের ভাষা কেড়ে নিতে পারলো না রাজা। সে ভাষা রক্তে রাঙানো মায়ের ভাষা!