বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইরানের সাফল্য
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ৬, ২০১৬
সাইদুল ইসলাম
যে-কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। শিল্প, কলকারখানা, কৃষিকাজ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, আধুনিক জীবনযাত্রা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে শুরু করে উন্নয়নের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই প্রয়োজন বিদ্যুৎ। একথায় বলতে গেলে বিদ্যুৎ সভ্যতা ও আধুনিকতার প্রধান নিয়ামক। দারিদ্র্য বিমোচন করে একটি দেশকে শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যুতের গুণগত মান ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। বাস্তবতার নিরিখে এ সকল উপলব্ধি থেকে বিদ্যুৎ খাতের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও পরিচালনা দক্ষতা বৃদ্ধি ও উন্নত গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এরই মধ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে।
দেশটি বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ খাতে কেবল পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে তাই নয় একই সাথে দেশটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
বর্তমানে ইরানের উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৭৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালে দেশটিতে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৯ হাজার মেগাওয়াট সেখানে ২০১৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে ৭৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে।
অর্থাৎ দুই বছরে দেশটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৬ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। এর মধ্য দিয়ে ইরান বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে এক নম্বর স্থানে রয়েছে। আর সারা বিশ্বে দেশটির অবস্থান ১৪ নম্বরে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ খাতে ইরানের সফলতা চোখে পড়ার মতো। ২০১৩ সালে যেখানে দেশটিতে বিদ্যুৎ বিতরণজনিত সিস্টেম লসের হার ছিল শতকরা ১৫ দশমিক ৫ ভাগ, ২০১৫ সালে তা হ্রাস পেয়ে শতকরা ১১ ভাগে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ থেকে সুবিধা লাভের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দেশে এনার্জি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট সাশ্রয় হয়েছে।
এই সময়ের মধ্যে দেশের ১৫টি প্রদেশে প্রতিটি ৪০০ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছে- যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৭ হাজার ৮৪০ মেগাভোল্ট এমপিআর।
দেশের ১৯টি প্রদেশে প্রতিটি ২৩০ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৯টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছে- যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৭ হাজার ৮ মেগাভোল্ট এমপিআর।
দেশের ১৩টি প্রদেশে প্রতিটি ১৩২ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৭টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছে- যেগুলোর মোট ক্ষমতা ২ হাজার ৫৪৩ মেগাভোল্ট এমপিআর।
দেশের ২৪টি প্রদেশে প্রতিটি ৬৩ থেকে ৬৬ কিলোভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫টি বিদ্যুৎ টাওয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে ও ব্যবহার করা হচ্ছে- যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৫ হাজার ৬০৪ মেগাভোল্ট এমপিআর।
আর দেশে প্রতিটি ৫৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৯টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে।
গত ২২ আগস্ট ইরানের বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, শিগগিরই ইরানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হচ্ছে। আরো ১২টি নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে এ সক্ষমতায় পৌঁছতে যাচ্ছে দেশটি।
এধরনের ৫টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এ বছর যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে ২০২১ সাল নাগাদ ইরানে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ১ লাখ মেগাওয়াট।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশটিতে আরো নতুন তিনটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। এর পাশাপাশি ২২টি সৌর ও বায়ুচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প একই সময়ে চালু হয়েছে।
গত জুলাই মাসে ইরানের রিনিউবল এনার্জি অর্গানাইজেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাদেকজাদেহ ঘোষণা করেন, আগামী মার্চ নাগাদ চলতি ফারসি বছর শেষে ইরানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ১শ’ মেগাওয়াট।
ইরানের বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ কোম্পানি বা টিএভিএনএসআইআর’র পরিচালক হুমায়ুন হায়েরি বলেছেন, ইরানে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করেছে ইসলামি সরকার। একই সঙ্গে তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার দিক থেকে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম ইরান। অবশ্য ইরানের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের দক্ষতা আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
গত বছরের অক্টোবরে ইরানি কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস ব্যবহার করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে ভূ-তাপ, সৌর ও বায়ু শক্তিসহ নানা নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি রয়েছে ইরানের। পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে পর্যায়ক্রমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটি।
১৯৯৫ সালে ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি স¤পদের সম্ভাবনা যাচাই, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প (সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপ, হাইড্রোজেন এবং বায়োমাস) বাস্তবায়নের নিমিত্তে ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থা গঠিত হয়।
ইরানের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস ব্যাপক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। যথা: পানি শক্তি, সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপ, বায়োগ্যাস এবং হাইড্রোজেন।
ইরানের গবেষণা ও মানব সম্পদ বিষয়ক উপ জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মোহাজেরি বলেছেন, কেবল দেশের ভেতর নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পুরো সক্ষমতা আছে ইরানের। ইরান বিদ্যুৎ-শিল্প সংক্রান্ত প্রযুক্তি অর্জন করেছে ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আঞ্চলিক দেশগুলোতে এ প্রযুক্তি সরবরাহে প্রস্তুত রয়েছে তেহরান।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত দুটি গবেষণা সংস্থা ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা করছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে বিরাজমান সমস্যা নিরসনে এসব গবেষণা চলছে।
এর আগে ইরান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানি ঘোষণা করেছে ইরানের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যুৎ রফতানির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইরান।
বর্তমানে ইরান যেসব দেশে বিদ্যুৎ রফতানি করছে তার মধ্যে রয়েছে, ইরাক, তুরস্ক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও আযারবাইজান সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ইরান থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানীর জন্য সাগরের নিচ দিয়ে ঐঠউঈ ক্যাবল টানা হয়েছে।
টিএভিএএনআইআর সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ছয়শ’ কোটি ইউরো ব্যয়ে নতুন কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু করেছে ইরান। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার মেগাওয়াট হবে। অন্যদিকে ইরান আগামী ২০ বছরে ২০ হাজার মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও করেছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী বুশহরে ইরানের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। এ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ইরানের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।
ইরানের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো দামাভান্দ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৮৬৮ মেগাওয়াট। ইরানি ১৩৮৪ সালে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরন কম্বাইন্ড সাইকেল। ইরানে জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে একটি ১০০ মেগাওয়াটের ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একই পরিমাণ জ্বালানি দিয়ে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আনয়ন করা হয়।
এছাড়া ইরানের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে শহীদ সালিমি নেকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইরানের মাজান্দারান প্রদেশে কাস্পিয়ান সাগর উপকূলের নেকা শহরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অবস্থিত। ২২১৩.৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটি ইরানি ১৩৫৮ সালের ২ মেহের প্রতিষ্ঠিত হয়।এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরনও কম্বাইন্ড সাইকেল। ইরানি ১৩৮৬ সালের খোরদাদ মাসে ইরানের মারকাজি প্রদেশের জারান্দিয়ে শহরে এই কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রোদশোর নামে গ্যাসচালিত এই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২১৬২ মেগাওয়াট।
ইরানি ১৩৭১ সালের অবন মাসে কাজবিনে প্রতিষ্ঠিত হয় তাপ ও কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শহীদ রেজায়ী নামের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৪২ মেগাওয়াট।
ইরানি ১৩৮০ সালের তির মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় কেরমান কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১৯১২ মেগাওয়াট। ১৩৮৮ সালে নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইরানের সেরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে।
ইরানি ১৩৫৮ সালে আহওয়াজ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় রমিন আহওয়াজ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৯০৩ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইরানের অন্যতম বৃহৎ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইরানের খুজিস্তান অঞ্চলে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪২ শতাংশই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে।
ইরানি ১৩৬৩ সালে ইসফাহান শহরের উত্তরাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ মোন্তাজেরি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইরানের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং এর উৎপাদন ক্ষমতা ১৬১৬ মেগাওয়াট।
ইরানি ১৩৮৭ সালের ২৮ ইসফান্দ খুররাম শহরের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয় খুররাম শহর কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৫২ মেগাওয়াট।
ইরানি ১৩৮৫ সালের ফারভারদিন মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় শিরভান কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। উত্তর খোরাসান প্রদেশে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১৪৩৪ মেগাওয়াট।
ইরানের পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে খুজিস্তানের আইজা অঞ্চলে অবস্থিত কারুন-৩। ইরানি ১৩৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২২৮০ মেগাওয়াট। খুজিস্তানের আন্দিকা অঞ্চলে ইরানি ১৩৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাদ শাহীদ আব্বাসপুর (কারুন-১) বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট।
মসজিদ সোলাইমান এলাকায় ইরানি ১৩৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাদ্দে মসজিদ সোলাইমান পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট। ইরানি ১৩৯১ সালে খুজিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয় সাদ্দে গুতভান্দ আলিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার মেগাওয়াট। ইরানি ২০১১ সালে মাজান্দারান প্রদেশে নির্মিত হয় তুলুম্বে জাকিরে সিয়বিশে বিুদ্যৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯৪০ মেগাওয়াট। চাহর মাহাল ও বাখতিয়রিতে প্রতিষ্ঠিত হয় সাদ্দে কারুন-৪ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার মেগাওয়াট।
ইংরেজি ২০১০ সালে ইরানের বুশহর প্রদেশে নির্মিত হয় বুশহর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার মেগাওয়াট। ২০১১ সালে ইরানের আরাক অঞ্চলে নির্মিত হয় আরাক ভারি পানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে ইরানের দরখুইন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় দরখুইন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৩৬০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু জ্বালানি ব্যবহারের একটি বড় কারণ হলো, এটি সম্পূর্ণভাবে নির্মল ও পরিবেশবান্ধব। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল, গ্যাস ও কয়লার যথেচ্ছ ব্যবহার প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে খনিজ জ্বালানির ব্যবহার অব্যাহত থাকলে পরিবেশ দূষণ রোধের পদক্ষেপগুলোর সাফল্যের সম্ভাবনাও আরো হ্রাস পাবে। কাজেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্মল জ্বালানির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ইরান।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, মাটির তলদেশে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে এবং তা বহু বছর ধরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ইরানে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা অসীম। ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সারা বছরব্যাপী তীব্র সূর্যালোক পাওয়া যায়। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বর্গমিটারে দিনে গড়ে ৫.০-৫.৪ কিলোওয়াট ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। ফলে প্রতি বর্গমিটারে ০.৫ কিলোওয়াট ঘণ্টা অথবা প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ইরানে মোট আয়তনের এক চতুর্থাশ মরুভূমি। ইরানে মরু এলাকায় মাত্র ১ শতাংশ সৌর কোষ দ্বারা ঢাকা সম্ভব হলে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় তার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
ইরানি ২০০৯ সালে ইয়াজ্দ অঞ্চলে নির্মিত হয় ইয়াজ্দ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬৭ মেগাওয়াট। একই বছর ইরানের শিরাজে নির্মিত হয় সিরাজ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। যারা উৎপাদন ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াট। এছাড়া ইরানে সম্প্রতি কিছু ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ১ মেগাওয়াটের আরাক সৌর বিুদ্যৎ কেন্দ্র। চলতি বছর ইরানের আরাক অঞ্চলে এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইরানে এটাই প্রথম এক মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
ইরানে বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মঞ্জিল বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইরানের গিলান প্রদেশে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ১৯৯৪ সালে দেশটির জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। এটি ইরানের প্রথম বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এছাড়া রয়েছে অনবন আলী বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইরানের তাবরিজে নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। ইরানি ১৩৮৮ সালের ২৯ বাহমান থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন শুরু হয়।
২০০৮ সালে খোরাসান রাজাভী প্রদেশে নির্মিত হয়েছে বিনালুদ বায়ু কৃষি খামার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৮২ মেগাওয়াট।
ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি ব্যবহার করেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ইরান। দেশটির বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ নি¤œ এবং উচ্চ মানস¤পন্ন ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি রয়েছে। উচ্চ মানস¤পন্ন তাপ শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে নি¤œ মানস¤পন্ন তাপ দিয়ে উষ্ণায়ন এবং শীতলীকরণ করা সম্ভব। বোরহোল থারমাল রেসপন্স পরীক্ষার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ পরীক্ষাটি ইরান ব্যতীত বিশ্বের অল্প কয়টি দেশে করা সম্ভব। এ খাতে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো ৬০০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন মাশহাদ বায়োগ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ১০৬০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন সিরাজ বায়োগ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এছাড়া ইরানের কাজভীন প্রদেশে নির্মিত হয়েছে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০০৯ সালে নির্মিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ২০০ কিলোওয়াট।
ইরানের উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে ৬১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে পরিচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয় ১২ হাজার মেগাওয়াট এবং পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত হয় ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর বাকি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।
সূত্র : Tehran times, vista.ir, Bultannews.com, Iran daily,