শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১৩ ক্ষেত্রে ইরানের যুগান্তকারী সাফল্য

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১২, ২০১৮ 

news-image

বিগত এক বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর একটি বই প্রকাশ করেছে। এতে গত বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরান যেসব অর্জন করেছে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

বইটির নাম ‘সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন ইরান: এ ব্রিফ রিভিউ’। বইটিতে ২০১৭ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের অর্জনগুলো পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

বইটি শুরু করা হয়েছে ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস দিয়ে। এরপরেই বইটিতে বর্ণনা করা হয়েছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ইরানের জাতীয় নীতি। প্রথম অধ্যায়ে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার দিক দিয়ে বিশ্বে ইরানের অবস্থান উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি দেশটির সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিসংখ্যানের ওপর একটি পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়।

বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ন্যানো প্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তি, স্টেম সেল প্রযুক্তি, জ্ঞানীয় বিজ্ঞান, ওষুধি উদ্ভিদ এবং ঐতিহ্যগত ওষুধ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ১৩টি ক্ষেত্রের সুনির্দিষ্ট তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যানসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া ‘সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন ইরান: এ ব্রিফ রিভিউ’তে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল শিল্প, মহাকাশ, বিমানচালনা প্রযুক্তি, সামুদ্রিক শিল্প, পানি, খরা, ক্ষয় এবং পরিবেশগত প্রযুক্তি, প্রচলিত জ্বালানি (তেল ও গ্যাস) এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। বইটির প্রতিটি অধ্যায় পাঁচটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো ইতহাস ও পটভূমি, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও কলাকৌশল, ধারণ ক্ষমতা ও সক্ষমতা, অথোরিটিজ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

বইটির অনলাইন ভারসন ইরানের প্রেসিডেন্ট অফিসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা যাবে। বইটি পেতে এখানে ক্লিক করুন।

বইটির শুরুতে এক নজরে ইরানের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশটিতে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রী, স্নাতকধারী ও পিএইচডিধারীদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায় ২০০৫-৬ শিক্ষাবর্ষে ইরানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ছিল ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৭ জন। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ লাখ ১১ হাজার ৫৮১ জনে। ২০০৫-৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতিকধারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪৬ জন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৮ হাজার ২৬০ জনে। এসময়ে পিএইচডি ছাত্রছাত্রী ১৯ হাজার ২৩৭ জন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩২৪ জনে।

২০০৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় ইরানের অবদান ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ সালে অবদান বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০৫ সালে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থান ছিল তৃতীয়তম, সেখানে ২০১৪-১৫ সালে একেবারে শীর্ষ স্থান দখল করেছে দেশটি। এ সময়ে বৈশ্বিকভাবে অবদানও বেড়েছে ইরানের। ২০০৫ সালে বিশ্বে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনায় দেশটির অবদান ছল দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৪-১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। আগে যেখানে বিশ্বে ইরানের অবস্থান ছিল ৩৪তম এখন সেখানে ১৬তম।

বিজ্ঞান ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষায় দেশটিতে উচ্চ পর্যায়ের লিঙ্গ ভারসাম্য রয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে নারী-পুরুষের হার ছিল ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ। ইরানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৫৪টি, পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৮টি, ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় ৫৬৭টি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩৫৪টি।

ইরানে ২০১৪ সালে জ্ঞানভিত্তিক ফার্ম ছিল ৫২টি, ২০১৭ সালের মে পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৩২ টিতে। এসব কোম্পানিতে ৯০ হাজার ব্যক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে, রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইরানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের সংখ্যার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ২০০২ সালে যেখানে মাত্র ১টি পার্ক ছিল এখন সেখানে ৩৯টি।

ইরানের প্রযুক্তি ভিত্তিক রপ্তানিও বেড়েছে। ২০০৪ সালে দেড় বিলিয়ন ডলার প্রযুক্তি ভিত্তিক রপ্তানি হয়েছে দেশটির, ২০০৯ সালে সেখানে হয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৪ সালে হয়েছে ১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক কর্তৃক জ্ঞান ভিত্তিক পণ্য সামগ্রী রপ্তানি বেড়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে ৪৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে, ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে।

এদিকে, তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ন্যানো প্রযুক্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, জাপান ও ফ্রান্সের মতো দেশকে টপকিয়ে ৪তম স্থান দখল করেছে ইরান। এই খাতে ৮ হাজার ৭৯১টি আর্টিকেল প্রকাশ করে দেশটি এই অবস্থান অর্জন করে। এই র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে ওয়েব সাইন্স। এই তালিকায় চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যথাক্রমে ১ম. দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। সূত্র: ইরান ফ্রন্ট নিউজ এজেন্সি।