শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বই পরিচিতি

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬ 

হযরত শামসে তাবরিযী (র)

রচনা ঃ ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
প্রকাশক ঃ-ছায়াপথ প্রকাশনী
বায়তুশ শরফ, ১৪৯/এ, এয়ারপোর্ট রোড.
ফার্মগেট, তেজগাও, ঢাকা-১২১৫
প্রকাশকাল ঃ- ফেব্রুয়ারী-২০১৫
প্রচ্ছদ ও মুদ্রণ ঃ- মাল্টিলিংক
মূল্য ঃ- ১৫০ টাকা ।

শামসে তাবরিযী ছিলেন ইরানে জন্মগস্খহণকারী একজন বড় অলি। তিনি ইরানের তাবরিয নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম ‘শামস উদ্দীন মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মালিকদাদ তাবরিযী। তাঁর মূল নাম মুহাম্মদ, পিতার নাম আলী, দাদার নাম মালিকদাদ। শামস উদ্দীন তার উপাধী। অর্থ দ্বীনের সূর্য। তাবরিয শহরের অধিবাসী হওয়ায় তাঁকে শামস তাবরিযী বা শামসে তাবরিযী ডাকা হয়। তাবরিয শহর ছিলো অলিদের শহর। সেই শহরকে বলা হতো ‘শহরে হাফতাদ বাবা’ বা সত্তর অলির শহর। যেমন আমাদের দেশের চট্টগ্রামকে বলা হয় ‘বার’ আওলিয়ার শহর আর সিলেট জেলাকে বলা হয় ৩৬০ আওলিয়ার জেলা।
শামসে তাবরিযী (র) ফকিরের বেশধারী এক মহান দরবেশ ছিলেন। তাঁর ফকীরি জিন্দেগীর আড়ালে তিনি ছিলেন ইরফানী জগতের এক বড় জ্ঞানী। ইসলামের তাসাউফ বা তাজকিয়া দর্শনের পন্ডিৎ। ছিলেন এক কামেল পুরুষ। ইরফান বা ইলমে মারেফাত হচ্ছে এমন এক জ্ঞান যা খোদার সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক লাভের শিক্ষা দেয়।
শামসে তাবরিযীর জীবনের কিছু ঐশী কারামতের কাহিনীও ইতিহাসে বর্ণিত আছে। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী (র)। মূলতঃ শামসে তাবরিযী (র)-এ সংস্পর্শেই মাওলানা জালাউদ্দিন রুমী (র) বড় অলি ও আধ্যাত্মিক কবি হতে পেরেছিলেন। তিনি তাই তাঁর মসবিতেই স্বীকার করেছেন,‘হতোনা সফল কখনো রুমী পেয়ে প্রকৃত দ্বীন/যদি না থাকতো পীর তাবরিযী মাওলানা শামসুদ্দিন’
মাওলানা জালাউদ্দিন রুমী (র)-এর মসনবীতে বিভিন্নভাবে শামসে তাবরিযীর আধ্যাত্মিক জীবন দর্শন লুক্কায়িত আছে। শামসে তাবরিযীর সংস্পর্শে ্এসে মাওলানা রুমীর মধ্যে যে অসাধারণ রুহানী বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিলো তারই ফসল হচ্ছে মসনবী। যে মসনবী সম্পর্কে বলা হয়,‘মসনবীয়ে মানবিএ মওলভী/হাস্ত কোরান দরজবানে পাহলভী’ অর্থাৎ মসনবী হচ্ছে ফারসী ভাষায় কোরান। কোরানের আসল বক্তব্য বা সারমর্মকে তুলে নেয়া হয়েছে মসনবীতে।
শামসে তাবরিযীর নিজেরও কিছু ইরফানী কবিতা রয়েছে। যা তিনি মুখে মুখে রচনা করেছেন। সেগুলোই হয়তো কোন ভক্ত লিখে রেখেছে। পরবর্তীতে তা দিওয়ানে শামসে তাবরিযী নামে প্রকাশিত হয়েছে। মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (র) ও তার মসনবী সম্পর্কে সারা বিশ্বে ব্যাপক বই পুস্তক লিখিত হলেও তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু শামসে তাবরিযী (র) সম্পর্কে পৃথক বই খুব কমই রচিত হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা হতে পারে। রচিত হতে পারে পিএইচডি বা এমফিল থিসিস। ড. মুহাম্মদ ইসা শাহেদী কর্তৃক রচিত একশত চার পৃষ্ঠার উক্ত বইটি এক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ বলা যেতে পারে। লেখক বইটিতে শামসে তাবরিযীর জীবন দর্শণ বোঝাতে গিয়ে তাসাউফ সম্পর্কেও অল্পবিস্তর ব্যাখা দিয়েছেন। তাসাউফ বা ইলমে মারেফাত যাকে ইরফান শাস্ত্রও বলা হয়, যার প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে সেই রুহানী জ্ঞান যার উৎপত্তিস্থল ছিলো হযরত আলী (আ)-এর হৃদয়, যিনি ছিলেন রাসুল (সা)-এর সামগ্রিক জীবন দর্শণের প্রকৃত প্রতিনিধি। এবিষয়টিও কিন্তু অধিকাংশ মানুষের কাছে অজানা ।
তাসাউফহীন দ্বীন সবুজ পত্রহীন শাখার মতো। যারা বলেন ইসলামে তাসাউফ নেই তারা দ্বীনের নিগুঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে অজ্ঞাত।
বইটি বাংলাভাষী পাঠককে শামসে তাবরিযী, মাওলানা রুমী, মসনবী এবং তাসাউফ বা ইরফানী জ্ঞান সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ সৃষ্টি করবে।

 

ইরানের আধুনিক কবি

মুহাম্মদ হোসাইন শাহরিয়ার
রচনা : মোহাম্মদ আহসানুল হাদী
প্রকাশক : মোহাম্মদ নুরুন নবী এফসিএ
ডেবনার গ্রুপ
পক্ষে ইসলামী দর্শন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান
প্রকাশকাল : মে-২০১৫
প্রচ্ছদ : মোহাম্মদ ওয়ালিয়র রহমান (সুমন)
মূদ্রণ : সুইটি আর্ট প্রেস
মূল্য : ৪৫০ টাকা।

মোহাম্মদ আহসানুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং মীরপুরস্থ লালকুটি দরবার শরীফের গদীনশীন পীর। ব্যক্তিগত জীবনে জনাব হাদী বহুগুণের অধিকারী। সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নানা কর্মকা-ের সাথে তিনি জড়িত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে অ্যাকাডেমিক লেখালেখি করে থাকেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মাঝে মাঝে।
আলোচ্য বইটি তাঁর এমফিল গবেষণার ওপর ভিত্তি করে রচিত গ্রন্থ। ইরানের আধুনিক কবি মুহাম্মদ হোসাইনের জীবন ও সাহিত্যকর্মের ওপর রচিত তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাডেমিক বিশ্লেষণের গ্রন্থরূপ।
ইরানের আধুনিক কবি শাহরিয়ারের জীবন ও সাহিত্যের নানা দিক ফুটে উঠেছে বইটিতে, শাহরিয়ারের জন্ম, তাঁর প্রথম কবিতা লেখা, সংসার জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, প্রেম-প্রণয় ও প্রেমে ব্যর্থতা এবং এক্ষেত্রে প্রাক ইসলামী বিপ্লবকালীন রাজতান্ত্রিক প্রশাসনের মানসিক পীড়ন, ইসলামী বিপ্লবের প্রতি তাঁর সমর্থন, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক সম্মাননা প্রদান, ইমাম খোমেইনী (র) কর্তৃক দীর্ঘ ছুটি ও ভাতা প্রদানের ঐতিহাসিক কাহিনী, তাঁর রচিত কবিতার গভীরতম অভিব্যক্তি, তাঁর পিতামাতার মৃত্যু, বেদনা, হাহাকার, রোগাক্রান্ত জীবন ও জীবনাবসান সবকিছু উঠে এসেছে। লেখক প্রয়াস করেছেন বাংলাভাষী পাঠক ও ফারসির ছাত্র-শিক্ষকদের সামনে একজন পূর্ণাঙ্গ ‘শাহরিয়ার’কে তুলে ধরতে। শাহরিয়ারের কাব্য প্রতিভাকে সুধীজনের কাছে তুলে ধরতে গিয়ে লেখক কবির কবিতাকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। প্রসঙ্গক্রমে ইরানের সমাজব্যবস্থা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শাহরিয়ারের কাল, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমসাময়িক বিয়য়ও টেনেছেন। ফারসি সাহিত্যের ইতিহাস, ইসলামের নানা প্রসঙ্গ, তাসাউফ, তাযকিয়া ও ইরফান শাস্ত্র, শরীয়ত, মারেফত, কালামশাস্ত্র ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন জীবন দর্শন ও শাহরিয়ারের কবিতায় যে জীবন দর্শনের কথা বলা হয়েছে এর স্বাতন্ত্র্য এবং শাহরিয়ারের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের মিল অমিলও উঠে এসেছে। কবি শাহরিয়ার ও ব্যক্তি শাহবিয়ার প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। শাহরিয়ার ছিলেন জীবনবাদী কবি, জীবন সংগ্রামের কবি, আর জীবনের শেষদিকে শাশ্বত জীবন বিধান ইসলামের রুহানী জগৎ দ্বারা প্রভাবিত।
বইটি পাঠক সমালোচককে নানাভাবে স্পর্শ করবে বলে আমি মনে করি। বইটি ফারসি সাহিত্য প্রেমিকদের অবশ্যই কাজে লাগবে।

আমিন আল আসাদ