মঙ্গলবার, ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ঢাকায় ইরানি নওরোজ উৎসব

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ২৮, ২০১৭ 

news-image

ফার্সি নববর্ষ  উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকায় পালিত হল ইরানি নওরোজ উৎসব। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ‘নওরোজ উৎসব ও এর প্রেরণাদায়ক ঐতিহ্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে ফারসি একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। পাঁচশ বছর বা তারও অধিককাল এ অঞ্চলের সরকারি ভাষা ছিল ফারসি। কবি হাফিজ, রুমি,  শেখ সাদি ও ফেরদৌসীর মতো ইরানি কবি-সাহিত্যিকদের সাথে এদেশের মানুষের গভীর পরিচিতি রয়েছে।তিনি বলেন, ইরান সাহিত্য চর্চা করে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে। এর মাধ্যমেই বিশ্বে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে তারা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজী দেহনাভী বলেন, নওরোজ বলতেই ইরানিদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব ধরে নেয়া হলেও কোন কোন রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, খ্রিস্টপূর্ব ৩ হাজার বছরেরও আগে থেকে এই নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। ইসলামের আগমনের পর ইরানের প্রাচীন নওরোজ উৎসবের সাথে ইসলামি মূল্যবোধ সংযুক্ত হয়। তিনি বলেন, হাফত সিন টেবিলে সাজানো প্রতিটি জিনিস কোন কোন বিষয়কে নির্দেশ করে যা নব জীবনের প্রতীক।

অনুষ্ঠানে, প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্যনির্মাতা জনাব মামুনুর রশীদ বলেন,  পারস্যের সাথে এদেশের মানুষের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ফারসি সাহিত্য যেমন আমাদের সাহিত্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি পারস্যের জনগণের সাধারণ জীবনাচরণও আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বলেন, ইরানি চলচ্চিত্র আজ সারা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।বিশ্বের সবচেয়ে বড় থিয়েটার ফেষ্টিভালও হয় ইরানে।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান সৈয়দ মুসা হুসাইনি বলেন, নওরোজ মানেই বসন্তের শুরু। আর বসন্ত মানেই ইরানিদের নতুন বছরের যাত্রা। শীত ঋতুর সমাপ্তির মধ্য দিয়ে বসন্ত যেমন পুরনো সব জরাজীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতিকে নতুন করে সাজায়, পুষ্প পল্লবে আচ্ছাদিত করে চারদিক তেমনি ইরানিরাও নওরোজে প্রকৃতির নতুন রূপের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। বাড়িঘর, অঙ্গিনা, অলি-গলি, রাস্তা সবকিছু ঝেড়ে ঝকঝকে করার পাশাপাশি এগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনের মধ্য দিয়ে সমাজকে নতুন করে আলিঙ্গন করে।

এদিন ইরানিরা পরিবার-পরিজন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন, একে অপরকে উপহার দেন ও দরিদ্রদের সাহায্য করেন। এমনকি নওরোজ শুরু হওয়ার পূর্বের শেষ শুক্রবার ইরানিরা কবরস্থানে যান এবং আপনজন যারা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন তাদেরকে স্মরণ করেন।

তিনি আরো বলেন, নওরোজ উৎসব কেবল ইরানেই সীমাবদ্ধ নয়, আফগানিস্তান, তুরস্ক, মধ্য এশিয়া ও উপমহাদেশের দেশগুলাতেও তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতি ও আচার অনুষ্ঠান অনুযায়ী এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। জাতিসংঘও বিশ্বে শান্তি ও সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে ২০১০ সালে ফারসি নতুন বছরকে আন্তর্জাতিক নওরোজ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক অনিসুজ্জামান।