জেনা. সোলাইমানি ছিলেন আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও মেধায় বলীয়ান : ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৫, ২০২২
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানির দ্বিতীয় শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মতো মতো দক্ষ সেনানায়ক সচরাচর পাওয়া যায় না। তিনি ছিলেন ‘সেল্ফ মেইড ম্যান’ ও ‘সেল্ফ মেইড জেনারেল’। তিনি আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও মেধায় বলীয়ান ছিলেন। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়েই তিনি নিজেকে গঠন করেছিলেন এবং তিনি তার ভূমিকা পালন করে শাহাদতবরণ করেছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামালউদ্দিনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাফার, রেডিও তেহরানের বাংলা বিভাগের সিনিয়র সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সাংবাদিক জামালউদ্দিন বারী, রাজধানীর মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুর রাজ্জাক ও খুলনা ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যক্ষ হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ ইব্রাহিম খলিল রাজাভী। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ঢাকায় ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত। পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করবেন বিশিষ্ট কারি এ কে এম ফিরোজ।
ওয়েবিনারে ইরানি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নাফার বলেন, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি সামরিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। তার কারণেই আমেরিকার বড় বড় পরিকল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানসহ অনেক দেশ তাদের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির কাছে ঋণী। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নামে কম্পিত ছিলেন। আর এ জন্যই ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সরকারি সফরে থাকাকালীন তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। কিন্তু এটি ছিল তার নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। তিনি আরো বলেন, ৩ জানুয়ারি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই শুধু নয়, আমেরিকাবাসীও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল। এ হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে মিত্রবাহিনী দ্রুত সরে যেতে বাধ্য হয়। আর ৮ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আইন আল-আসাদে ইরানি হামলায় মার্কিনিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় যা তারা গোপন করে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে এটি প্রকাশ হয়ে পড়ে। আর বর্তমানে মার্কিনিদের এমন অবস্থা হয়েছে যে, বিশ্ববাসী আর তাকে সুপার পাওয়ার মনে করে না।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত বলেন, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ছিলেন এমন এক বীর যাকে নিয়ে কেবল ইরানিরা; নয় বরং বিশ্বের সব মানুষ গর্ববোধ করে। তিনি নিজ চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও প্রতিভার গুণে মুসলিম বিশ্বের আদর্শে পরিণত হয়েছেন। তিনি ইরানের ইসলামী বিপ্লবের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তার জানাযায় লাখো-কোটি ইরানির উপস্থিতি ইরানি জাতির ঐক্য, হৃদ্যতা ও সংহতিকে প্রকাশ করে। ইসলামী বিপ্লব এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে জেনারেল সোলাইমানির মতো ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। আর এ ধরনের ব্যক্তিত্ব সারা বিশ্বের সব জাতির জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে রয়ে যায়।
সিনিয়র সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মধ্যপাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। আধিপত্যবাদী শক্তি ‘নিউ মিড্ল ইস্ট প্ল্যান’ সফল করতে চেয়েছিল; কিন্তু সেটিকে নস্যাৎ করে দেন জেনারেল সোলাইমানি। রাজনৈতিক, সামরিক সর্বদিক থেকে পরাশক্তির নীলনকশা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ান জেনারেল সোলাইমানি, যার কারণে তারা তাকে হত্যা করে।