ঈদে গাদিরের তাৎপর্য
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ১০, ২০২০

ঐতিহাসিক গাদির-দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা মুবারকবাদ। বিদায় হজের পর রাসূল (সা.) মদিনায় ফেরার পথে গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হজরত আলীকে (আ) মুমিনদের নেতা বা মাওলা হিসেবে মনোনীত করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার ৮০ কিংবা ৮৪ দিন পর আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যান। বিদায় হজ সমাপনের পর তিনি মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন এহরাম পরা অবস্থায়। সঙ্গে ছিল সোয়া লাখ সাহাবি । পথে ১৮ জিলহজ মদিনার নিকটবর্তী গাদির-এ-খুম নামক স্থানে উপস্থিত হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতের আগের আয়াত তথা সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।
সুরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন: “হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ দেখান না।” আল্লাহর পক্ষ থেকে এই নির্দেশ নাজিলের পর, রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক স্থানে আল্লাহর ওই ঘোষণাটি উম্মতকে জানিয়ে দেন অভিষেক উৎসবের আয়োজন করে। ‘যখন রাসূল (সা.) গাদির-এ-খুম নামক এলাকায় এসে থামলেন, তখন তিনি সবাইকে একত্রিত করলেন, হজরত আলীর (আ) হাত ধরে উপরে তুললেন এবং জনতার উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা কি জান, আমি মুমিনদের নিজেদের প্রাণের চেয়েও বেশি আওলা বা প্রিয়?’ লোকেরা বললেন, ‘হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)’। অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি যার মাওলা এই আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ যে তাকে বন্ধু বানায় তুমিও তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর, আর যে তার সঙ্গে শত্রুতা করে তুমিও তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর।
এরপর হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব হজরত আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ‘ওহে আবু তালিবের সন্তান! প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর মাওলা হিসেবে তুমি (রাত কাটিয়ে) সকাল করবে ও (দিন কাটিয়ে) সন্ধ্যা করবে। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসির, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৬১৬, ই.ফা.বা (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। গাদির সংক্রান্ত এই হাদিসটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন, ২৫৫ জন ওলামা, ২৭ জন হাদিস সংগ্রাহক, ১৮ জন ধর্মতত্ত্ববিদ, ১১ জন ফিকাহবিদ, ইমাম ও ওলামার সূত্রে মুসনদে ইবনে হাম্বল, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাযা, আবু দাউদ, তফসিরে কাশশাফ ইত্যাদি বিখ্যাত কিতাবে উল্লিখিত হয়েছে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলবীর ‘ইজালাতুল খাফা’ কিতাবও এ হাদিসের জন্য বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।
পবিত্র কুরআনেও মহান আল্লাহ হজরত আলীকে (আ) মুমিনদের মাওলা হিসেবে ঘোষণা করছেন। যেমন সুরা মায়েদার ৫৫ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের মাওলা (অভিভাবক), তাঁর রাসূল (সা.) তোমাদের মাওলা এবং যে ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয় রুকুকালীন অবস্থায়’।
ইমাম ওয়াকেদির সূত্রে মহানবীর (সা) সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরাইরার বর্ণনা-ভিত্তিক হাদিসে এসেছে, সূরা মায়েদার ৬৭ নম্বর আয়াতটি হজরত আলী (আ)-এর শানে নাজিল হয়েছিল। ইবনে কাসিরের বিদায়া ওয়ান নিহায়া বইয়ে বলা হয়েছে এভাবে হজরত আলীর (আ) প্রতিনিধিত্ব বা মওলাইয়্যাতের বাইয়াত শেষ হলে পবিত্র কুরআনের শেষ আয়াতটি নাজিল হয় যাতে বলা হয়েছে, ‘আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেল, অতএব তাদের ভয় কর না। ভয় কর আমাকে আজ তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের দ্বীনের ওপর আমি রাজি হয়ে গেলাম। ’ এভাবে উম্মতে মুহাম্মদীর ধর্ম পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা এবং তাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত দান করার বিষয়টি সম্পূর্ণ হয়। তাই প্রিয় নবী (সা.) আল্লাহর দরবারে এ বলে প্রার্থনা করলেন,
‘আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব দ্বীনকে কামেল করে দেয়ার ওপর এবং নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার ওপর এবং আবু তালেব নন্দন আলীর বেলায়েতের জন্য সব প্রশংসা আল্লাহর।’
উল্লেখ্য, গাদিরে খুমের ওই ঘটনার ২৫ বছর পর তৃতীয় খলিফা নিহত হলে মুসলমানদের ব্যাপক অনুরোধ ও পীড়াপীড়ির মুখে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.) ১৮ই জিলহজ একান্ত অনীহা ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুসলমানদের রাজনৈতিক নেতা বা খলিফা হন। সামাজিক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফা হিসেবে প্রায় ৫ বছর শাসন করার পর এক ধর্মান্ধ খারেজির সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে একুশে রমজান তিনি শহীদ হন। হামলার সময় তিনি কুফার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন।তথ্যসূত্র: পার্সটুডে।