ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর যত্ন নেয়া ও দেখাশোনার গুরুত্ব (পর্ব-১)
পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ১২, ২০২০

বিশ্বজুড়ে এখন চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। গত প্রায় ছয়-সাত মাস ধরে অব্যাহত বৈশ্বিক এ মহামারীতে সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। এছাড়া, আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৪২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ও শনাক্তের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে।
অথচ দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী দেশ বলে অনেকেই মনে করেন। দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের ভালোভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বলে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি বলে জানা গেছে।
ইউরোপের তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রগুলোরও হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনার এই মহামারী। ইউরোপের কোনো কোনো দেশের হাসপাতালে ও বিশেষ করে বৃদ্ধ-আশ্রমগুলোতে করোনা-আক্রান্ত রোগীদের যত্ন নেয়া হয়নি স্রেফ তারা বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা হয়ে গেছেন বলে! ফলে তাদের বিপুল সংখ্যক মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। ইউরোপের কোনো দেশের জন্য পাঠানো মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রীর চালান বিমানবন্দর থেকে লুট করে নিয়েছে নিজ দেশে নিয়ে গেছে মার্কিন সরকারের অনুচররা! অথচ এসব সামগ্রী অর্থ পরিশোধ করে আমদানি করছিল ইউরোপের ওই দেশ! পাশ্চাত্যের মানবাধিকারের দুঃখজনক চিত্র ও নৈরাজ্যময় অবস্থাই ফুটে উঠেছে এসব আচরণ বা ঘটনা থেকে।
এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি করোনা ভাইরাস-সৃষ্ট মহামারীর কার্যকর টিকা বা সুনিশ্চিত কোনো ওষুধ। করোনা ভাইরাস বার বার তার রূপ ও বৈশিষ্ট্য বদল করছে বলেও বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন! করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর বিদেশ থেকে হজ করতে কেউ যেতে পারছেন না পবিত্র মক্কায়। মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের মারাত্মক রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন এ জাতীয় কঠিন রোগে আল্লাহ তাদের সবাইকে আরোগ্য দান করুন।
ইসলাম যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতিমালার ওপর জোর দেয় তেমনি রোগীদের ব্যাপারেও মানবিক ও দয়ার্দ্র দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। ইসলাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলে ঘোষণা করেছে। যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন তাদেরকে অজু-গোসল করতে হয় বলে সংক্রামক রোগ-ব্যাধি তাদের হয় না বা কম হয়ে থাকে। সম্ভবত এ কারণেই মুসলিম দেশগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখনও অমুসলিম বা পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। সংক্রামক রোগ দেখা দিলে রোগীদের শহর ও ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ বা কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিধান মহানবীর হাদিসে রয়েছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রোগীদের ব্যাপারে দয়ার্দ্র দৃষ্টি দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসের একটি বহুল প্রচলিত দোয়ায় কেবল মুসলমান রোগী নয় বরং সব রোগীদের আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও হাদিসে দুর্ঘটনায় বা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করা ব্যক্তিদের শহীদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলাম রোগীদের জন্য অনেক দায়িত্ব পালন স্থগিত রাখার বিধান দিয়েছে। যেমন: ফরজ রোজার বিধানের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কেউ সফরে থাকলে বা অসুস্থ থাকলে সে যেন অন্য কোনো সময় তথা স্বাভাবিক অবস্থায় ওই রোজা রাখে। গোসল বা ওযুর কারণে অসুস্থতার আশঙ্কা থাকলে বা সফরে থাকলে (পানি পাওয়া না গেলে) পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করার বিধান দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম ধর্ম অক্ষম বা শক্তিহীন, দরিদ্র ও অসুস্থদেরকে হজব্রত পালন ও জিহাদের দায়িত্ব পালন থেকেও অব্যাহতি দিয়েছে।
রোগীদের সঙ্গে আচরণের ব্যাপারে ইসলামী প্রথা বা সুন্নাত ও উপদেশ: মহানবী (সা) অসুস্থদের দেখতে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি নিজে অমুসলিম রোগী ও শত্রু রোগীকেও দেখতে যেতেন বলে ইতিহাসে বর্ণনা রয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) বলেছেন, রাসুলে খোদা (সা) রোগীদের দেখতে যেতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবীর আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম সাদিক (আ) বলেছেন: তোমরা রোগীদের দেখতে যাবে এবং তাদের কাছ থেকে দোয়া চাইবে। কারণ তাদের দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য। তিনি আরও বলেছেন: মু’মিনের ওপর মু’মিনের যে সাতটি অধিকার রয়েছে সেসব পালন করা না হলে তা হবে মহান আল্লাহর আনুগত্য ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার বা অমান্য করার শামিল। আর ওই সাতটি অধিকারের অন্যতম হল কোনো মুমিন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। কোনো এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির সঙ্গে হজের সফরে থাকার সময় তাদের একজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় অন্য ব্যক্তি তথা সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তিকে ছেড়ে মদিনার মসজিদে যেত।
এ ঘটনাটি শুনে ইমাম জাফর সাদিক (আ) ওই সুস্থ ব্যক্তিকে বলেন, তুমি যদি মসজিদে না গিয়ে ঘরে থেকে অসুস্থ সঙ্গীর সেবা-যত্ন করতে তাহলে মসজিদে ইবাদত করার চেয়েও বেশি সাওয়াব পেতে।পার্সটুডে ।