সোমবার, ৩রা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে জ্বালানি শক্তি

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬ 

ভূমিকা : ইরানে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো ক্রমবর্ধমান খনিজ জ্বালানি ব্যবহারজনিত জলবায়ু দূষণ। খনিজ জ্বালানি ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘পঞ্চম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ গ্রহণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা হলে ইরানের বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কল্পে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট এবং পরিবেশ সচেতনতার ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি রপ্তানিরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থা (ঝটঘঅ)
১৯৯৫ সালে ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি স¤পদের সম্ভাবনা যাচাই, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প (সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপ, হাইড্রোজেন এবং বায়োমাস) বাস্তবায়নের নিমিত্ত ইরানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থা গঠিত হয়।
ইরানের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস ব্যাপক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। যথা: পানি শক্তি, সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপ, বায়োগ্যাস এবং হাইড্রোজেন।
পানি শক্তি (ঐুফৎড় বহবৎমু): ইরানে ২৩-৪২ গিগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। সপ্তম পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ফলে ইরানে বর্তমানে ৮ গিগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে যা অন্য যে কোন খাত থেকে বেশি। ইরানের ২০২১ সাল নাগাদ ১৪ গিগাওয়াট পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে যা ইরানের বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভাবনার ২০%।
সৌর শক্তি (ঝড়ষধৎ ঊহবৎমু): ইরানে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা অসীম। ইরানের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সারা বছরব্যাপী তীব্র সূর্যালোক পাওয়া যায়। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি বর্গমিটারে দিনে গড়ে ৫.০-৫.৪ কিলোওয়াট ঘণ্টা সূর্যালোক পাওয়া যায়। ফলে প্রতি বর্গমিটারে ০.৫ কিলোওয়াট ঘণ্টা অথবা প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ইরানে মোট আয়তনের এক চতুর্থাশ মরুভূমি। ইরানে মরু এলাকায় মাত্র ১ শতাংশ সৌর কোষ দ্বারা ঢাকা সম্ভব হলে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয় তার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
অর্জিত সাফল্য
ইরানে শিরাজ সৌর তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প মধ্যপ্রাচ্যে সর্ববৃহৎ যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০ কিলোওয়াট। এ প্রকল্পের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইরানের গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
বায়ু শক্তি (ডরহফ ঊহবৎমু): ইরানের পূর্বাঞ্চলে বায়ু শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পা¤প চালনার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ৪৫টি স্থানে গবেষণা পরিচালনা করে দেখা গিয়েছে যে, বায়ু শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইরানে ৬,৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ইরানের উইন্ড অ্যাটলাস অনুযায়ী বায়ু শক্তি ব্যবহার করে ১৪০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহারের মাধ্যমে ২০-৩০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
সাফল্য
১. ৬৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন উইন্ড টারবাইন স্থাপন।
২. মঞ্জিল এবং বিনালোদ নামক দুটি বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন।
ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি (এবড়ঃযবৎসধষ ঊহবৎমু): ইরানে বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ নি¤œ এবং উচ্চ মানস¤পন্ন ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি রয়েছে। উচ্চ মানস¤পন্ন তাপ শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে নি¤œ মানস¤পন্ন তাপ দিয়ে উষ্ণায়ন এবং শীতলীকরণ করা সম্ভব। বোরহোল থারমাল রেসপন্স পরীক্ষার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ তাপ শক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এ পরীক্ষাটি ইরান ব্যতীত বিশ্বের অল্প কয়টি দেশে করা সম্ভব। এ খাতে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো ৬০০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন মাশহাদ বায়োগ্যাস বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট এবং ১০৬০ কিলোওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাস¤পন্ন সিরাজ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট।
হাইড্রোজেন এবং ফুয়েল সেল কার্যক্রম
প্রায় ১ দশকে হাইড্রোজেন এবং ফুয়েল সেল গবেষণার অভিজ্ঞতায় ইরানে ৫০টি গবেষণা এবং উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প পরীক্ষামূলক ভাবে হাইড্রোজেন উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিতরণ এবং ব্যবহার করছে।

সাফল্য
১. গ্রিড বহির্ভূত সৌর-হাইড্রোজেন শক্তি এবং ফুয়েল সেল সিস্টেম স্থাপন।
২. হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল সম্বলিত গাড়ি পরীক্ষা এবং উৎপাদন।
৩. হাইড্রোজেন স্টোরেজ ভেসেল ডিজাইন, উৎপাদন এবং পরীক্ষণ।
৪. ২০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাস¤পন্ন ওয়াটার ইলেক্ট্রোলাইজার ডিজাইন, উৎপাদন, পরীক্ষণ এবং স্থাপন।
৫. ৫ কিলোওয়াট এবং ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতাস¤পন্ন পলিমার ফুয়েল সেল ডিজাইন এবং উৎপাদন।
৬. ফুয়েল সেল যন্ত্রাংশ, যথা: এমইএ, হিউডিফায়ার তৈরি।
৭. সিংগেল সেল সলিড অক্সাইড ফুয়েল সেল ডিজাইন এবং উৎপাদন।
৮. ফুয়েল সেল টেকনোলজি বিষয়ক জাতীয় কৌশল পরিকল্পনা অনুমোদন।
পরিবেশ বান্ধব গাড়ি (ঈষবধহ াবযরপষব)
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ইন্টেলিজেন্ট ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল, ইন্টেলিজেন্ট ইলেকট্রিক ফুয়েল সেল ভেহিক্যাল ডিজাইন এবং উৎপাদন করা হচ্ছে।

অনুবাদ: কৃষিবিদ ড. মো. আলতাফ হোসেন