ইসলামি বিপ্লব : ইরানের অর্থবহ স্বাধীনতার উৎস
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২২, ২০১৮
সম্পাদকীয়
ইসলামি বিপ্লব : ইরানের অর্থবহ স্বাধীনতার উৎস
১১ই ফেব্রুয়ারি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৩৯তম বিজয় বার্ষিকী। ৩৯ বছর আগে এদিনে মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনীর (রহ্.) নেতৃত্বে ইরানের সংগ্রামী মুসলিম জনগণ আড়াই হাজার বছরের পুরনো স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং তার ধারক ও বিজাতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদার শাহ্কে উৎখাত করে ইরানের বুকে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসলামি বিপ্লব ইরানে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামানুগ আমূল পরিবর্তন এনেছে। শুধু তা-ই নয়, এ বিপ্লব ইরানকে একটি অর্থবহ স্বাধীন দেশে পরিণত করেছে যার ওপরে পর্দার সম্মুখে বা অন্তরালে কোনো বিজাতীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ তো দূরের কথা, সামান্যতম প্রভাবও নেই – যার ফলে বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
‘স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ স্লোগান দিয়ে ইরানি জনগণ শুধু ঈমানী শক্তির বলে শাহের পতন ঘটাতে ও তার পৃষ্ঠপোষক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ইরান থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়। এ স্লোগানের মূল মর্ম ছিল : বহিঃশক্তির তাঁবেদারি থেকে স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি, নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণকে নিজেদের হাতে গ্রহণ, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক ও ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, স্বকীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন। ইরানের জনগণ ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান ও নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে গ্রহণের লক্ষ্য পরিপূর্ণভাবে অর্জন করেছে এবং বিগত ৩৯ বছরে অন্যান্য লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর মুহূর্ত থেকেই বিপ্লবের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দুশমনরা এ বিপ্লবকে নস্যাৎ ও পথচ্যুত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে তারা তাদের সন্ত্রাসী এজেন্টদের দ্বারা বিপ্লবের অগ্রসেনানী বেশ কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বসহ অনেক বিপ্লবী কর্মীকে হত্যা করে, নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় এবং আট বছরব্যাপী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ দেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার অপচেষ্টা চালায়। সর্বোপরি তারা বিশ্বের জনগণকে সকল ক্ষেত্রে এ বিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে বিপ্লব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়াবার উদ্দেশ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ পরিকল্পিত প্রচারযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার অশেষ রহমতে তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে; বরং ইসলামি বিপ্লবের দীপ্তি এবং ইসলামি ইরানের শক্তি ও শৌর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিগত ৩৯ বছরে ইরানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পারমাণবিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও ন্যানোটেকনোলজিসহ সকল ধরনের জ্ঞানগবেষণা, সুস্থ সংস্কৃতি ও শিল্পকলা, রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ইত্যাদি সহ জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহপ্রাপ্ত এ বিপ্লবের দূরদৃষ্টির অধিকারী নেতৃত্ব শুরু থেকেই কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন একটি সমন্বিত ও ব্যতিক্রমী কর্মকৌশল গ্রহণ করেন যার ফলে আজ ইরানের ইসলামি বিপ্লবের টিকে থাকার ব্যাপারে আর কারো মনেই কোনো সন্দেহ নেই এবং যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য যে, বিশ্বের কোনো বলদর্পী শক্তিই ইরানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য হুমকি সৃষ্টির অপচেষ্টার ন্যায় হঠকারী দুঃসাহস দেখাবে না। বস্তুত ইরানের ইসলামি বিপ্লব মুসলিম উম্মাহ্র জন্য সগৌরবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৩৯তম বিজয়বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এ বিপ্লবের মহান পথিকৃৎ ও রূপকার হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) এবং বিপ্লবের বিজয় ও প্রতিরক্ষার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগ¦ফেরাত কামনা করছি; বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ ‘উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ ও পরিচালকবৃন্দ, বিদেশে অবস্থানরত ইরানি নাগরিকগণ, বিশ্বের তাবত মুসলিম ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণ, বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ বাংলাদেশের সকল জনগণের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং সকলের জন্য উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ইরানি ও বাংলাভাষী ভূখণ্ডের জনগণের মধ্যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদীর্ঘকালীন। এ ভাষার নাম ফারসি শব্দ ‘বাংলা’- এটাই এ বন্ধনের অবিচ্ছেদ্যতা নির্দেশের জন্য যথেষ্ট। তাই এ মহান দিবসে আমরা আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগ¦ফেরাত কামনা করছি এবং স্বীয় শিকড়ের সাথে সংযোগ শক্তিশালীকরণসহ এ ভাষার উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও প্রসার এবং বিশ্বের ভাষা সমাজে অধিকতর গৌরবময় আসন কামনা করছি।