ইরানের ইসলামি বিপ্লব ও নারী
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ১২, ২০১৭

ফাতেমে খাযায়ী
সমাজের জনশক্তির অর্ধেক অংশ হিসেবে প্রতিটি সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অর্থাৎ শিশুদেরকে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে নারীর বিশেষ অবস্থান রয়েছে এবং এ কারণে নারী সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচিত।
যখন একজন নারী শিশুদেরকে শিক্ষাদান ও তাঁর স্বামীর প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জন করেন তখন তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে শিশুর শিক্ষাদান ও প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন। এই কারণে অগ্রসর মানবের সকল প্রয়োজন পূরণে ইসলাম এই ধরনের সমাজ বিনির্মাণের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করেছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। এই প্রবন্ধে নারীর মর্যাদা বা অবস্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবে নারীর অবস্থান সম্পর্কিত যে বিষয়টি সবেচেয়ে মূল্যবান ও অধিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সেটি হলো ইসলামি বিপ্লব নারীর রাজনৈতিক জীবনের একটি মাইলফলক বলে বিবেচিত। এটি কেবল এ কারণে নয় যে, বিপুল সংখ্যক নারী ইসলামি বিপ্লবের লক্ষ্য (অর্থাৎ ‘স্বাধীনতা, মুক্তি, ইসলামি সরকার’) অর্জনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, বরং এই দৃষ্টিকোণ থেকেও যে, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের সময় থেকে শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে নারীর আত্মসচেতনতা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপ্লবের ওপর তাদের প্রভাবের বিষয়ে সচেতনতা শুরু হয়।
সমাজে নারী
নারীর রাজনৈতিক অধিকারের বিষয় নির্দেশকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো পবিত্র কোরআন। সূরা মুমতাহিনায় কোরআন বলছে : ‘হে নবী! বিশ্বাসী নারীরা যখন তোমার নিকট এ ব্যাপারে বাইআত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন অংশী স্থাপন করবে না…’ (আয়াত : ১২)
আনুগত্য হলো জাতির প্রতি অঙ্গীকার এবং তা মেনে চলার জন্য আত্মনিবেদনÑ তা অমান্য করা নয়। মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (সা.) পুরুষদের নিকট থেকে আনুগত্যের শপথ নেন। এরপর যখন নারীরা তাঁর কাছে আনুগত্যের শপথ নেয়ার জন্য আসেন তখন মহানবী (সা.)-এর ওপর এই আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হয় এবং মহান আল্লাহ তাঁকে এ আয়াতের মাধ্যমে নারীদের নিকট থেকে আনুগত্যের শপথ গ্রহণের আদেশ দেন এবং এর শর্তসমূহ ও যোগ্যতাসমূহ বর্ণনা করেন। কিছুসংখ্যক বর্ণনা অনুসারে দেখা যায়, কয়েকজন সাহাবী এসব শর্ত ও যোগ্যতা সম্পর্কে মহানবীকে জিজ্ঞেস করেন। মহানবী (সা.) পূর্ণাঙ্গরূপে তার জবাব দেন। হুদায়বিয়ার শান্তিচুক্তিতে এবং মক্কা বিজয়ের সময় নারীর আনুগত্য এটি নির্দেশ করে যে, ইসলাম ধর্ম অনুসারে নারীর এই অধিকার আছে যে, পুরুষের পাশাপাশি নারীও রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াদিতে মতামত দেবেন, তাঁর সাধ্যমতো দায়িত্ব ও কর্তব্যের অংশীদার হবেন। [হোসাইন শাফেয়ী, ‘কোরআনে নারীর মর্যাদা সম্পর্কিত কতিপয় আয়াত’, সিরাজ, নং ১, ১৩৭২ ফারসি সাল, পৃ. ৬৪]
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াত- ‘…এবং (শরীয়ত অনুযায়ী) তাদের (নারী) জন্য (পুরুষের ওপর) ন্যায়সঙ্গত কিছু অধিকার আছে যেমন তাদের ওপর পুরুষের আছে…’-নির্দেশ করে যে, নারীর মূল্যবান অধিকার তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে : ‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান (কুরআন) এসে গেছে, এরপরও যদি কেউ (খ্রিস্টান) তোমার সাথে তার (ঈসার) সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে, তবে বল, ‘(আচ্ছা, ময়দানে) এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের, এবং আমাদের সত্তাদের এবং তোমাদের সত্তাদের।’ অতঃপর সকলে মিলে (আল্লাহর দরবারে) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।- (সূরা আলে ইমরান : ৬১)
সুতরাং পবিত্র কোরআন এবং উপরোল্লিখিত দুটি আয়াত অনুসারে এটি বলা যেতে পারে যে, রাজনৈতিক বিষয়াদিতে নারীর অধিকারকে সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষণ করা হয়েছে। [যাহরা মুস্তাফাভী, ‘ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে নারীর মর্যাদার ওপর এক নজর’, ১৩৬৯ ফারসি সাল, পৃ. ২৪-২৬]
ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসও নারীর রাজনৈতিক ভূমিকাকে নির্দেশ করে; ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠায় হযরত খাদীজা (আ.)-এর প্রত্যক্ষ কর্মকা- এবং কার্যকরী ভূমিকা এবং সেসবের ব্যাপকতা স্ফটিকস্বচ্ছ যে, তিনি ছিলেন মহানবী (সা.)-এর অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পৃষ্ঠপোষক।
ইসলামি বিপ্লবের দুই দশক পূর্ব থেকে অর্থাৎ ৪০ ও ৫০ এর দশকে নারী সামাজিক, পেশাগত এবং শিক্ষা অঙ্গনে ধীরে ধীরে পদার্পণ করতে থাকে। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের সময় ইরানি সমাজ কিছুসংখ্যক আধুনিক ভোগবাদীকে প্রত্যক্ষ করে। যদিও সেসময় সামাজিক কর্মকা-ে নারীর উপস্থিতি ছিল, কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজ করছিল। নারীরা ধীরে ধীরে তাঁদের প্রতি কৃত রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের সাথে পরিচিত হচ্ছিলেন।
এসবকিছুই সংঘটিত হয়েছিল স্বৈরাচারী রাজবংশের অধীনে। এমনটি দাবি করার পেছনে কারণ হলো পূর্ববর্তী শাসকরা নারীর সাথে একজন বন্দির মতো আচরণ করত এবং তারা লাম্পট্য ও অনৈতিকতাকে সভ্যতার নিদর্শন বলে গণ্য করত। এর ফলে মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ধসে পড়ে। কিছুসংখ্যক নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবী নারী এসব অনৈতিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং মানুষের চিন্তাধারাকে আলোকিত করার জন্য চেষ্টা করেন। এর ফলে শাহী সরকারের সময় তাঁদেরকে জেলখানায় বন্দি করা হয়। কিন্তু বিপ্লবের কিরণ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হতে থাকে। এই সময়ে নারী অতীতের চেয়ে অধিক সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ইরানের সামাজিক বিবর্তনে নারীর ঐতিহাসিক পটভূমি
এখানে যেটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো, ইসলামি বিপ্লবের সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্রমবিকাশে নারীর সবচেয়ে বেশি কার্যকরী এবং প্রভাবশালী উপস্থিতির বিষয়টি ছিল তাঁদের ‘বিরোধিতা’র সাথে সম্পর্কিত। এই বিরোধিতা ছিল ইমামের খোমেইনীর নেতৃত্বে এবং তাঁর অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে। তাঁরা স্বতস্ফউর্তভাবে এই ‘বিরোধিতাকারী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং এটি মানুষের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। বিস্ময়করভাবে, বিপ্লবী বিক্ষোভ মিছিলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রী অথবা প্রশাসনে চাকুরিরত নারীর তুলনায় গৃহিণী নারীদের ভূমিকা ছিল অধিক।
বিপ্লবী বিক্ষোভ মিছিল ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ ইসলামি বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। কারণ, জনসংখ্যার অর্ধেক ছিলেন নারী এবং তাঁরা বিপ্লবের সময় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারীদের ভূমিকার বিষয়টি এজন্য সংবেদনশীল যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মকাণ্ডের গভীর প্রভাব রয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের সময়, ইসলামি বিপ্লবের পরে এবং পবিত্র প্রতিরক্ষার যুদ্ধের সময়ও নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলামি বিপ্লবে উপস্থিতির মাধ্যমে ইরানি নারীরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করেন : অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং নারীর প্রতি সমাজের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন।
ইমাম খোমেইনী সমাজে নারীর ভূমিকা ও উপস্থিতির প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নারীর এই নতুন ভূমিকা ইসলামের কাঠামো এবং হযরত ফাতিমা (আ.)-এর অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে। পবিত্র প্রতিরক্ষার যুদ্ধের সময় এটি প্রতিভাত হয়েছে যে, এ যুদ্ধে নারীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন যা ব্যতীত কোন কিছুই অর্জন করা সম্ভব ছিল না। নারীর কেন্দ্রীয় বা প্রধান ভূমিকার প্রতি নির্দেশ করে ইমাম খোমেইনী বলেছিলেন : ‘আমাদের যা কিছু রয়েছে, তার সবকিছুই নারীর কারণে…’
ইসলামি বিপ্লবে নারীর মৌলিক ভূমিকা
ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পূর্বে ইরানি নারীরা বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন। এখানে নারীর দুটি মৌলিক ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে যা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর বক্তব্যে বারংবার শোনা যেত।
১. নারী : ইসলামি আন্দোলনের নেতা
ইসলামি বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী, যিনি তাঁর বক্তব্যে কখনই অত্যুক্তি বা অবমূল্যায়ন করতেন না, তিনি ইসলামি বিপ্লবের সময় নারীর ভূমিকা সম্পর্কে বলেন : ‘পুরুষরা নারীদের অনুসরণে বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত করেছিল।’ এবং ‘ ইরানি নারীরাই কোম ও অন্যান্য শহরে বিপ্লবের অগ্রদূত।’
২. ইসলামি বিপ্লবের দিকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা
ইমাম খোমেইনী প্রায়ই বলতেন : ‘নারী পুরুষদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে; আমাদের জাতি সাহসী নারীদের আত্মমনোবলের নিকট ঋণী।’ অনেক ক্ষেত্রেই ইমাম খোমেইনী নারীকে বিপ্লবের সংকটময় মুহূর্তগুলোতে পুরুষকে ‘সাহস সঞ্চারকারী’ ও ‘প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিতকারী’ হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন।
বিপ্লবপূর্ব ইরানি সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতির আধিপত্য এবং একটি বিশেষ সামাজিক শ্রেণি গঠনের কারণে নারী সবধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন ও কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ইরানের বিপ্লবের পূর্বে সমাজে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর অবস্থানকে বিবেচনা করা হতো-
একটি দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে নৈতিকতা-বিবর্জিত পুরুষের বিনোদনের কাজে ব্যবহারের একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় উপাদান হিসেবে দেখা হতো। আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে দুর্বল লতার মতো মনে করা হতো যারা কোন শক্তি ও জবরদস্তিকে প্রতিহত করতে পারে না এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনেও সক্ষম নয়।
বিপ্লবের সময় যুগপৎভাবে ইরানি নারীরা অপবিত্রতা ও অবক্ষয়ের খাঁচা ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন এবং পুরুষের সহযোগী হয়ে তৎকালীন সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিমাচূর্ণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
বিজয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন
ইরানের ইসলামি বিপ্লব কিছু অনন্য গুণ-বৈশিষ্ট্য ধারণ করে আছে যা একে বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লব থেকে পৃথক করেছে। এসব বৈশিষ্ট্যের অন্যতম হলো বিপ্লবে নারীর ভূমিকা। [শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহ্হারী, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ওপর বক্তব্য থেকে, কোম, সেদার ১৩৭৪]
বিপ্লবোত্তর নারী
ইসলামি বিপ্লবের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, নারীর উপস্থিতি কেবল বিক্ষোভ মিছিল ও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং বিপ্লবের লক্ষ্যকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও তাঁরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানি নারীরা পুরুষের মতোই দেশের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন।
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনী সমাজের অগ্রগতি এবং ইসলামি বিপ্লবের ক্রমোন্নতিতে নারীর অবস্থানের ওপর আলোকপাত করেন। এটিই সত্য এবং প্রকৃতপক্ষে ইসলামি বিপ্লব ইরানি নারীদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা কামনা করছিল যাতে তাঁরা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন প্রলোভনের নিকট নতি স্বীকার না করেন- যা নারীকে তাদের শয়তানি ও ধ্বংসাত্মক লক্ষ্য পূরণের একটি হাতিয়ার বলে মনে করে। ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা সবসময়ই সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্যের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।
সংবিধানে নারী
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংবিধান নারীর অধিকার, সামাজিক কর্মকা-ে তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ এবং আইনের সামনে পুরুষের মতোই সাম্য ও নিরপেক্ষতার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। সংবিধানের ৩ নং ধারার ১৪ নং অনুচ্ছেদে এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে, নারী-পুরুষের সকল অধিকার প্রদান এবং সকলের জন্য আইনগত সুরক্ষার পাশাপাশি সকলের জন্য সমানাধিকার নিশ্চিত করা ইসলামি সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক। আইনের ২১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইসলামি নীতির ভিত্তিতে সকল নারীর অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে সরকার বাধ্য। এই আইন অনুসারে সরকারকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্পাদন করতে হবে :
১. নারীর অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক অধিকারের পুনরুজ্জীবনসহ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যসমূহের উন্নয়নে যথাযথ ভিত্তি গড়ে তোলা।
২. নারীর প্রতিরক্ষা এবং পরিপোষণ করা, বিশেষ করে গর্ভধারণের সময়কালে এবং এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ।
৩. পরিবারের ভিত্তিকে রক্ষার জন্য নিরপেক্ষ আদালত প্রতিষ্ঠা।
৪. বয়স্ক নারীদের জন্য বিশেষ বিমা সুবিধা প্রদান।
৫. আইনগত অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে অসহায় মায়েদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ।
এ দৃষ্টিকোণে সমাজের নারীরা যাঁরা অনেক সামাজিক ক্ষতি ভোগ করে আসছিলেন এবং ইসলামি ও মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন তাঁদেরকে সত্যিকার ইসলামি সেবা দেয়া হয়। সংবিধান প্রথমত, পরিবারে মা হিসেবে নারীদের যে প্রাথমিক ভূমিকা রয়েছে তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে; দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকাকে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের অগ্রগতির জন্য পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করেছে।
সূত্র: ইরানের Islamic Thought Foundation কর্তৃক প্রকাশিত নারী সাময়িকী Mahjuba, January, ২০১৭
অনুবাদ : মো. আশিফুর রহমান