ইরান পরিচিতি : মাশহাদ
পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৮, ২০১৬
-কামাল মাহমুদ
জনসংখ্যার দিক থেকে ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হচ্ছে মাশহাদ। এটি রাজাভী খোরাসান প্রদেশের রাজধানী। এর অবস্থান ইরানের দক্ষিণে আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের সীমান্ত এলাকায়। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ৪ মিলিয়ন। এখান থেকে পূর্ব ইরানের মরুদ্যান হয়ে সিল্ক রোড র্মাভ শহরের সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। আহলে বাইতের অস্টম ইমাম আলী রেযা (আ.)-এর মাযারের কারণে মাশহাদ সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক এ মাযার যিয়ারত করতে আসেন। ফেরদৌসীর শহর হিসেবে মাশহাদের খ্যাতি রয়েছে। তাঁর রচিত বিখ্যাত ‘শাহনামা’ ইরানের জাতীয় বীরত্বগাথা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়াও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জন্মস্থান এ মাশহাদ।
ব্যুৎপত্তি
‘মাশহাদ’ আরবি শব্দ। অর্থ শাহাদাত বরণ করার স্থান। যেহেতু এখানে ইমাম রেযা শাহাদাত বরণ করেছেন এবং তাঁর মাযারও এখানে অবস্থিত তাই এ শহরের নাম মাশহাদ। ৯ম শতাব্দীতে মাশহাদ ছিল একটি ছোট গ্রাম যার নাম ছিল সানাবাদ। এর অবস্থান তুশ শহর থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে। ৮০৮ সালে আব্বাসী খলিফা হারুন অর রশীদ এই স্থান অতিক্রম করার সময় অসুস্থ হয়ে মারা যান। তাকে এখানেই সমাধিস্থ করা হয়। এর কয়েক বছর পর ৮১৮ সালে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর চাচাতো ভাই ও জামাতা হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের বংশধর হযরত আলী বিন মূসা আর-রেযা খলিফা আল-মামুন কর্তৃক বিষপ্রয়োগে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁকে এ স্থঅনেই সমাহিত করা হয়। এরপরেই এ শহরের নাম হয় মাশহাদ আল-রেযা। তখন থেকেই মানুষজন ইমাম রেযার মাযার যিয়ারত আরম্ভ করেন। নবম শতাব্দীর শেষ দিকে ইমাম রেযার মাযারের বিশাল আকৃতির গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। এ মাযারকে ঘিরে বহু স্থাপনা, বাজার ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে বহুবার এ মাযার সংস্কার করা হয়।
মোগল আমলের পূর্বে ১২২০ সাল পর্যন্ত এ শহরকে খুব বড় শহর হিসেবে গণ্য করা হতো না। খোরাসানের অনেক শহর আক্রান্ত হবার পরে সেখানকার অধিবাসীরা মাশহাদে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। ১৩৩৩ সালে ইবনে বতুতা এ শহর ভ্রমণ করেন। তিনি মাশহাদকে ফুল-ফল-বৃক্ষ আর নানা রঙের টাইলসে সমৃদ্ধ মাযারের শহর হিসেবে আখ্যা দেন। পরবর্তী সময়ে ১৪১৮ সালে তৈমুরীয় শাসক শাহরুখ মির্যার স্ত্রী গোহারশাদ ইমাম রেযার মাযারের পাশে একটি বিশাল মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি গোহারশাদ মসজিদ নামে অভিহিত।
সাফাভী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম শাহ ইসমাঈল এ শহর দখল করেন এবং তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। প্রথম শাহ আব্বাসের শাসনকালে উজবেকরা এ শহর দখল করে নেয়। ১৫৯৭ সালে বহু কষ্টে হেরাতের যুদ্ধে উজবেকদের হারিয়ে শাহ আব্বাস এ শহর দখল করেন। প্রথম শাহ আব্বাস মাশহাদকে তীর্থস্থানে পরিণত করার জন্য ইরানীদের অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর সময়কালে মাশহাদ ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে পরিণত হয়।
ধর্মীয় দিক ছাড়াও রাজনৈতিক দিক দিয়েও মাশহাদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ১৭৩৬ থেকে ১৭৪৭ সাল পর্যন্ত নাদির শাহের সময়কালে মাশহাদ গৌরবময় হয়ে ওঠে। মাশহাদ আফসারিয়া ও যান্দ, এমনকি আগা মোহাম্মাদ কাচারের সময়কাল (১৭৯৬ সাল) পর্যন্ত এটি খোরাসান অঞ্চলের রাজধানী হিসেবে স্বমহিমায় ভাস্বর ছিল। এছাড়া কিয়ানিদ সাম্রাজ্য, মালেক মাহমুদ সিস্তানী, নাদির শাহ, আদিল শাহ, শাহরূক, নাদির মির্জা, সাফাবী সাম্রাজ্যকালেও মাশহাদ রাজধানী হিসেবে গৌরবময় ছিল।
১৯১২ সালে রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত বোমায় ইমাম রেযার মাযারের অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তীকালে তা সংস্কার করা হয়। ১৯৩৫ সাল রেযা পাহলভীর ধর্মহীন রাজনীতির ধারকেরা ইমাম রেযার মাযার দখল করে নেয়। অনেক ভক্ত ও ব্যবসায়ীদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। অবশিষ্ট ব্যবসায়ীদের ওপর বিপুল অংকের কর আরোপ করা হয়। জনগন রেযা শাহ পাহলভীকে ‘নতুন ইয়াযীদ’ আখ্যা দেয়। ১৯৯৪ সালের ২০ জুন ইমাম রেযার মাযারে আত্মঘাতী বোমা হামলা করা হয়। এতে ২৫ জন যিয়ারতকারী নিহত হয়। এজন্য ২০ জুনকে ‘মাশহাদের আশুরা’ বলা হয়।
অবস্থান
মাশহাদ ৩৬.২০০ অক্ষাংশে এবং ৫৯.৩৫০ পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৫০ মিলিমিটার। এখানে একদিকে যেমন তুষারপাত হয় অন্যদিকে তেমনি বেশ গরমও পড়ে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫০ সেলসিয়াস (৯৫০ ফারেনহাইট)। শীতকালে শহরের অনেক জায়গা বরফের নিচে চলে যায়। বার্ষিক প্রায় ২৯০০ ঘণ্টা সূর্যালোক ভোগ করতে পারে মাশহাদ। তুর্কমেনিস্তান কাশাক নদীর উপত্যকা অঞ্চলে অবস্থিত। বিনালুদ ও হেযার মসজিদ নামক দুটি পর্বতের মধ্যখানে এর অবস্থান। ফলে এখানের আবহাওয়ায় রয়েছে বৈচিত্র্য। এখানে রয়েছে শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম ও শরৎকাল। এটি তুর্কমেনিস্তান এর আসগাবাদ থেকে মাত্র ২৫০ কি. মি. (১৬০ মাইল) দূরে অবস্থিত।
মাশহাদ ১৩টি প্রশাসনিক ইউনিটে বিভক্ত। ৪ মিলিয়ন অধিবাসীর অধিকাংশ প্রাচীন পারস্যের অধিবাসী। যার ৯৫% শহরে বাস করে। এছাড়া কুর্দি, তুর্কমেনিস্তান জাতিগোষ্ঠার বসবাস রয়েছে মাশহাদে। এখানে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক থেকে আসা অনেক অভিবাসী রয়েছে।
অর্থনীতি
ইরানের দ্বিতীয় অটোমোবাইল উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল মাশহাদ। এখানকার অর্থনৈতিক সামগ্রীর মধ্যে শুকনো ফল, লবণাক্ত বাদাম, জাফরান, গাজ, সোহান, নানা রকম অলংকারের পাথর, রৌপ্য ও স্বর্ণ অলংকার, পারফিউম, কার্পেট প্রভৃতি। নানা প্রকৃতির কল-কারখানা রয়েছে মাশহাদে। যেমন- কাপড়, চামড়া, টেক্সটাইল, কেমিক্যাল, স্টীল, মিনারেল, নির্মাণ সামগ্রী, মেটাল ইন্ডাস্ট্রি প্রভৃতি। পর্যটন স্বর্গ মাশহাদে বসবাসের জন্য রয়েছে অনেক আবাসিক হোটেল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লোকেরা মাশহাদ ভ্রমণ করতে আসে। প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন পর্যটক মাশহাদ ভ্রমণ করে থাকে। তেহরানের পরে মাশহাদেই রয়েছে সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী সেন্টার। ইলেকট্রিক ও কম্পিউটার সামগ্রীর অনেক বড় বাজার রয়েছে মাশহাদে।
সংস্কৃতি
সুদীর্ঘকাল থেকেই মাশহাদ শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। আয়াতুল্লাহ আল কোহী মাদরাসা সতের শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজও চালু রয়েছে। যেখানে সম্প্রতি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজাভী ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক সাইন্স শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। মাশহাদে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় পুরোনো লাইব্রেরি। এর নাম ‘সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অব অস্তানে কুদ্স রাযাভী’- যা ছয় তলাবিশিষ্ট। এর একটি অংশ হচ্ছে অস্তানে কুদ্স রাযাভী মিউজিয়াম যেখানে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয়ে ৭০০০০ হাজার পা-ুলিপি রয়েছে। প্রায় ছয় মিলিয়ন ঐতিহাসিক দলিলপত্রও এখানে সংরক্ষিত আছে। এখানে রয়েছে অনেকগুলো গ্যালারি। যেমন- মিরাক গ্যালারি, র্পাস গ্যালারি, সোরুস গ্যালারি, নারভান গ্যালারি প্রভৃতি। শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নানারকম সৌকর্যপূর্ণ ভাস্কর্য।
কেনাকাটা
কেনাকাটার জন্য মাশহাদে চারটি বৃহৎ বাজার রয়েছে। যথা: বাজার-ই রেযা, এটি একটি দ্বিতল ভবন এবং শহরের প্রধান কেনাকাটার স্থান। সারা-এ বাজারে রেযা- এটি মূলত কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। বাজারে বোজরগে মারকাযী- শিরাজি অ্যাভিনিউ এর কাছে অবস্থিত। শাহরিয়ার স্কয়ারের কাছে কুয়েতি বাজার। এছাড়াও সারগীস্ত ট্রেড সেন্টার- মাযারের উত্তর পাশে, প্রোমা ট্রেড সেন্টার- জানবায স্কয়ারে, আলমাসে র্সাগ- দক্ষিণ খাইয়াম অ্যাভিনিউতে, জীস্ত খাভার- শরীয়াতী স্কয়ারে অবস্থিত প্রভৃতি বাজার সহ নানা প্রকৃতির ছোটখাট বাজার রয়েছে।
খাবার
ইরানে মূলত মসলাসমৃদ্ধ কিন্তু ঝালবিহীন চেলো কাবাব ও বাকেরী কাবাব সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার। বিভিন্ন প্রকার রুটি অন্যতম প্রধান খাবার। এখানকার অনেক রেস্টুরেন্টে ফাস্ট ফুড সচরাচর পাওয়া যায়। বাংলাদেশীদের মতো ভাত, মাছ ও মাংস পাওয়া যায়- যা খুবই দামী। এখানকার আইসক্রীম বেশ জনপ্রিয় ও সুস্বাদু। আইসক্রীমকে ইরানীরা ‘আইচপার্ক’ বলে থাকে। শরীয়তী স্কয়ারের আইসক্রীম খুবই বিখ্যাত। এখানে চকলেট, আপেল, চেরী, স্ট্রবেরী, কফি, পীচসহ বিভিন্ন ফলের ফ্লেভারও পাওয়া যায়- যা ইউরোপ-আমেরিকাতে খুব জনপ্রিয়।
দর্শনীয় স্থান
ইমাম রেযার মাযার কমপ্লেক্স। ইমাম রেযা ১৪৮ হিজরির ১১ জিলকদ জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০৩ হিজরির ১৭ সফর শাহাদাত বরণ করেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। আল-মামুন তাঁকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। এখানে ইমাম রেযার মাযার ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মকা-। কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে একটি বৃহৎ লাইব্রেরি, গোহারশাদ মসজিদ। কারুকার্যের দিক থেকে এটি পৃথিবীর প্রধান ও আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। এখানে ব্যাগ ও ক্যমেরা নেয়া নিষিদ্ধ। এখানে বিদেশী পর্যটকদের জন্য রয়েছে ইংরেজিভাষী ইরানী গাইড। তাঁরা এ কমপ্লেক্স সংক্রান্ত নানারকম তথ্য দিয়ে থাকেন। তাঁরা বিনামূল্যে কিছু ধর্মীয় বই ও স্টিকার দিয়ে থাকেন। এখানে রয়েছে মিনিয়েচার, মোজাফফার শাহ আমলের বিশালাকৃতির ঘড়ি- যা মাযারের পশ্চিম বারান্দায় অবস্থিত। হেফ্জখানা, মহিলাদের নামায ঘর, পশ্চিম দিকে রয়েছে বালা সার মসজিদ যা বেশ ছোট আকৃতির। অস্তানে কুদ্স মিউজিয়াম, কুরআন মিউজিয়াম, স্ট্যাম্প মিউজিয়াম, অস্তানে কুদ্স মেহমানখানা, নাদির শাহ মনুমেন্ট, ফেরদৌসী মনুমেন্ট, আখানজান টাওয়ার প্রভৃতি স্থান পেয়েছে এ মাযার কমপ্লেক্সে।
এছাড়া এখানে রয়েছে অনেকগুলো পার্ক ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মাযার। যেমন- শেখ বাহায়ী, শেখ হুররে আমেলী, শেখ তাবারসী, নাদির শাহের মাযার প্রভৃতি। এখানকার কোহ সাদী পার্ক খুবই বিখ্যাত। পার্কে সাদী কমপ্লেক্সে রয়েছে চিড়িয়াখানা, যেখানে অনেক বণ্যপ্রাণী রয়েছে- যা অনেক পর্যটককে আকর্ষণ করে। শহরের ৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে খাজা মুরাদ ও খাজা রাবীর মাযার। এছাড়া সাফাবী আমলের ক্যালিগ্রাফার রেযা আব্বাসী এবং খাজা আবসালাত এর মাযারও রয়েছে- যা মাশহাদ থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ২৪ কিলোমিটার দূরে তূসে রয়েছে ‘শাহনামা’র কবি ফেরদৌসীর মাযার। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে শাহ পাবলিক গোসলখানা রয়েছে মাশহাদে- যা অসাধারণ নির্মাণশৈলীতে পূর্ণ। যদিও বর্তমানে এটিকে যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে প্রোমা হাইপার মার্কেট, কিয়ান সেন্টার, মাশহাদের মালেক হাউজ, সেন্ট মেসরোপ আর্মেনিয়ান চার্চ, নাদের শাহ মিউজিয়াম, তূস মিউজিয়াম, সানদিজ টুরিস্ট টাউন, ইমাম রেযা হাসপাতাল, হোমা হোটেল প্রভৃতি।
হোটেল-মোটেল
মাশহাদ পর্যটকদের অতি আকর্ষণীয় স্থান। আর সেজন্য এখানে হোটেল-মোটেলের সংখ্যা প্রচুর। হোটেলের মধ্যে রয়েছে র্পাস হোটেল, গাস্র তালেঈ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল, পার্ডিসান হোটেল। মাযারের কাছে রয়েছে খাইয়্যাম হোটেল, গাদীর ইন্টারন্যাশনাল, দারবেশী হোটেল, ইরান হোটেল, সায়ে হোটেল প্রভৃতি।
যাতায়াত
এখানে রয়েছে মাশহাদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট (শহীদ হাশেমী নেযাদ এয়ারপোর্ট)। যেখানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ওঠানামা করে। এটি ইরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর। এছাড়া যাতায়াতের জন্য রয়েছে মেট্রো রেলপথ যা মারকো বা মাশহাদ আরবান রেলওয়ে কর্পোরেশন নামে পরিচিত। যা চার লেনবিশিষ্ট এবং এর পরিধি ৭৭ কিলোমিটার। ২০১১ সালে এটি চালু হয়। এর ২২টি স্টেশন রয়েছে। মাশহাদে মূলত তিনটি প্রধান রেল লাইন রয়েছে যা মাশহাদ-তেহরান, মাশহাদ-বাফ্গ (দক্ষিণ ইরান), মাশহাদ-সারকাশ (তুর্কমেনিস্তানের সীমানার দিকে)। কিছু কিছু রেল সারকাস থেকে উজবেকিস্তান ও কাজাকিস্তানে যাতায়াত করে। এছাড়া মাশহাদ থেকে হেরাত হয়ে আফগানিস্তানেও রেল যোগাযোগ রয়েছে। পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত রেল লাইন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এগুলো রাহ অহান অব ইরান বা ইরান জাতীয় রেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এছাড়া সড়কপথে যোগাযোগ তো রয়েছেই। তেহরান থেকে মাশহাদের দূরত্ব ৯০০ কিলোমিটার।
শিক্ষা
মাশহাদের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ফেরদৌসী ইউনিভার্সিটি অব মাশহাদ’। এটি দক্ষিণ ইরানের বৃহত্তম গবেষণামূলক বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৪৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত। এটি ইরানের তৃতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ইরানের প্রথম পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। এখানে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি প্রোগ্রামে ইরানী শিক্ষার্থী ছাড়াও আফগানিস্তান, তুরস্ক, লেবানন, সিরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, ইয়েমেন, বাহরাইনসহ নানা দেশের শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৬০০০ (ছাব্বিশ হাজার)। শিক্ষক সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। স্টাফ সংখ্যা ২৫০০। এখানে মানবিক, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, এডুকেশন সাইকোলোজি, ভেটেরিনারী সাইন্স, প্রকৌশলবিদ্যা, বায়োটেকনোলজি প্রভৃতি অনুষদ রয়েছে। এছাড়া মাশহাদ ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সাইন্স, ইসলামিক আযাদ ইউনিভার্সিটি মাশহাদ, মাশহাদ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, পায়ামে নূর ইউনিভার্সিটি অব মাশহাদ, খোরাসান ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, খাইয়্যাম হায়ার এডুকেশন ইন্সটিটিউট, ইমাম রেযা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাযাভী ইউনিভার্সিটি অব ইসলামিক সাইন্স, স্পোর্টস সাইন্স রিচার্স ইন্সটিটিউ অব ইরান প্রভৃতি।
বিখ্যাত কলেজসমূহের মধ্যে রয়েছে সালমান ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, ইবলিয়ান এডুকেশন সেন্টার মাশহাদ ব্রাঞ্চ। খাবারান ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, তূস ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, শহীদ বেহেশতী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, শহীদ খোরশেদী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, আসগার ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, সামিন ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, আল-যাহরা গার্লস টেকনিক্যাল কলেজ, বিনালুদ ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, ইন্সটিটিউট অব অ্যাপলাইড্ অ্যান্ড প্রাকটিক্যাল সাইন্স, সানদিজ ইন্সটিটিউট অব হায়ার এডুকেশন প্রভৃতি। খেলাধুলার জন্য রয়েছে শহীদ বেহেশতী স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব
ইরানের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন শাইখ তূসী, নাসিরুদ্দীন তূসী, বর্তমান রাহবার সাইয়্যেদ আলী খামেইনী, নিজামুল মূল্ক (সালজুক যুগের পণ্ডিত), আল-হুর আল-আমিলী (প্রখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস), আল-গাজ্জালী (ইসলামী চিন্তাবিদ), তিমুর শাহ দুররানী, আলী আল-সিসতানী, মোহাম্মাদ কাজেম খোরাসানী, হোসাইন ভালীদ খোরাসানী, আবু মুসলিম খোরাসানী, মোহাম্মাদ বাকের গালিবাফ, হাদী খোমেইনী, সাইয়্যেদ জালিলী। লেখক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন অরিয়ান গোলমাকানী, ফেরদৌসী, আবু মানসুর দাকীকী, আবুল ফাজল বায়হাকী, আবু সাঈদ আবুল খায়ের, আনওয়ারী, মাহদী আখাবানে সালেস, মোহাম্মাদ তাকী বাহার, আবু জাফর আল কাজীন, জাবির ইবনে হাইহান।