শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

আঞ্চলিক সহযোগিতা পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি

পোস্ট হয়েছে: মে ২, ২০১৭ 

news-image

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ ‘পারস্য উপসাগর জাতীয় দিবস’ উপলক্ষে এক বার্তায় বলেছেন, ৩০ এপ্রিল ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল থেকে পর্তুগীজ বাহিনীর চলে যাওয়ার এ দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবের।

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্র উপকূল থেকে পর্তুগীজ বাহিনী প্রত্যাহারের এ দিবসটি ‘পারস্য উপসাগর জাতীয় দিবস’ নামে ইরানের ক্যালেন্ডারে স্থান পেয়েছে। এ উপলক্ষে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অতীতে ইরানের সমুদ্র উপকূলে বৃহৎ শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের ফলে মানুষের দুঃখদুর্দশার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ কারণেই ইসলামী ইরান স্বাধীনভাবে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোর যে কোনো সমন্বিত পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ অঞ্চলটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে এবং হরমুজ প্রণালী বিশ্বের অন্যতম একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ প্রণালী হিসাবে বিবেচিত। ভৌগোলিক গুরুত্ব ছাড়াও এ অঞ্চলের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ বৃহৎ শক্তিগুলোর লোলুপ দৃষ্টির অন্যতম কারণ।

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের খনি। এ জন্য এ অঞ্চল ‘বিশ্ব জ্বালানি ভাণ্ডার’ নামে পরিচিত। এ অঞ্চলের দেশগুলো প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ হওয়ার কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর দৃষ্টি এদিকে। বিশ্বের বেশিরভাগ জ্বালানির চাহিদা মেটানোর কারণে সমগ্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে এবং এ কারণে জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল সব দেশই এ অঞ্চলের ঘটনাবলীর ওপর গভীর নজর রাখে। আগামীতেও জ্বালানি চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে তেল সমৃদ্ধ পারস্য উপসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্বের মোট জ্বালানি চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি পূরণ করে থাকে। এ ছাড়া, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে উৎপাদিত ৯০ শতাংশ তেল হরমুজ প্রণালীর উপর দিয়ে সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়। বিশ্বে জ্বালানি সরবরাহের প্রধান রুট হওয়ার কারণে হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে এবং এ কারণে এ অঞ্চলের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হওয়া দরকার।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ বিদেশিদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। তারা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষার কথা বলে নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যেখানেই  বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি রয়েছে সেখানেই অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলে আমেরিকা ও ব্রিটেনের নৌবাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি উত্তেজনা সৃষ্টি করা  ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে  আনেনি।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের যে কুফল আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরে ইরানের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। পারস্য উপসাগরে ইরান তার সামরিক মহড়াগুলোর শুভেচ্ছাবাণীতে তাদের মহড়াকে শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা হিসাবে অভিহিত করে বলেছে, এ অঞ্চলের দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

পারস্য উপসাগরে ইরান, ওমান, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, ইরাক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অংশ রয়েছে।  সূত্র: পার্সটুডে।