ইরানি যুব সমাজের উদ্দেশে আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর বিবৃতি
পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৪, ২০১৯

গত ১১ই ফেব্রুয়ারি (২০১৯) ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের চল্লিশতম বার্ষিকী; চল্লিশ বছর আগে ১৯৭৯ সালের এ দিনে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হয়। তাই বিপ্লবোত্তর একচল্লিশতম বছরের প্রথম দিন হিসেবে এবারের ১১ই ফেব্রুয়ারি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয়।
এবারের বিপ্লব বার্ষিকীতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বস্তরের কোটি কোটি মানুষ সারা দেশে ব্যাপকভাবে গণমিছিল ও জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করে ইসলাম ও ইসলামি বিপ্লবের দুশমনদের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে উত্তরোত্তর শক্তিশালী করে তোলার ও উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেয়ার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করে। সেই সাথে তারা ইসলামি বিপ্লবের স্থপতি ও মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-কে ভক্তি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করে। তেমনি ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ ‘উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী বিগত তিন দশক কাল যাবত ইরানি জাতিকে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান সহ ইসলামি বিপ্লব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে সার্বিকভাবে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করায় তারা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
একই উপলক্ষে, ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার ইরানি যুব সমাজের উদ্দেশে এক বিবৃতি প্রদান করেন। ইরানি জনগণ ইসলামি বিপ্লবের বিস্ময়কর বরকতের বদৌলতে বিগত চল্লিশ বছর যাবত গৌরবময় পথপরিক্রমার মাধ্যমে তাদের প্রিয় দেশকে বিশ্বসমাজে যে যথোপযুক্ত আসনে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে এ বিবৃতিতে তিনি তার বিভিন্ন পর্যায়ের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে যুব সমাজের বাস্তবদর্শী আশা-আকাঙক্ষার ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদেরকে যে সব বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং তাদেরকে এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
রাহ্বারের বিবৃতি প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, তিনি কেবল একজন ইসলামি শাসকই নন, বরং সেই সাথে একজন যুগসচেতন সুবিজ্ঞ মুজতাহিদ এবং এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব সময়ই তাঁর নখদর্পণে। অধিকন্তু তিনি একজন মনীষী লেখকও বটে এবং এ কারণে গভীর ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যবহ প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে দক্ষতার অধিকারী। তাই তিনি তাঁর এ বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাঠক-শ্রোতাদের সময়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে যথাসাধ্য সংক্ষিপ্ততার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেছেন- যাকে ঝিনুকের মধ্যে সমুদ্রকে উপস্থাপনের সাথে তুলনা করা চলে। ফলত অনেক ক্ষেত্রে তিনি বক্তব্যের সংক্ষিপ্ততা ও গতিশীলতার স্বার্থে গভীর, ব্যাপক ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যবহ পরিভাষা ও দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করেছেন। আমরা আমাদের সর্বস্তরের পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি দৃষ্টি রেখে অনুবাদকে আক্ষরিক অনুবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যথাসম্ভব সহজবোধ্য করার চেষ্টা করেছি এবং তা করতে গিয়ে কতক ক্ষেত্রে এক বাক্য ভেঙ্গে একাধিক বাক্যে পরিণত করতে বাধ্য হয়েছি ও কয়েকটি ক্ষেত্রে পাদটীকা যোগ করেছি।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। তা হচ্ছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পিছনে এবং বিগত চার দশক যাবত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের হেফাযত ও একে উন্নতি-অগ্রগতির সর্বোচ্চ শিখরের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার পিছনে নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রচেষ্টা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে বিপ্লবোত্তর কালে ইরানে নারীশিক্ষার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটিতে বর্তমানে সাক্ষরতার হার শতকরা ৯৭ ভাগের উর্ধ্বে, কিন্তু উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের হার পুরুষদের হারকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই স্বভাবতঃই দেশগড়ার ক্ষেত্রে উচ্ছ শিক্ষিত যুব সমাজের মধ্যে নারীদের অবদানই বেশি এবং অদূর ভবিষ্যতেও বেশি থাকবে। তাই রাহ্বার যে جوانان {‘জাভনন্’ – যা جوان ‘জাভন্’ শব্দের (বাংলায় যার উচ্চারণ ‘জওয়ান্’) বহুবচন]-এর উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যুব সমাজকে বুঝিয়েছেন। স্মর্তব্য ফারসি ভাষায় বিশেষ্য ও বিশেষণবাচক শব্দাবলি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ব্যবহৃত হয় (جوان এ ধরনেরই একটি শব্দ) যদি না একটি শব্দ বিশেষভাবে নারী বা পুরুষ বুঝাবার জন্য তৈরি হয়ে থাকে বা তার আগে নারীবাচক বা পুরুষবাচক বিশেষণ ব্যবহৃত হয় [যেমন : پير مرد (পিরে র্মাদ্) – বৃদ্ধ; پير زن (পিরে যান্) – বৃদ্ধা]।
আশা করি রাহ্বারের এ বিবৃতি ইরানের ইসলামি বিপ্লব, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও বিশ্বপরিস্থিতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাগণকে সংক্ষেপে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হবে।
বিনীত
অনুবাদক
নূর হোসেন মজিদী
ঢাকা, ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯
রাহ্বারের বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্-হাম্দু লিল্লাহি রাব্বিল্ ‘আলামীন্ ওয়াছ-ছালাতু ওয়াস্-সালামু ‘আলা সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদ্ ওয়া আলেহিত্ব্-ত্বাহেরীন্ ওয়া ছাহবিল মুন্তাজাবীন্ ওয়া মান্ তাবে‘আহুম্ বে-ইহ্সান্ ইলা ইয়াওমিদ্দীন্।
নির্যাতিত ও নিপীড়িত জাতিসমূহের মধ্য থেকে খুবই কম সংখ্যক জাতি বিপ্লব করার মতো সাহসিকতা প্রদর্শন করে থাকে। যে সব জাতি রুখে দাঁড়িয়েছে ও বিপ্লব করেছে সে সব জাতির মধ্যে এমন জাতি খুব কমই দেখা গেছে যারা বিপ্লবকে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পেরেছে এবং কেবল সরকার পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি, বরং বৈপ্লবিক আশা-আকাক্সক্ষার হেফাযত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ইরানি জাতির গৌরবময় বিপ্লব হচ্ছে নতুন যুগের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংঘটিত বিপ্লব। এটি হচ্ছে একমাত্র বিপ্লব যা এ বিপ্লবের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করে গৌরবময় চল্লিশটি বছর অতিক্রম করে আসতে পেরেছে। যদিও বিপ্লবের দুশমনরা সব সময়ই ইরানি জনগণকে এমন সব কুমন্ত্রণা দিয়ে আসছিল যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল, কিন্তু তারা তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয় এবং বিপ্লব তার মর্যাদা ও স্লোগানসমূহের মৌলিকত্বের প্রতি নিষ্ঠার পরিচয় দেয়। এখন বিপ্লব ও বিপ্লবীরা আত্মগঠন, সমাজগঠন ও সভ্যতা বিনির্মাণের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাই আমি আমার অন্তঃকরণের অন্তঃস্থল থেকে এ জাতির জন্য এবং যে প্রজন্ম এর সূচনা করেছে ও যে প্রজন্ম এখন দ্বিতীয় চল্লিশ বছরের এক বিরাট ও বৈশ্বিক দৃশ্যপটে প্রবেশ করছে তার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দো‘আ করছি।
বিশ্ব যখন বস্তুবাদী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে বিভক্ত ছিল এবং যখন একটি বিরাট দ্বীনী আন্দোলন সম্ভব হওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতো না তখন ইরানের ইসলামি বিপ্লব সর্বশক্তিতে ও পরিপূর্ণ গৌরব সহকারে ময়দানে পদার্পণ করে এবং তৎকালে বিদ্যমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক কাঠামোসমূহ ভেঙ্গে ফেলে। ইতিপূর্বে বিশ^বাসীর সামনে অনিবার্য ভবিষ্যত হিসেবে যে চিত্রসমূহ অঙ্কিত হয়েছিল এ বিপ্লব তাকে দূরে নিক্ষেপ করে, দ্বীন ও দুনিয়াকে পরস্পরের পাশাপাশি উপস্থাপন করে এবং একটি নতুন যুগের সূচনার কথা ঘোষণা করে। আর এ ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক ছিল যে, গোমরাহী ও যুলুম-নিপীড়নের হোতারা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে। কিন্তু তাদের এ সব প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যায়। আধুনিকায়নের দাবিদার ডানপন্থী ও বামপন্থীরা এ নতুন ও ভিন্ন ধরনের আওয়াজ শুনতে না পাওয়ার ভান করে এবং এ আওয়াজের কণ্ঠরোধ করার জন্য ব্যাপকভাবে ও নানা ধরনের অপচেষ্টা চালায়, কিন্তু তারা যত অপচেষ্টা চালায় ততই এক অনিবার্য পরিণতির নিকটতর হতে থাকে।
ইতিমধ্যেই ইসলামি বিপ্লবের চল্লিশটি বিজয় বার্ষিকী ও ‘ইসলামি বিপ্লবের দশ প্রভাত’ নামে চল্লিশটি উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে, অন্যদিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ঐ দুইটি দুশমন-শক্তির ঘাঁটির মধ্যকার একটির ইতিমধ্যেই পতন ঘটেছে এবং অপরটি বহু সমস্যার মুখোমুখি; খবরে প্রকাশ যে, সে সব সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে সে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কিন্তু ইসলামি বিপ্লব স্বীয় স্লোগানগানসমূহের হেফাযত ও অনুসরণ করে একইভাবে সামনে এগিয়ে চলেছে।
যে কোনো কিছুর জন্যই একটি কল্যাণকর আয়ুষ্কাল ও তা ব্যবহারের সর্বোচ্চ তারিখ সম্পর্কে ধারণা করা চলে। কিন্তু এ দ্বীনী বিপ্লবের বিশ্বজনীন স্লোগানগানসমূহ এ নিয়মের ব্যতিক্রম; এগুলো কখনোই ব্যবহারের অযোগ্য ও কল্যাণবিহীন বলে প্রমাণিত হবে না। কারণ, এ সব স্লোগান সকল যুগের মানুষের প্রকৃতির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
বস্তুত মুক্তি, নৈতিকতা, চরিত্র, সুবিচার, স্বাধীনতা সম্মান, বিচারবুদ্ধির ভিত্তি, ভ্রাতৃত্ব- এগুলো হচ্ছে এমন বিষয় যার কোনোটিই কোনো এক বিশেষ প্রজন্মের সাথে ও কোনো বিশেষ সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় যে, তা এক যুগে সমুজ্জ্বল হয়ে আলো বিতরণ করবে ও আরেক যুগে তা অস্তমিত হবে। কখনোই এমন কোনো জাতির কথা ধারণাও করা যায় না যে জাতি এ সব বরকতময় আশা-আকাক্সক্ষা থেকে হতাশ হতে পারে।
বস্তুত ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে যখনই কিছুটা হতাশা দেখা গিয়েছে তখন তা দেখা গিয়েছে এ সব দ্বীনী মূল্যবোধের দিক থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণে; এগুলোর অনুসরণ করার ও এগুলো বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালানোর কারণে নয়।
ইরানের ইসলামি বিপ্লব একটি প্রাণশীল ও ইচ্ছাশক্তির অধিকারী অস্তিত্বের ন্যায় সব সময়ই ‘স্থিতিস্থাপকতার অধিকারী’ এবং স্বীয় ভুলভ্রান্তি সংশোধনের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু স্বীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে ও তার ওপরে চাপিয়ে দেয়া কোনো কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। এ বিপ্লব যে কোনো সমালোচনার মুখে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে থাকে এবং এগুলোকে আল্লাহ্ তা‘আলার নে‘আমত্ হিসেবে ও সেই সাথে যে সব দায়িত্বশীল শুধু কথা বলে কিন্তু কাজ করে না, তাদের জন্য সতর্ক বাণী হিসেবে গণ্য করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্র রহমতে যে সব মূল্যবোধ জনগণের দ্বীনী ঈমানের সাথে সংমিশ্রিত, কোনো বাহানায়ই এ বিপ্লব তা থেকে দূরে সরে যাবে না।
ইসলামি বিপ্লব তার নিজস্ব শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার পর থেকে কখনোই অচলাবস্থার মুখোমুখি হয় নি ও ভবিষ্যতেও হবে না এবং এটি নিভে যায় নি ও ভবিষ্যতেও নিভে যাবে না। এ বিপ্লব বৈপ্লবিক উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার মধ্যে কোনো ধরনের বিরোধ, বৈপরীত্য ও সামঞ্জস্যহীনতা দেখতে পাচ্ছে না, বরং এ বিপ্লব চিরদিন ইসলামি শাসনব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ ও মতামতের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান চোখ-কান বন্ধ করে নেই এবং নতুন নতুন বিষয় ও অবস্থা সম্পর্কে মোটেই উদাসীন, নিস্পৃহ বা অনুভূতিহীন নয়, তবে কঠোরভাবে স্বীয় মূলনীতিসমূহের অনুসরণকারী এবং স্বীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের ও দুশমনদের সাথে সীমানা বজায় রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোরভাবে সংবেদনশীল।
এ বিপ্লব স্বীয় কর্মধারা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা থেকে কখনোই বিরত থাকবে না। এ বিপ্লবের জন্য এটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তা কেন টিকে থাকবে ও কীভাবে টিকে থাকবে।
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, যা কিছু করা উচিত তার ও বাস্তবে যা কিছু করা হয়েছে তার মধ্যে ব্যবধান রয়েছে এবং এ ব্যবধান সব সময়ই বিপ্লবের আশা-আকাঙক্ষার বাস্তবায়নকামী বিবেকগুলোকে কষ্ট দিয়েছে ও দিচ্ছে। তবে এ ব্যবধান অতিক্রম করা সম্ভব এবং বিগত চল্লিশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বার বার তা অতিক্রম করা হয়েছে এবং এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, ভবিষ্যতে ঈমানদার, সুবিজ্ঞ ও লক্ষ্য অর্জনে আত্মনিয়োজিত যুব প্রজন্মের প্রচেষ্টা ও কর্মতৎপরতার কারণে এ ব্যবধান অনেক বেশি শক্তিমত্তা সহকারে অতিক্রম করা হবে।
ইরানি জাতির ইসলামি বিপ্লব অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু একই সাথে এ বিপ্লব দয়ার্দ্র ও ক্ষমাশীল, এমনকি মজলুম। এ বিপ্লব চরমপন্থা ও বামপন্থার কবলে পড়ে নি যা ইতিপূর্বে অনেক অভ্যুত্থান ও আন্দোলনকেই কলঙ্কিত করেছে। কোনো সংঘাত ও যুদ্ধেই- এমনকি আমেরিকা ও সাদ্দামের সাথে যুদ্ধেও – এ বিপ্লব প্রথম গুলি নিক্ষেপ করে নি এবং সকল ক্ষেত্রেই দুশমনদের পক্ষ থেকে হামলার শিকার হবার পর নিজের প্রতিরক্ষা করেছে, অবশ্য অত্যন্ত শক্তিশালী পাল্টা আঘাত হানার মাধ্যমে তা করেছে।
এ বিপ্লব শুরু থেকে আজ পর্যন্ত না কখনো নির্দয় ও রক্তপাতকারী ছিল, না কখনো হামলাকে সহ্য করে নিয়েছে বা তার মোকাবিলায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে। বরং এ বিপ্লব সব সময়ই বলদর্পী ও ক্ষমতামদমত্তদের মোকাবিলায় সরাসরি ও সাহসিকতার সাথে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং মজলুম ও মুস্তায‘আফদের ( নিপীড়িত, দুবর্ল, অসহায় ) পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অঙ্গনে বিশ্বের মযলূমদের পাশে দাঁড়ানোর এ বৈপ্লবিক মহানুভবতা ও বন্ধুত্ব, এ আন্তরিকতা, সুস্পষ্টতা ও শক্তিমত্তা এবং এ কর্মনীতি ইরান ও ইরানিদের উন্নতশির মর্যাদার উৎস; আশা করি সব সময়ই এমনটাই হবে ।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় এবার আমি প্রিয় যুব সমাজের উদ্দেশে-যে প্রজন্ম মহান ইসলামি ইরানকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সূচিত বিরাট জিহাদের আরেকটি অংশ শুরু করার জন্য কর্মের অঙ্গনে পদার্পণ করতে যাচ্ছে-কিছু কথা বলব।
এ ক্ষেত্রে প্রথমেই অতীত সম্পর্কে কথা বলতে হয়।
প্রিয় যুব সমাজ!
বস্তুত না-জানা বিষয়গুলো অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে বা অন্যদের অভিজ্ঞতা জানার মাধ্যমে ব্যতীত আয়ত্ত করা সম্ভবপর নয়। আর আমরা যা কিছু দেখেছি ও যা কিছুর অভিজ্ঞতা হাসিল করেছি তোমরা যুব প্রজন্ম সে সবের অনেক কিছুই দেখ নি ও সে সবের অভিজ্ঞতা অর্জন কর নি। আমরা দেখেছি এবং তোমরা দেখবে।
আগামী দশকগুলো হচ্ছে তোমাদের যুগ। তখন তোমাদেরকেই কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা হাসিল করতে হবে এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা সহকারে স্বীয় বিপ্লবের হেফাযত করতে হবে। এ বিপ্লবকে এর মহান আশা-আকাক্সক্ষার অর্থাৎ একটি নতুন ইসলামি সভ্যতা গড়ে তোলার ও মহান বেলায়াতের সূর্যোদয়ের (এর জন্য আমরা আত্মোৎসর্গী হই) যত বেশি সম্ভব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোমাদেরকেই পালন করতে হবে।
ভবিষ্যতে সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে অতীতকে সঠিকভাবে জানতে হবে এবং অন্যদের অভিজ্ঞতাসমূহ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। এ কর্মপদ্ধতির প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা হলে সত্য ও প্রকৃত বিষয়ের জায়গা মিথ্যার দখলে চলে যাবে এবং ভবিষ্যৎ বিভিন্ন ধরনের অজানা হুমকির সম্মুখীন হবে।
ইসলামি বিপ্লবের দুশমনরা বড় ধরনের অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে অতীত সম্পর্কে, এমনকি বর্তমান সম্পর্কেও বিকৃতি ও মিথ্যা ছড়িয়ে চলেছে এবং এ কাজে অর্থ ও অন্য সমস্ত রকমের হাতিয়ার ও উপায়-উপকরণ ব্যবহার করছে। এমন ধরনের রাহাজানের সংখ্যা অনেক যারা চিন্তা, আকীদা ও প্রচারের ক্ষেত্রে রাহাজানি করে থাকে। বস্তুত সত্য ও প্রকৃত বিষয় কখনোই শত্রুদের ও তাদের পদাতিক বাহিনীর কাছ থেকে শুনতে পাওয়া সম্ভব নয়।
ইসলামি বিপ্লবের প্রভাব ও অর্জন
ইসলামি বিপ্লব ও তা থেকে উদ্ভূত শাসনব্যবস্থা শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রথমত, সবকিছুই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে ছিল তৎকালীন ত্বাগূতী শাসনব্যবস্থা- যা একদিকে যেমন ছিল পরনির্ভরশীল, দুর্নীতিপরায়ণ, স্বৈরাচারী ও সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন শাসনের ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে সেটি ছিল ইরানের ইতিহাসে প্রথম রাজতান্ত্রিক শাসন- যা নিজের তলোয়ারের শক্তির বদৌলতে ক্ষমতা দখল করে নি, বরং তাদেরকে বিজাতীয়দের দ্বারা ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। তেমনি আমাদের বিরুদ্ধে ছিল আমেরিকান সরকার ও আরো কয়েকটি পশ্চিমা সরকার। একইভাবে তখন দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতা ও অন্য যে কোনো মর্যাদার দিকের বিবেচনায়ই দেশ ছিল লজ্জাজনকভাবে পশ্চাদপদ।
দ্বিতীয়ত, আমাদের সামনে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ও অতিক্রম করে আসা কোনো পথ ছিল না। এটা সুস্পষ্ট যে, ঈমান ও ইসলামি জ্ঞানের ভিতর থেকে জন্ম নেয়া এ বিপ্লবের জন্য মার্কসবাদী অভ্যুত্থানসমূহ ও এ ধরনের অন্যান্য অভ্যুত্থান অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হওয়া সম্ভব ছিল না। ইসলামি বিপ্লবিগণ কোনোরূপ অনুসরণীয় মডেল ও অভিজ্ঞতা ব্যতীতই তাঁদের কাজ শুরু করেছিলেন এবং একমাত্র হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ঐশী দিকনির্দেশনা, নূরানি অন্তঃকরণ ও বিরাট চিন্তাধারা ব্যতীত অন্য কোনো কিছু থেকেই প্রজাতান্ত্রিক ও ইসলামি শাসনব্যবস্থার সমন্বয় সাধন এবং এর গঠন ও উন্নয়ন-অগ্রগতির উপাদান ও উপকরণসমূহ অর্জিত হয় নি। আর এটা ছিল আমাদের বিপ্লবের প্রথম প্রোজ্জ্বল ঝলকানি।
বস্তুত ঐ সময় ইরানি জাতির বিপ্লব তৎকালীন দুই মেরুর বিশ্বকে তিন মেরুর বিশ্বে পরিণত করে। এরপর সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও বিলুপ্তি এবং তার তাঁবেদার সরকারগুলোর পতন ঘটার পর নতুন করে দু’টি শক্তিমেরু অস্তিত্ব লাভ করে। ফলে সমকালীন বিশ্বে ‘ইসলাম বনাম বলদর্পী শক্তি’ নামে পরস্পরের মোকাবিলায় অবতীর্ণ দু’টি নতুন শক্তিকেন্দ্র বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তখন থেকে এর প্রতি একদিকে বিশ্বের মযলূম ও নিপীড়িত জাতিসমূহ, মুক্তিকামী আন্দোলনসমূহ ও কতক স্বাধীনতাপ্রেমী সরকারের আশার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়, অন্যদিকে বলদর্পী সরকারগুলোর ও বিশ্বশোষক ক্ষমতামদমত্ত শক্তিসমূহের শত্রুতার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
এভাবেই বিশ্বের চলার পথ পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং ভূমিকম্পতুল্য এ বিপ্লব আরামের বিছানায় গা ঢেলে দেয়া এ যুগের র্ফি‘আউন্দের নিদ্রা টুটিয়ে দেয়; অতঃপর তাদের পক্ষ থেকে সর্বশক্তিতে এর বিরুদ্ধে দুশমনি শুরু হয়ে যায়। বস্তত ইরানি জাতির ঈমান ও লক্ষ্য অভিমুখে অভিযাত্রার বিরাট শক্তি এবং আমাদের ইমামের (রহ.) আসমানি ও ঐশী মঞ্জুরিপ্রাপ্ত নেতৃত্ব ব্যতীত বিপ্লবী ইরানের পক্ষে এত সব দুশমনী, দুর্দশা, ষড়যন্ত্র ও নোংরামির মোকাবিলায় টিকে থাকা কিছুতেই সম্ভবপর হতো না।
এত সব কঠিন সমস্যা সত্ত্বেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দিনের পর দিন সম্মুখ পানে আরো বড় বড় ও আরো বেশি সুদৃঢ় বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিগত চল্লিশটি বছরে বিশ^বাসী ইসলামি ইরানে বিভিন্ন বড় বড় জিহাদ , অনেক প্রোজ্জ্বল ও গৌরবের স্বাক্ষর এবং বিস্ময়কর উন্নয়ন ও অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে।
ইরানি জাতির এ চল্লিশ বছরের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিশালতা ও ব্যাপকতা কেবল তখনই সঠিকভাবে বুঝা যেতে পারে যদি তা ফরাসি বিপ্লব ও সোভিয়েত ইউনিয়নের অক্টোবর বিপ্লব সহ বড় বড় বিপ্লবের একই মেয়াদের উন্নতি ও অগ্রগতির সাথে তুলনা করা হয়। ইসলামি ঈমান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এবং মহান ইমাম (রহ.) ‘আমরা পারব’ বলে আমাদের সকলকে যে মূলনীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন তার ওপরে আস্থা রেখে যে জিহাদি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে তা সকল ক্ষেত্রেই ইসলামি ইরানকে সম্মান, মর্যাদা ও উন্নয়ন-অগ্রগতিতে উপনীত করেছে।
ইসলামি বিপ্লব ইরানের ইতিহাসের একটি দীর্ঘ অধঃগতির অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে এবং যে দেশটি পাহ্লাভী বংশের শাসনামলে ও তার আগে ক্বাজার বংশের শাসনামলে মারাত্মকভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছিল ও মারাত্মকভাবে পশ্চাদপদ ছিল তা সহসাই দ্রুত উন্নতির মহাসড়কে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ বিপ্লব তার প্রথম পদক্ষেপে ঘৃণ্য স্বৈরাচারী রাজতান্ত্রিক হুকুমতকে গণমুখী ও জনগণ কর্তৃক পরিচালিত হুকুমতের দ্বারা স্থলাভিষিক্ত করে। এরপর জাতীয় ইচ্ছা রূপ যে উপাদানটি হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে ও প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রাণতুল্য সেই জাতীয় ইচ্ছাকে এ বিপ্লব দেশের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সংস্থায় প্রবেশ করায়, এরপর যুব সমাজকে সকল ঘটনার ক্ষেত্রে ময়দানে মূল ভূমিকা পালনকারীতে পরিণত করে ও তাদেরকে পরিচালনার অঙ্গনে প্রবেশ করায়। এ বিপ্লব ‘আমরা পারব’র চেতনা ও বিশ্বাস সকলের মাঝে স্থানান্তরিত করে এবং দুশমনদের নিষেধাজ্ঞা ও বয়কটের বদৌলতে সকলকে দেশের অভ্যন্তরীণ সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করতে শেখায়, আর এটা বিরাট কল্যাণের উৎসে পরিণত হয়।
নিষেধাজ্ঞা ও বয়কটের এ কল্যাণসমূহ হচ্ছে, প্রথমত, তা দেশের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা এবং ভৌগোলিক অখ-ত্ব ও সীমান্ত প্রতিরক্ষাকে-যা শত্রুদের পক্ষ থেকে উপর্যুপরি প্রচণ্ড হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল-নিশ্চিত করে এবং দীর্ঘ আট বছরব্যাপী যুদ্ধে মুজিযাতুল্য বিজয় নিয়ে আসে, আর বাথপন্থী সরকার ও তার আমেরিকান, ইউরোপীয় ও প্রাচ্যের পৃষ্ঠপোষকদের ওপর পরাজয় চাপিয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, ইসলামি বিপ্লব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অঙ্গনসমূহে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, অর্থনীতি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়- যার গৌরবময় সুফলসমূহ এখন দিনের পর দিন ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়ে চলেছে।
দেশে হাজার হাজার বিজ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশের উন্নয়ন, যোগাযোগ ও পরিবহন, শিল্প, বিদ্যুৎ, খনিজ, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হাজার হাজার প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে ও হচ্ছে- যেগুলোতে সারা দেশে লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত ব্যক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষারত ছাত্র-ছাত্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের হাজার হাজার ইউনিট কাজ করেছে ও কর্মরত রয়েছে।
এছাড়া ডজন ডজন বিরাট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে ও হচ্ছে- যেগুলোর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক জ্বালানি চক্র, মৌলিক সেল (কোষ), ন্যানোটেকনোলজি, জৈব প্রযুক্তি ও অন্যান্য ধরনের প্রকল্প।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামি ইরান বিশ্বের মধ্যে প্রথম কাতারে উন্নীত হয়েছে। বিপ্লবপূর্ব কালের তুলনায় তেলবহির্ভূত পণ্যের বার্ষিক রফতানি ষাট গুণ হয়েছে, দেশের শিল্প-ইউনিটসমূহের সংখ্যা প্রায় দশ গুণে উন্নীত হয়েছে, শিল্পের গুণগত মান তার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, সংযোজন শিল্পকে দেশীয় প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়ছে এবং প্রতিরক্ষা শিল্প সহ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভিন্ন শাখায় দৃষ্টিগ্রাহ্য বিরাট উন্নতি সাধিত হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রের বিভিন্ন শাখায় দৃষ্টিগ্রাহ্য ও গৌরবময় উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং এর ফলে এ ক্ষেত্রে বিদেশীরা ইরানের মুখাপেক্ষী হচ্ছে।
এ ধরনের আরো ডজন ডজন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আর এ সবই হচ্ছে সেই চেতনার এবং সকল ক্ষেত্রে জনগণের উপস্থিতি ও সামষ্টিক অনুভূতির ফসল- যা ইসলামি বিপ্লব এ দেশকে উপহার দিয়েছে। অথচ বিপ্লব-পূর্ব কালে ইরানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎপাদন বলতে কিছুই ছিল না, আর ‘শিল্প’ বলতে ছিল একত্র সংযোজন শিল্প এবং ‘বিজ্ঞান’ বলতে অনুবাদ ব্যতীত অন্য কোনো দক্ষতাই ছিল না।
তৃতীয়ত, ইসলামি বিপ্লব রাজনৈতিক বিষয়াদিতে জনগণের অংশগ্রহণকে, যেমন : নির্বাচনসমূহে, অভ্যন্তরীণ ফিতনা ও বিশঙ্খলা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এবং জাতীয় অঙ্গনে ও বলদর্পী শক্তিকে বিতাড়নের অঙ্গনে অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উপনীত করে। অন্যদিকে বিপ্লবের বদৌলতে সামাজিক বিষয়াদিতে জনগণের অংশগ্রহণ, যেমন : ত্রাণ পৌঁছানো ও কল্যাণমূলক কর্মতৎপরতা- যা বিপ্লবের আগেই শুরু হয়েছিল, সে সবে অংশগ্রহণ দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিপ্লবের পর থেকে জনগণ প্রাকৃতিক দর্যোগসমূহে ত্রাণ পৌঁছানো ও সামাজিক ঘাটতি পূরণের কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অংশগ্রহণ করছে।
চতুর্থত, ইসলামি বিপ্লব ইরানি জাতির প্রতিটি সদস্যের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক সমস্যাবলির ব্যাপারে তাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাকে বিস্ময়করভাবে সমুন্নত করেছে। পাশ্চাত্যের, বিশেষত আমেরিকার পৈশাচিক অপরাধসমূহ, ফিলিস্তিন সমস্যা, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ঐতিহাসিক জুলুম-নির্যাতন, বলদর্পী শক্তিসমূহ কর্তৃক বিভিন্ন জাতির মধ্যে যুদ্ধ বাঁধানো, বিভিন্ন ধরনের নোংরামির আশ্রয়গ্রহণ ও জাতিসমূহের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ ও এ ধরনের আরো অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক ভাষ্য ও পর্যালোচনা ও রাজনৈতিক সস্যাবলির অনুধাবন ইতিপূর্বে যেখানে একচেটিয়াভাবে বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত একটি ছোট ও ঘরকুণো গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সেখানে ইসলামি বিপ্লব সে সবকে তাদের খপ্পর থেকে বের করে আনে। ফলে সারা দেশে ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের মধ্যে এ ধরনের বুদ্ধিজীবীসুলভ বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে এবং এ ধরনের বিষয়াদি, এমনকি তরুণ ও কিশোরদের জন্যও সুস্পষ্ট ও বোধগম্য হয়ে ওঠে।
পঞ্চমত, ইসলামি বিপ্লব দেশের সাধারণ সম্পদ ও উপায়-উপকরণ বণ্টনের ক্ষেত্রে সুবিচারের পাল্লাকে ভারী করে দিয়েছে। দেশে সুবিচারের ক্ষেত্রে যে কাজ করা হয়েছে সে ব্যাপারে অধমের পক্ষ থেকে যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয় তার কারণ এই যে, এ সমুন্নত মূল্যবোধটিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার শীর্ষে অতুলনীয় রতœ হিসেবে স্থান দেয়া উচিত- যা এখনো হয় নি। তবে এ কথা থেকে যেন এরূপ অর্থ করা না হয় যে, সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো কাজই করা হয় নি। বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, বিগত চার দশক কালে সুবিচারহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে যে সব সাফল্য অর্জিত হয়েছে এ ক্ষেত্রে অতীতের কোনো যুগের সাফল্যই তার সাথে তুলনীয় নয়।
ইতিপূর্বে ত্বাগূতী সরকারের শাসনামলে দেশের সর্বাধিক সেবা ও জাতীয় আয় রাজধানীতে বসবাসকারী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য ও দেশের আপর কতক এলাকার অনুরূপ ধরনের লোকদের জন্য নির্ধারিত ছিল। বেশির ভাগ শহরের জনগণ, বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার ও গ্রামাঞ্চলের সাধারণ জনগণের স্থান ছিল তালিকার শেষের দিকে এবং সাধারণত তারা অবকাঠামোগত দিক থেকে ও সেবা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ হতেও বঞ্চিত ছিল।
এর বিপরীতে দেশের কেন্দ্র থেকে সারা দেশে এবং শহরসমূহের ধনীদের বসবাসের এলাকাগুলো থেকে শহরগুলোর কম আয়ের লোকদের বসবাসের এলাকায় সেবা ও সম্পদ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী সরকার বিশে^র সর্বাধিক সফল সরকারসমূহের অন্যতম। মহাসড়ক নির্মাণ, গৃহ নির্মাণ, বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র নির্মাণ, কৃষি সংস্কার এবং দেশের প্রত্যন্ত এলাকাসমূহে বিদ্যুৎ ও পানি পৌঁছানো, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ, বিশ^বিদ্যালয়ের ইউনিট প্রতিষ্ঠা, ব্যারেজ নির্মাণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির ক্ষেত্রে যা কিছু আঞ্জাম দেয়া হয়েছে প্রকৃতই তা গৌরবজনক।
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, এত সব কিছু না দেশের পরিচালকদের অপূর্ণ প্রচারে প্রতিফলিত হয়েছে, না দেশের ভিতরে ও বাইরে ইসলামি ইরানের যারা অকল্যাণকামী আছে তারা স্বীকার করেছে। কিন্তু এ সব আছে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ও জনগণের কাছে এ সব কাজ জিহাদি ও আন্তরিকতার অধিকারী পরিচালকদের জন্য নেক আমল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
কিন্তু যেহেতু ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর হুকুমতের অনুসারী হুকুমত হিসেবে পরিচিত হতে চায় সেহেতু এখানে সুবিচারের প্রত্যাশা এর চেয়ে অনেক বেশি। এ প্রত্যাশিত সুবিচারের বাস্তবায়নের জন্য-প্রিয় যুব সমাজ-তোমাদের প্রতি প্রত্যাশার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি এবং এ সম্পর্কে পরে বলছি।
ষষ্ঠত, ইসলামি বিপ্লব সমাজের সাধারণ পরিবেশে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা, মানবিক অনুভূতি ও চারিত্রিক মান দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এ বরকতময় বিষয়টি প্রচলনের পিছনে অন্য যে কোনো কিছুর তুলনায় যা সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে সংগ্রামের যুগে ও বিপ্লবের বিজয়ের পরে নির্বিশেষে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর আচরণ ও মন-মানসিকতা।
পার্থিব জাঁকজমক থেকে মুক্ত এ আধ্যাত্মিক ও আরেফ ব্যক্তিটি দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত হন এবং এর ফলে জনগণের ঈমান অনেক বেশি গভীর ও সুদৃঢ় হয়। ইতিপূর্বে পাহ্লাভী শাসনামলে দুর্নীতি, অনাচার, অনৈতিকতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে বলদর্পীদের প্রচারণার হস্ত জনচরিত্রের ওপর কঠিনভাবে আঘাত হেনেছিল এবং সাধারণ জনগণের জীবনে, বিশেষ করে যুব সমাজের জীবনে পাশ্চাত্যের চারিত্রিক কলুষতার দূষিত নর্দমার ধারা প্রবাহিত করে দিয়েছিল। কিন্তু ইমাম খোমেইনীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যাবলি ইসলামি প্রজাতন্ত্রের যুগে দ্বীনী ও নৈতিক-চারিত্রিক কর্মসূচির ফলে প্রস্তুত ও আলোকিত হৃদয়সমূহকে, বিশেষ করে যুব সমাজের হৃদয়কে অভিভূত করে। আর এর ফলে বিদ্যমান পরিবেশ ও পরিস্থিতি দ্বীন ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অনুকূলে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
ফলত পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধের রণাঙ্গন সহ কঠিন ময়দানসমূহে যুব সমাজের কর্মপ্রচেষ্টা ও সংগ্রামের সাথে যিক্র্, দো‘আ এবং ভ্রাতৃত্ব ও আত্মত্যাগের চেতনা সংমিশ্রিত হয়ে যায়, আর এভাবে ইসলামের প্রথম যুগের ঘটনাবলিকে সকলের দৃষ্টির সম্মুখে নতুন করে জীবন্ত ও দৃশ্যমান করে তোলে। পিতাগণ, মাতাগণ ও স্ত্রীগণ দ্বীনী দায়িত্ব পালনের অনুভূতি সহকারে স্বীয় প্রিয়জনদেরকে পুনরায় ফিরে পাবার প্রত্যাশা ব্যতীতই জিহাদের বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাঠিয়ে দিতে থাকেন এবং এরপর যখন তাঁরা সেই প্রিয়জনদের রক্তস্নাত লাশ বা আহত শরীরের মুখোমুখি হতেন তখন স্বীয় মুসিবতকে আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন সহকারে মেনে নিতেন।
ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর দেশের মসজিদসমূহ ও দ্বীনী পরিবেশ অভূতপূর্ব রওনক্বের অধিকারী হয়। ফলত পালাক্রমে এ‘তেকাফ্ করার সুযোগ লাভের জন্য একেকটি মসজিদের সামনে হাজার হাজার যুবক-যুবতী, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ নারী ও পুরুষকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। তেমনি জিহাদের শিবিরসমূহে, দেশ গড়ার জিহাদে ও বাসিজ-এ (গণবাহিনীতে) পালাক্রমে শামিল হবার জন্য সুযোগ লাভের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী আত্মোৎসর্গপরায়ণ যুবক-যুবতীর দীর্ঘ লাইন গড়ে ওঠে। এছাড়া দেশের সর্বত্র জনগণের মধ্যে, বিশেষত যুব সমাজের মধ্যে নামায আদায়, হজ্ব পালন, পায়ে হেঁটে যিয়ারতে গমন, বিভিন্ন ধরনের দ্বীনী অনুষ্ঠানাদিতে অংশগহণ, আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয়, ফরয বা ওয়াজেব ও মুস্তাহাব্ সাদাকা প্রদান রওনক্বের অধিকারী হয়েছে। আর আজ পর্যন্ত দিনের পর দিন এ প্রবণতা ক্রমেই অধিকতর হচ্ছে ও এ সবের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর এ সব হয়েছে এমন একটি যুগে যখন পাশ্চাত্যে ও তার তাঁবেদার দেশগুলোতে চারিত্রিক অধঃপতন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলছে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষদেরকে দুর্নীতি ও অনাচারের পঙ্কিল ডোবায় টেনে নেয়ার জন্য যে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে তা বিশ্বের বিরাট অংশে চরিত্র, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতাকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের এ ব্যতিক্রমী অবস্থা হচ্ছে ইসলামি বিপ্লব এবং সক্রিয় ও অগ্রগামী ইসলামি শাসনব্যবস্থারই আরেকটি মুজিযাতুল্য সাফল্য।
সপ্তমত, ইসলামি বিপ্লবের আরেকটি অবদান হচ্ছে বিশ্বের বলদর্পী, ক্ষমতামদমত্ত ও দাম্ভিকদের এবং তাদের নেতা বিশ্বভুক ও পৈশাচিক অপরাধী আমেরিকার মোকাবিলায় রুখে দাঁড়ানোর বিরাট, গৌরবময় ও জমকালো ভিত্তি- যা দিনের পর দিন অধিকতর বিরাট ও অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। বস্তুত বিগত চল্লিশ বছরে সব সময়ই আত্মসমর্পণ না করা এবং বিপ্লবের সুরক্ষা ও এ বিপ্লবের মর্যাদা ও ঐশী শৌর্যের হেফাযত, আর দাম্ভিক ও বলদর্পী সরকারগুলোর মোকাবিলায় তাকে উন্নতশির রাখা ইরান ও ইরানিদের, বিশেষত এ দেশের যুব সমাজের সুপরিচিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ফলত, বিশ্বের বুকে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকামী শক্তিগুলো- যারা সব সময়ই স্বীয় অশুভ লক্ষ্য চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা বিনষ্ট করা ও সে সব দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থসমূহ ধ্বংস করাকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র পথ বলে গণ্য করে আসছে, তারা ইসলামি ও বিপ্লবী ইরানের মোকাবিলায় তাদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
ইরানি জাতি ইসলামি বিপ্লবের প্রাণ সঞ্জীবনী পরিবেশে সব কিছুর আগে দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাকারী আমেরিকার হাতের পুতুল লোকগুলোকে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয় এবং আজ পর্যন্ত এ দেশে পুনরায় বৈশ্বিক মাস্তানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সকল অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রিয় যুব সমাজ!
এগুলো হচ্ছে এই মহান, বিরাট টেকসই ও প্রোজ্জ্বল বিপ্লবের বিজয় পরবর্তী বিগত চল্লিশ বছরের অর্জনসমূহের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ শিরোনামসমূহ- যার সাফল্যসমূহকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তোমাদেরকে আগামী দিনে আল্লাহর রহমতে দ্বিতীয় বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিপ্লবের স্লোগানসমূহের প্রতি যদি অমনোযোগিতা না ঘটত এবং বিগত চল্লিশ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত ঘটনাবলির প্রতি যদি উদাসীনতা প্রদর্শন করা না হতো- দুর্ভাগ্যজনক যে, তা হয়েছিল এবং তার ফলে বহু ক্ষতিও হয়েছিল, তাহলে নিঃসন্দেহে এ বিপ্লবের সাফল্য এর চেয়েও অনেক বেশি হতো ও বিরাট আশা-আকাক্সক্ষায় উপনীত হবার পথে দেশ আরো অনেক দূর সামনে এগিয়ে যেত এবং বর্তমানে যে সব সমস্যা দেখা যাচ্ছে সে সব সমস্যার অনেকগুলোই দেখা দিত না। তা সত্ত্বেও বিগত চল্লিশ বছরে যে চেষ্টাসাধনা চালানো হয়েছে তার ফসল এখন আমাদের সামনে আছে। তা হচ্ছে :
দেশ ও জাতি স্বাধীন, মুক্ত, শক্তিশালী, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, দ্বীনদার, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রগামী, বিরাট ও ব্যাপক মূল্যবান অভিজ্ঞতার অধিকারী, আত্মবিশ্বাসী, আশাবাদী, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে প্রভাবের অধিকারী, বৈশ্বিক বিষয়াদিতে শক্তিশালী যৌক্তিক ভূমিকার অধিকারী, দ্রুত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টিকারী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে, যেমন : পারমাণবিক, মৌলিক সেল (কোষ) সমূহ, ন্যানো-টেকনোলজি, মহাকাশবিজ্ঞান ও এ ধরনের অন্যান্য ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টিকারী পর্যায়ে উন্নীত, সামাজিক সেবা বিস্তারের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত, যুব সমাজের মাঝে জিহাদি চেতনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে পূর্ণতায় উপনীত, কর্মদক্ষ যুব জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত এবং আরো অনেক গৌরবজনক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছে। আর এর সব কিছুই হচ্ছে বিপ্লবের ফসল এবং বৈপ্লবিক ও জিহাদি চেতনা সহকারে প্রচেষ্টার ফল।
শক্তিশালী ইরান আজো বিপ্লবোত্তর প্রথম দিককার বছরগুলোর ন্যায় বিশ্বের দাম্ভিক বলদর্পীদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবে দুই সময়ের পরিস্থিতির মধ্যে পুরোপুরি তাৎপর্যবহ পার্থক্য রয়েছে। ঐ সময় আমেরিকার সাথে চ্যালেঞ্জ ছিল ইরানের বুকে বিজাতীয়দের ভাড়াটেদের ক্ষমতা খর্বকরণ বা তেহরানে যায়নবাদী সরকারের দূতাবাস বন্ধকরণ বা গুপ্তচরদের আখড়া কে লাঞ্ছিতকরণকে কেন্দ্র করে। আর আজকের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যায়নবাদী সরকারের দখলাধীন ভূখণ্ডের সীমান্তে শক্তিশালী ইরানের উপস্থিতি, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল থেকে আমেরিকার অবৈধ প্রভাবের উৎখাত সাধন, যায়নবাদীদের দখলাধীন ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি মুজাহিদদের সংগ্রামের প্রতি এবং অত্র অঞ্চলে হিযবুল্লাহ্ কর্তৃক উড্ডীনকৃত পতাকার ও তার প্রতিরোধের প্রতি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সমর্থনকে কেন্দ্র করে। সেদিন যেখানে পাশ্চাত্যের সমস্যা ছিল এই যে, বিপ্লবের বিজয়ের ফলে ইরানে তাদের প্রাথমিক পর্যায়ের অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, আজকে সেখানে পাশ্চাত্যের সমস্যা হচ্ছে প্রতিরোধ বাহিনীগুলোর কাছে ইরানের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র স্থানান্তর।
সেদিন যেখানে আমেরিকা ধারণা করেছিল যে, কয়েক জন আত্মবিক্রিত ইরানির সহায়তায় বা কয়েকটি বিমান ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে ইরানি জাতিকে পরাভূত করতে সক্ষম হবে, সেখানে আজকে তারা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে রাজনৈতিকভাবে ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে মোকাবিলার লক্ষ্যে নিজেকে কয়েক ডজন উগ্র বা ভীতসন্ত্রস্ত সরকারের সাথে মিলে একটি বিরাট জোট গঠনের মুখাপেক্ষী দেখতে পাচ্ছে; অবশ্য এর পরেও আমেরিকা ইরানের সাথে মোকাবিলা করতে গিয়ে পরাজয় বরণ করছে।
বস্তুত ইসলামি বিপ্লবের বদৌলতে ইরান এখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টিতে এক সমুন্নত ও ইরানি জাতির জন্য শোভনীয় একটি অবস্থানে উপনীত হয়েছে এবং স্বীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির ক্ষেত্রে বহু চড়াই-উৎরাই সাফল্যের সাথে অতিক্রম করে এসেছে।
কিন্তু এ পর্যন্ত যে পরিমাণ পথ অতিক্রান্ত হয়েছে তা হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার সমুন্নত আশা-আকাক্সক্ষা অভিমুখী গৌরবময় পথের অংশবিশেষ মাত্র। এ পথের বাকি অংশ-যা অতিক্রম করা অতীতের ন্যায় অত কঠিন হবে না বলে মনে হচ্ছে-তোমাদের যুব সমাজের প্রচেষ্টা, সতর্কতা, দ্রুত কর্মসম্পাদন ক্ষমতা ও উদ্ভাবনীর মাধ্যমে অতিক্রম করতে হবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসমূহে এবং সেই সাথে দ্বীন, চরিত্র, নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা ও সুবিচারের অঙ্গনসমূহে যুব পরিচালকদের, যুব ব্যবস্থাপকদের, যুব চিন্তাবিদদের ও সক্রিয় যুব কর্মীদেরকে দায়িত্বের বোঝা কাঁধে তুলে নিতে হবে। তাদেরকে অতীতের অভিজ্ঞতাসমূহ ও অতীতের অভিজ্ঞতাজাত শিক্ষাসমূহ কাজে লাগাতে হবে, বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি, বৈপ্লবিক চেতনা ও জিহাদী কর্মতৎপরতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং প্রিয় ইরানকে একটি উন্নত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার অনুসরণীয় আদর্শরূপে গড়ে তুলতে হবে।
যারা ইরানের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে সেই যুব সমাজকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হচ্ছে, তারা এমন একটি দেশে বসবাস করছে যে, প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ ও সম্ভাবনার বিচারে যে দেশের সাথে তুলনীয় দৃষ্টান্ত বিরল এবং এ সব সম্পদ ও সম্ভাবনার অনেক কিছুই পরিচালকদের উদাসীনতা ও অসচেতনতার কারণে অব্যবহৃত রয়ে গিয়েছে। সমুন্নত প্রচেষ্টা এবং যুবসুলভ ও বৈপ্লবিক চিন্তা-চেতনা ও লক্ষ্যের ফলে এ সব কিছুকে সক্রিয় ও কার্যোপযোগী করে তোলা এবং প্রকৃত অর্থে দেশের বস্তুগত, চিন্তাগত ও মানবিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে উল্লম্ফন সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আশাব্যঞ্জক সম্পদ ও সম্ভাবনা হচ্ছে সুগভীর ও মৌলিক ঈমানী ও দ্বীনী ভিত্তির অধিকারী প্রস্তুত ও কর্মদক্ষ জনশক্তি। চল্লিশ বছরের কম বয়স্ক জনসংখ্যা-যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিপ্লবোত্তর দশকের ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফল-দেশের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। দেশের জনংখ্যার মধ্যে তিন কোটি ষাট লাখের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, প্রায় এক কোটি চল্লিশ লাখ সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল শিক্ষায় শিক্ষিতদের দিক থেকে দেশ বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানের অধিকারী। দেশের বিশাল যুবশক্তি- যারা বৈপ্লবিক চেতনা সহকারে বড় হয়েছে ও দেশের স্বার্থে জিহাদি প্রচেষ্টা চালানোর জন্য প্রস্তুত এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবশক্তি গবেষক ও চিন্তাবিদ- যারা বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক, শিল্প ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছে। এই যুবশক্তি দেশের জন্য একটি বিরাট সম্পদ- যার সাথে কোনো ধরনের স্তূপীকৃত বস্তুগত সম্পদেরই তুলনা হয় না।
এ জনসম্পদ ছাড়াও দেশের বস্তুগত সম্পদের তালিকাও অত্যন্ত দীর্ঘ; দেশের কর্মদক্ষ, উদ্দীপনার অধিকারী ও প্রাজ্ঞ পরিচালকগণ এ সব সম্পদকে সক্রিয় করে ও কাজে লাগিয়ে জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দৃষ্টিগ্রাহ্য উল্লম্ফন সৃষ্টি করতে পারেন এবং দেশকে ধনী ও মুখাপেক্ষিতাহীন ও প্রকৃত অর্থেই আত্মবিশ্বাসীতে পরিণত করতে পারেন, আর বিরাজমান সমস্যাবলি দূরীভূত করতে পারেন।
ইরান বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র শতকরা এক ভাগের অধিকারী, কিন্তু বিশ্বের মোট খনিজ সম্পদের শতকরা সাত ভাগের অধিকারী। ইরান ভূগর্ভস্থ বিরাট প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার; পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণের মাঝখানে দেশের ব্যতিক্রমী ভৌগোলিক অবস্থান, বিরাট অভ্যন্তরীণ বাজার, ৬০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ১৫টি প্রতিবেশী দেশ থাকায় বিরাট আঞ্চলিক বাজার, দীর্ঘ সামুদ্রিক উপকূল, বিচিত্র ধরনের কৃষিজাত ও বাগানজাত ফসল উৎপাদনকারী উর্বর ভূমি, বিরাট ও বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অর্থনীতি- এ সব হচ্ছে দেশের সম্পদ ও সম্ভানার কয়েকটি অংশ। কিন্তু দেশের অনেক সম্পদ ও সম্ভাবনাই অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে।
বলা হয়েছে যে, অব্যবহৃত প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ ও সম্ভাবনার দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশে^র মধ্যে সর্বশীর্ষে। নিঃসন্দেহে তোমরা ঈমানদার ও পরিশ্রমী যুবশক্তি এই বিরাট ত্রুটিকে দূরীভূত করতে সক্ষম হবে। আগামী দশকটি হতে হবে অতীতের সাফল্যসমূহ এবং অব্যবহৃত সম্পদ ও সম্ভাবনা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে কর্মপ্রচেষ্টা কেন্দ্রীভূতকরণের যুগ; তেমনি উৎপাদন ও জাতীয় অর্থনীতি সহ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বৃদ্ধি করতে হবে।
ইরানি যুব সমাজের উদ্দেশে পরামর্শ
আমার প্রিয় সন্তানগণ !
এখন আমি কয়েকটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোমাদেরকে পরামর্শ দেব। এ বিষয়গুলো হচ্ছে : ‘বিজ্ঞান ও গবেষণা’, ‘নৈতিকতা ও চরিত্র’, ‘অর্থনীতি’, ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম’, ‘স্বাধীনতা ও মুক্তি’, ‘জাতীয় মর্যাদা ও বৈদেশিক সম্পর্ক এবং দুশমনের সাথে সীমান নির্ধারণ’, আর ‘জীবনযাপনের ধরন’।
তবে সব কিছুর আগে আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে এই যে, ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী হতে হবে ও ইতিবাচকভাবে দৃৃষ্টিপাত করতে হবে। এটি হচ্ছে তালার সাথে তুলনীয় সমস্ত সমস্যা সমাধানের মৌলিক চাবিকাঠি এবং এ চাবিকাঠি ব্যতীত কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আমি যে আশার কথা বলছি তা হচ্ছে বাস্তবতানির্ভর এক দৃঢ় আশা।
আমি সব সময়ই মিথ্যা ও আত্মপ্রতারণামূলক আশা থেকে দূরে থেকেছি। কিন্তু সেই সাথে আমি নিজেকে ও সকলকে অযৌক্তিক হতাশা ও মিথ্যা ভয় হতে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছি এবং এখনো সতর্ক করছি।
বিগত চল্লিশ বছরের গোটা ইতিহাসে সব সময়ই দুশমনের প্রচার-নীতি ও প্রচারমাধ্যম নীতি এবং তার সর্বাধিক প্রচারিত অনুষ্ঠানাদির লক্ষ্য ছিল আমাদের জনগণকে এবং এমনকি দেশের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকগণকে পর্যন্ত ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশ করে তোলা; তাদের এ কাজ এখনো অব্যাহত আছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সম্পর্কে মিথ্যা খবর এবং মতলবি ভাষ্য ও পর্যালোচনা প্রচার, বাস্তবতাসমূহকে বিপরীতভাবে প্রদর্শন, আশাব্যঞ্জক বিষয়াদির তথ্য গোপনকরণ, ছোট ত্রুটিকে বড় করে দেখানো, বিরাট বিরাট ভালো কাজকে ছোট করে দেখানো বা চেপে যাওয়া- এগুলো রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটনির্ভর প্রচারমাধ্যম সহ ইরানি জাতির দুশমনদের হাজার হাজার প্রচারমাধ্যমের সব সময়কার কর্মসূচি।
অবশ্য দেশের অভ্যন্তরে তাদের লেজুড়বৃত্তিকারী কতক লোকের কর্মকা-ও দেখার বিষয়- যারা সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে দুশমনদের খেদমতের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এই প্রচার-অবরোধ ভাঙ্গার জন্য তোমাদের যুব সমাজকে অগ্রবর্তী হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তোমরা নিজেদের ও অন্যদের অন্তঃকরণে ভবিষ্যতের ব্যাপারে যে সব আশার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে তার লালন কর এবং নিজেদের থেকে ও অন্যদের থেকে সব ধরনের ভয় ও হতাশা দূর করে দাও। এটা হবে তোমাদের জন্য প্রথম ও সবচেয়ে দৃঢ়মূল জিহাদ। আশাব্যঞ্জক নিদর্শনসমূহ-যেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটির কথা আমি ওপরে উল্লেখ করেছি-তোমাদের চোখের সামনে রয়েছে। তোমাদের পক্ষে এটা সম্ভব, কারণ, বিপ্লব থেকে যারা জন্ম নিয়েছে তাদের সংখ্যা ঝরে-পড়াদের তুলনায় অনেক বেশি এবং আমানতদার ও সেবক হস্ত ও অন্তঃকরণসমূহের সংখ্যা দুর্নীতিবাজ, বিশ্বাসঘাতক ও পকেট পূর্ণকারীদের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশ^ অনেক ক্ষেত্রেই ইরানি যুবশক্তির প্রতি, ইরানের স্থিতির প্রতি ও ইরানি আবিষ্কার-উদ্ভাবনের প্রতি সম্মান ও সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সুতরাং তোমরা নিজেদের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হও এবং আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উন্নততর ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে যাও ও বীরত্বগাথা তৈরি কর।
এবার আমার পরামর্শসমূহ :
(১) বিজ্ঞান ও গবেষণা
বিজ্ঞান হচ্ছে একটি দেশের সম্মান, মর্যাদা ও শক্তির সর্বাধিক স্স্পুষ্ট মাধ্যম। বস্তুত জ্ঞানের অপর পিঠ হচ্ছে শক্তি ও সামর্থ্য। পাশ্চাত্যজগৎ স্বীয় বিজ্ঞানের বদৌলতে বিগত দুইশ’ বছর যাবত সম্পদ, প্রভাব ও শক্তি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং চারিত্রিক ও আকায়েদী ভিত্তির দিক থেকে রিক্তহস্ত হওয়া সত্ত্বেও তারা বিজ্ঞানের কাফেলার তুলনায় পিছনে পড়ে থাকা সমাজগুলোর ওপর পাশ্চাত্য ধাঁচের জীবনধারা চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিল।
পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের অপব্যবহারের মাধ্যমে যা করেছিল আমি তেমন কিছু করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি না, কিন্তু দেশের প্রয়োজনে তোমাদের নিজেদের মধ্যে বিজ্ঞানের ফোয়ারাকে উচ্ছ্বসিত করে তোলার জন্য জোর তাকিদ করছি।
আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে আমাদের জাতির মধ্যে বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতিভা ও সম্ভাবনা বিশ্বের গড় অবস্থার তুলনায় অনেক ওপরে। প্রায় দুই দশক পূর্বে দেশে বিজ্ঞানের পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে এবং তা এতই দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি ও বিস্তার লাভ করেছে-অর্থাৎ বিজ্ঞানের বৈশ্বিক গড় বৃদ্ধি ও বিস্তারের তুলনায় এগারো গুণ দ্রুত গতিতে হয়েছে-যা বৈশ্বিক অঙ্গনের এতদবিষয়ক পর্যবেক্ষকদেরকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনসমূহ আমাদেরকে বিশ্বের দুই শতাধিক দেশের মধ্যে ষোলতম অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে এবং তা বিশ্বের পর্যবেক্ষকদের বিস্ময়ের কারণ হয়েছে, বিশেষ করে কতক সংবেদনশীল ও নব-উদ্ভূত বিষয়ে আমাদেরকে এক নম্বর অবস্থানে উন্নীত করে দিয়েছে। আর এ সবই ঘটেছে এমন এক অবস্থায় যখন আমাদের দেশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়ে রয়েছে- যার মধ্যে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞাও শামিল রয়েছে।
আমাদের বিরুদ্ধে দুশমন তৈরির যে অপচেষ্টাসমূহ চলছে তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলা সত্ত্বেও আমরা এ সব বিরাট রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছি। বস্তুত এ হচ্ছে একটি বিরাট নে‘আমত যে জন্য আমাদের দিন-রাত আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে শুকরিয়া জানানো উচিত।
কিন্তু এখানে আমি যা বলতে চাই তা হচ্ছে এই যে, এ পর্যন্ত যে পথ অতিক্রান্ত হয়েছে তার গুরুত্ব অনেক হওয়া সত্ত্বেও, এ হচ্ছে স্রেফ সূচনা; তার চেয়ে বেশি নয়। আমরা এখনো বিশে^র বিজ্ঞানের চূড়াসমূহ থেকে খুবই পিছনে পড়ে আছি; আমাদেরকে এর চূড়াসমূহের অধিকারী হতে হবে। আমাদেরকে বিজ্ঞানের বর্তমান গণ্ডিসমূহ অতিক্রম করে বিজ্ঞানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাখাসমূহে উপনীত হতে হবে। আমরা এ স্তর থেকে এখনো অনেক পিছনে পড়ে আছি, কারণ, আমরা শূন্য থেকে শুরু করেছিলাম।
বিশ্বের বুকে যখন বৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন ক্বাজারী শাসনামলে ও এরপর পাহ্লাভী শাসনামলে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে লজ্জাজনক পশ্চাদপদতা আমাদের ওপর কঠিন আঘাত হানে এবং আমাদেরকে এ দ্রুতগতি কাফেলা থেকে বহু মাইল দূরে ধরে রাখে। তবে আমরা যাত্রা শুরু করেছি এবং দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি, কিন্তু এ দ্রুতগতির পথচলা আরো বহু বছর আরো বেশি প্রচণ্ডদ্রুত গতিতে অব্যাহত রাখতে হবে যাতে এ পশ্চাদপদতার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয়।
এ ব্যাপারে আমি সব সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এবং গবেষণাকেন্দ্রসমূহকে ও গবেষকগণকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে, দৃঢ়তার সাথে ও গুরুত্ব সহকারে তাঁদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আসছি, তাঁদেরকে সতর্ক করে দিয়ে আসছি ও আহ্বান জানিয়ে আসছি, কিন্তু এবার সাধারণভাবে তোমাদের যুব সমাজের সকলের কাছে আমার দাবি এই যে, তোমরা আরো বেশি দায়িত্বানুভূতি সহকারে এবং একটি জিহাদের ন্যায় এ পথে এগিয়ে যাও।
দেশে একটি বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং এ বিপ্লব শহীদ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ন্যায় শহীদগণকেও উৎসর্গ করেছে। সুতরাং তোমরা উঠে দাঁড়াও এবং তোমাদের অকল্যাণকামী ও তোমাদের বিরুদ্ধে ঈর্ষা ও হিংসা পোষণকারী দুশমনদেরকে- যারা তোমাদের বৈজ্ঞানিক জিহাদে দারুণভাবে ভীতসন্ত্রস্ত, তাদেরকে ব্যর্থ করে দাও।
(২) নৈতিকতা ও চরিত্র
নৈতিকতা মানে হচ্ছে আত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধসমূহকে-যেমন : আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা (ইখ্লাস), ত্যাগ স্বীকার, আল্লাহ্ তা‘আলার ওপর তাওয়াক্কুল এবং নিজের ও সমাজের ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে-শক্তিশালীকরণ। আর চরিত্র মানে হচ্ছে কল্যাণকামিতা, ক্ষমা, অভাবীদেরকে সাহায্যকরণ, সত্যবাদিতা, সাহসিকতা, বিনয়, আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদাবাচক অন্যান্য উন্নত গুণের অধিকারী হওয়া।
বস্তুত নৈতিকতা ও চরিত্র হচ্ছে সকল ব্যক্তিগত ও সামাজিক আন্দোলন ও কর্মতৎপরতার জন্য সঠিক দিকনির্দেশ প্রদানকারী এবং এটাই হচ্ছে সমাজের মূল প্রয়োজন; এটা থাকলে জীবনযাপনের পরিবেশ-এমনকি বস্তুগত অভাব-অনটন সত্ত্বেও-বেহেশতে পরিণত হয় এবং এটা না থাকলে-এমনকি প্রভূত বস্তুগত সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও-জীবনযাপনের পরিবেশ জাহান্নামে পরিণত হয়ে যায়।
সমাজে যখন নৈতিক অনুভূতি ও চারিত্রিক বিবেক অধিকতর বিকাশ লাভ করে তখন তা অধিকতর বরকত নিয়ে আসে। নিঃসন্দেহে এ জন্য চেষ্টাসাধনার প্রয়োজন রয়েছে, আর হুকুমতের সহযোগিতা ব্যতীত এ পথে চেষ্টা ও সাধনা চালানো খুব বেশি সম্ভব হবে না।
নৈতিকতা ও চরিত্র আদেশ ও ফরমানের মাধ্যমে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সুতরাং কোনো সরকারের পক্ষেই জবরদস্তি করে ও শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে তা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রথমত স্বয়ং হুকুমতকে নৈতিকতা ও চারিত্রিক মানসিকতার অধিকারী হতে হবে এবং দ্বিতীয়ত সমাজে তার প্রচলনের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক সংস্থাসমূহকে ময়দান তৈরি করে দিতে হবে ও সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে এবং নৈতিকতা ও চরিত্রবিরোধী চক্রসমূহের বিরুদ্ধে যুক্তিসিদ্ধ পন্থায় লড়াই করতে হবে। সংক্ষেপে বলতে হয় যে, জাহান্নামীদেরকে কখনোই এমন সুযোগ দেয়া যাবে না যাতে তারা অন্য লোকদেরকে জোর করে বা প্রতারণার মাধ্যমে জাহান্নামী বানাতে পারে।
উন্নততর ও সর্বাত্মক প্রচারক্ষমতার অধিকারী প্রচারযন্ত্রসমূহ নৈতিকতা ও চরিত্রবিরোধী চক্রগুলোর হাতে অনেক বেশি বিপজ্জনক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। দুশমনরা এখন এ সব প্রচারযন্ত্রের অপব্যবহার করে যুব সমাজের ও কিশোর-কিশোরীদের, এমনকি বালক-বালিকাদের পূতপবিত্র অন্তঃকরণে যেভাবে দিনের পর দিন ক্রমবর্ধমান হারে হামলা চালাচ্ছে তা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপরে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে- যা অত্যন্ত সচেতনতা ও সতর্কতার সাথে এবং পুরোপুরি দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করতে হবে।
তবে এর মানে এটা নয় যে, ব্যক্তিদের ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানাদির ওপর কোনোই দায়িত্ব নেই। এখন আমাদের সামনে যে সময় আসছে সে সময়ে এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মধ্যম আয়তনের সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠান প্রস্তুত ও প্রচার করতে হবে এবং তা করা হবে, ইন্শাআল্লাহ্।
(৩) অর্থনীতি
অর্থনীতি হচ্ছে ভাগ্যনির্ধারণী বিষয়সমূহের অন্যতম। শক্তিশালী অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি শক্তিশালী উপাদান যা একটি দেশের জন্য বিজাতীয় আধিপত্য মেনে না নেয়ার ও বাইরের প্রভাব গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। অন্যদিকে দুর্বল অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি দুর্বল উপাদান যা দুশমনদের প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার এবং হস্তক্ষেপের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।
দারিদ্র্য ও সচ্ছলতা মানুষের বস্তুগত জীবন এবং তার নৈতিক ও চারিত্রিক দিকসমূহের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অবশ্য অর্থনীতি ইসলামি সমাজের লক্ষ্য নয়, তবে তা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম বা বাহন যা ব্যতিরেকে লক্ষ্যসমূহে উপনীত হওয়া সম্ভবপর নয়। বিপুল পরিমাণে ও মানসম্পন্ন উৎপাদন, সুবিচারভিত্তিক বণ্টনব্যবস্থা, পরিমাণমতো অপচয়বিহীন ভোগ-ব্যবহার এবং বিজ্ঞজনোচিত যথাযথ ব্যবস্থাপনার ওপরে ভিত্তিশীল করে দেশের স্বাধীন অর্থনীতিকে শক্তিশালীকরণের ওপর আমার পক্ষ থেকে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার বার তার পুনরুক্তি করা হয়েছে ও তার ওপর পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে; তা এ কারণেই করা হয়েছে যে, অর্থনীতি আজকের ও আগামী দিনের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের ওপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম।
ত্বাগূতী শাসনামলে দেশের অর্থনীতি ছিল দুর্বল, পরনির্ভরশীল ও দুর্নীতিগ্রস্ত; ইসলামি বিপ্লব আমাদেরকে এ থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। কিন্তু কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়নের দুর্বলতা দেশকে ভিতর ও বাইরে থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন কেেরছে। বাইরের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুশমনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা ও বয়কট এবং কুমন্ত্রণা- যা অবশ্য অভ্যন্তরীণ সংশোধন সাপেক্ষে খুবই কম প্রভাব বিস্তারকারী, এমনকি প্রভাববিহীন হতে বাধ্য। আর অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কাঠামোগত দোষত্রুটি ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন অংশের সরকারের হাতে থাকা- প্রকৃতপক্ষে যা সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত নয়, সেই সাথে অভ্যন্তরীণ সামর্থ্য ও সম্ভাবনার প্রতি দৃষ্টি দেয়ার পরিবর্তে বিদেশের দিকে দৃষ্টি প্রদান, দেশের জনশক্তির অল্প ব্যবহার, ত্রুটিপূর্ণ ও ভারসাম্যহীন বাজেট প্রণয়ন এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক নীতিসমূহের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার অভাব, অগ্রাধিকারসমূহ মেনে না চলা, হুকুমতের বিভিন্ন বিভাগে অতিরিক্ত ব্যয়, এমনকি অপব্যয়। এ সবের ফল হচ্ছে জনগণের জিন্দিগিতে যুব জনশক্তির বেকারত্ব, দুর্বল শ্রেণির লোকদের মধ্যে কম আয়জনিত দারিদ্র্য ও এ ধরনের আরো বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব।
এ সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে প্রতিরোধমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ; অর্থনীতির সকল বিভাগের কর্মপরিকল্পনায়ই এ ধরনের নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং সর্বশক্তিতে, উদ্দীপনা সহকারে কাজের মাধ্যমে ও দায়িত্বশীলতার অনুভূতি সহকারে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যখন যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাকে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে ও এর বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ উৎপাদনমুখী হওয়া, তেমনি এর উৎপাদনমূলক হওয়া ও বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়া, অর্থনীতিকে গণভিত্তিককরণ ও সরকারের খবরদারি না করা এবং ইতিপূর্বে যে সব সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সব সম্ভাবনার ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশমুখীকরণ হচ্ছে এ সমাধানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, সরকারের অভ্যন্তরে জ্ঞানবান, ঈমানদার ও অর্থনৈতিক জ্ঞানে বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী যুবশক্তির উপস্থিতি থাকলে তারা এ সব লক্ষ্যে উপনীত হতে সক্ষম হবে। আগামী দিনগুলোতে কর্মতৎপরতার ময়দানে এ ধরনের একটি সমষ্টিকে উপস্থিত থাকতে হবে।
সারা দেশের প্রিয় যুব সমাজের জেনে রাখা প্রয়োজন যে, সমাধানের সমস্ত পথই দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত। কেউ হয়তো মনে করে বসতে পারে যে, আমাদের অর্থনীতির সমস্যাবলি শুধুই নিষেধাজ্ঞা থেকে উদ্ভূত, আর নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে বলদর্পী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও দুশমনের সামনে নতি স্বীকার না করা, সুতরাং এর সমাধান হচ্ছে দুশমনের সামনে নতজানু হওয়া এবং নেকড়ের থাবার ওপরে চুম্বন করা; কিন্তু এ ধরনের ব্যাখ্যা হবে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
এ ধরনের ব্যাখ্যা পুরোপুরিই ভুল; যদিও কখনো কখনো তা দেশের অভ্যন্তরস্থ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়া লোকদের কণ্ঠ ও কলম থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকে, কিন্তু তার উৎস হচ্ছে বিভিন্ন বৈদেশিক চৈন্তিক সংস্থা ও বৈদেশিক ষড়যন্ত্র- যা শত কণ্ঠে এ দেশের পরিকল্পনাবিদদের ও সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়।
(৪) সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম
এ দু’টি বিষয় পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও চারিত্রিক দুর্নীতি হচ্ছে দেশসমূহ ও শাসনব্যবস্থাসমূহের জন্য ব্যাপক ক্ষতস্বরূপ এবং হুকুমতসমূহের দেহে যদি তা চেপে বসে তাহলে তা ঐ সব হুকুমতের বৈধতার ওপরে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের ন্যায় কঠিন আঘাত হেনে থাকে। আর যেহেতু ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রচলিত অন্য রাষ্ট্রব্যবস্থাসমূহের তুলনায় অনেক বেশি বৈধতার এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার ওপর ভিত্তিশীল গ্রহণযোগ্যতার তুলনায় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতার মুখাপেক্ষী, সেহেতু এ বিষয়টি তার জন্য অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থার তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও অধিকতর মৌলিক বিষয়।
বস্তুত সম্পদ, পদমর্যাদা ও নেতৃত্বের লোভরূপ শয়তানি ওয়াস্ওয়াসা এমন বিষয় যা এমনকি ইতিহাসের সমুন্নততম হুকুমতের অর্থাৎ স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর হুকুমতের মধ্যকারও কতক লোকের পদস্খলন ঘটিয়েছিল। সুতরাং ইসলামি প্রজাতন্ত্রেও-যেখানে এক সময় পরিচালকগণ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ বৈপ্লবিক যুহ্দ্ ও সাদামাটা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পরস্পর প্রতিযোগিতা করতেন-এ হুমকির বিপদ দেখা দেয়া কখনোই অসম্ভব ছিল না ও এখনো অসম্ভব নয়। আর এর দাবি হচ্ছে এই যে, সব সময়ই রাষ্ট্রের তিন বিভাগে খর দৃষ্টির অধিকারী ও দৃঢ় আচরণের অধিকারী কার্যকর সংস্থার উপস্থিতি থাকতে হবে- যা প্রকৃত অর্থেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্থাসমূহের মধ্যকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে।
অবশ্য অনেক দেশের তুলনায় এবং বিশেষভাবে সাবেক ত্বাগূতী সরকার- যা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল ও দুর্নীতি লালন করত, তার তুলনায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতি খুবই কম এবং আল্লাহ্ তা‘আলার রহমতে এ সরকারের কর্মকর্তাগণ সাধারণত নিজেদেরকে দুর্নীতি থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু খুব কম হলেও যতটুকু দুর্নীতি আছে তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়।
সকলকেই মনে রাখতে হবে যে, অর্থনৈতিক পবিত্রতা ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সমস্ত কর্মকর্তার বৈধতার শর্ত। সকলকেই লোভরূপ শয়তান থেকে দূরে থাকতে হবে এবং হারাম খানা খাওয়া থেকে পালিয়ে যেতে হবে। তাঁদেরকে এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে এবং নজরদারি সংস্থাসমূহকে ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে দৃঢ়তা ও সংবেদনশীলতার সাথে ‘দুর্নীতির বপন’ প্রতিহত করতে হবে এবং তার বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। আর এ সংগ্রামের জন্য ঈমানদার, জিহাদি চেতনার অধিকারী এবং পবিত্র হস্ত ও নূরানি হৃদয়ের অধিকারী দৃঢ়চিত্ত লোকদের প্রয়োজন। এ সংগ্রাম হচ্ছে একটি শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়- যা চালিয়ে যাবার জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বস্তুত আল্লাহ্ তা‘আলা যত নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন তাঁদেরকে প্রেরণের পিছনে নিহিত প্রাথমিক লক্ষ্যসমূহের অন্যতম হচ্ছে সুবিচার। আর ইসলামি প্রজাতন্ত্রও সেই একই মর্যাদা ও অবস্থানের অধিকারী। এ পবিত্র বাক্যটি সকল যুগে ও সকল ভূখণ্ডেই আছে এবং হযরত ওয়ালীয়ে ‘আছর -এর (আমাদের সত্তাসমূহ তাঁর জন্য উৎসর্গিত হোক) হুকুমতে ব্যতীত কখনোই পরিপূর্ণপে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না, কিন্তু আপেক্ষিকভাবে তথা অনেকাংশেই তা সবখানে ও সব সময় সম্ভবপর, আর এটা হচ্ছে সকলের জন্য, বিশেষভাবে শাসকদের ও শক্তিমানদের ওপর আরোপিত ফরয দায়িত্ব।
এ ব্যাপারে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বড় বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে- যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরো বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে এবং এ ব্যাপারে বিপ্লবের দুশমনরা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে যে বিপরীত চিত্র তুলে ধরার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে ও অন্তত নীরবকারী ও গোপনকারী দৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা অকর্মণ্য ও নিষ্ফল করে দিতে হবে।
এতদসহ আমি প্রিয় যুব সমাজের উদ্দেশে-দেশের ভবিষ্যৎ আশার দৃষ্টি নিয়ে যাদের প্রতি তাকিয়ে আছে-দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত যা হয়েছে এবং ‘যা হওয়া উচিত ছিল ও হতে হবে’ এতদুভয়ের মধ্যে ব্যবধান অনেক।
ইসলামি প্রজাতন্ত্রে বঞ্চিতদের বঞ্চনার অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অন্তঃকরণসমূহ সব সময়ই অস্থির থাকা উচিত এবং শ্রেণিসমূহের মধ্যকার গভীর ব্যবধানের কারণে তাঁদের আতঙ্কিত থাকা উচিত।
অবশ্য ইসলামি প্রজাতন্ত্রে সম্পদ উপার্জন করা মোটেই হারাম নয়; বরং এ ব্যাপারে উৎসাহিতও করা হয়। কিন্তু সর্বজনীন সম্পদের বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্যকরণ এবং কতক লোককে বিশেষভাবে ভক্ষণের জন্য ময়দান ছেড়ে দেয়া ও অর্থনৈতিক প্রতারকদের সাথে আপোস করা- এ সব কিছুরই পরিণতি হচ্ছে অবিচার, তাই তা কঠোরভাবে হারাম। তেমনি যে সব শ্রেণির লোকদের জন্য সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন রয়েছে তাদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমার এ কথাগুলো নীতিমালা ও আইন আকারে বার বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য আশার দৃষ্টিসমূহ তোমাদের যুব সমাজের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই দেশের বিভিন্ন বিভাগের পরিচালনার দায়িত্ব যদি ঈমানদার, বিপ্লবী, জ্ঞানী ও কর্মদক্ষ লোকদের ওপর-আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে যাদের সংখ্যা কম নয়-অর্পণ করা হয় তাহলে এ আশা বাস্তবায়িত হবে, ইন্শাআল্লাহ্।
(৫) স্বাধীনতা ও মুক্তি
স্বাধীনতা মানে বিশ্বের আধিপত্যবাদী শক্তিসমূহের চাপিয়ে দেয়া যে কোনো কিছু থেকে ও তাদের জবরদস্তি থেকে জাতি ও হুকুমতের মুক্তি। আর সামাজিক মুক্তির মানে হচ্ছে সমাজের সমস্ত মানুষের হাতে সিদ্ধান্তগ্রহণ, তা কার্যকরকরণ ও চিন্তা করার অধিকার থাকা। এ উভয় বিষয়ই ইসলামি মূল্যবোধসমূহের অন্যতম এবং এ উভয় বিষয়ই মানুষের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দান; এতদুভয়ের কোনোটিই হুকুমতের পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি কৃত অনুগ্রহ নয়। এতদুভয় নিশ্চিতকরণ সরকারগুলোর অবশ্য কর্তব্য।
স্বাধীনতা ও মুক্তির মর্যাদা তারাই সবচেয়ে বেশি জানে যারা এ জন্য লড়াই করেছে, আর ইরানি জাতি-যে দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত জিহাদ করেছে-তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামি ইরানের বর্তমান স্বাধীনতা ও মুক্তি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ সমুন্নত, মহান, সাহসী ও আত্মোৎসর্গী মানুষের, তবে প্রধানত যুবশক্তির অর্জন, বরং তাঁদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত; তবে তাঁদের সকলেই মানবতার পর্যায়সমূহের বিচারে সমুন্নত পর্যায়সমূহের মানুষ। অগভীর বাহ্যিক দৃষ্টিজাত এবং ক্ষেত্রবিশেষে মতলববাজি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বাহানার মাধ্যমে বিপ্লবরূপ পবিত্র বৃক্ষের এ ফলকে বিপন্ন করা সম্ভব নয়। সকলের, বিশেষভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে স্বীয় সমগ্র অস্তিত্বের বিনিময়ে হলেও এর হেফাযত করা।
এটা স্স্পুষ্ট বিষয় যে, ‘স্বাধীনতা’র মানে কখনোই ‘রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও দেশের অর্থনীতিকে দেশের সীমান্তের মধ্যে কারারুদ্ধ করে রাখা’ হওয়া উচিত নয় এবং ‘মুক্তি’র কখনোই ঐশী চারিত্রিক নীতিমালা, আইন ও মূল্যবোধসমূহের বিরুদ্ধে মোকাবিলা অর্থে সংজ্ঞায়িত হওয়া উচিত নয়।
(৬) জাতীয় মর্যাদা ও বৈদেশিক সম্পর্ক এবং দুশমনের সাথে সীমান্ত নির্ধারণ
বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ তিনটি বিষয়ের প্রত্যেকটিই হচ্ছে ‘মর্যাদা, প্রজ্ঞা ও কাম্যতা’ মূলনীতির একেকটি শাখা। বৈশি^ক অঙ্গন বর্তমানে এমন কতক বিষয় প্রত্যক্ষ করছে যেগুলো হয় ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করেছে অথবা বাস্তবায়িত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এগুলো হচ্ছে : প্রতিরোধের অনুসরণীয় আদর্শ (মডেল)-এর ভিত্তিতে আমেরিকা ও যায়নবাদের বিরুদ্ধে নতুন ইসলামি জাগরণ আন্দোলন গড়ে ওঠা, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে আমেরিকার নীতিমালার ব্যর্থতা ও এ অঞ্চলে তাদের দোসর বিশ্বাসঘাতকদের ধরাশায়ী হওয়া এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শক্তিশালী রাজনৈতিক উপস্থিতির বিস্তার লাভ ও সমগ্র আধিপত্যবাদী বিশ্বে এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
বস্তুত এ সব হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সম্মান ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশসমূহের অংশবিশেষ মাত্র- যা জিহাদি পরিচালকদের সাহসিকতা ও প্রজ্ঞা ব্যতীত অর্জিত হওয়া সম্ভব ছিল না।
আধিপত্যবাদী শাসনের ধারক-বাহকরা উদ্বিগ্ন; তাদের প্রস্তাবসমূহে সাধারাণত ধোঁকা, প্রতারণা ও মিথ্যা অন্তর্ভুক্ত থাকে। বর্তমানে ইরানি জাতি আমেরিকার পাশাপাশি কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের সরকারকেও প্রতারক ও আস্থার অযোগ্য বলে গণ্য করে থাকে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারকে তাদের সাথে স্বীয় সীমান্তসমূহকে সতর্কতার সাথে রক্ষা করতে হবে এবং বিপ্লবী ও জাতীয় মূল্যবোধসমূহ থেকে এক কদমও পশ্চাদপসরণ করা যাবে না, তাদের অন্তঃসারশূন্য হুমকিসমূহকে ভয় পাওয়া চলবে না এবং সকল অবস্থায়ই স্বীয় দেশ ও জাতির মর্যাদার বিষয়টি মনে রাখতে হবে, আর প্রজ্ঞা ও কল্যাণকামিতার সাথে, অবশ্য বৈপ্লবিক নীতিগত অবস্থান থেকে তাদের সাথে সমাধানযোগ্য সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।
তবে আমেরিকার ব্যাপারে আমি বলতে চাই যে, তাদের সাথে ইরানের কোনো সমস্যারই সমাধান হবে বলে মনে হয় না এবং তার সাথে আলোচনায় বস্তুগত ও নৈতিক ক্ষতি ব্যতীত অন্য কোনো ফলই হবে না।
(৭) জীবনযাপনের ধরন
এ বিষয়ে অনেক কথাই বলার আছে। তা সময়-সুযোগমতো পরে কখনো বলার জন্য রেখে দিলাম। এখানে কেবল এতটুকু উল্লেখ করেই ক্ষান্ত থাকছি যে, পাশ্চাত্য ইরানে পাশ্চাত্য ধাঁচের জীবনযাপন পদ্ধতির প্রচলন করতে গিয়ে আমাদের দেশ ও জাতির ওপর অপূরণীয় চারিত্রিক, অর্থনৈতিক, দ্বীনী ও রাজনৈতিক ক্ষতি চাপিয়ে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে মোকাবিলার জন্য সর্বাত্মক ও সতর্ক একটি জিহাদের দাবি রাখে; এ ব্যাপারেও আশার দৃষ্টি তোমাদের যুবশক্তির ওপর নিবদ্ধ রয়েছে।
সবশেষে এগারোই ফেব্রুয়ারি মহান ইসলামি বিপ্লবের চল্লিশতম বার্ষিকী উদ্যাপনে উন্নতশির অবস্থায়, গৌরবের সাথে ও দুশমনকে চূর্ণকারী হিসেবে উপস্থিতির কারণে প্রিয় জাতির নিকট কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহ্র সামনে শুকরিয়ার কপাল অবনত করছি।
সালাম হযরত বাক্বীয়াতুল্লাহ্ র প্রতি (আমাদের সত্তাসমূহ তাঁর জন্য উৎসর্গিত হোক), সালাম সমুন্নত মর্যাদার অধিকারী শহীদগণের সত্তার ও মহান ইমামের (রহ.) পবিত্র সত্তার প্রতি, আর সালাম প্রিয় ইরানি জাতির সকলের প্রতি এবং বিশেষভাবে সালাম যুব সমাজের প্রতি।
তোমাদের জন্য দো‘আকামনায়
সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী
২২শে বাহমান ১৩৯৭ ইরানি সাল
(১১ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খৃস্টাব্দ)