শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংকট মোকাবিলায় ইরানের ভূমিকা

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ৩০, ২০১৩ 

news-image

তারেক ফজল

বোসনিয়া-হার্জেগোভিনায় সার্বীয় পৈশাচিকতা আর গণহত্যা বিশ্বের পূর্ববর্তী সকল নিকৃষ্ট নজিরকে স্লান করে দেয়। সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার এই প্রজাতন্ত্রটি স্বাধীণতা ঘোষণা করেছিল, এটিই প্রধান দোষ। আর স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠী প্রধানত মুসলিম, এই বাস্তবতাটি সেই দোষটিকে অসহনীয় করে তুলেছিল। এজন্যই অব্যাহত নির্যাতন-হত্যাকাণ্ড।

যুগোশ্লাভিয়ার ৬টি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রো পূর্বের ফেডারেশনে থেকে যায়। শ্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া ১৯৯১ এর ২৫ জুন স্বাধীনতা ঘোষণা করে ও  পশ্চিমা স্বীকৃতি পায়। মেসিডোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও স্বীকৃতি পায়নি। বোসনিয়া-হার্জেগোভিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করলে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয়  গোষ্ঠী এজন্য গণভোটের শর্ত আরোপ করে। সে অনুযায়ী ১৯৯২  সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রজাতন্ত্রের ৪০ লাখ অধিবাসীর ১২ লাখ সার্ব গণভোট বর্জন করে। বাকি জনগোষ্ঠী গণভোটে অংশ নেয় ও শতকরা ৯৯ জন স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়। এতে প্রজাতন্ত্রটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেও যুগোশ্লাভ সার্বদেরসামরিক সহায়তায় বোসনীয় সার্বরা তা নস্যাৎ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। লক্ষাধিক বোসনীয় মুসলিম নিহত হয়। উদ্বাস্তু হয় তিন লাখ। সার্বীয় বন্দি শিবিরে মৃত্যুর মুখোমুখি সোয়া লাখ। বোসনীয় মুসলিম নারীরা নিকৃষ্টতম নির্যাতনের শিকার হয়।

এই বোসনীয় (বোসনিয়া-হার্জেগোভিনা) মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য বিশ্বের মানবতাবাদী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। জাতিসংঘের সশস্ত্র ত্রাণদল আর ইউএনইসি মধ্যস্ততাকারীদের তৎপরতার চেয়ে অধিক দ্রততার সাথে চলে সার্বীয় বাহিনীর হত্যাকাণ্ড আর মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের ভাষায় মুসলিম নারীদের ওপর গণধর্ষণ। 

১৯৯২ সালের এপ্রিল থেকে সার্বীয় বাহিনীর নির্যাতন শুরু হয় বোসনীয় মুসলিমদের ওপর। তখন থেকেই ইরান এই গণহত্যা প্রতিরোধে তার প্রচেষ্টা শুরু করে। এই প্রচেষ্টা সার্বিক অর্থেই সামগ্রিক। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ইরান সাবেক যুগোশ্লাভিয়ার কোনো রাষ্ট্রদূত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। সার্বীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান সফর বাতিল করা হয়। বেলগ্রেড থেকে ইরানী রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা হয়। যুগোশ্লাভিয়াকে জাতিসংঘ ও ওআইসিসহ সকল বিশ্ব সংস্থা ও সংগঠন থেকে বহিষ্কারের জন্য ইরান দাবি তোলে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ৭৫৭ নম্বর প্রস্তাব পাশ হবার আগেই ইরান যুগোশ্লাভিয়ার সাথে সকল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাতিল করে। তেহরানে বোসানিয়া-হার্জেগোভিনার রাজনৈতিক প্রতিনিধিবর্গকে গ্রহণ করা হয় এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার সাথে সাথে সারায়েভোয় কূটনৈতিক মিশন খোলার ঘোষণা দেয়া হয়। ২৯ অক্টোবর ৯২ দ্বিতীয় বারের মতো বোসনীয় প্রেসিডেন্ট আলীজা ইজেতবেগোভিচ তেহরান সফরে গেলে ইরানী প্রেসিডেন্ট আলী আকবর হাশেমী রাফসানজানী তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্বাগত জানান।

বোসনীয় জনগোষ্ঠীর (মুসলিম ও ক্রোয়েট) জীবন রক্ষার জন্য কার্যকরী কোনো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা না দেখে ইরানে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।  ইরানে এ পর্যায়ে বোসনিয়ায় সামরিক সাহায্য পাঠাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিষয়টি জানার পর বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিচলিত হয়ে ওঠে। তারা তড়িঘড়ি করে বোসনিয়া-হার্জেগোভিনার আকাশ সীমাকে জাতিসংঘের প্রস্তাবের মাধ্যমে বিমান উড্ডয়নমুক্ত এলাকা’ (নো ফ্লাইযোন) ঘোষণা করে এবং সেখানে অস্ত্র সরবরাহ নিষিদ্ধ করে। বাহ্যত এই আইনগত বাধার মুখে ইরান বোসনীয় মুসলিমদের জীবন রক্ষায় সরাসরি অংশ গ্রহণে ব্যর্থ হয়। কিন্তু সার্বীয়রা ঠিকই অস্ত্র সাহায্য পায়। যুগোশ্লাভ ফেডারেশনের যে মওজুদ অস্ত্র ছিল, বোসনীয় মুসলিমদেরকে হত্যার জন্য তা-ই যথেষ্ট। এ পর্যায়ে ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী ৪ আগস্ট ও ২৮ অক্টোবর ৯২ ইসলামী সম্মেলন সংস্থার ওআইসি মহাসচিব হামিদ আল-গাবিদের কাছে সংস্থার জরুরি অধিবেশন দাবি করে পত্র পাঠান। বোসনীয় মুসলিমদের সার্বীয় হায়েনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচাতে দ্রুত ও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি পত্র লেখেন ইন্দোনেশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আলতাসের নিকট জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন ন্যাম এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের জরুরি সম্মেলন আহ্বানের তাগিদ দিয়ে। ইন্দোনেশিয়া এ সময়ে ন্যাম এর চেয়ারম্যান।

ইরান সরকারিভাবে বোসনীয় মুসলিমদের রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আটা, জ্বালানি তেল, জুতা, কম্বল, টিনজাত মাছ, পোশাক এবং অর্থ সাহায্য ইরান বোসনীয়দের জন্য অব্যাহত রাখে। আহত বোসনীয়দের চিকিৎসা ও এতিম সন্তানদের লালন-পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বার্তা সংস্থা জানায়, গুরুতর আহত যুদ্ধবিধ্বস্ত ৮৬ জন বোসনীয়কে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে গত ৮ ডিসেম্বর তেহরানে নিয়ে আসে। তাদের অবস্থা ভালোর দিক। হাসপাতালের কর্মীরা আন্তরিকতার সাথে তাদের সেবা করে। আহতদের কারো কারো জন্য কৃত্রিম অঙ্গও সরবরাহ করা হয়।

ইরান সরকারিভাবে এই আয়োজনের পাশাপাশি সেদেশের জনগণকেও বোসনীয় নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। জনগণের ব্যক্তিগত সাহায্য-সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। গত ৪-১০ নভেম্বর ইরান সারা দেশে এবং দূতাবাসসমূহের মাধ্যমে সারাবিশ্বে বোসনিয়া-হার্জেগোভিয়া সপ্তাহপালন করে। বোসনিয়ার বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের সাহায্য সংগ্রহ করা ছিল এর লক্ষ্য।

সর্বোপরি ইরান সকল রাষ্ট্রীয় জনশক্তি ও প্রচারমাধ্যমকে সম্ভাব্য সকল প্রক্রিয়ায় বোসনিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষদের কল্যাণে নিয়োজিত করে । বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী, প্রেসিডেন্ট হজ্জাতুল ইসলাম আলী আকবর রাফসানজানী, পার্লামেন্ট (মজলিস) স্পীকার আলী আকবর নাতেক নূরীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ বোসনিয়া-হার্জেগোভিনার মুস্তাযআফদের অনুকূলে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখেন। ২৯ অক্টোবর ৯২ বোসনীয় প্রেসিডেন্ট আলীজা ইজেতবেগোভিচ দুই দিনের সফরে তেহরানে পৌঁছে বলেছিলেন, তাঁর দেশের জনগণের ওপর সার্বীয়দের পরিকল্পিত গণহত্যার (সিসটেমিটক জেনোসাইড) ব্যাপারে মুসলিম দেশসমূহের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় তিনি অসন্তুষ্ট। ইরানের ভূমিকাকে তিনি উৎসাহব্যঞ্জক অভিহিত করেন।

আলজেরিয়া : ইরানের সাহসী ভূমিকা

আলজেরিয়ার সংগ্রামী জনগণ ১৯৯০  সাল থেকে তাদের উদ্যম ও স্পৃহা প্রদর্শন করে চলেছে। তাদের সেই উদ্যমকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য দেশটির সামরিক জান্তা সর্বশক্তি নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট শাদলী বেনজাদীদ কিছুটা নমনীয়তা প্রদর্শনের চেষ্টা করলে সামরিক জান্তা এবং নেপথ্যে থেকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাঁকে মঞ্চথেকে সরিয়ে দেয় এবং দুই যুগের নির্বাসন থেকে অনুগত ও বিশ্বস্ত অনুচরমুহাম্মদ বওদিয়েফকে নিয়োগ করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে। ২৯ জুন ৯২ বওদিয়েফ নিরাপত্তা রক্ষীর গুলিতে মারা যান। সামরিক জান্তা  বিপ্লবী কিন্তু নিরস্ত্র জনতাকে অস্ত্রের ভাষায় জব্দ করে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু তারা কোন উর্দিপরা জেনারেলের শাসন মানবে না। ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট (এফআইএস)-এর নেতৃত্বে এই জনতা ১৯৯০ সালের স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের প্রথম দফার নির্বাচনে ২০৬ আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে তারা বিজয়ী হয়। ১৯৯২ সালের ১৬ জানুয়ারির নির্দিষ্ট দ্বিতীয় দফায় পার্লামেন্ট নির্বাচনের ৫ দিন আগে ১১ জানুয়ারি দেশটির সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে, পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফল বাতিল করে পরবর্তী নির্বাচন বাতিল করে, শাদলি বেনজাদীদকে দৃশ্য থেকে সরিয়ে দেয় ও মুহাম্মদ বওদিয়েফকে প্রবাস থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে প্রেসিডেন্ট বানায়। সামরিক জান্তা ইতিমধ্যে হাজার হাজার এফআইএস নেতা-কর্মীকে জেলে ঢুকায়, এফআইএসকে নিষিদ্ধ করে, মসজিদ বন্ধ করে দেয় এবং বেশ কজন নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি দেয়।

ইসলামী বিপ্লবকামী জনতার সাথে সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রীড়নক আলজেরীয় জেনারেলদের এই অব্যাহত বৈরী আচরণের বিপরীতে বিশ্বে কার্যত একটি দেশই নৈতিক ভূমিকা নেয় এবং তা হচ্ছে ইরান। প্রচলিত কূটনৈতিক শিষ্টতা রক্ষা করেই ইরান এই ভূমিকা নেয়।

২৩ নভেম্বর জার্মানি থেকে এথেন্সে অবস্থিত ইরনা (আইআরএনএ) অফিসে এফআইএস এর একজন মুখপাত্র ফ্যাক্সযোগে একটি বিবৃতি প্রেরণ করেন। বিবৃতিতে এফআইএস এর মুখপাত্র রাবেহা কবীর বলেন, মিলিটারি সমর্থিত আলজেরীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করতে কিছু মুসলিম রাষ্ট্রকে আক্রমণ করছে। মুখপাত্র বলেন, যারা দুর্নীতি করছে, আলজেরীয় জনতা তাদের থেকে দেশকে মুক্ত করবে।

১৭ জানুয়ারি ৯২ তেহরানে জুমআর ভাষণে আয়াতুল্লাহ মুহাম্মদ ইমামী কাশানী আলজেরীয় সেনাবাহিনীকে জনগণের সাথে সংঘর্ষে যাবার ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, ফেরাউনদের জন্য কেবল অনুতপ্ত হওয়াই অপেক্ষা করে। যারা খোদার পথকে বেছে নিয়েছে, বিজয় তাদের জন্যই।

জুমআর নামাযের অন্যতম ইমাম আয়াতুল্লাহ কাশানী বলেন, আলজেরীয় মুসলিম জনতার সাথে সংঘর্ষে যাওয়া সেনাবাহিনীর জন্য কল্যাণকর নয়।

১৪ জানুয়ারি ৯২ ইরানী পার্লামেন্টের (মজলিস) সাবেক স্পীকার হুজ্জাতুল ইসলাম মাহদী কাররুবী এক বাণীতে অন্য মুসলিম দেশসমূহের পার্লামেন্ট প্রধানদের প্রতি আরজেরীয় জনগণের সংগ্রামকে সমর্থনের আহ্বান জানান। তিনি আলজেরীয় জনতাকে ফরাসি উপনিবেশের বিরুদ্ধে বীরহিসাবে উল্লেখ করেন। সাবেক ইরানী স্পীকার বলেন, নির্যাতিত জনতার প্রতি আমরা দয়া অনুভব করি। মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ বাস্তবায়নের ওপর তিনি জোর দেন।

ইরানী দৈনিকগুলো তাদের সম্পাদকীয় নিবন্ধে দাবি করেন, আলজেরিয়ায় ইসলাম ও ইসলামের অনুরক্ত জনতাই বিজয় লাভ করবে। দৈনিকগুলো আলজেরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন ও তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের ওপর অব্যাহতভাবে লিখে চলে।

আফগানিস্তান : স্থিতিশীলতার প্রচেষ্টায় ইরান

আফগানিস্তানের পুতুল শাসক ড. নজীবুল্লাহ মুজাহিদদের আক্রমণের মুখে জাতিসংঘের ছাত্রছায়ায় ১৯৯২ সালের ২৫ এপ্রিল ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। মুজাহিদরা বিজয়ী হয়। কিন্তু সরকার গঠনে মুজাহিদদের বিভিন্ন সংগঠন গভীর মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ইরান পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে আফগানিস্তানে একটি ঐকমত্যের সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়।

১৯৮৫ সালে মুজাহিদদের ৭টি সংগঠন পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি ফ্রন্ট গঠন করেছিল। সংগঠনগুলো হলো, জমিয়তে ইসলামী (বুরহান উদ্দীন রব্বানী), হিজব-ই-ইসলামী (গুলবুদ্দীন হিকমতিয়ার), হিজব-ই-ইসলামী (ইউনুস খালিস), ইত্তেহাদ-ই-ইসলামী [ইসলামিক এলায়েন্স (রাসূল সায়েফ)], মিল্লি ইসলামী মাহাজ (আহমদ গিলারু), জাজহা সিহাত-ই-মিল্লি (সিবগাতুল্লাহ মুজাদ্দেদী) ও হারাকাত-ই-ইসলামী (নবী মোহাম্মদ)। ১৯৮৯ সালে এই সংগঠনগুলো একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় এই সরকারই মুজাহিদদের প্রতিনিধিত্ব করছিল।

আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনের জন্য ইরান জাতিসংঘের দেয়া পরিকল্পনাকে সমর্থন করে। উক্ত পরিকল্পনায় ১৫ জনের একটি পরিষদের কথা বলা হয়। অধ্যাপক সিবগাতুল্লাহ মুজাদ্দেদী ২৫ এপ্রিল, ১৯৯২ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন অধ্যাপক রব্বানী। সর্বশেষে অধ্যাপক রব্বানী দুই বছরের জন্য মুজাহিদ নেতৃত্ব পরিষদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত ৯ নভেম্বর ৯২ অন্তর্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অধ্যাপক রব্বানীর সাথে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইরানী প্রতিনিধি দলের নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী সাক্ষাৎ করেন। প্রেসিডেন্ট রব্বানী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রশ্নসমূহে ইরানের শক্তিশালী ভূমিকার কথা বলেন এবং আঞ্চলিক যৌথ সহযোগিতায় যুক্ত হবার জন্য আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ প্রস্তুতির কথা বলেন। ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট রব্বানী গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর ৯২ ইরান সফর করেন। রাহবার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী ও প্রেসিডেন্ট আলী আকবর হাশেমী রাফসানজানীর সাথে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট রব্বানী তাঁর দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের সাহায্য কামনা করেন।

মধ্য এশিয়া প্রশ্নে ইরানের ভূমিকা 

মধ্য এশিয়ার ৬টি মুসলিম প্রজাতন্ত্রকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমর্থন ও সাহায্য যুগিয়ে চলেছে ইরান। স্বাধীনতা লাভের পর দেশগুলো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি নিয়ে ইরানের সহযোগিতা আশা করে। ইরানও একে দায়িত্ব পালনের জন্য ভালো সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করে। ইরানী শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেমন মধ্য এশিয়ায় মুসলিম দেশসমূহ সফর করেন, তেমনি সেসব দেশের নেতৃবৃন্দও প্রয়োজনের তাগিদে নিয়মিতভাবে ইরানে যাতায়াত অব্যাহত রাখেন।

৩১ অক্টোবর ৯২ কাজাভস্তানের প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজার বায়েখ তেহরানে পৌঁছেন। মেহরাবাদ বিমান বন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কাজাখস্তান ইরানের সাথে বন্ধুত্ব বাড়াতে চায়। তিনি প্রেসিডেন্ট রাফসানজানীর সাথে আলোচনায় মিলিত হন এবং মধ্য এশিয়ায় বৈরী শক্তি বিস্তৃতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

১৯৯২ সালের ১৪ অক্টোবর ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক যুধিষ্ঠির রাজআইজার ইরানের সংস্কৃতি ও উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ড. মোস্তাফা মঈনের সাথে আলোচনা করেন এবং জানান, ১৪-১৮ নভেম্বর ৯২ তেহরানে মধ্য এশিয়ায় সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। পরে এই আন্তর্জাতিক কংগ্রেস উদ্বোধন করেন ইরানের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি হাসান হাবিবী। ৩০টি দেশ থেকে শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা কংগ্রেসে যোগ দেন।

তুর্কমেনিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আতায়েভ ৪ দিনের সফরে ২২ ডিসেম্বর ৯২ তেহরানে পৌঁছলে ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী তাঁকে বিমান বন্দরে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী তুর্কমেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাক্ষাৎদানকালে বলেন, ইরান তাঁর দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়।

আজারবাইজান সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যানাহ হোসেইনভ ৪ আগস্ট ৯২ বাকুতে ইরানী রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাৎকালে ইরানের সাথে তাঁর দেশের অব্যাহত বন্ধুত্বের কথা বলেন। এর পর ২৮ ডিসেম্বর ৯২ আজেরী ভাইস প্রেসিডেন্ট প্যানাহ হোসেইনভ একটি প্রতিনিধি দলের নেতা হিসাবে ইরান সফরে আসেন। কারাবাখ ইস্যু ও অন্যকিছু বিষয় নিয়ে ইরানী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা হয়।

২৩ ডিসেম্বর ৯২ আর্মেনীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজিক আরুতুনিয়ান ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতীর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। ড. বেলায়েতী কারাবাখ বিবাদটি মিটিয়ে ফেলার জন্য আর্মেনীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানান। আর্মেনীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ইরানে দুদেশের যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে আসেন। ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে ২৪ নভেম্বর ৯১ মস্কোয় পৌঁছেন। ১০ দিনব্যাপী এই সফরে তিনি ৬টি মধ্য এশীয় মুসলিম প্রজাতন্ত্র সফর করেন।

১৭ নভেম্বর ৯২ ইরান ও উজবেকিস্তানের মধ্যে বিমান যোগাযোগ বিষয়েএকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২৫ নভেম্বর (১৯৯২) উজবেক প্রেসিডেন্ট ইসলাম রহিমভ তেহরানে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে নিজ দেশের উদ্দেশ্যে ফিরে যান। রহিমভ ইরানী নীতিমালাকে বাস্তবসম্মতবলে অভিহিত করেন।

মে ৯২-র প্রথম সপ্তাহে তেহরানে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া ও ইরানের প্রেসিডেন্টদের উপস্থিতিতে ত্রিপক্ষীয় এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

লেবানন ও ফিলিস্তিন প্রশ্ন ইরান

১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ লেবাননের হিজবুল্লাহ দলের সেক্রেটারি জেনারেল হুজ্জাতুল ইসলাম শেখ আব্বাস মুসাভী আলী ইসরাইলী আক্রমণে শহীদ হন। তাঁর সাথে স্ত্রী, এক পুত্র ও চারজন দেহরক্ষীও জীবন হারান।

এ ঘটনার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ইরানী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ও প্রেসিডেন্ট আলী আকবর রাফসানজানী পৃথক পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেন।

আলী খামেনেয়ী তাঁর বার্তায় বলেন, মুসাভীর শাহাদাত ইহুদি নির্যাতনের বিরুদ্ধে লেবানন ও ফিলিস্তিনীদের ন্যায্য সংগ্রামকে বিস্তৃত মাত্রা প্রদান করবে।

প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী বলেন, মুসাভীর হত্যাকাণ্ড লেবানন ও ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার স্পৃহাকে অবদমিত করতে পারবে না।

২১ ফেব্রুয়ারি (১৯৯২) তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের জুমআর সমাবেশে আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ ইমামী কাশানী বলেন, মুসাভীর হত্যাকাণ্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং তথাকথিত মানবাধিকারের প্রবক্তাদের জন্য আরেকটি লজ্জার বিষয়। তিনি বলেন, মুসাভীর শাহাদাত ইসলামের স্বার্থই রক্ষা করবে।

ইরান ফিলিস্তিনী ও লেবাননী মুসলিমদের সংগ্রাম ও আন্দোলনকে সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে চলে। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর ফিলিস্তিনীরা যে ইনতিফাদা বা গণজাগরণ শুরু করেছে, তা ইরানের শাহের আমলের আন্দোলনের পথ ধরেই এগিয়ে চলে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিস্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দূতিয়ালিতে ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর ১৯৯১ যে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনাস্পেনের মাদ্রিদে শুরু হয়, লেবানন-ফিলিস্তিনের বিপ্লবকামী নেতৃবৃন্দ তা প্রত্যাখ্যান করেন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান মাদ্রিদ আলোচনাকেসাম্রাজ্যবাদীদের নাটক হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং তার আগেই তেহরানে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে। সর্বশেষ ৪১৫ জন ফিলিস্তিনী সংগ্রামী যুবককে  ইসরাইল মধ্য ডিসেম্বরে তুষারাবৃত লেবানন সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডেবহিষ্কার করে। এতে কথিত মধ্যপন্থী নেতা ইয়াসির আরাফাত পশ্চিমাদের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।

ইরান লেবানন-ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের গণজাগরণে সম্ভাব্য নৈতিক সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। লন্ডন থেকে নভেম্বরের (৯২) তৃতীয় সপ্তাহে ইরনা জানায়, ইসরাইল অধিকৃত এলাকায় সর্ববৃহৎ ইসলামী শক্তি হামাসের সাথে ইরানের সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। বার্তা সংস্থা জানায়, হামাস ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার সংগ্রামে ইরানের আনুষ্ঠানিক সমর্থন অর্জন করে।

৪ অক্টোবর (১৯৯২) ইসরাইলের অধিকৃত এলাকায় ঘটনাবলি বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ফিলিস্তিনী হামাস আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে যৌথ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী সভার উদ্বোধন করেন।

৫ অক্টোবর রাহবার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী এবং ১১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী লেবাননের হিজবুল্লাহ দলের একটি প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাৎ প্রদান করেন। হিজবুল্লাহ নতুন সেক্রেটারী জেনারেল সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এই দলের নেতৃত্ব দেন।

ইউএন, এনএএম, ওআইসি-তে ইরানের ভূমিকা

ইরান পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো গত বছরটিতেও (১৯৯২) জাতিসংঘ, জোট নিরপক্ষে আন্দোলন ও ইসলামী সম্মেলন সংস্থায় নির্যাতিত জনতা ও মুসলিম জনতার পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে।

জাতিসংঘে বোসনিয়া-হার্জেগোভিনা বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইরান সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ইরান বোসনীয় মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সাহায্যের কথা ঘোষণা করলে সাম্রাজ্যবাদীরা বোসনিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইরানের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ আলী বেশারতী জাতিসংঘের প্রতি বোসনিয়ার ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার দাবি করেন। ১ ডিসেম্বর ১৯৯২ তিনি তেহরানে টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই দাবি তোলেন।

ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোসনিয়ায় সার্বীয়দের নারকীয় গণহত্যার বিরুদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ২৯ অক্টোবর ৯২ জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আহ্বানের দাবি তোলেন। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দশম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ইরানী প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ন্যাম এর একটি পর্যাপ্ত নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন মীমাংসা কেন্দ্রস্থাপনের প্রস্তাব করেন যাতে সমঝোতার অভাবে সৃষ্ট আন্দোলনভুক্ত দেশসমূহের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। জনাব রাফসানজানী পশ্চিমা মানবাধিকারের দ্বৈত মানদণ্ডের’ (ডাবল স্ট্যান্ডার্ড) কথা উল্লেখ করেন। তিনি বোসনিয়া-হার্জেগোভিনায় নির্বিচার গণহত্যার অবসানের জন্য কার্যকর ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন। কিন্তু ন্যামএ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যাম এর জরুরি বৈঠকের দাবি করেন।

মুসলিম দেশসমূহের সংগঠন ইসলামী সম্মেলন সংস্থা মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি বোসনিয়া-হার্জেগোভিনায় বর্তমানে অব্যাহত গণহত্যা গণধর্ষণের বিরুদ্ধেও কোনো শক্তিশালী ও উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। ইরান দুইবার ওআইসির বৈঠকের আয়োজন করে। কিন্তু সংস্থাটি এখনো কোনো উপযুক্ত ভূমিকা নিতে পারেনি।

বাবরী মসজিদ প্রসংগে ইরান

ভারতের অযোধ্যায় ৪৬৪ বছরের প্রাচীন বাবরী মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দুরা ধ্বংস করে দেয়। ইরান সরকারিভাবে এর জন্য তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, ভারত সরকারের অক্ষমতার নিন্দা করে এবং মসজিদটি দ্রুত পুনঃনির্মাণের দাবি তোলে।

ভারতের বোম্বেতে অবস্থিত ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি এ সময় দুষ্কৃতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত করে। মসজিদ ধ্বংস ও ইরানী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তেহরানস্থ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দুইবার ডেকে পাঠানো হয় এবং কড়া ভাষায় দুটি ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।

দিল্লীতে নিযুক্ত ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইবরাহীম রাহিমপুর ৯ ডিসেম্বর (১৯৯২) তেহরানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, রাও সরকারের বাবরী মসজিদ পুনঃনির্মাণের প্রকৃত ইচ্ছা থাকলে একমিনিটও ক্ষেপণ না করে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করে প্রমাণ দেয়া উচিত।

২২ ডিসেম্বর ১৯৯২ ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে বাবরী মসজিদ নির্মাণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং এ জন্য তিনি ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর এল ভাটিয়ার কাছে একটি পত্র পাঠান।

১৪ ডিসেম্বর ইরানের গ্রান্ড আয়াতুল্লাহ মুহাম্মদ রেজা গুলপায়গানী এক বিবৃতিতে উগ্র হিন্দুদের দ্বারা ভারতের ফয়েজাবাদে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ধ্বংস করাকে বর্বরতা বলে উল্লেখ করেন।

ইরানের বিভিন্ন দৈনিক বাবরী মসজিদ ভাঙার সাথে ভারত সরকারও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে দাবি করে। কায়হান ইন্টারন্যাশনাল, জমহুরী ইসলামী, তেহরান টাইম্স এ বিষয়ে সম্পাদকীয় ও নিবন্ধ প্রকাশ করে।

সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী সম্পর্কে ইরানের কঠোর ভূমিকা

ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ মানবতার শত্রু সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত রেখেছে। বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ৬ মে ১৯৯২ হজ কর্মকতাদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যতক্ষণ ইসলামী ইরানের প্রতি বৈরী থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে কোন সম্পর্ক স্থাপিত হবে না।

রাহবার খামেনেয়ী ১৮ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী দলের কমান্ডারদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে বলেন, ঈমানের শক্তিতে বলীয়ান ও সশস্ত্র বিপ্লবী রক্ষীদের জাতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো দিন ক্ষতি করতে পারবে না।

বিপ্লবের নেতা ১ জুলাই তেহরানে একদল দর্শনাথীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেন, মুসলিম জাতিসমূহকে উদ্ধত শক্তিসমূহ, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, এই শক্তিগুলো ইসলাম, মুসলিম জাতি এবং নির্দিষ্টভাবে ইরানী জাতিকে ভয় করে। কারণ, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেনি।

১৮ নভেম্বর ১৯৯২ বিপ্লবের নেতা খামেনেয়ী মিশরীয় অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইরান মিশরীয় যুবকদের উস্কানি দিচ্ছে এটি একটি মিথ্যা। তিনি বলেন, বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর নীতি হলো উপসাগরীয় ও আরব রাষ্ট্রগুলোকে ইরানের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত করা।

তেহরানের অতিরিক্ত জুমার নেতা আয়াতুল্লাহ আহমদ জান্নাতী গত ১৩ নভেম্বর বলেন, মার্কিন নির্বাচন ইহুদিদের দ্বারা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান মাত্র।

নতুন বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইরানের সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হবে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আলী আকবর বেলায়েতী বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক শুরুর ইচ্ছা রাখে না। তিনি বলেন, আমরা বিপ্লবের শুরুতে ডেমোক্র্যাট জিমি কার্টারের শাসন দেখেছি, তারপর এক যুগের রিপাবলিকানদের শাসন দেখেছি রিগ্যান ও বুশের নেতৃত্বে। কিন্তু ইরানের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই থেকে গেছে। ইরনাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পররাষ্ট্র ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক

ইরান তার ইসলামী নীতিমালার আলোকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সাথে সন্তোষজনক সম্পর্ক উন্নয়নের ও দৃঢ় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্রের ইরান সফরকারী পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রী ফারাজ বিন গানেমকে ২৮ জানুয়ারি ১৯৯২ সাক্ষাৎ প্রদান করেন। এই সফর কালে ইরান-ইয়েমেনের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অস্ট্রিয়ায় সফরকালে ইরানী ভারী শিল্পমন্ত্রী হাদীনাজেদ হুসেইনিয়াম সে দেশের অর্থমন্ত্রী ওলয়গেঙ্গ শ্যুশেলের সাথে ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯২ অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।

৩ মার্চ ৯২ বাকুতে ইরানের টিএন্ডটি মন্ত্রী মুহাম্মদ কারাজী আজেরী প্রেসিডেন্ট আয়াজ মুতালিভবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা ৩ শমাইক্রোওয়েভ টেলিফোন চ্যালেন চালুর বিষয়ে আলোচনা করেন।

৩০ জুন (১৯৯২) ইরানের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী  মুহাম্মদ বেশারতী ইরনার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইরানী প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমী রাফসানজানী ও সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহদের শীঘ্রই একে অন্যের দেশ সফর ও সাক্ষাতে মিলিত হবার কথা ঘোষণা করেন।

১ জুলাই প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ও সফররত তাজিক প্রেসিডেন্ট রহমান নবিয়েভ তেহরানে একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করেন।

১৯ সেপ্টেম্বর সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচভের বিশেষ দূত ইয়েভগেনি প্রিমাকভ একটি আর্থ-রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে দুই দিনের সফর শেষ করে তেহরান ত্যাগ করেন।

ইন্দোনেশীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আবেরীন এম সেবিগার ১৩ অক্টোবর তেহরান পৌঁছেন।

১০ নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. বেলায়েতী ভারতীয় প্রেসিডেন্ট শংকর দয়াল শর্মা ও প্রধানমন্ত্রী নবসীমা রাওয়ের সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।

ফ্রান্স ইরানের সাথে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। দেশটির জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী ব্রুথো ডুরিয়েক্সাস ৯ ও ১০ অক্টোবর (১৯৯২) ইরান সফর করেন।

২৮ জুন তেহরানে এসকাপের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের একটি সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী ভাষণ দেন।

১০ নভেম্বর তেহরানে আইডিবি-র ১৭তম বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (ইকো)’ প্রশ্নে রাফসানজানী

অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থ’ (ইকো) গঠন, সম্প্রসারণ ও একে দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপনের জন্য অগ্রণী ও সোচ্চার ভূমিকা রাখে। ১৯ ফেব্রুয়ারি (১৯৯২) ইরানী প্রেসিডেন্ট রাফসানজানী এই সংস্থাটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রতিরক্ষা জোটে রূপ লাভের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, বিধান অনুযায়ী এটি একটি অর্থনৈতিক সংস্থা, যার মধ্যে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এটি রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা জোটের রূপ নিতে পারবে না। তিনি বলেন, তেমনটি করতে চাইলে সংস্থার গঠনতন্ত্রের ধারাগুলো সম্পূর্ণ বদলে দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ইকো-র দুইদিনব্যাপী র্শীষ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে এ কথা বলেন। সম্মেলনে ইকোর মূল সদস্য আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরঘিজিস্তান ও তাজিস্তিানের রাষ্ট্রপ্রধান ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। সম্মেলনে কাজাখস্তান পর্যবেক্ষক হিসাবে অংশ নেয়। কারণ, দেশটি এখনো সদস্য পদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে দরখাস্ত করেনি।

আইডিবি, ইফাড, ইউনেস্কো, এসকাপ ইরানের ভূমিকাকে প্রশংসা করে।

রমযানের শেষ শুক্রবারকে আল-কুদ্স দিবসঘোষণা করে বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ইরান অব্যাহত রাখে।

সালমান রুশদী : চোরের মতো উপস্থিতি

১৫ জানুয়ারি ৯৩ বার্তা সংস্থা এএফপি একটি সংবাদ প্রচার করে : ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদী (১৫ জানুয়ারি) দিনের শেষে ডাবলিনে তথ্য প্রবাহের স্বাধীনতাসংক্রান্ত এক সম্মেলনে যোগ দেয়। ইরানের হত্যা হুমকির পর থেকে বিতর্কিত এই লেখক লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সম্মেলনে তার যোগদান সম্পর্কে কোন ঘোষণা দেয়া হয়নি। চোরের মতো সে সম্মেলনে যোগ দেয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক সালমান রুশদীর মাথার ওপর ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেইনী (রহ.)-এর ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ঝুলছে। ইসলামের অবমাননা করে দি স্যাটানিক ভার্সেসবই লেখার দায়ে ইমাম খোমেইনী ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। সেই থেকে সালমান রুশদী গোপন জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

হজ : সামগ্রিকতার উন্মোচন

বিশ্বমুসলিমের মহান সমাবেশ ঘটে আরাফাতের মাঠে। ইসলামের অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ এই হজ অনুষ্ঠান। এই হজের আছে ধর্মীয় তাৎপর্য। আছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক তাৎপর্য এবং সর্বোপরি ও গুরুত্বের সাথে আছে রাজনৈতিক তাৎপর্য। রাসূলে করীম (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে আরাফাতের ময়দানে বিশ্বমুসলিমের জন্য কিছু স্থায়ী নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এর আগের বছরের হজ তথা নবম হিজরির হজে কাফের-মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ বা বারাআতের ঘোষণা প্রচার করা হয়। এই রাজনৈতিক আচরণ এবং রাসূলের বিদায় হজের ভাষণের আলোকে পবিত্র হজ উদ্যাপন বিগত শত শত বছর থেকে অনুপস্থিতই থেকে গেছে। ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী ইরানী হাজী ও অন্য দেশের কিছু অংশের হাজীরা হজ পালন করতে গিয়ে কাফের ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিতে শুরু করেন। ইমাম শিখিয়েছেন, আরাফাতের ময়দানে বিশ্বমুসলিমকে সমবেত হয়ে ইসলাম তথা মুসলিমদের শত্রুদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিতে হবে। বিশ্বমানবতা ও মুসলিমদের শত্রুদের প্রতিরোধ করতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। নিপীড়িত মানবতা ও মযলুম মুসলিমদের রক্ষার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ইমামের এই শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়েই হাজীদের, বিশেষত ইরানী হাজীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মান ও স্বার্থহানি ঘটছে দেখে ১৯৮৭ সালে সৌদি সরকার স্লোগানরত আল্লাহর মেহমান হাজীদের গুলি করে শহীদ করে। সেবার চার শতাধিক হাজী শাহাদাত লাভ করেন। মুসলিমদের শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দুশমনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দিতে সৌদি সরকার সম্মত না হওয়ায় ইরান তিন বছর হজ বয়কট করেছিল। পরে সৌদি সরকার হাজীদেরকে নিয়মতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলার সাথে বিক্ষোভ প্রদর্শনের অনুমতি দিলে ইরান পুনরায় হজে অংশ নিতে শুরু করে।

২২ অকেটাবর ৯২ ইরানী প্রেসিডেন্ট আলী আকবর হাশেমী রাফসানজানী তেহরানে মহান হজ কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরান নিয়মতান্ত্রিকভাবে হজ অনুষ্ঠান পালন করতে চায়- যেখানে রাজনৈতিক ইস্যুগুলো ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাকে ব্যাঘাত না ঘটিয়েই উত্থাপিত হবে। তিনি বাড়াবাড়ি পরিহার করে হজ উদ্যাপনের আহ্বান জানান।

ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী ২৫ মে ৯২ এক ফতোয়ায় বলেন, মুসলিম হজ যাত্রীদের এমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন হারাম, যা মুসলিমদের মধ্যে বিবাদের জন্ম দেয় এবং ইসলামকে দুর্বল করে। বিশ্বাসীদের তেমন কাজ পরিহার করা কর্তব্য।

 (নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩)