শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

হোসাইনি সত্য প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে

পোস্ট হয়েছে: নভেম্বর ৫, ২০১৫ 

news-image

মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খান: মাহে মহররম ও আশুরা ফিরে এলেই বিশ্বের মুসলমান আবালবৃদ্ধবণিতার মাঝে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। কারবালার হোসাইনি রক্তের উষ্ণ ধারা বইতে থাকে প্রতিটি মুসলমানের শিরা-উপশিরায়। নবী দৌহিত্র মহানায়ক ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালামের একটি খেতাব হচ্ছে সারুল্লাহ বা আল্লাহর খুন। যা কিছু অতিশয় পবিত্র তাকেই বুঝানোর জন্য আল্লাহর বলে উপাধি বা খেতাব দেয়া হয়। যেমন বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ। হজরত ইমাম হোসাইনের গায়ের রক্ত ছিল অতিশয় পবিত্র। মা ফাতিমা ও হজরত আলী কারামাল্লাহি ওয়াজহাহু ওয়া সালামুল্লাহি আলাইহিমার এ সন্তানের গায়ে বিরাজমান ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রক্ত। কেবল নবীজীর রক্তই নয় সরাসরি নবীজীর পবিত্রতম রূহেরও পরশপ্রাপ্ত ছিলেন ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবীজীর আহলে বায়েতের এ মহান ইমাম দ্বীন ইসলামের এবং মুসলিম উম্মাহর ঘোর দুর্দিনে নিজের পরিবার-পরিজন, সন্তানরা, নিকট আত্মীয়স্বজন এবং নিষ্ঠাবান অনুসারীদের নিয়ে কারবালার রণাঙ্গনে যে বিপ্লবের ও শুদ্ধি অভিযানের নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছেন তাই চিরন্তন দ্বীনী আদর্শ হয়েছে প্রতিটি মানুষের জন্য। খাতিমুল আম্বিয়া রাসূলে পাক আল্লাহর মনোনীত যে দ্বীন ইসলামকে জীবনপণ করে সাহাবা কেরামকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন সেই মুক্তি সনদ জীবন-বিধানকেই কয়েক যুগের ভেতর পাল্টে ফেলল স্বৈরাচারী, দুর্বৃত্ত ও দুশ্চরিত্র ইয়াজিদের রাজতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থা। আল্লাহর নির্দেশে তার সর্বশেষ নবী যে ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, ন্যায়-ইনসাফ, নিরাপত্তা ও প্রশান্তির সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করলেন তা পদদলিত করে আবার নতুনরূপে অতীতের জাহিলি যমানার কুফরি, শির্ক ও মুনাফেকিপূর্ণ সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িক রাজতন্ত্রের জবরদখলে। ইসলামের এই অধঃপতনের জমানায় এমনকি অনেক সাহাবি ও তাবেঈনও নির্বিকার হয়ে রইলেন কিংবা ইয়াজিদি অত্যাচারের ভয়ে অথবা অর্থ তোহফার প্রভাবে চুপ হয়ে গেলেন। ইয়াজিদ ও তার বংশ উমাইয়ারা যে কত বড় নির্মম দুরাচারী ছিল ইতিহাসে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান। ইয়াজিদের তিন বছরের দুঃশাসনের তিনটি জঘন্যতম অপকীর্তি ছিল। প্রথম বছর সে নবী বংশ তথা ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার সঙ্গী-সাথীদের নির্মমভাবে হত্যা করল কারবালা প্রান্তরে। দ্বিতীয় বছর মদিনা শরিফে হামলা চালিয়ে সাহাবা কেরাম ও তাদের সন্তানদের গণহত্যা, মসজিদে নববীকে ঘোড়ার আস্তাবল এবং নারীদের ধর্ষণ ইত্যাদি অপকর্ম করল। আর তৃতীয় বছর পবিত্র কাবা ঘরে হামলা করে আগুন ধরিয়ে দিল ও হত্যাযজ্ঞ চালাল। এসব জঘন্য অপরাধের পর এই লম্পট অত্যাচারীর অপমৃত্য ঘটে।

 

হজরত ইমাম হোসাইন তার বিচক্ষণতা এবং নূরানী ও রূহানি দৃষ্টিতে ইয়াজিদ ও তার বংশধরের শয়তানি চেহারা-চরিত্র সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই আল্লাহর দ্বীন ইসলাম, কোরআন ও নবীজীর সুন্নত, আদর্শ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা এবং ইয়াজিদি শাসনব্যবস্থাকে চিরতরে অস্বীকার করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন এক যুদ্ধ ও বিপ্লবের জন্ম দান করেন। এ যুদ্ধে নর-নারী, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-যুবা, আরব-অনারব, সাদা-কালো এবং দাস-মনিব সবাই অংশ নিয়ে বেহেশতের যুবকদের সর্দার ইমাম হোসাইনের সঙ্গে শাহাদতের অমিয় সুধা পান করলেন। এক অসম যুদ্ধে তারা নির্মমভাবে শহীদ হলেও দুনিয়ায় প্রমাণ রেখে গেলেন যে, নবীজীর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও ইয়াজিদি দুঃশাসন এক নয় এবং এসব স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে উচ্ছেদ করতে হলে আল্লাহর পথে এভাবেই নামতে হবে।

চৌদ্দশ বছর আগে কারবালার নির্জন মরুতে নবী বংশের আত্মদানের এ ঘটনা ঘটলেও তা বিশ্ববাসীর জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে চিরন্তন আদর্শ ও চলার এবং নাজাতের পথ। ইমাম হোসাইন ও তার ঐশী বাহিনীর দেখানো এ পথকে আল্লাহ জাল্লা শানুহু দুনিয়াবাসীর জন্য মুক্তির চিরন্তন আদর্শ হিসেবে কবুল করেছেন। তাই তো বলা হয় ‘কুল্লি আরদিন কারবালা, কুল্লি ইয়াওমিন আশুরা’। প্রতিটি স্থানই কারবালা এবং প্রতিটি দিনই আশুরা বা দশই মহররম।

বর্তমানেও পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং অন্যান্য শয়তানি জীবন ব্যবস্থা বিশ্বের দেশে দেশে ইয়াজিদি শাসন তথা নব্য জাহিলিয়া ও নব্য দাসত্ব প্রথার নির্মমতা চালাচ্ছে। বিশেষত ইসলামী জাহানের দেশগুলোতে গৃহযুদ্ধ, আত্মঘাতী যুদ্ধ, গণহত্যা, লুটপাট, সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াজিদি কায়দায়। শয়তানি পরাশক্তিবর্গ মানবতা ও মুসলমানদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাই আজ দেশে দেশে ঘরে ঘরে মহররমের আগমনে সময় এসেছে ইমাম হোসাইনের ডাকে সাড়া দেয়ার। আশুরার দিন ইমাম যে ডাক দিয়েছিলেন ‘হাল্ মিন্ নাসর্ িইয়ান্সুরনী।’ কে আছ আমাকে সাহায্য করার- সে ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিটি ঈমানদারের উচিত লাব্বাইক বলা। যার যার মেধা ও সাধ্য দিয়ে বেহেশতি যুবকদের সর্দার ও শহীদানের নেতার ডাকে লাব্বাইক বলা জরুরি। তবেই হবে কারবালা, আশুরা, ইমাম হোসাইন, আহলে বায়েত ও নবীজীর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। তবেই আল্লাহপাক ও নবীজী খুশি হবেন এবং দিদার লাভ ঘটবে।

লেখক : পরিচালক, ইউআইটিএস রিসার্চ সেন্টার, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)

সূত্র: যুগান্তর