শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

হামেদান যেখানে প্রকৃতি মিলেছে সংস্কৃতির সাথে

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ১৩, ২০২২ 

news-image

ভ্রমণপ্রেমীদের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে রোমাঞ্চকর ধারণা দিতে কখনই কমতি রাখেনি ইরানের হামেদান। ইরানি শহরগুলো অনেক কারণেই পর্যটকবান্ধব। বিশেষত বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, নৈসর্গিক প্রকৃতি, শান্ত উদ্যান, খিলানযুক্ত গম্বুজের বাজার এবং অতিথিপরায়ণ মানুষের জন্য বিশ্বজুড়ে দেশটির পর্যটনের ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি রয়েছে।ধ্রুপদী সময়ে একবাটানা নামে পরিচিত বর্তমান হামেদান প্রাচীন যুগে বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর ছিল। দুঃখজনকভাবে প্রাচীনকালের এই ঐতিহ্যের সামান্য কিছু অবশিষ্ট আছে। কিন্তু শহরের কেন্দ্রস্থলের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো খননের জন্য দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক নানা কৌতুহল।উঁচু সমভূমিতে এক বিস্তৃত পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে হামেদান শহর। আগস্ট মাসে এখানে শীতল আবহাওয়া থাকে। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অঞ্চলটি তুষার এবং বরফপ্রবণ থাকে। গ্রীষ্মকালে আকাশ প্রায়শই কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। তাই এখানে পরিষ্কার আকাশ খুব কমই দেখা মেলে। বসন্তের পরিচ্ছন্ন দিনে তুষারে ঢাকা আলভান্দ পর্বতের (৩৫৮০ মি) আকর্ষণীয় ঝলক দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে।প্রাচীন শহর একবাটানার সাথে মিলেমিশে রয়েছে টেপে হাগমাতানেহ এর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এর পরিধি প্রায় ৪০ হেক্টর এলাকা সহ ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার। একবাটানা ছিল প্রকৃতপক্ষে হামেদানের আধুনিক শহরের স্থানে। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক পাহাড় থেকে দূরবর্তী পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ খুবই আনন্দদায়ক, বিশেষ করে শেষ বিকেলে। যাইহোক এর নিচের অংশটি একটি প্রাচীন মধ্যযুগীয় এবং হাখামানেশি শহর। গত শতাব্দীতে শহরের ছোট অংশ খনন করা হয়, সবচেয়ে ব্যাপকভাবে খনন করা হয় ১৯৯০ এর দশকে। কাছাকাছি রয়েছে একটি স্মার্ট মিউজিয়াম। সেইসাথে দুটি আর্মেনিয়ান চার্চ এখন হামেদান বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ।একবাটানা প্রথম খনন করেছিলেন ১৯১৩ সালে ফরাসি অ্যাসিরিওলজিস্ট চার্লস ফসি। আধুনিক শহরটি প্রাচীন স্থানগুলোর অধিকাংশ নিয়ে গড়ে ওঠায় খনন কার্যক্রম সীমিত করা হয়। পার্থিয়ান সময়কালের (২৪৭ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ২২৪ খ্রিস্টাব্দ) পুরনো কিছু আবিষ্কার করতে ২০০৬ সালে হাগমাতানেহ পাহাড়ের একটি সীমিত এলাকায় খননকার্য চালানো হয়। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। তবে বিশাল এই স্থানের কোথাও না কোথাও যে পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক স্তর রয়েছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।হামেদান সফরকালে ইতিহাসপ্রেমী এবং সংস্কৃতিপ্রেমীরা গঞ্জনামেহ ভ্রমণ করবেন না তা হতে পারে না। গঞ্জনামে (ট্রেজার পত্র) প্রাচীন ফারসি, এলামাইট এবং ব্যাবিলনীয়সহ তিনটি ভাষায় লেখা কিউনিফর্ম শিলালিপির সেট রয়েছে। শিলালিপিগুলো হাখামানেশি  রাজা দারিউস প্রথম (৫২১-৪৮৫ খ্রিস্টপূর্ব) এবং জেরেক্সেস প্রথম (৪৮৫ থেকে ৬৫ খ্রিস্টপূর্ব) এর যুগের। ফরাসি চিত্রশিল্পী এবং প্রত্নতাত্ত্বিক ইউজিন ফ্ল্যান্ডিন প্রথম বিশদভাবে লিপিগুলো নিয়ে গবেষণা করেন।সংলগ্ন একটি ৯ মিটার উচ্চতার জলপ্রপাত শীতকালের জনপ্রিয় একটি আইস-ক্লাইম্বিং স্পটে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রীষ্মে এক দিনের ভ্রমণে আলভান্দ শিখর ঘুরে আসা যায়। এছাড়াও সাইটটির স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ মাউন্ট আলভান্দের পাশে হাইকিং করার সুযোগ করে দেয়। শহর থেকে অল্প সময়ে স্থানটি ঘুরে আসা যায়।১২ শতকের গনবাদ-ই আলাভিয়ান (আলাভিয়ান গম্বুজ) সেই সময়কার পারস্য-ইসলামিক স্থাপত্যের একটি প্রধান উদাহরণ। এর ইটের টাওয়ারটি ইলখানিদ মঙ্গোল যুগের ঘূর্ণায়মান ফুলের স্টুকোর জন্য বিখ্যাত। এই অলঙ্করণটির কথা ব্রিটিশ ভ্রমণ লেখক রবার্ট বায়রন তার ভ্রমণকাহিনী ‘দ্য রোড টু অক্সিয়ানা’তে বর্ণনা করেছেন।এর ছোট কক্ষে আলাভিয়ান পরিবারের দুই প্রবীণের সমাধি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ এলাকাটি খিলান সহ ছয়টি কক্ষ নিয়ে গঠিত। কেন্দ্রেই রয়েছে ফিরোজা ইট দিয়ে আবৃত ঘন-কামানো কবর। কাঠামোটির প্রবেশপথের উপরে স্টুকো মধুচক্রের নিদর্শন এবং ফুলের মোটিফ সহ একটি আয়তক্ষেত্রাকার ফলক ঝুলানো আছে। এই ফলকের বাইরের ফ্রেমে কুফিক ক্যালিগ্রাফির হাতে কুরআনের শিলালিপির স্টুকো রিলিফ রয়েছে।মাসজেদ-ই জামেহ (হামেদানের জুমার মসজিদ) হামেদানের প্রাচীনতম একটি মসজিদ। আয়তাকার মসজিদটির পূর্বে চারটি বারান্দা ছিল যার মধ্যে বর্তমানে তিনটি অবশিষ্ট রয়েছে। এই কাঠামোটি রাত্রীকালীন ইবাদতের জন্য দুটি ক্ষেত্র, একটি ইটের গম্বুজ এবং কেন্দ্রে একটি বিশাল পুল সহ একটি বড় এবং মনোরম উঠান নিয়ে গঠিত। সূত্র: তেহরান টাইমস।