হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা আরাকী (রহ.)
পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৮, ২০১৫
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2015/01/ayatollah-araki.jpg)
হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা শায়খুল ফোকাহা মুহাম্মাদ আলী আরাকী ছিলেন ইরানের প্রখ্যাত আয়াতুল্লাহদের অন্যতম। ইল্ম, তাকওয়া, একনিষ্ঠতা ও জ্ঞান সাধনায় তাঁর ন্যায় ব্যক্তি দুর্লভ। ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল। তিনি বিপ্লবোত্তর তেহরানের জামারান এলাকায় গিয়ে ইমাম খোমেইনীর সাথে দেখা করেন। আর তাঁকে সালাম করতে গিয়ে ভক্তিভরে বলেছিলেন : ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া ওয়ালিআল্লাহ’ অর্থাৎ হে আল্লাহর ওয়ালি! আপনার প্রতি সালাম। হযরত আয়াতুল্লাহ আরাকী বয়সে ইমাম খোমেইনী (রহ.) হতে দশ বছর বড় ছিলেন। আর তাঁরা উভয়ে হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা হায়েরী (র.)-এর ছাত্র ছিলেন। তবু তিনি ইমাম খোমেইনীর ব্যক্তিত্ব ও ইসলামী খেদমতের জন্য তাঁকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। লোকমুখে শোনা যায় তিনি ইমাম খোমেইনীর হাত চুম্বন করতে চাইলে ইমাম খোমেইনী তা করতে দিতেন না। বলতেন : ‘আপনি হলেন পুণ্যবান লোকদের অবশিষ্ট ব্যক্তি। আপনার অবস্থান পৃথিবীর জন্য কল্যাণের নিদর্শন।’
ইমাম খোমেইনীর ইন্তেকালের পর মরহুম আয়াতুল্লাহ আরাকী তাঁকে এক ‘মহামানব’ বলে আখ্যায়িত করেন। আর তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতি এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নেতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য বাণী প্রেরণ করেন। তিনি তাঁর বাণীতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জোরালো ভাষায় আবেদন জানান। বাণীতে তিনি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের হিফাযত করাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে বর্ণনা করেন।
আয়াতুল্লাহ উজমা মুহাম্মাদ আলী আরাকী (র.)-এর যোগ্যতা ও গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম খোমেইনীর প্রতিনিধি জনাব আয়াতুল্লাহ সানিয়ী বলেন : ইমাম খোমেইনীর ইন্তেকালের পর তাঁর তাকলীদ করা যাবে বলে মরহুম আয়াতুল্লাহিল উজমা আরাকী ফতোয়া দিয়েছিলেন। সাধারণত শিয়া আলেমগণ মুজতাহিদের মৃত্যুর পর তাঁর তাকলীদ করা যাবে না বলে মতপ্রকাশ করেন। কিন্তু ইমাম খোমেইনী (র.) এর ব্যতিক্রম ছিলেন বলে হযরত আয়াতুল্লাহ আরাকী ফতোয়া প্রদান করেন। ইমাম খোমেইনীর ব্যক্তিত্বের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন- যা ইরানের অন্যান্য আয়াতুল্লাহ সমর্থন করেছিলেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ আরাকী ‘শায়খুল ফোকাহা ওয়াল মুজতাহিদীন’ খেতাবে ভূষিত হন। অর্থাৎ তাঁকে মুজতাহিদ ও ফকীহদের পুরোধা বলা হতো। তিনি পনেরো খোরদাদ থেকে একচল্লিশ বছর পূর্বে ‘আল-উরওয়া’ গ্রন্থের টীকা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এ কাজ তখন কঠিন ছিল। কারণ, তখনো ‘আল-উরওয়া’ গ্রন্থের সূত্র উল্লেখ করে কোন গ্রন্থ রচিত হয়নি। এমতাবস্থায় সূত্রহীন আল-উরওয়া গ্রন্থের ওপর ইজতিহাদ করে মাসয়ালা-মাসায়েল বের করা কঠিন ব্যাপার ছিল। এ কঠিন কাজ তিনি অনায়াসে সম্পাদন করেন। ফিকাহ শাস্ত্রে আয়াতুল্লাহিল উজমা আরাকীর পাণ্ডিত্যের এটি একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
তিনি শুধু ফিকাহ শাস্ত্রের পণ্ডিত ছিলেন না। তিনি ফিকাহ তথা ব্যবহারিক শাস্ত্রের বিধান রচনার মূলনীতি-বিশারদ ব্যক্তি ছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য প্রতিভার পরিচয় মেলে। ফিকাহবিদদের মধ্যে তাঁর ন্যায় ব্যক্তি অতি বিরল। তিনি অত্যন্ত পরহেজগার-মুত্তাকী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর দোয়া কবুল হতো। একবার কোম নগরে অনাবৃষ্টির দরুন ভয়াবহ অবস্থা দেখা দেয়। বৃষ্টির জন্য নামাযের আয়োজন করা হয়। হযরত আয়াতুল্লাহিল উযমা আরাকী বৃষ্টির জন্য নামায পড়ান আর দোয়া করেন। ফলে বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে শহরে শান্তি নেমে আসে। আর ফিকাহ শাস্ত্রে তাঁর বুৎপত্তিতে সমসাময়িক আলেমগণ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পার্থিব বস্তুতে তাঁর অনাসক্তি ও তাকওয়ার স্বীকৃতি দিয়েছেন সমসাময়িক বিদ্বানগণ। তিনি কোনদিন ‘মারজা’ বলে দাবি করেননি। ধর্মের বিধান জানার জন্য যাঁর প্রতি মুসলমানগণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তাঁকে ‘মারজা’ বলা হয়। লোকেরা এক বাক্যে মারজার প্রতি অনুগত থাকে। ধর্ম-কর্মের মর্যাদা নিরূপণে এটি একটি উঁচু স্থান। এ পর্যায়ে কদাচই কেউ উপনীত হন। আল্লামা আয়াতুল্লাহিল উযমা বরুজারদী এবং আল্লামা আয়াতুল্লাহিল উযমা খোনসারী মরহুম মারজা ছিলেন। তাঁদের ওফাতের পরও তিনি মারজা হওয়ার দাবি করেননি। আয়াতুল্লাহিল উযমা খোনসারীর ওফাতের পর তাঁর অনুসারীরা হযরত আয়াতুল্লাহিল উযমা আরাকীর প্রতি আকৃষ্ট হন। তবু তিনি মারজা হওয়ার কল্পনা করেননি। কিন্তু ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও ইসলামের হিফাজতের প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি একমাত্র ইসলামের স্বার্থে মারজা পদে অলংকৃত হন। একমাত্র ইসলামের স্বার্থ রক্ষার্থে তিনি এ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
তাঁর ইলম, তাকওয়া, পরহেজগারী ও বুজর্গীর দরুন তাঁর পেছনে বড় বড় আলেম এক্তেদা করে নামায পড়তেন। তিনি বহুদিন যাবৎ মাদ্রাসা-ই ফায়যিয়ায় নামাযে ইমামতি করেন। কোম নগরে যে কোন পর্যায়ের আলেমের আগমন হয়েছে তাঁরা হযরত আয়াতুল্লাহ আরাকীর পেছনে নামায পড়ার গৌরব অর্জন করেন। হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা শায়খুল ফোকাহা মুহাম্মাদ আলী আরাকী ১৯৯৪ সালের ২৯ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন।