মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় এ দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়

পোস্ট হয়েছে: আগস্ট ৫, ২০১৪ 

আয়াতুল্লাহ আল-উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী

সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর সাংস্কৃতিক বিনিময় ভিন্ন বিষয়। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের প্রয়োজন রয়েছে। কোন জাতিই সংস্কৃতি ও সংস্কৃতি হিসাবে স্বীকৃত বিষয়াদিসহ সকল ক্ষেত্রের জ্ঞান ভিন্ন জাতি থেকে শিক্ষা লাভের গণ্ডিমুক্ত নয়। ইতিহাসের ধারা সব সময় এরূপই ছিল। জাতিসমূহ পরস্পরের আগমন প্রত্যাগমনের মাধ্যমে জীবন চলার রীতিনীতি, চরিত্র, জ্ঞান, পোশাক পরিধানের ধরন, লেনদেনের রীতিনীতি, ভাষা জ্ঞান, মনীষা ও ধর্ম শিক্ষা লাভ করেছে। জাতিতে জাতিতে এই বিনিময় এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যা অর্থনৈতিক ও পণ্য বিনিময় থেকেও অধিক গুরুত্বের অধিকারী। এমন বহু ঘটনাও ঘটেছে যাতে এ সাংস্কৃতিক বিনিময় একটি দেশের ধর্মকেও পাল্টিয়ে দিয়েছে। যেমন পূর্ব এশিয়া তথা পূর্বাঞ্চলীয় ইসলামী ভূখণ্ড। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এমনকি উপমহাদেশের গুরত্বপূর্ণ অংশে ইসলামের আগমন শুধু মুবাল্লিগদের দাওয়াতের ফলেই হয়নি; বরং এর বেশির ভাগই ছিল ইরানী জনগণের আচরণ। ইরানী ব্যবসায়ী ও পর্যটকগণ এসব অঞ্চলে গমন করেন। আগমন-প্রত্যাগমনের মাধ্যমেই এশিয়ার বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার জনগণ ইসলামের ছায়াতলে স্থান পেয়েছে। সেখানে ইসলামের সূচনা মুবাল্লিগদের (ধর্ম প্রচারক) দ্বারা বা তরবারির জোরে যুদ্ধের মাধ্যমে হয়নি বরং আগমন-প্রত্যাগমনের মাধ্যমেই এর সূচনা হয়েছে। আমাদের জনগণও দীর্ঘকাল ধরে অন্যান্য জাতি থেকে বহু বিষয় শিখেছে। এই পারস্পরিক শিক্ষা সমগ্র বিশ্বে সাংস্কৃতিক জ্ঞান ও জীবনে টিকে থাকার জন্য একটি প্রয়োজনীয় ধারা হিসাবে স্বীকৃত। এটাই হলো সাংস্কৃতিক বিনিময় যা উত্তম বা বাঞ্ছিত।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অর্থ হলো একটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক গোষ্ঠী তাদের ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনের এবং একটি জাতির সংস্কৃতির ভিত্তিসমূহকে বন্দিশালায় আবদ্ধ করার জন্য সে জাতির ওপর আগ্রাসন চালায়, তারা এসব দেশে ও জনগণের কাছে নতুন কিছুর আমদানি করে। ঐ জাতির জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের স্থলে নিজেদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার জন্য যে শক্তি প্রয়োগ করে তার নামই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আর সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্য হলো জাতীয় সংস্কৃতিকে ফলপ্রসূ ও পূর্ণতা বিধান করা। অথচ সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের লক্ষ্য হলো জাতীয় সংস্কৃতির মূলোৎপাটন ও সম্পূর্ণ ধ্বংস করা।

সাংস্কৃতিক বিনিময়ে জনগণ সংস্কৃতির স্বভাবজাত, হৃদযগ্রাহী, উত্তম ও ইপ্সিত বস্তুসমূহ ধারণ করে। যেমন ইরানী জনগণ দেখছে ইউরোপীয়রা পরিশ্রমী এবং আত্মপ্রত্যয়ী মানসিকতাসম্পন্ন। আমাদের জনগণ যদি তাদের এ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে তাহলে ভালো। অথবা আমাদের জনগণ পূর্ণ এশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখতে পায় সেখানে জনগোষ্ঠী কার্যকরী বিবেক কর্মস্পৃহাসম্পন্ন, সময়ের মূল্যদানে সক্ষম, শৃঙ্খলা ও সংহতিতে বিশ্বস্ত, পারস্পরিক বন্ধুত্ব, উত্তম শিষ্টাচার ও সম্মানবোধের অধিকারী। তাদের কাছ থেকে যদি আমাদের জাতি এসব গুণ অর্জন করে তাহলে অনেক উত্তম কাজই বটে।

সাংস্কৃতিক বিনিময়ে একটি জাতি সঠিক ও সংস্কৃতির পূর্ণতা বিধানকারী দিকগুলোই শিখে। এর উদাহরণ  হলো সেই দুর্বল লোকের মতো যে সুস্থতার জন্য খাদ্য বা উপযোগী ঔষধের সন্ধান করে।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে জাতির ওপর যেসব বস্তু চাপিয়ে দেয়া হয় সেগুলো ভালো নয়- সেগুলো খারাপ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইউরোপীয়রা যখন আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন শুরু করে তখন তারা সময়ের মূল্য, বীরত্ব, সমস্যাদির প্রতি মনোনিবেশ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুসন্ধান- এসব বিষয আমাদের জন্য নিয়ে আসেনি। শিক্ষা, প্রচার ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইরানী জাতিকে একটি সক্রিয় কর্মক্ষম ও জ্ঞানগত ঐতিহ্যসম্পন্ন জাতিতে পরিণত করার চেষ্টাও তারা করেনি। তারা শুধু লাগামহীনভাবে আমাদের দেশে যৌন উস্কানিমূলক বিষয়াদি আমদানি করেছে। আমাদের জাতি ইসলামী অধ্যায়ের হাজার বছরাধিককাল ধরে যৌন বিনিময় তথা নারী-পুরুষের সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়মমাফিক লালন করে আসছে। তবে এর মর্ম এই নয় যে, কেউ ভুল বা আইনবিরোধী কাজ করেনি। ভুল সবসময়ই সকল যুগে ও সকল ক্ষেত্রে হয়ে এসেছে এবং এখনও হচ্ছে। মানবজাতি সবসময় ভুল করে থাকে। অন্যায় করার অর্থ এই নয় যে, একটি অন্যায় সমাজ ও জাতির মধ্যে প্রচলন ঘটবে। আমাদের জাতি ব্যাপকহারে বাহুল্য, বিলাসিতা, বিনোদন ও হাসি-তামাশায় মত্ত ছিল। আমাদের সমাজে এসব কাজের হোতা ছিল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ, রাজরাজড়া, শাহজাদা, জমিদার তথা অভিজাত শ্রেণি যারা পুরো রাত জাগ্রত থেকে বিলাসিতায় কাটিয়ে দিত। মদের আড্ডা ও অশ্লীলতার আখড়ায় সদামত্ত ইউরোপীয়রা এসব অশ্লীলতা ও বিপর্যয়পূর্ণ অভ্যাস আমাদের সমাজে আমদানি করার কাজে লিপ্ত ছিল। আপনার ইউরোপের ইতিহাস পড়ে দেখুন- ফ্যাসাদ বা বিপর্যয় সবসময় সকল যুগে এবং তাদের সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসের পরতে পরতে বিদ্যমান ছিল। তারা এসব বিপর্যয় আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইল এবং যতটুকু সম্ভব অনুপ্রবেশ ঘটালো।

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে দুশমন তার সংস্কৃতির কিছু দিক এ জাতিকে অর্পণ করে এ দেশে তাদেরই মনমতো সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটায়। এটা জানা কথা- দুশমন তো কত কিছুই চায়। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের আলোচনায় অন্যের সংস্কৃতি ধারণ করাকে এমন এক ব্যক্তির সাথে উপমা দিয়েছিলাম যে অলিতে-গলিতে, হাঁটে-বাজারে খাদ্য ও উপযোগী ঔষধ যোগাড় করে সেগুলো ব্যবহার করার কাজে নিয়োজিত। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে আক্রান্ত জাতিকে এমন এক রোগীর সাথে উপমা দিচ্ছি যে ভূমিতে লুটিয়ে পড়েছে, নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই। তখন তার দুশমন এসে তাকে একটি ইনজেকশন ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা তো জানা কথা, দুশমন যে ইনজেকশন দিচ্ছে তা কী জিনিস। যে ঔষধ বা চিকিৎসার জন্য আপনি নিজে গিয়েছেন, নিজেই নির্বাচন করেছেন এবং নিজের আগ্রহে সে ঔষধ সেবন করেছেন তার সাথে ঐ ইনজেকশনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক বিনিময় আমাদের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মূলোৎপাটনের উদ্দেশ্যেই দুশমনদের দ্বারা সম্পাদিত হয়। সাংস্কৃতিক বিনিময় ভালো, তবে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন খুবই খারাপ। সংস্কৃতির বিনিময় একটি জাতির শক্তি ও ক্ষমতা থাকাকালেই হয়ে থাকে, আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন একটি জাতির দুর্বল সময়ে হয়ে থাকে। তাই ইতিহাসে দেখতে পাচ্ছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যখন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় প্রবেশ করে তখন তাদের রাজনৈতিক সেনাবাহিনী ও বিশেষ এজেন্টদের উক্ত অঞ্চলে প্রবেশ করানোর পূর্বেই খ্রিস্টান মিশনারী এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় গুরুদের প্রতিনিধিদল সেখানে ঢুকিয়ে দেয়। রেড ইন্ডিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রথমে খ্রিস্টান করে এবং এর পর সাম্রাজ্যবাদী রশি তাদের ঘাড়ে তুলে দেয়। এরপরও তাদেরকে তাদের ঘড়বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে। আপনারা যদি অনুরূপভাবে ইরানের কাজার শাসনের শেষদিকের ইতিহাস অধ্যয়ন করেন তাহলে দেখতে পাবেন, এ দেশের জনগণকে খ্রিস্টান করার উদ্দেশ্যে ইউরোপ থেকে কত বিপুল সংখ্যক পাদ্রীই না এসেছেন! অবশ্য নতুন চোরের মতো কোথায় খ্রিস্টধর্মের প্রচলন ঘটাতে চায় সে স্থান সম্পর্কে না বুঝার কারণে ব্যর্থ হয়। তবে পুঁজিপতি কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক লুটেরা শ্রেণিকে হযরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারী বলা যায় না। তারা কোথায় হযরত ঈসাকে (আ.) চিনে? যাই হোক যে পরিবেশে একটি জাতির সংস্কৃতি ও নিজস্ব মানসম্ভ্রম প্রতিরক্ষার সুযোগ রয়েছে তাদের প্রথম কাজ হলো সে সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরা। যেমন একদল সৈন্য যদি একটি সুদৃঢ় দুর্গে হামলা চালাতে চায় তাদের প্রথম কাজ হবে দুর্গের ভিত্তিসমূহে আঘাত হানা। আর তা করতে পারলেই দুর্গের প্রাচীর ধসে পড়বে। দুর্গের প্রাচীরকে দুর্বল করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রচেষ্টা চালানো, এমনকি প্রথম কাজ হিসেবে প্রয়োজনে দুর্গবাসীদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে।

শেখ সাদী ‘গুলিস্তান’ গ্রন্থে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে বলা হয়- একদল লোকের কাছে কয়েকজন চোর উপস্থিত হয়ে দেখতে পেল তারা ঘুমাচ্ছে। সাদী বলেন, তাদের ওপর প্রথম দুশমনের হামলা ছিল এই ঘুম। প্রথমে এই অভ্যন্তরীণ দুশমন তাদের চোখ বন্ধ করে দেয়, তাদের হাতকে কর্মহীন করে ফেলে। এরপর বহিরাগত দুশমন এসে তাদের হাত বেঁধে ফেলে, তাদের সম্পদ অপহরণ করে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বেলায় দুশমন অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রথমত, জনগণকে নিদ্রাভিভূত করে এবং এরপরই তাদের সকল সম্পদ নিয়ে যায়। আমাদের জাতির ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বিশেষভাবে রেযা খানের যুগ থেকেই শুরু হয়। অবশ্য এর পূর্বে এ আগ্রাসনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। তার পূর্বেও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়। আমাদের দেশের ভেতরেই পরনির্ভশীল বুদ্ধিজীবী লালন করা হয়েছে। আমার জানা নেই বিপ্লবের বংশধর যুব শ্রেণি গত দেড়-দু’শতাব্দীর ইতিহাস ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন কিনা। আমার মানসিক পীড়া এখানেই যে, বিপ্লবী যুবকরা আজ জানে না কী ধরনের অধ্যয়গুলো অতিক্রম করে আমরা আজ ইরানে এই মহান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ইরানের জনগণের উচিত বিগত দেড়-দুই শতাব্দী তথা কাজার শাসনের মধ্য যুগ থেকে ইরান-রুশ যুদ্ধের পরবর্তী যুগের ইতিহাস অধ্যয়ন করা। দেখা উচিত কত ঘটনা এ দেশে সংঘটিত হয়েছে! এসব ঘটনাপ্রবাহের অন্যতম দিক হলো তল্পীবাহক বুদ্ধিজীবী লালনের ধারা সৃষ্টি করা। আমরা এ কথা বলছি না যে, ইরানের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী ছিল না। সর্বদাই সকল যুগে সকল অধ্যায়ে এমনসব বুদ্ধিজীবী ছিলেন যাঁরা অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেন, তৎপরতা চালাতেন। তবে প্রযুক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী পাশ্চাত্য যখনই ইরানে তার আধিপত্যের ঘাঁটিকে সুদৃঢ় করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তখন বুদ্ধিজীবীদের পথেই প্রবেশ করে। ‘মীর্জা মালকম খান’ ও ‘তাকীযাদের’ মতো আত্মবিকৃত এজেন্টদের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ করে। কাজার যুগ থেকে নিয়ে পরবর্তীকালে ইরানের বুদ্ধিজীবী ধারা অসুস্থতা ও পরনির্ভরশীলতার জন্ম দেয়। দুঃখজনকভাবে হাতে গোনা যে ক’জন সুস্থ ও নিষ্ঠাবান ছিলেন তাঁরা অসুস্থদের মাঝে হারিয়ে যান। এ ধারা শুরু থেকেই তল্পীবাহক ছিল। তাদের কেউ ছিল রুশদের এজেন্ট। যেমন মীর্জা ফতেহ আলী আখন্দযাদেহ, আর কেউ ছিল ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের পোষা গোলাম। যেমন মীর্জা মালকম খান ও তাদের দোসররা। এ কাজ পূর্বে ইরানের অভ্যন্তরেই হয়েছিল, তবে ততটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। এ সময় ইরানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির স্বার্থে এবং বস্তুত পাশ্চাত্য ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে সে ছিল রেযা খান। আপনারা লক্ষ্য করুন, এ সময়ের অবস্থা কতই না লজ্জাকর যে, এক রাজতন্ত্রী সরকার একেবারে একটি দেশের জাতীয় পোশাক পরিবর্তন করেছে। আপনারা বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চল বিশেষ করে ভারতে গমন করুন। দেখুন জনগণের জাতীয় পোশাক রয়েছে। এতে তারা গৌরববোধ করছে, তাতে তারা হীনমন্য মনোভাবও পোষণ করছে না। কিন্তু এরা এসে একবারেই এ জাতির জাতীয় পোশাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। (তাদের প্রতি প্রশ্ন হলো) কেন? (এ নিষিদ্ধ ঘোষণার) জবাবে বলল, যেহেতু এ পোশাকে জ্ঞানী হওয়া যায় না। কি আশ্চর্য!

যেসব ইরানী মনীষীর রচিত গ্রন্থাবলি এখনও ইউরোপে শিক্ষা দেয়া হয় তাঁরা এই সংস্কৃতি এবং এই পরিবেশেই লালিত হয়েছিলেন। পোশাকে কি কোন প্রভাব আছে? এ কোন ধরনের হাস্যকর কথা ও যুক্তি যা তারা উত্থাপন করছে। তারা একটি জাতির পোশাক পরিবর্তন করেছে। নারীদের মাথা থেকে চাদর (হিযাব) সরিয়ে নিয়েছে। তারা বলেছে, হিযাব পরিহিতা নারী জ্ঞানী ও চিন্তাবিদ হতে পারে না। সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারে না।

আমার প্রশ্ন হলো আমাদের দেশে হিযাব তুলে নিয়ে নারিগণ সামাজিক কর্মকাণ্ডে কতটুকু অংশগ্রহণ করেছে? রেযাখান ও তার ছেলের শাসনামলে আমাদের নারীদেরকে সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ কি দেয়া হয়েছিল? তাদের শাসন আমলে সামাজিক কার্যক্রমে না পুরুষদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, না নারীকে? ইরানের নারিগণ যে সময় সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন, তাঁদের শক্তিশালী হাতসমূহ দেশকে পরিবর্তন করে, হিযাব পরা অবস্থায় এদেশের পুরুষদেরকে নিজেদের পেছনে সংগ্রামের ময়দানে টেনে নিয়ে আসেন এবং নিজেরাও ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন এ সময় হিযাব ও পোশাক নারী-পুরুষের নিষ্ক্রিয় হওয়ার পথে কি কোন প্রভাব রেখেছে? উত্তম কথা হলো, এ নারী বা পুরুষের অন্তর কিরূপ? কি চিন্তাই বা তারা করে। তার ঈমান কতটুকু, তার মনমানসিকতা কী ধরনের, সামাজিক বা শিক্ষা ক্ষেত্রে তৎপরতা চালানোর কী দৃষ্টিভঙ্গিই বা পোষণ করে। এই গোঁয়ার মোড়ল, অজ্ঞ-মূর্খ তথা রেযা খান এসে নিজেকে দুশমনের হাতে সঁপে দেয়। একবারেই দেশের পোশাক পরিবর্তন করে। জনগণের বহু সনাতন রীতিনীতির পরিবর্তন করে ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মোড়ল হিসাবে যেসব কাজ করেছে এবং পাশ্চাত্যের প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছে এর সবই আপনারা অবগত আছেন। তাও পাশ্চাত্যের জনগণ ও জনমতের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না; বরং তার সখ্য ছিল পশ্চিমা আধিপত্যবাদী রাজনীতিকদের সাথে।

ইসলাম ও জনগণের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এখান থেকেই শুরু হয়। এর বিভিন্ন রূপও পরিগ্রহ করে। এ আগ্রাসন নতুন অধ্যায়ে ধিকৃত পাহলভী বংশের শাসনামলের সর্বশেষ বিশ-ত্রিশ বছরে যে বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয় তার বর্ণনা দেয়া এখন সম্ভব নয়। ইসলামী বিপ্লব এসে মজবুত মুষ্টির মতো আগ্রাসীর বক্ষে আঘাত হানে, তাকে পিছু হটিয়ে দেয়। আগ্রাসনকে থামিয়ে দেয়। আপনারা বিপ্লবের সূচনা লগ্নেই হঠাৎ দেখতে পেয়েছেন, অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের জনগণ চারিত্রিক ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন অনুভব করেছে। জনগণের মাঝে হারানো মানসিকতা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। লোভ-লালসা কমে গেছে। সহযোগিতার অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের যুব সমাজ কর্মমুখর ও তৎপর হয়ে উঠেছেন। শহরে বসবাসে অভ্যস্ত বহুলোক গ্রামে-গঞ্জে গমন করেছেন। তাঁরা বলেছেন, আমরা (গ্রামে) যাব, কাজ করব, উৎপাদন করব। জনগণের অর্থনৈতিক জীবনে শূন্যতার মতো যেসব ভিত্তিহীন কাজ বিস্তৃত হয়েছিল তা কমে যায়।

বিপ্লবের প্রারম্ভিক কয়েক বছরেই এ সাংস্কৃতিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যে সময় দুশমনদের অপসংস্কৃতি ও অশ্লীল চারিত্রিক বীজ বপনের ধারা বন্ধ হয়ে যায়, এসময় আমাদের জনগণের অন্তরে বিদ্যমান ইসলামী সংস্কৃতি, চরিত্র, শিষ্টাচার ও ইসলামের প্রতি এক ধরনের চেতনা পুনরুজ্জীবিত হয়। অবশ্য এ চেতনা গভীর ছিল না। কয়েক বছর এ ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে গেলে এ প্রবণতা গভীরে পৌঁছত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ কাজের সুযোগ আসেনি। আগ্রাসন ক্রমান্বয়ে শুরু হয়। যুদ্ধ চলাকালীনও প্রচারযন্ত্র, ভুল ও বিকৃত বক্তব্যের মাধ্যমে (যার অশুভ প্রতিক্রিয়া জনগণের মনমানসিকতায় প্রভাবশালী ছিল) এ আগ্রাসন চলতে থাকে। কিন্তু যুদ্ধের তীব্রতা এ আগ্রাসনের মোকাবিলায় এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। যুদ্ধোত্তর সময়ে এ নয়া ফ্রন্ট নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করে। দুশমন এক হিসাব-নিকাশে বুঝতে পারে যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। তাদের পূর্বের হিসাব-নিকাশ যে সম্পূর্ণ ভুল ছিল তাই প্রমাণিত হয়। অনুরূপভাবে তারা দেখল অর্থনৈতিক অবরোধের মাধ্যমেও কিছুই করা যাবে না। কেননা, একটা জাতি যখন স্বল্পে তুষ্ট, ধৈর্যশীল, আত্মপ্রত্যয়ী, আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয়, কখনও পরাভূত হয় না। আমরা এসব পরীক্ষা দিয়েই এসেছি। অন্যান্য জাতিও এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাই তারা বুঝল যে, আমাদের মুক্তির গিরিপথে বোমা বর্ষণ করতে হবে। একদল সৈন্য যখন রণাঙ্গনে যুদ্ধে লিপ্ত, তাদের খাদ্য যদি পেছন থেকে আসে, নতুন সৈন্য প্রেরিত  হয়, প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হয়, রণাঙ্গনের পশ্চাৎ থেকে বন্ধু-বান্ধব, মাতা-পিতার পত্রাবলি তাদের হাতে পৌঁছতে থাকে, পশ্চাৎ থেকে রণাঙ্গনে তাদের মানসিকতা আরো শক্তিশালী করা হয়, আর এ গিরিপথ যদি সুগম থাকে, অগ্রবর্তী বাহিনী তখনই যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়, কিন্তু দুশমন যদি মুক্তির গিরিপথে বোমা বর্ষণ করে, খাদ্য, রসদপত্র, নতুন সৈন্য সম্মুখ ফ্রন্টে পৌঁছতে না পারে, বন্ধু-বান্ধব, মাতা-পিতার পক্ষ থেকে প্রশংসা, ধন্যবাদ ও ভালোবাসাপূর্ণ পত্র পাঠানো না হয় তাহলে যারা রণাঙ্গনে রয়েছে তারা কি করে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার শক্তি পাবে? এ অবস্থায় বীরসেনারা রণাঙ্গনে কয়েকদিন চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন হতে বাধ্য।

বিশ্ব শয়তানি চক্রের দাপটের বিরুদ্ধে ইরানী জাতির সংগ্রামে আমাদের মুক্তির গিরিপথ বলতে যা বুঝায় তা হলো আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের গিরিপথের আওতায় রয়েছে ইসলামী চরিত্র, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল, ঈমান এবং ইসলামের প্রতি আগ্রহ। যে মায়ের চারটি সন্তান শহীদ হওয়ার পর সে বলছে, ‘আমি ইসলামের জন্যই তাদেরকে দিয়েছি; আর তাদের শাহাদাতে সন্তুষ্ট’, আমি নিজে সেসব পরিবারকে অতি কাছ থেকে দেখেছি, তাদের ঘরে গিয়েছি। মাতা-পিতার সাথে কথা বলেছি। অন্যের কাছ থেকে শুনে বলছি না, আমি নিজেই বর্ণনা করছি যে, অতি নিকট থেকে তাদের দেখেছি। এক পরিবারে দুটি ছেলে ছিল, তাদের উভয়েই শহীদ হয়েছে। অন্য পরিবারে তিন ছেলে ছিল, তাদের তিন ছেলেই শহীদ হয়েছে। এসব হাস্য-কৌতুকের বিষয় নয়।

এই বিপদ কি সহ্য করার মতো? এই পিতা ও মাতা দুঃখে পাগল হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু দেখলাম মা (অবশ্য আবেগ থাকা তো স্বাভাবিক) পূর্ণ স্থিরতা নিয়ে বলছেন, জনাব! আমরা আমাদের সন্তানকে ইসলামের পথে দিয়েছি, আমাদের কোন অভিযোগ নেই। দুশমনও বুঝল, ইসলাম ও আল্লাহর ওপর ঈমানের প্রভাব এটাই। যে যুবককে মাতা-পিতা বলছে, ‘তুমি ষোল-সতের বছরের যুবক, লেখাপড়া কর, খেলাধুলা কর, আনন্দ-উল্লাস কর। তোমার ভাই রণাঙ্গনে শহীদ হয়েছে।’ কিন্তু এ যুবক বলছে, ‘না, আমার শক্তিকে ইসলামের পথে উৎসর্গ করব।’ শহীদগণের অসিয়তনামায় এ মানসিকতার পরিচয় আমরা প্রত্যক্ষ করছি।

আমি নিজে শহীদগণের পিতা-মাতা ও পরিবারের কাছে এসব কথা শুনেছি। ইসলামের প্রভাব এটাই। একদিন হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) বলেছেন, ‘আজ ইসলাম তোমাদের- যুবকদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী।’ আমি বিকাল বেলায় একটি কাজে যাচ্ছিলাম, দেখলাম সড়কগুলো বিপ্লবের প্রথমদিকের মতো সরগরম। ইমাম ‘পাবেহ’ নামক স্থানে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে দিকে জনগণ দলে দলে যাচ্ছে। এ ঘটনা এবং এ ধরনের দৃশ্য যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বহুবারই ঘটেছিল। যখনই ইসলামের নামে ইমামের নির্দেশ আসত (ইমামের নির্দেশও ইসলামেরই নির্দেশ ছিল। জনগণ ইসলামের জন্যই ইমামের নির্দেশকে গুরুত্ব দিত), দেখা গেছে জনগণ আনন্দ-উচ্ছাস নিয়ে সেদিকে ধাবিত হচ্ছে। যুবকরা শহর, গ্রাম, বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার, কর্মক্ষেত্র, স্টেডিয়ামের ফুটবল খেলা এবং সকল প্রকার কাজকর্ম ছেড়ে রণাঙ্গনে ছুটে চলেছে, নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এগুলো কৌতুক নয়। দুশমনও অন্ধ ছিল না। এদেরকে দেখেছে। মূল্যায়ন করেছে। বুঝতে পেরেছে এ জাতির মুক্তির গিরিপথ রয়েছে। যতদিন এই মুক্তির গিরিপথ থাকবে এ জাতিকে অর্থনৈতিক, সামরিক অবরোধসহ কোন প্রকার অবরোধ পরাস্ত করতে পারবে না। (তাই তারা (সিদ্ধান্ত নিল) এই মুক্তির গিরিপথকে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিতে হবে। তার সংস্কৃতি, চরিত্র, ঈমান, আত্মত্যাগ, দীনের প্রতি আস্থা, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, কুরআন, জেহাদ ও শাহাদাতের প্রতি দৃঢ়বিশ্বাসকে ধ্বংস করে দিতে হবে। কেননা, যুদ্ধের উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডে যুবকদেরকে ব্যস্ত ও আকৃষ্ট করে রেখেছিল, তাদের কানে দুশমনের কথার কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। কিন্তু যখন এ অগ্নিকুণ্ড নিভে যায়, পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে আসে, তখন তারা ব্যাপক আকারে তৎপরতা শুরু করে। তারা বিভিন্ন উপায়-উপকরণ ব্যবহার করে। আমি যখন দুশমনের উপকরণের ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ্য করি তখন বুঝি তাদের কাছে এ কাজটি কতটুকু গুরুত্ববহ। তাদের অন্যতম কাজ ছিল দেশের বিপ্লবী সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিকে হেয় প্রতিপন্ন ও কোণঠাসা করা। বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহের মধ্যে একটি হলো এ বিপ্লব একদল সাংস্কৃতিক ক্ষমতাসম্পন্ন লোক তৈরি করেছে। আমাদের হাতে এসব লোক রয়েছে। আল্লাহর শোকর বর্তমানে এসব শ্রেণির লোক কম নয়। কবি ও গল্পকারের সংখ্যাও অনেক। সিদ্ধহস্ত ফারসি ভাষী দক্ষ প্রতিবেদক ও লেখক সৃষ্টি হয়েছে।

…রাজতান্ত্রিক অধ্যায়ের শেষ দিকে প্রতিভাসমূহ অচলাবস্থা ও বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়। এ অধ্যায়ে মূলত মহান ব্যক্তি, প্রতিথযশা লেখক ও শিল্পীদেরকে বিশেষত শিল্পের কোন কোন বিভাগে তৈরি করা হয়নি। আমরা আজকে আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ করছি আমাদের যুবকদের মাঝে উত্তম চলচ্চিত্র শিল্পী, গল্পকার প্রশিক্ষণ পেয়েছে। বিপ্লবই এসব শক্তিকে স্বাধীন করেছে।

…ঈমানদার জনশক্তিকে কোণঠাসা অবস্থায় ফেলে দেয়ার জন্য যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় (আমিও অনুভব করেছি ঐসব দুঃখ যা লুক্কায়িত আছে এসব দুঃখ সবিস্তারে প্রকাশ করাই মানুষ পছন্দ করে), এর অন্যতম দিক হলো যখন ইরানী চলচ্চিত্র অথবা শিল্পক্ষেত্রে সাফল্যের নিদর্শনাবলি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্থাপিত হয়, যেসব অবদানে বিপ্লবী মানসিকতার আমেজ রয়েছে সেগুলোই অবজ্ঞার শিকার হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের শিশুদের চলচ্চিত্র, প্রদর্শনী ও কর্মতৎপরতা সবগুলো একই অবস্থায় পতিত হয়। কিভাবে কেউ স্বচক্ষে এগুলো দেখে বলতে পারে এসব সংস্থা অরাজনৈতিক। এরা যেসব অবদানের জন্য পুরস্কার দিয়ে থাকেন কেন সেগুলোতে একটি বিপ্লবী নিদর্শনেরও অস্তিত্ব নেই? আমাদের কি বিপ্লবী চলচ্চিত্র নেই? আমাদের কি বিপ্লবী কবিতা নেই? এগুলোর কি শিল্পমূল্য নেই? আমার ধারণা, এসব সংস্থা এমনকি নোবেল পুরস্কারও এমন সব পক্ষকে দেয় যারা ইসলাম ও বিপ্লববিরোধী তথাকথিত সংস্কৃতিকে বিশ্বে বড় করে এবং বিপ্লবী শক্তিকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এ কাজ কি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নয়?

বর্তমানে এসব কাজ হচ্ছে। আমি বহুবার উল্লেখ করেছি, একদল লোক রাস্তায় পর্দাবিহীন কয়েকজন মহিলাকে দেখে তার মনে এক ধরনের অনুভূতি জাগল। অবশ্য এ কাজও মন্দকাজ। তবে এ কাজই একমাত্র মন্দ কাজ নয়- মৌলিক মন্দকাজ এমন যা আপনারা রাস্তাঘাটে প্রত্যক্ষ করছেন না। কেউ একজনকে বলল : ‘কি করছ?’ জবাব দিল : ‘ঢোল বাজাই।’ বলল : ‘এর আওয়াজ আসছে না কেন?’ উত্তরে বলল : ‘আগামীকাল তার আওয়াজ আসবে।’ আপনারা জনগণ ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী যদি জাগ্রত না হন, খোদা না করুন, দুশমনের গোপন ও  চালাকিপূর্ণ আগ্রাসনের ফলে আধ্যাত্মিক মূল্যবোধসমূহ খসে পড়ার আওয়াজ যখন শোনা যাবে তখন তা আর চিকিৎসার যোগ্য থাকবে না।

রণাঙ্গনে আমাদের কোন যুবককে যদি আটক করত তাকে প্রথমে একটি ভিডিও দেয়া হতো। এরপর যৌন অশ্লীল ফিল্ম তাদের দেখানো হতো, তার কামভাবকে উত্তেজিত করা হতো, তারপরও তাকে বিভিন্ন ধরনের বৈঠকে নিয়ে যাওয়া হতো। ঐ সময় আমাদের কি করা উচিত? যে কেউ তার যৌবনকে তার চূড়ান্ত তাড়নায় অশ্লীল করা কোন সমস্যার কথা নয়, এরপর বিশেষ করে বিপর্যয়কারীদের সকল হাতিয়ার যদি বিদ্যমান থাকে তাতে আর কথাই থাকে না। বর্তমানে দুশমনরা এ কাজই করছে। আমি দেশের বিভিন্ন শহরের খবর রাখি, এ ধরনের সংবাদ আমার কাছে পৌঁছে। এমন কোন দিন নেই যেদিন বা রাতে এ ধরনের সংবাদ কর্ণগোচর হয় না। দুশমন ছাড়া আর কে এসব কাজ করে?…

ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে এই বলে অভিযুক্ত করা হয় এই শাসনব্যবস্থা স্বাধীনতা দেয় না। কিভাবে আমরা স্বাধীনতা দেই না? আপনাদের কাছে এমন কোন দেশের সন্ধান আছে যেখানে প্রকাশিত সকল ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকায় যা ইচ্ছে তাই লিখতে পারে? দেশের সরকারি সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ্যে ও সুস্পষ্টভাবে সরকারের নীতিমালাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করছে, দেদার সমালোচনা করে যাচ্ছে। সরকারও পূর্ণ মহানুভবতার সাথে এসব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন।…

…দুশমনরা চায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লেখকরা যেন শয়তানি চক্রের এজেন্ট হয়, তারা চায় যা ইচ্ছে তা-ই লিখুক। ইসলামী শাসন ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত এবং ইসলামী পক্ষ ও শক্তি এ সবের জবাব না দিক। যদি জবাব দেয় তখনই বলে, স্বাধীনতা নেই। আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে। দেখুন দুশমনরা এ ধরনের পরিবেশই সৃষ্টি করে। একদল সরল সহজ লোক অতি সহজেই ধোঁকায় পতিত হয়। অবশ্য দুশমনের খপ্পরে পড়ে যায়। তারা বোঝে না কী বলছে এবং কী করছে।

কোন দেশে দুশমন সামরিক হামলা চালালে কারা দুশমনের বিরুদ্ধে রখে দাঁড়ায়? যারা সবচেয়ে দেশ ও জাতির জন্য দরদি, দুনিয়ার সম্পদ ভাণ্ডারের প্রতি অধিকতর ভ্রুক্ষেপহীন, প্রবল দায়িত্বানুভূতিসম্পন্ন এবং দ্বীনদার- ঐসব মানুষই অগ্রসর হয়, প্রতিরক্ষা করে। আপনারা যুদ্ধ অধ্যায়ে দেখেছেন কারা গিয়েছে এবং প্রতিরক্ষা করেছে। আমাদের যুদ্ধের ময়দানে প্রধান অংশই ছিল বাসিজ বা গণবাহিনী। বাসিজ তথা সেই ঈমানদার, বিপ্লবী দেশপ্রেমিক, আত্মত্যাগী জনগোষ্ঠীই যুদ্ধের ময়দানের মধ্যখানে গিয়ে আত্মত্যাগের মাধ্যমে শত্রুকে পরাভূত করেছেন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও অনুরূপ।…

তারাই ইসলামী সংস্কৃতি এবং এ জাতির মান-মর্যাদা ও অস্তিত্ব প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসবে, দুশমনদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, যাদের অন্তর ইসলামের জন্য উচ্চকিত, ইসলাম ও ইরানকে ভালবাসে।

…এ জাতির মান-মর্যাদা, সত্যিকার মানবিক, ইসলামী বিপ্লবী ও জাতীয় সংস্কৃতিকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে হলে চাই সাধনা, প্রতিরোধ, দুশমনের আগ্রাসনের মোকাবিলার জন্য রুখে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। দুশমন দুর্বল দিক দিয়েই আগ্রাসন চালায়। আর এ প্রতিরোধ আমাদের নিজস্ব লোকেরাই করতে পারে। আমার কথা এতটুকুই।

আমি বলব, আপনারা যদি চান এদেশের শিল্পের প্রবৃদ্ধিও বিকাশ হোক তাহলে ঈমানদার যুবক শিল্পীদের ওপর নির্ভর করুন। সেই পারবে বিপ্লব ও দেশকে প্রতিরক্ষা করতে।…