সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: অক্টোবর ৫, ২০১৬
ইমাম আলী রেযা (আ.) ও হযরত মাসুমা (আ.)-এর জন্ম বার্ষিকী : কারামাতের দশ দিবস
১৪ আগস্ট আহলে বাইতের জ্যোতির্ময় অষ্টম ইমাম আলী রেযা (আ.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী। আর ৪ঠা আগস্ট মহানবী (সা.)-এর আহ্লে বাইতের (আ.) বংশধারায় মহিয়সী নারী হযরত ফাতেমা মাসুমা (সালামুল্লাহি আলাইহা)-এর জন্মবার্ষিকী। বিশ্বব্যাপী নবীপ্রেমিক ও আহলে বাইতের অনুসারীরা এ মহান দুই ব্যক্তিত্বের জন্মদিবসের মাঝের দশদিন ‘কারামাতের দশ দিবস’ হিসেবে উদ্যাপন করেন। এছাড়া হযরত মাসুমা (আ.)-এর জন্মদিবসটি কন্যাসন্তানদের প্রতি ইসলাম প্রদত্ত যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের লক্ষে ইসলামি ইরানে কন্যাদিবস হিসেবে পালিত হয়। একই সাথে এ দিনটি ইরানে ইসলামি মানবাধিকার দিবস ও মানবতা দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে থাকে।
হযরত মাসুমা ছিলেন নবীবংশের সপ্তম ইমাম হযরত মূসা কাযেম (আ.)-এর কনিষ্ঠতমা কন্যা ও হযরত ইমাম রেযা (আ.)-এর বোন। তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী উন্নততর দ্বীনী ও মানবিক গুণাবলির অধিকারিণী এবং দ্বীনী ইল্মে পারদর্শিনী। এ কারণে তিনি মাসুমা (নিষ্পাপ মহিলা) হিসেবে সুপরিচিত হন।
ইসলামের ইতিহাসে আহ্লে বাইতের ধারাবাহিকতায় খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা যাহ্রা (আ.) ও তাঁর বিপ্লবী কন্যা কারবালার নেত্রী হিসেবে খ্যাত হযরত যায়নাব (সা. আ.)-এর পরে তৃতীয় যে মহীয়সী নারী সর্বাধিক খ্যাত ও স্মরণীয় এবং যাঁকে কেন্দ্র করে বিস্তার লাভকৃত ক্বোম নগরীতে গড়ে ওঠা দ্বীনী জ্ঞানগবেষণার আন্দোলন দীর্ঘ বার শ’ বছর পরে এক মহাবিপ্লব সৃষ্টি করে তিনি হলেন হযরত মাসুমা।
হযরত মূসা কাযেম (আ.)-কে স্বৈরাচারী আব্বাসী সরকারের কারাগারে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হলে হযরত ইমাম রেযা (আ.) ইমামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ইতিমধ্যে হারূনুর রশীদের মৃত্যুর পর আমীন খলীফা হলে তার সৎভাই মামুন ও তার মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। এতে আমীন নিহত হয় ও মামুন খলীফা হয়। মামূন তার রাজধানী বাগদাদ থেকে মার্ভে (তৎকালে ইরানের খোরাসানভুক্ত ও বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানভুক্ত) স্থানান্তরিত করে। আমীনের সমর্থকদের হাত থেকে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে মামুন আহ্লে বাইতের অনুসারীদের স্বীয় সমর্থকে পরিণত করার লক্ষ্যে হযরত ইমাম রেযা (আ.)-কে পত্র লিখে তাঁকে মার্ভে গিয়ে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য দাওআত করে। হযরত ইমাম (আ.) জানতেন যে, একটি স্বৈরাচারী প্রশাসনের শীর্ষপদ গ্রহণ করে ইসলামি হুকুমাত প্রতিষ্ঠা তো সম্ভবই নয়, অধিকন্তু এতে আহ্লে বাইতের পবিত্র চেহারায় মিথ্যা কলঙ্ক লেপন করা হবে। তাই তিনি এ দাওআত প্রত্যাখ্যান করেন। তখন মামুন তাঁকে যুবরাজের পদ গ্রহণের জন্য দাওআত করে এবং তাঁকে ‘নিরাপত্তা দিয়ে’ নিয়ে যাওয়ার জন্য দেহরক্ষীদল পাঠিয়ে দেয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে মার্ভে চলে যান এবং কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ না করার শর্তে স্রেফ একটি আনুষ্ঠানিক পদ হিসেবে যুবরাজের পদ গ্রহণে সম্মত হন।
এ ঘটনার ফলে সাময়িকভাবে হলেও বিশেষ করে খোরাসানে আহ্লে বাইতের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি হয়। তাই ইমাম রেযা (আ.) তাঁর ভাই-বোনদেরকে খোরাসানে চলে আসতে বলেন। এ ছাড়াও আহ্লে বাইতের ভক্ত-অনুরক্তদের অনেকেই খোরাসানের পথে রওয়ানা হন। কিন্তু অচিরেই মামুনের ষড়যন্ত্রে ইমাম রেযাকে বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়; এ খবর পৌঁছলে আহ্লে বাইতের সদস্যগণ ও তাঁদের অনুসারিগণ যে যেখানে পৌঁছেছিলেন সেখানেই স্থায়ীভাবে যাত্রাবিরতি করেন।
হযরত মাসুমা তাঁর কয়েক ভাই সহ মার্ভের উদ্দেশে রওয়ানা হন, কিন্তু ইরানের সভেহ্ নগরীতে পৌঁছে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ক্বোমে যাবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন ক্বোম থেকে আহ্লে বাইতের কয়েক জন ভক্ত-অনুসারী গিয়ে তাঁদেরকে ক্বোমে নিয়ে আসেন। (সেখানে তিনি ১৭ দিন পর ২০১ হিজরির আটই শা‘বান ইন্তেকাল করেন।)
হযরত মাসুমা ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের এক অনন্যসাধারণ মহীয়সী নারী যাঁকে কেন্দ্র করে ক্বোম নগরী একটি ধর্মীয় নগরী ও দ্বীনী জ্ঞানগবেষণার নগরী হিসেবে ব্যাপক বিকাশের অধিকারী হয় এবং তাঁর আগমনের বারো শতাব্দী পরে এ নগরী থেকে সূচিত ইসলামি বিপ্লবের ফলে ইরানের বুকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমরা হযরত ইমাম আলী রেযা (আ.) ও হযরত মাসুমা (সা. আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে, বিশেষত মুসলিম উম্মাহ্কে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
হিজাব ও সতীত্ব দিবস
প্রতি বছর ১১ই আগস্ট ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে হিজাব ও সতীত্ব দিবস পালিত হয়। এ দিনে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নারী সমাজকে সঠিকভাবে ইসলাম নির্দেশিত হিজাব ও সতীত্ব বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত করা হয়।
বস্তুত ইসলামের দৃষ্টিতে হিজাব ও সতীত্ব হচ্ছে নারীর সম্মান, সম্ভ্রম ও মর্যাদার প্রতীক। হিজাব নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও কর্মতৎপরতার পথে বাধা তো নয়ই, বরং সহায়ক এবং তাদের মর্যাদার প্রতীক সতীত্ব বজায় রাখার জন্য রক্ষাকবচ।
কোরআন মজীদের আলোকে নারীর জন্য ঘরের বাইরে চেহারা, হাতের কব্জির বাইরের অংশ ও পায়ের গিঁটের নিচের অংশ ব্যতীত পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরয। এতে বাধাদান ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণ মাত্র এবং তা নিন্দনীয়।
আমরা হিজাব ও সতীত্ব দিবস উপলক্ষে বিশ্বের সকল নারীর প্রতি তাঁদের স্বকীয় সম্মান ও মর্যাদার স্বার্থেই হিজাবসম্মত পোশাক পরিধান করার এবং সমাজে উন্নত নৈতিকতার বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।