সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২৩, ২০১৪
ইসলামী বিপ্লবের সফল অভিযাত্রার পঁয়ত্রিশ বছর
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পর পঁয়ত্রিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ইরানী বর্ষপঞ্জির ১৩৫৭ সালের ২২শে বাহ্মান মোতাবেক খৃস্টীয় ১৯৭৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মহান দ্বীনী নেতা ওলীয়ে কামেল হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ইরানের ইসলাম-প্রিয় জনগণ আড়াই হাজার বছরের তাগূতী রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও বহিঃশক্তির পদলেহী তৎকালীন শাহের ইসলাম-বিরোধী গণ-দুশমন সরকারকে উৎখাত করে মহান ইসলামী বিপ্লবকে- যা ছিল বিংশ শতাব্দীর, বরং হাজার বছরেরও বেশি কালের বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গণবিপ্লব- বিজয়ী করেন। এ বিজয়ের অব্যবহিত পরেই ইরানী জনগণ হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটি গণভোটে অংশগ্রহণ করে প্রায় সর্বসম্মত রায়ে আল্লাহ্ তা‘আলার আইন এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ও মাসুম ইমামগণের (আ.) দিকনির্দেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইরানের বুকে একটি পুতপবিত্র আদর্শ দ্বীনী সমাজ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
যেহেতু ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা- যা মানুষের ইহ ও পরকালীন উভয় জীবনের সকল ক্ষেত্রের সর্বোত্তম কল্যাণ ও সাফল্য নিশ্চিত করে এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের ওপর অর্পিত সেহেতু ইসলামী প্রজাতন্ত্র কেবল ইরানী জনগণের দ্বীনী ও চারিত্রিক উন্নয়নই নিশ্চিত করে নি, বরং দুর্নীতিমুক্ত দ্বীনী সমাজ ও প্রশাসনের বদৌলতে এবং সর্বোপরি আল্লাহ্ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে আন্তরিকতা ও দৃঢ়তা সহকারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জন সহ সর্বাত্মক পার্থিব উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে নযিরবিহীন সাফল্যের অধিকারী হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা সহ ইসলাম ও ইসলামী হুকুমতের দুশমনদের শত্রুতামূলক সর্বাত্মক অপতৎপরতার বাধাবিঘেœর পাহাড় অতিক্রম করে- যা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের কারণ হয়েছে।
বিগত পঁয়ত্রিশ বছরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহ সার্বিক ক্ষেত্রে যে বিস্ময়কর উন্নতি ও অগ্রগতি হাসিল করেছে তার সবগুলো শিরোনাম উল্লেখ করাও অত্র সীমিত পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে কেবল এতোটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হবার দাবিদার বলদর্পী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যায়নবাদী ও পাশ্চাত্য বিশ্বের রক্তচক্ষু হুমকি উপেক্ষা করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিশ্বের অন্য সকল রাষ্ট্রের সাথে, বিশেষ করে বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশের সাথে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু বজায় রেখেই চলছে না, বরং এ সম্পর্ক দিন দিন অধিকতর শক্তিশালী ও গভীরতর করতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিগত সাড়ে তিন দশক কালে জাতিসংঘ, ন্যাম, ওআইসি, ইসিও ইত্যাদি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে স্বীয় দৃষ্টিগ্রাহ্য উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং এখনো রেখে চলেছে, বিশেষ করে ন্যামের ইতিহাসের সফলতম সম্মেলনের স্বাগতিক দেশের ভূমিকা পালন করে শত্রু শিবিরকে হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ইসলামী ইরান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তিপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সাক্ষরতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও মোবাইল, বিজ্ঞান গবেষণা, বিশেষতঃ আইটি, পরমাণু বিজ্ঞান ও ন্যানো-টেকনোলজি, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, কৃষি, শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে এবং এগুলোর মধ্য থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উন্নতির গতি বা হারের দিক থেকে বিশ্বে বা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে শীর্ষস্থান বা তার কাছাকাছি স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে।
এমনকি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও ইসলামী ইরান অবিশ্বাস্য সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংস্কৃতির নামে অনৈতিক কার্যকলাপ এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা কঠোরভাবে পরিহার করা সত্ত্বেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে নির্মিত বহু চলচ্চিত্র সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং সার্বিক মানের বিচারে প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থানীয় বিবেচিত হওয়ায় এমনকি পাশ্চাত্য জগতেও বহু পুরস্কার লাভ করেছে- যা প্রমাণ করে যে, ইসলামী মানদ- তথা পরিশীলিত রুচিবোধ বজায় রেখেও সর্বোত্তম শিল্প সৃষ্টি করা সম্ভব।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পঁয়ত্রিশতম বার্ষিকীতে আমরা দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সকল ইরানী জনগণ, বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মুস্তায্‘আফ জনগণ, ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সকল শুভানুধ্যায়ী এবং নিউজলেটারের সকল পাঠক-পাঠিকার প্রতি গভীর আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং এ বিপ্লবের স্থায়িত্ব ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সার্বিক উন্নয়ন তৎপরতায় অধিকতর গতি সঞ্চারের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে একনিষ্ঠভাবে প্রার্থনা করছি।