সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ২৫, ২০১৯
সম্পাদকীয়
ইমাম খোমেইনী (রহ্.) : ওফাতের পরে অধিকতর ভাস্বর আত্মিক নেতৃত্ব
৪ঠা জুন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ৩০তম ওফাত বার্ষিকী।
হযরত ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে বিজয়ী ইসলামি বিপ্লব ইরানি জাতিকে আড়াই হাজার বছরের রাজতান্ত্রিক জাহেলিয়াতের নাগপাশ থেকে ও একই সাথে বিজাতীয় বলদর্পী শক্তির তাঁবেদারি থেকে মুক্ত করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য পথ তৈরি করে দেয়। হযরত ইমামের (রহ্.) সুযোগ্য নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আধিপত্যবাদী বলদর্পী শক্তির রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞাজনিত কঠিন চাপকে উপেক্ষা করে এবং তাদের তাঁবেদারদের চাপিয়ে দেয়া আট বছরব্যাপী যুদ্ধ সফলভাবে মোকাবিলা করেও স্বীয় ইসলামি চরিত্র বজায় রেখে বলয়মুক্ত প্রকৃত স্বাধীন পথে চলার এবং সেই সাথে অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞানগবেষণা ও সমাজকল্যাণের ক্ষেত্রে নযীরবিহীন উন্নতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে- যা বিশ্বের মুসলিম ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্তে পরিণত হয় এবং তাদের জন্য বিরাট আশাবাদ সৃষ্টি করে।
এভাবেই তিনি ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত এক দশক কাল সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে বিশ^সমাজে এক অনন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন- যা বিশ্বের পর্যবেক্ষক মহলকে বিস্মিত করে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ছিলেন এমন এক ব্যতিক্রমী নেতৃত্ব যিনি শুরু থেকেই কেবল ইরানি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তা করতেন না, বরং বিশে^র সমস্ত মুস্তায্‘আফ্ জনগণের এবং আরো বিশেষভাবে ইসলামি উম্মাহ্র ভবিষ্যৎ ও ইসলামের প্রথম কিবলা কুদ্স্ (বায়তুল্ মুকাদ্দাস)-এর মুক্তির পথ নিয়ে চিন্তা করতেন। এ কারণে তিনি বিপ্লব বিজয়ের দেড় যুগ পূর্ব থেকে ইসলামি উম্মাহ্কে যায়নবাদী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে সতর্ক করে আসছিলেন। আর বিপ্লব বিজয়ের পর তাঁর নির্দেশে ইসরাঈলের প্রতি ইরানের স্বীকৃতি প্রত্যাহার করা হয় এবং তিনি ১২ থেকে ১৭ই রবিউল আউয়ালকে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ ও মাহে রমযানের শেষ শুক্রবারকে কুদ্স্ দিবস ঘোষণা করেন- যার ফলে ইতিমধ্যেই ইসলামি উম্মাহ্র মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্য প্রক্রিয়ার সূচনা হয়েছে এবং কুদ্সের মুক্তিসংগ্রামে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে- যায়নবাদী ইসরাঈলের বিরুদ্ধে হযরত ইমামের প্রেরণায় গড়ে ওঠা হিযবুল্লাহ্ ও হামাসের প্রতিরোধে নযীরবিহীন সাফল্যে যা বিশ^বাসীর কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ফিলিস্তিন সমস্যাকে মুসলিম উম্মাহ্র এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এর একমাত্র সমাধান নির্দেশ করেন অবৈধ যায়নবাদী ইসরাঈলকে উৎখাত করে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখ- জুড়ে অখ- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- যেখানে মুসলিম, খৃস্টান ও ইয়াহূদী নির্বিশেষে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সকল জনগণ সমান অধিকার লাভ করবে। প্রথমে অনেকেই এটাকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও ইসরাঈলকে এক অপরাজেয় শক্তি মনে করলেও হিযবুল্লাহ্ ও হামাস প্রমাণ করেছে যে, হযরত ইমামের (রহ্.) এ স্বপ্ন বাস্তবসম্মত; ইতিমধ্যেই এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ছিলেন একজন প্রকৃত ওয়ারেছে আম্বিয়া হিসেবে একজন দ্বীনী শিক্ষক এবং এ কারণেই তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লব একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া- যার ধারাবাহিকতা তাঁর গড়ে তোলা সুযোগ্য শিষ্য ও উত্তরসূরি ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুরøাহ্ খামেনেয়ীর নেতৃত্বে অব্যাহত রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে বিগত তিন দশক কাল যাবত সার্বিক ক্ষেত্রে নযীরবিহীন উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, বিশেষ করে ইসলামি ইরানের নযীরবিহীন সামরিক স্ট্রাটেজী বলদর্পী শক্তিকে যেভাবে অক্ষম করে দিয়েছে তা বিশ^বাসীর কাছে সুস্পষ্ট।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) সূচিত প্রক্রিয়ার উত্তরোত্তর সাফল্য ইন্তেকালের পরেও তাঁকে বিশে^র মুসলিম ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের, বিশেষ করে ইরানি জনগণের হৃদয়ে অধিকতর জনপ্রিয় করে তুলেছে; বরং তিনি আত্মিকভাবে এখনো তাদেরকে নেতৃত্ব প্রদান করে চলেছেন এবং তাঁর আত্মিক উপস্থিতি তাঁর দৈহিক উপস্থিতিকালের তুলনায় অধিকতর ভাস্বর প্রতিভাত হচ্ছে।
আমরা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে ইরানি জনগণ ও নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশে^র মুস্তায্‘আফ্ জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার সমুন্নত মর্যাদার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি।
ঈদুল ফিত্রের অভিনন্দন
পবিত্র ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশের জনগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে এবং বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে আবেদন, ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের মুস্তায্‘আফ্ জনগণের ওপর থেকে সকল অপশক্তির অপচ্ছায়া বিদূরিত করে দিন এবং ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক সকলের মন-প্রাণ-গৃহ-পরিবেশ।