সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০১৮
ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ওফাত বার্ষিকী
৪ঠা জুন ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর ২৯তম ওফাত বার্ষিকী। ১৯৮৯ সালের এ দিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাই এ দিনটি সাধারণভাবে সারা বিশ্বের ইসলামি পুনর্জাগরণকামী ও নিপীড়িত-বঞ্চিত জনগণের জন্য এবং বিশেষভাবে ইরানি জাতির জন্য একটি গভীর শোকাবহ দিন।
হযরত ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বে ইরানি জনগণের দ্বারা ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হয়- যা ইরানি জাতিকে রাজতান্ত্রিক জাহেলিয়াতের নাগপাশ থেকে ও বিজাতীয় বলদর্পী শক্তির তাঁবেদারি থেকে মুক্ত করে পূত-পবিত্র ইসলামি জীবন যাপনের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর থেকেই ইসলামি ইরান আধিপত্যবাদী বলদর্পী শক্তির রক্তচক্ষু ও কঠিন চাপকে উপেক্ষা করে বলয়মুক্ত প্রকৃত স্বাধীন পথে চলার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে- যা বিশ্বের মুসলিম ও মুস্তায্‘আফ্ জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্তে পরিণত হয় এবং তাদের জন্য বিরাট আশাবাদ সৃষ্টি করে। শুধু তা-ই নয়, খাঁটি মুহাম্মাদী ইসলামের পতাকাবাহী দূরদর্শী মুজতাহিদ নেতা এবং ঐশী আধ্যাত্মিকতার আলোকে আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) এ বিষয়ে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন তা ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করে বিশ্বের পর্যবেক্ষক মহলকে বিস্মিত করেছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন যে, আগামী দিনের বিশ্ব হবে ইসলামের বিশ্ব এবং এর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য তিনি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানান, আর তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তিনি মুসলমানদেরকে ঐক্যের প্রতি আহ্বান জানান এবং ইসলামের দুশমন শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাদেরকে সতর্ক করে দেন। মুসলিম উম্মাহ্ এ আহ্বানে আশাব্যঞ্জকভাবে সাড়া দেয়, ফলে ইসলামের দুশমনদের অনেক ষড়যন্ত্রই নস্যাৎ হয়ে যায়। এছাড়া হযরত ইমাম কর্তৃক ঘোষিত ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২ থেকে ১৭ রবিউল আউয়াল) ও মাহে রমযানের শেষ শুক্রবার কুদ্স্ দিবস উম্মাহ্র ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিরাট অবদান রেখেছে। তিনি শিয়া-সুন্নি বিভক্তি সৃষ্টি যে ইসলামের দুশমনদের ষড়যন্ত্র তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে দেন। ফলে ইসলামের দুশমনদের এ ষড়যন্ত্র তাদেরকে তাদের আশানুরূপ ফল দিতে সক্ষম হয় নি।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) ফিলিস্তিন সমস্যাকে মুসলিম উম্মাহ্র এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং এর একমাত্র সমাধান নির্দেশ করেন অবৈধ যায়নবাদী ইসরাঈলকে উৎখাত করে সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখণ্ড জুড়ে অখ- ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইয়াহূদী নির্বিশেষে ফিলিস্তিনী বংশোদ্ভূত সকল জনগণ সমান অধিকার লাভ করবে। প্রথমে অনেকেই এটাকে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ও ইসরাঈলকে এক অপরাজেয় শক্তি মনে করলেও হযরত ইমামের প্রেরণায় গড়ে ওঠা হিযবুল্লাহ্ ও হামাস প্রমাণ করেছে যে হযরত ইমামের এ স্বপ্ন বাস্তবসস্মত; ইতিমধ্যেই এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ও যায়নবাদী চক্র অবৈধ ইসরাঈলকে রক্ষা ও ফিলিস্তিন মুক্তির পথকে রুদ্ধ করার লক্ষ্যে আইএস নামে যে ফিত্না তৈরি করেছিল তা-ও ইতিমধ্যেই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণশক্তির বদৌলতে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেন কমিউনিজমের বিলুপ্তি সহ তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যেই বাস্তব রূপ পরিগ্রহ করেছে। তিনি মুসলিম জাহানের একনায়কতান্ত্রিক ও রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর পতনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন; এর মধ্যে বেশ কয়েকটির পতন ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
আমরা হযরত ইমাম খোমেইনীর (রহ্.) ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে ইরানি জনগণ ও নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর বিদেহী আত্মার সমুন্নত মর্যাদার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি।
ঈদুল ফিত্রের অভিনন্দন
পবিত্র ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে আমরা বাংলাদেশের জনগণ সহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে এবং বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে আবেদন, ঈদুল ফিত্র্ উপলক্ষে মুসলিম উম্মাহ্ ও বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের ওপর থেকে সকল অপশক্তির অপচ্ছায়া বিদূরিত করে দিন এবং ঈদের আনন্দে ভরে উঠুক সকলের মন-প্রাণ-গৃহ-পরিবেশ।