শুক্রবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সম্পাদকীয়

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ১২, ২০১৭ 

ইসলামি বিপ্লব : উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান
১১ই ফেব্রুয়ারি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৩৮তম বিজয় বার্ষিকী। ৩৮ বছর আগে এদিনে মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে ইরানের দ্বীনদার সংগ্রামী জনগণ স্বৈরাচারী খোদাদ্রোহী রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং বিজাতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির তাঁবেদার শাহ্ ও তার সরকারকে উৎখাত করে ইরানের বুকে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা করেন।
ইরানের ইসলামি বিপ্লব কেবল একটি সরকারের পরিবর্তন ছিল না; বরং ছিল সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও নৈতিকসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন- যা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সমগ্র বিশ্ববাসীকে প্রভাবিত করে।
‘স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র’- স্লোগানের মাধ্যমে ইরানি জনগণ তাদের ঈমানী শক্তির বদৌলতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত শাহী সরকারের পতন ঘটায়। এ স্লোগানে বিধৃত বিপ্লবের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসমূহ ছিল : বহিঃশক্তির তাঁবেদারি থেকে স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি, নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণকে নিজেদের হাতে গ্রহণ, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক ও ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, স্বকীয় সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন। ইরানের জনগণ ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান ও নিজেদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নিজেদের হাতে গ্রহণের লক্ষ্য পরিপূর্ণভাবে অর্জন করে এবং বিগত ৩৮ বছরে অন্যান্য লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর মুহূর্ত থেকেই বিপ্লবের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক দুশমনরা এ বিপ্লবকে নস্যাৎ ও পথচ্যুত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে তারা তাদের সন্ত্রাসী এজেন্টদের দ্বারা বিপ্লবের অগ্রসেনানী অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা, ইসলামি চিন্তাবিদ, আলেম ও বিপ্লবী কর্মীকে হত্যা করে এবং আট বছরব্যাপী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এ দেশকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার অপচেষ্টা চালায়। সর্বোপরি তারা বিশ্বের জনগণকে সকল ক্ষেত্রে এ বিপ্লবের ইতিবাচক প্রভাব থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে বিপ্লব ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি ছড়াবার উদ্দেশ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়সাপেক্ষ পরিকল্পিত প্রচারযুদ্ধ চালিয়েছে- যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলার অশেষ রহমতে তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে, বরং ইসলামি বিপ্লবের দীপ্তি এবং ইসলামি ইরানের শক্তি ও শৌর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিগত ৩৮ বছরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পারমাণবিক বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও ন্যানোটেকনোলজিসহ সকল ধরনের জ্ঞানগবেষণা, সুস্থ সংস্কৃতি ও শিল্পকলা, রুচিশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ ইত্যাদিসহ জনজীবনের সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
ঐশী অনুগ্রহপ্রাপ্ত এ বিপ্লবের দূরদৃষ্টির অধিকারী নেতৃত্ব শুরু থেকেই কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমন একটি সমন্বিত ও ব্যতিক্রমী কর্মকৌশল গ্রহণ করেন যার ফলে আজ ইরানের ইসলামি বিপ্লবের টিকে থাকার ব্যাপারে আর কারো মনেই কোনো সন্দেহ নেই এবং যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য যে, বিশ্বের কোনো বলদর্পী শক্তিই ইরানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্য হুমকি সৃষ্টির অপচেষ্টার ন্যায় হঠকারী দুঃসাহস দেখাবে না। তাই আজ নি:সন্দেহে বলা যায় যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লব মুসলিম উম্মাহর জন্য সগৌরবে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার পথ নির্মাণ করে দিয়েছে।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৩৮তম বিজয়বার্ষিকী উপলক্ষে আমরা এ বিপ্লবের মহান রূপকার হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) এবং বিপ্লবের বিজয় ও প্রতিরক্ষার জন্য যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ও তাঁদের বিদেহী নাফ্সের মাগফেরাত কামনা করছি; বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ ‘উয্মা সাইয়্যেদ্ আলী খামেনেয়ী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ ও পরিচালকবৃন্দ, বিদেশে অবস্থানরত ইরানি নাগরিকগণ, বিশ্বের তাবত মুক্তিকামী ও নির্যাতিত জনগণ, বিশেষভাবে নিউজলেটারের পাঠক-পাঠিকাগণসহ বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং সকলের জন্য সুস্থতা ও উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ইরানি ও বাংলাভাষী ভূখণ্ডের জনগণের মধ্যে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদীর্ঘকালীন। বিশেষ করে এ ভূখণ্ডের জনগণ যে ফারসি শব্দ ‘বাংলা’কে তাঁদের মাতৃভাষার নামকরণের জন্য বেছে নিয়েছেন তা-ই এ বন্ধনের অবিচ্ছেদ্যতা প্রমাণ করে।
এ মহান দিবসে আমরা আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের বিদেহী নাফ্সের মাগফেরাত কামনা করছি এবং স্বীয় শিকড়ের সাথে সংযোগ শক্তিশালীকরণসহ এ ভাষার উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও প্রসার এবং বিশ্বের ভাষা সমাজে এ ভাষার জন্য অধিকতর গৌরবময় অবস্থান ও আসন কামনা করছি।