সম্পাদকীয়
পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহের উদাত্ত আহ্বান
রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী ঈদে মিলাদুন্নবী সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র জন্য আনন্দ ও উৎসবের একটি বিরাট উপলক্ষ।
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্ তা‘আলার প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর মাধ্যমে মানব প্রজাতির উদ্দেশে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর পরিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এবং এ বাণীকে যে কোনো বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত রেখেছেন।
কোরআন মজীদ হচ্ছে মানব জাতির মুুক্তির পথপ্রদর্শক। তাই এ মহাগ্রন্থ কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানব জাতির জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার শ্রেষ্ঠতম নে‘আমত। আর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ছিলেন কোরআন মজীদের মূর্ত প্রতীক; তিনি স্বীয় চরিত্র, আচরণ ও শিক্ষার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের শিক্ষা ও পথনির্দেশের বাস্তব প্রদর্শনী করেছেন- যা প্রমাণ করে যে, কোরআন মজীদ মানুষের জন্য পুরোপুরি অনুসরণ ও বাস্তবায়নযোগ্য। এ কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে রাহ্মাতুল্লিল্ ‘আলামীন (সমগ্র জগৎসমূহের জন্য অনুগ্রহ) হিসেবে অভিহিত করেছেন।
হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে এসেছে বিধায় তা সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যপূর্ণ ও সুবিচারের পতাকাবাহী। তাই এ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে যেমন কোনোরূপ জোর-জবরদস্তির অবকাশ নেই, তেমনি এর বিস্তারের পন্থা সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাছে আবেদন এবং এর প্রতিষ্ঠার পথ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দ্বীনের সাথে লোকদের সঠিক ও যথাযথ পরিচিতির অভাবের সুযোগ নিয়ে ইসলামের দুশমনরা তাদের অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তাই এ দ্বীন ও হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবন ও শিক্ষার সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়া এবং তা অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়া মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য।
আল্লাহ্ তা‘আলা যেসব উদ্দেশ্যে এ দ্বীন পাঠিয়েছেন তার অন্যতম হচ্ছে মানবতার ঐক্য গড়ে তোলা এবং এ লক্ষ্যে তিনি ইসলামি উম্মাহ্র ঐক্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। কোরআন মজীদে ন্যূনতম অভিন্ন ‘আক্বায়েদী সূত্র তাওহীদ ও আখেরাতের ভিত্তিতে নাজাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে আহ্লে কিতাবের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মুসলমানদের ঐক্য ফরয হওয়া সম্পর্কে সামান্যতম সন্দেহও থাকতে পারে না। কিন্তু ইসলামের দুশমনদের ও মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রের ফলে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও হানাহানি চলে আসছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর এ বিপ্লবের মহান নায়ক হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ.) ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-কে ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার চালিকাশক্তিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেহেতু রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্মতারিখ নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য আছে এবং বেশির ভাগ মুসলমানই ১২ বা ১৭ই রবিউল্ আউয়াল্কে তাঁর জন্মবার্ষিকী হিসেবে গণ্য করে থাকে সেহেতু ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়াসকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তিনি উভয় তারিখকে সমন্বিত করে ১২ থেকে ১৭ই রবিউল্ আউয়াল্কে ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ মর্যাদায় এ সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্র প্রতি আহ্বান জানান। তখন থেকে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ, বিশেষ করে ইরানি মুসলমানগণ প্রতি বছর যথাযথ মর্যাদা সহকারে এ সপ্তাহটি উদ্যাপন করে আসছে।
মুসলিম উম্মাহ্র জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, বিগত কয়েক দশক যাবত ইসলাম ও মানবতার দুশমন বলদর্পী শক্তিবর্গের সামরিক, রাজনৈতিক, প্রচার, ষড়যন্ত্র ও কৌশলগত সহযোগিতায় ইসলামের নামে গড়ে ওঠা কতগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বিভ্রান্তিকর প্রচার ও সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে ইসলামের ওপর সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক লেপনের পাশাপাশি মুসলমানদের হত্যার কাজে মেতে উঠেছে এবং এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বিশেষভাবে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মুসলমানদের ওপর বিরাট বিপর্যয় চাপিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে পাশ্চাত্য জগতের জনগণের মধ্যে যখন ইসলামের সাথে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়ার প্রবণতা ও ইসলাম গ্রহণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে তখন এই ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে সেখানকার অনেক তরুণ মুসলমান ঐ সব সন্ত্রাসী দলে যোগদান করায় এবং মাঝে মাঝে পাশ্চাত্য জগতে কিছু সন্ত্রাসী কর্মকা- সংঘটিত করায় ইতিমধ্যেই পাশ্চাত্যে মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ ও চাপ সৃষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সেখানে ইসলামের প্রচার-প্রসারের কাজও চাপের মুখোমুখী হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাসীকে, বিশেষত মুসলমানদেরকে ইসলামের সঠিক রূপের সাথে পরিচিত করার প্রয়োজনীয়তা পূর্বাপেক্ষা বহুগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে, বিশেষ করে নিউজ লেটারের পাঠক-পাঠিকাগণকে অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি এবং আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে কামনা করছি, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ্ ইসলামি উম্মাহ্ ঐক্য ও সংহতির চালিকা শক্তিতে পরিণত হোক।