সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টিতে বিপ্লবের পূর্ববর্তী এক বছরের কিছু ঘটনাপঞ্জী
পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৩
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2013/09/old-microphone-icon.jpg)
প্রচারমাধ্যমে প্রতিফলিত ইরানের প্রাকবিপ্লব ঘটনাবলির বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো :
৫ জানুয়ারি ১৯৭৮-পানা (পারস সংবাদসংস্থা) বর্তমানে ইরনা (ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বার্তা সংস্থা) :
প্রায় ১শ’ মহিলা চাদর বা হিজাব পরিহিত অবস্থায় মহিলাদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করে ১৭ই দে (ইরানী মাস) রেযা খান কর্তৃক ফরমান জারি উপলক্ষে আয়োজিত তথাকথিত ‘নারী মুক্তি’ অনুষ্ঠানের স্বাধীনতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।
১০ জানুয়ারি ১৯৭৮-পানা : ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কিছু ছাত্রসহ একদল লোক ব্যাংকে মিল্লি ও সমবায় বিতরণ ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় হামলা চালিয়ে সেগুলোর জানালা ভাংচুর করে।
১০ জানুয়ারি ১৯৭৮– ইউপিআই : রেযা খানের আমলে মহিলাদের হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে সারাদেশ শত শত মহিলা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
বিবিসি : কয়েকটি আমেরিকান মানবাধিকার সংগঠন ইরানে স্বাধীনতার অভাব এবং মানবাধিকারের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
বিবিসি, রয়টার, এএফপি : জার্মান পত্র-পত্রিকাসমূহ কোম নগরীতে সংঘটিত বিক্ষোভের খবর পরিবেশন করে বলেছে, বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময় অন্তত ২০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। লন্ডনের পত্রিকাগুলো খবর দেয় যে, আয়াতুল্লাহ খোমেইনী (রহ.)-কে ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
১১ জানুয়ারি ১৯৭৮-পানা : ইত্তেলাত পত্রিকায় আহমদ রাশিদীর একটি নিবন্ধ প্রকাশের প্রতিবাদে মাশহাদে ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়।
১৫ জানুয়ারি ১৯৭৮-এএফপি : ইরানী ছাত্র ফেডারেশন জানিয়েছে, তেহরানে বিক্ষোভকারীরা আয়াতুল্লাহ খোমেইনী (রহ.)-এর দেশে ফিরে আসার দাবি জানিয়েছে।
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮- রেডিও কোলন : দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ বলে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্র হাতছাড়া করতে পারবে না। এপি : ডাক ও তার বিভাগের কর্মচারীরা ধর্মঘট শুরু করেছে।
৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-লন্ডন টাইমস : ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-সাড ডুয়েটশে জেইটাং : ইরানের মানবাধিকারের খুবই নাজুক অবস্থা সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তথ্য প্রকাশ করেছে।
১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-বিবিসি : শাহের সরকার একটি জনপ্রিয় সরকার নয়।
গার্ডিয়ান : শাহ নিজেকে পারস্য উপসাগরীয় এলাকায় পাশ্চাত্যের পুলিশ বলে স্বীকার করেছে।
বিবিসি : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, ইরানে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-এএফপি, ইউপিআই : তাবরীজে সংগঠিত বিক্ষোভ (যা রক্তক্ষয়ে রূপান্তরিত হয়) কোমের পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-ফ্রাঙ্কফুর্টের আলজেমিনি : তাবরীজের ব্যাপক বিক্ষোভের সংগঠকরা আদর্শগত দিক দিয়ে ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের বিরোধী।
২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৮-অবজারভার : তাবরীজে বিগত ১৫ বছরের নজিরবিহীন বিক্ষোভ ও সমাবেশ।
২ মার্চ, ১৯৭৮ – এএফপি : ইরান সফররত এক ফরাসি অ্যাটর্নীর মন্তব্য, ইরানে সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে।
৩ মার্চ, ১৯৭৮-বিবিসি : সম্ভবত কেউই এটা জানতে পারেনি যে, সমগ্র ইরানব্যাপী মিছিল-সমাবেশের মধ্যে কেবল তারবীজে কেন সংঘর্ষ (পুলিশের সাথে) হলো। ধারণা করা হচ্ছে যে, ছোট ছোট গেরিলা দল তাবরীজের পরিস্থিতিকে পুঁজি করেছে। কেননা, তাবরীজ এমন এক শহর যেখানে ধর্মের এক গভীর প্রভাব রয়েছে।
৯ মার্চ, ১৯৭৮ ডিপিএ : জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি ইরান সরকারের বিরুদ্ধে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।
বিবিসি : এক সমীক্ষায় বিবিসি ইরানের পরিস্থিতি ও শিল্প বিকাশের প্রশংসা করে বলে যে, শহরে শহরে আন্দোলন বিক্ষোভ সত্ত্বেও পূর্বের তুলনায় এখন ইরানে বেশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিরাজ করছে।
১০ মার্চ, ১৯৭৮-এএফপি : স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক : বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণে অস্বীকৃতি জানানোর জন্য ইরানে ৯০ জন পুলিশকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
১৩ মার্চ ১৯৭৮-ইউপিআই : বোরখাবিহীন মহিলাদের উপর হামলা রোধের জন্য তেহরানে সাঁজোয়া যানযোগে টইল পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
১৬ মার্চ ১৯৭৮ : বেইনশ্চার মাবকুবী (দৈনিক) : ইরানকে আধুনিকায়নের জন্য ইরান সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে শিয়া নেতৃবৃন্দ তার বিরোধিতা করে যাচ্ছে। শাহ কর্তৃক তাঁদের বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি জাতীয়করণ করার জন্য তারা এখনও ক্ষুব্ধ।
২৩ মার্চ, ১৯৭৮–এএফপি : ইরান রাজবন্দিদের অনশন ধর্মঘট সংক্রান্ত একটি সরকারী ইশতেহার প্রচার করে এবং ইরানে বিরাজমান সন্ত্রাসী পরিস্থিতির প্রতিবাদ জানানোর জন্য গণতন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানায়।
বিবিসি : ইরানের মানবাধিকার কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট ইরানের একদল রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ইরানী রাজবন্দিদের উপর পুলিশী বর্বরতার প্রতিবাদ জানায়।
এপি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের একটি মোর্চা ইরানের মতো স্বৈরাচারী সরকারকে সাহায্য দানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানায়।
২৮ মার্চ, ১৯৭৮-বিবিসি : ব্রিটেন নৌ সরঞ্জাম কেনার জন্য ইরান সরকারের বহু কোটি ডলারের একটি টেন্ডারে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ইরান যেসব টেন্ডার উত্থাপন করে ইউরোপীয় উৎপাদকরাই তাতে প্রতিযোগিতা করে।
২৯ মার্চ, ডিপিএ : জার্মান সংবাদ সংস্থা ইরানের চারশ’ রাজবন্দির অনশন ধর্মঘটের উপর এক দীর্ঘ নিবন্ধ প্রকাশ করে।
৩১ মার্চ, ১৯৭৮-হেরাল্ড ট্রিবিউন : তাবরীজের গণআন্দোলন সংগঠিত করে শাহের ভূমিসংস্কার ও নারী পুরুষের সমানাধিকার অনুমোদনের বিরোধী এক ব্যক্তি।
১ এপ্রিল, ১৯৭৮– বিবিসি : বিবিসি আন্দোলনের নেতা হিসাবে আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারীকে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে থাকে।
২ এপ্রিল, ১৯৭৮-ফ্রাংকফুর্টার রাউন্ডাশ্চাও : এই জার্মান দৈনিকটটি বলে যে, শাহের গোপন পুলিশ বাহিনীই বিপ্লবের জন্য দায়ী।
বিবিসি : (সংবাদ পর্যালোচনা) তেহরানের একটি ফারসি দৈনিকে আয়াতুল্লাহ খোমেইনীর বিরুদ্ধে একটি অবমাননাকর নিবন্ধ প্রকাশের প্রেক্ষিতে ইরানে আন্দোলন-বিক্ষোভ দানা বেধে উঠে।
৫ এপ্রিল, ১৯৭৮- রেডিও মস্কো : তেহরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-আন্দোলন অব্যাহত। বিক্ষোভকারীরা দালানকোঠা, ব্যাংক, কল-কারখানা ও রেল স্টেশনের উপর হামলা চালায়। কিছু কিছু ইরানী ছাত্র ও বিদেশী গ্রাজুয়েট ইরানে একদলীয় শাসন ও রাজতন্ত্রের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
৮ এপ্রিল, ১৯৭৮- রেডিও মস্কো : আজ কেউ এ কথা মনে করে না যে, ইরানের বিভিন্ন এলাকায় যে আন্দোলন-বিক্ষোভ হচ্ছে তা কোন ছোট দলের পরিকল্পনা বা উদ্যোগে পরিচালিত। তারা সারাদেশে একটি বড় ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
১০ এপ্রিল, ১৯৭৮- গার্ডিয়ান : সাম্প্রতিক ইতিহাসে এ ধরনের ব্যক্তিত্বের প্রতি কোন জাতির এতো অকৃতজ্ঞ হওয়ার ঘটনা বিরল যিনি এতোবড় বিস্ময়কর রাজনৈতিক কর্মসম্পাদন করেছেন।
১৮ এপ্রিল, ১৯৭৮-অবজারভার : পূর্বে রেকর্ড করা আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারীর বক্তৃতা বিতরণ ইরানে প্রচ- গণবিক্ষোভ আন্দোলনের বিস্তার ঘটাতো (আন্দোলনে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে আয়াতুল্লাহকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের এটি একটি দৃষ্টান্ত)।
১৯ এপ্রিল, ১৯৭৮- রেডিও কোলন : পশ্চিম জার্মানীর প্রেসিডেন্ট ইরান সফর করেন। শাহ ইরানীদের জন্য একটি আধুনিক শিল্পোন্নত দেশ গঠন করতে চায়। শাহের লোকেরা যে বিপ্লবের সূচনা করেছিল তাকে বলা হতো ‘শ্বেত বিপ্লব’ এবং রাস্তখিজ পার্টি অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রতিটি প্রয়োজনীয় সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এ জন্য যে কঠোরতা দেখানো হয়েছে বিরোধীরা তাকে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির হিসাবে আখ্যায়িত করে।
২৭ এপ্রিল, ১৯৭৮-জার্মান প্রেস : শাহকে একটি কারণেই দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে যে, সে ইরানের অর্থনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
৩০ এপ্রিল, ১৯৭৮-ব্রিটিশ টিভি : ইরানের স্থল ও নৌবাহিনী ব্রিটেনে তৈরি সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। আর বিমান বাহিনী হাজার হাজার মার্কিন উপদেষ্টা দ্বারা পরিচালিত এবং তাদেরই ক্ষমতার অধীন। যুক্তরাষ্ট্রেও তৈরি যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনতে শাহ এক হাজার কোটি পাউন্ড স্টার্লিং ব্যয় করে।
২৬ মে, ১৯৭৮-বিবিসি : ইরান সরকার গ্রেফতারকৃত বিক্ষোভকারীদেরকে সামরিক আদালতে বিচার করে।
২৭ মে, ১৯৭৮- এপি ও এএফপি : (একজন ইরানী ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে) আমার ধারণা এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের পশ্চাতে রয়েছে কমিউনিস্টরা।
৩০ মে, ১৯৭৮-স্পাইজেল : ইরান ও জার্মানীর মধ্যকার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্পর্ক জার্মানীর জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
১ জুন, ১৯৭৮– জার্মান দৈনিক ‘জেনারেল এনজেইগার’ শরীয়ত মাদারীকে ইরানের শিয়া মুসলমানদের নেতা হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় যে, শাহের সরকার ইরানের সংবিধানের প্রতি কোন শ্রদ্ধা পোষণ করে না এবং যদি তা করা হয়, তাহলে সকল সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। (জার্মান টেলিভিশনও আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারী সম্পর্কে অনুরূপ মন্তব্য করে এবং তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে)।
৪ জুন, ১৯৭৮– ফ্রাংকফুর্টার অলজেমাইন জেইতুং : বিপুল ভূ-সম্পত্তির অধিকারীদের সাথে গাঁটছড়া বাঁধা মোল্লারাই শাহ এবং তার ১৯৬৩ সালের বিপ্লববিরোধী।
৫ জুন, ১৯৭৮– এএফপি : এএফপি তেহরান বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্রদের তেহরানস্থ ছাত্রাবাসসমূহ বন্ধ করে দেয়ার খবর পরিবেশন করে এবং কলেজ ছাত্রদেরকে বিপ্লবের মেরুদ- বলে আখ্যায়িত করে।
রয়টার্স : তেহরান থেকে পাঠানো এক নিবন্ধে রয়টার্স শরীয়ত মাদারীকে ইরানের রাজপথে আন্দোলনের মূল ব্যক্তিত্ব বলে বর্ণনা করে এবং মত প্রকাশ করে যে, ইরানে কমিউনিস্ট ও মুসলমানরা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
৭ জুন, ১৯৭৮– বিবিসি : বিবিসি শাহের গোপন পুলিশ বাহিনী, সাভাক প্রধান নাসিরীকে বরখাস্তের খবর প্রচার করে এবং মন্তব্য করে যে, নাসিরীর বরখাস্তে প্রমাণিত হয় যে, শাহ তার গোপন পুলিশ বাহিনীর কাজকর্মে সন্তুষ্ট নয়। রেডিও আরো বলে, ইরানের বিভিন্ন অংশে বিশেষত তাবরীজে গণবিক্ষোভের দরুনই নাসিরীকে বরখাস্ত করা হয়।
শাহের সরকার ও উদারপন্থী ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সমঝোতার একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্যই নাসিরীকে বরখাস্ত করা হয় বলে বিবিসি মন্তব্য করে।
১২ জুন, ১৯৭৮– ফ্রাংকফুর্টার আলজেমাইন জিতুং : ইরানের কিছু কিছু ধর্মীয় নেতা বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে একইরকম পশ্চাদপদ রয়ে গেছে।
২৩ জুন, ১৯৭৮– সাডেন্টচি জিতুং : শাহের শ্বেতবিপ্লব ইরানের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন।
২৯ জুন, ১৯৭৮- বিবিসি : শাহ জনসাধারণকে দমন করার জন্য দশ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনবে।
৫ জুলাই, ১৯৭৮– বিবিসি : বিক্ষিপ্তভাবে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, শাহ এবং তার আমুজেগার মন্ত্রিসভা জনগণকে যে বাহ্যিক স্বাধীনতা দিয়েছে তাও আর খুব বেশি দিন থাকবে না।
২৪ জুলাই, ১৯৭৮- বিবিসি : আন্দোলন-বিক্ষোভের গতি শ্লথ হয়ে আসলেও তাতে গণ অসন্তোষ অবসানের কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।
৬ আগস্ট, ১৯৭৮– বাহরাইন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আল আজওয়া : ইরানে যা কিছু ঘটছে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই বিপদ যে কেবল ইরানের জন্যই হুমকি তা নয়; বরং সমগ্র পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের জন্যই হুমকি সৃষ্টি করেছে। ইরানে সরকার পতনের অর্থ হলো এ অঞ্চলের অন্য সব সরকারেরও পতন।
১২ আগস্ট, ১৯৭৮- রয়টার্স : (রয়টার ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির উপর এক সমীক্ষায় আপোষহীন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং সাংবিধানিক আইনকে সমুন্নত করতে প্রত্যাশী মধ্যপন্থী আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারীর মধ্যে এক ব্যাপক মতপার্থক্যের কথা প্রচার করে।
১৩ আগস্ট, ১৯৭৮– ইকোনোমিস্ট : শাহ আগামী বছর অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইরানের বিরোধী আন্দোলনকারীদেরকে বিরত রাখার জন্য তার ক্ষমতা জাহির করছে।
২১ আগস্ট, ১৯৭৮– গার্ডিয়ান : সেনাবাহিনীর ট্যাংক টলটলায়মান ময়ুর সিংহাসনকে রক্ষা করতে পারবে না।
২২ আগস্ট, ১৯৭৮– রয়টার : (ডেইলী টাইমসকে লেখা একজন সাবেক ব্রিটিশমন্ত্রীর এক চিঠির বরাত দিয়ে এই সংবাদ সংস্থা বলে) ইরানের নিকট ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কোন ভাল মন্তব্য নেই।
২৩ আগস্ট, ১৯৭৮- সাডেন্টচি জিতুং : ইউরোপে শাহ কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নয়। তার কার্যকলাপ, তার পুলিশের বর্বরতা এবং তার গোপন পুলিশ বাহিনী সাভাক জনসাধারণের কাছে তাকে এক অত্যাচারী স্বৈরশাসক হিসাবে চিত্রিত করেছে।
২৫ আগস্ট, ১৯৭৮– রয়টার্স : সউদী আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সমগ্র আরব জাহানকে ইরানের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ মোকাবিলায় শাহকে সমর্থন করার আহ্বান জানায়।
২৭ আগস্ট, ১৯৭৮– রয়টার, এএফপি ও বিবিসি : ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন যে, ইরানের প্রধানমন্ত্রী শরীফ ইমামী (প্রধানমন্ত্রী জামশেদ আমুজেগারের পর দায়িত্ব গ্রহণকারী) ইসলাম ও ইরানের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি মন্ত্রী পরিষদ গঠন করবে।
২৮ আগস্ট, ১৯৭৮- ভেসপাচেচ : আয়াতুল্লাহ খোমেইনী (রহ.)-এর নেতৃত্বাধীন একটি দল বাদশাহ হিসাবে শাহের সিংহাসন ত্যাগ করার উপর চাপ দিচ্ছে। সরকারী সূত্রে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত বহু লোক ইমাম খোমেইনীর দাবির পক্ষে কথা বলছে। মধ্যপন্থী আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারীর নেতৃত্বাধীন অপর একটি দল সাধারণভাবে থিয়েটার ও টেলিভিশনের কিছু বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ করার এবং ইসলামের শরীয়তী আইন বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছে।
১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮- ইউপিআই : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী কর্মকর্তারা ইরানের যুবরাজের জীবন সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও মার্কিন বিমান বাহিনীর নিরাপত্তা বিভাগ ইরানী যুবরাজের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এএফপি : ন্যাশনাল ফ্রন্টের এজন শীর্ষস্থানীয় সদস্য ড. শাপুর বখতিয়ার বলেন, ইরানের বর্তমান সরকারের সাথে কোন সমঝোতা-মীমাংসা হতে পারে না, এর একমাত্র বিকল্প হতে পারে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন।
বিবিসি : নিঃসন্দেহে পশ্চিমাদের সামনে এখন এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, শাহ ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কি না?
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮-বিবিসি : বিবিসি থেকে ব্রিটেনের রক্ষণশীল সরকারের একজন প্রবীণ মন্ত্রীর একটি চিঠির পূর্ণ বিবরণ পাঠ করা হয়। ঐ চিঠিতে বলা হয়, পারস্য উপসাগর থেকে পিকিং পর্যন্ত যে বিপদের ঘণ্টা বেজে উঠেছে পাশ্চাত্য তার মারাত্মক আওয়াজ শুনতে পারেনি। ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, তার মতে সোভিয়েট ইউনিয়ন আফগানিস্তানে একটি মজবুত অবস্থান গাড়ার চেষ্টা করছে এবং ইরানের উপরও অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তিনি মন্তব্য করেন যে, ইরানে যে তীব্র ধর্মীয় আন্দোলন এগিয়ে চলেছে তার পেছনে মস্কোর ইন্ধন রয়েছে।
১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮– এএফপি : কুয়েতের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইরানী জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত একজন নেতা হিসাবে শাহের বুদ্ধিমত্তার প্রতি আমি আস্থাশীল এবং শাহ তার দেশের বর্তমান উত্তেজনাকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
এপি : দি ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি থেকে বলা হয়, আজ কনসোর্টিয়ামের যে আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে তাতে কোন ঐকমত্য হয়নি।
বিবিসি : (কনসোর্টিয়াম ও বিদেশী আলোচকদের মধ্যে বৈঠকে সৃষ্ট অচলাবস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়) কনসোর্টিয়াম এবং এর বিদেশী আলোচকদের মধ্যে উপনীত একটি চুক্তির বিরোধিতা করার জন্যই এই রাজনৈতিক আন্দোলনের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। দুই-চার মাস আগে যা সম্ভব ছিল বর্তমান মুহূর্তে তাকে অসম্ভব মনে হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮– এএফপি : আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারী : শাহকে অবশ্যই ক্ষমতা ছাড়তে হবে, রক্ত ঝরাতে হলেও তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না।
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮- স্টাইজেল : ইরানের নেতৃত্বে কোন ধরনের পরিবর্তন হলে তা হবে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে এক বিপর্যয় আর ক্ষমতা থেকে শাহের বিদায় হবে ইসরাইল ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এক বিপর্যয়।
২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮– (ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের বরাত দিয়ে) : শহরের রাস্তায় ট্যাংক এনে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে কিছু সুবিধা দিয়ে শাহ ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে নিয়েছে।
২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮- এপি : পুরুষশাসিত মধ্যপ্রাচ্যে ইরানী মহিলারা সবচেয়ে বেশি নাগরিক স্বাধীনতা ভোগ করে, তারাই এখন অতীতের দিকে ফিরে যেতে চায়।
ইরানের বৃহত্তম তেল কোম্পানির কয়েক হাজার শ্রমিক তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করে।
২৩ অক্টোবর, ১৯৭৮– রয়টার্স : ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন আজ শাহের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, শাহের পতন ইরানে মানবাধিকার অবস্থার কোন উন্নতি করবে না বরং অবনতি ঘটাবে।
৩১ অক্টোবর, ১৯৭৮– বিবিসি (লন্ডন টাইমসের বরাত দিয়ে) : জনসাধারণ মনে করছে যে, তারা লেবাননের মতো পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ইরানে এক ব্যাপক গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা বহন করছে। জনসাধারণ বলছে, আয়াতুল্লাহ খোমেইনী এই গোলযোগ বজায় রাখার জন্য দায়ী এবং তিনি শাহের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত হিসাব নিকাশ মিলাচ্ছেন।
২ নভেম্বর, ১৯৭৮– এশিয়ান ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল : শাহের ক্ষমতায় টিকে থাকার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহবশত ইরানী তেল ক্ষেত্রের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। শাহের শত্রুদের মধ্যে রয়েছে মৌলবাদী মুসলিম নেতৃবৃন্দ। তাঁরা শাহের জাতীয় আধুনিকায়ন পরিকল্পনার বিরোধী।
৩ নভেম্বর, ১৯৭৮- পাকিস্তানের জাসারাত : সাভাক ও বিদেশস্থ ইরানী দূতাবাসগুলোর প্রচারণা সত্ত্বেও আয়াতুল্লাহ খোমেইনী ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার লাখ লাখ মুসলমানের সমর্থন সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।
৪ নভেম্বর, ১৯৭৮– ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল : ইরানের ক্রমঅবনতিশীল পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে প্রথম সংকটে ফেলতে পারে।
৬ নভেম্বর, ১৯৭৮– এপি (আয়াতুল্লাহ শরীয়ত মাদারীর বরাত দিয়ে) : ‘সরকারের ধরন কোন বিষয় নয়, আসল বিষয় হচ্ছে জনসাধারণ, যারা সরকার গঠন করবে।’ আয়াতুল্লাহ ইরানের রাজতান্ত্রিক সংবিধানমুক্ত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান।
৮ নভেম্বর, ১৯৭৮– ফরাসি পার্লামেন্টে চার্চ প্রতিনিধিরা আয়াতুল্লাহ খোমেইনীর কর্মতৎপরতা অবিলম্বে সীমিত করার জন্য ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানায়।
১০ নভেম্বর, ১৯৭৮- রয়টার/এপি : সানজাবী (ন্যাশনাল ফ্রন্টের শাহের ক্ষমতা ত্যাগ ও সামরিক শাসন অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শাহ পরিবারের অপর কোন সদস্য দ্বারা একটি সত্যিকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি। সানজাবী শাহকে বহিষ্কার এবং তার বিচার করা সংক্রান্ত (ইমাম) খোমেইনীর চরম দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেননি।
২০ নভেম্বর, ১৯৭৮– এপি : ইমাম খোমেইনী শপথ নিয়েছেন যে, ১৯৬৩ সালে শাহ তাঁকে নির্বাসন দেয়ার জবাবে তিনি শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করবেন।
২২ নভেম্বর, ১৯৭৮– স্টুটগার্টার জিতুং : একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে বাজারগান গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক সাম্য ও সম্প্রীতির দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন। একই সাথে তিনি একথাও মনে করেন যে, শাহকে বহিষ্কার করলেই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসবে এমন নয়।
লন্ডন টাইমস (জেনারেল আজহারীর বরাত দিয়ে) : মনে হয়, জনসাধারণের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, শাহ পরিবর্তিত হয়েছে এবং সে সংবিধানের নীতি অনুযায়ী চলতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, তিনি এমন কোন সেনা অফিসারের মতো নন যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই শাহের সাথে আলোচনা করবেন।
২৩ নভেম্বর, ১৯৭৮– রয়টার : দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রায় চল্লিশ জন সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বর্তমানে তেহরানে আটক (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) হোবায়দার সমর্থনে এক বিবৃতি প্রকাশ করে।
২৪ নভেম্বর, ১৯৭৮– বিবিসি : এককালে যেসব উপজাতি বংশগতভাবে শাহের শত্রু ছিল তারা এখন শাহের সমর্থনে দাঁড়িয়েছে। ইরানের উপজাতি প্রধানদের বেশির ভাগই শাহকে সমর্থন করে।
২৫ নভেম্বর, ১৯৭৮– ইউপিআই : (জাকি ইয়ামেনীর বরাত দিয়ে) আমরা ইরানের অভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তন অথবা শাহের ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহী নই।
বিবিসি : ভিন্ন মতাবলম্বীরা এখন শাহকে অন্তর্ভুক্ত করেই একটি সমাধান মেনে নিতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার আগে তারা পরবর্তী সরকারে অংশ নিতে পারবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত দেখতে চায়, যে সিদ্ধান্ত বা পরিবর্তনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে গোপন পুলিশ বাহিনী সাভাককে শাহের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানের অবসান।
৩০ নভেম্বর, ১৯৭৮– টাইমস : শাহ যদি তার দেশকে গোলযোগপূর্ণ অবস্থা থেকে রক্ষা করতে চায় তাহলে তাকে আকস্মিকভাবে সবকিছু পরিত্যাগ করার আগে একটি রাজকীয় কাউন্সিলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পন্থা খোঁজ করার পরিবর্তে তার পুত্রের কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিত।
২ ডিসেম্বর, ১৯৭৮- ফ্রাঙ্কফুর্টার আলজেমাইন জিতুং : আয়াতুল্লাহ খোমেইনীর সমর্থক এমনকি তুদেহ পার্টি অর্থাৎ শাহ বিরোধীদের কেউই শাহের বিকল্প হতে পারে না।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৭৮- এএফপি (প্রাভদার বরাত দিয়ে) : ব্রেজনেভ বলেছেন, ইরানে সামরিক হস্তক্ষেপ হলে তা সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।
১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৮– নিউইয়র্ক টাইমস (জিমি কার্টারের বরাত দিয়ে) : শাহ ক্ষমতায় টিকে থাকে পারবে কি পারবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমি আশঅ করি সে টিকে থাক। তবে সর্বাগ্রে আমরা রক্তপাতের অবসান এবং ইরানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক তা দেখতে চাই।
৩১ ডিসেম্বর ১৯৭৮– নিউইয়র্ক টাইমস : ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্য আয়াতুল্লাহ তালেকানী ইরানের ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রচারণার প্রতি কান না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
১০ জানুয়ারি, ১৯৭৯– ইউপিআই : প্যাসির থেকে প্রেরিত খবরে ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, লিবিয়া আয়াতুল্লাহ খোমেইনীকে অর্থ ও অস্ত্র দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা সে অস্ত্র তেহরানে বহন করে নিতে সম্মত হয়েছে।
১৩ জানুয়ারি, ১৯৭৯- রয়টার্স : মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে, ইউরোপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সেনানায়ক রর্বাট হোইজার ইরানের সেনা নায়কদের প্রতি ইরানের নয়া বেসামরিক সরকারকে সমর্থন করার আহ্বান জানান।
২২ জানুয়ারি, ১৯৭৯– বিবিসি (ওয়াশিংটন পোস্টের বরাত দিয়ে) : যুক্তরাষ্ট্র এক নাটকীয় রাজনৈতিক ঘোষণা দিয়ে বলেছে যে, যত তাড়াতাড়ি পারা যায় শহের উচিত ইরান ত্যাগ করা। যাতে ইরানের বেসামরিক সরকার বছরব্যাপী চলমান গোলযোগ-অসন্তোষ কাটিয়ে উঠতে পারে।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯– এপি : অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বখতিয়ার সরকারের পরিবর্তে আয়াতুল্লাহ খোমেইনীই ইরানে একটি কমিউনিস্ট বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠায় উপযুক্ত এবং আগের তুলনায় বখতিয়ার মন্ত্রী পরিষদকে এ ব্যাপারে অনেক কম উপযুক্ত মনে হয়।
বিবিসি (মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হ্যারল্ড ব্রাউনের বরাত দিয়ে) : সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফ থেকে ইরানে কোন সামরিক হস্তক্ষেপ হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া দানকে অপরিহার্য করে তুলবে।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯- এপি : রাজপথে জনসাধারণ ও সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত বখতিয়ারের খ্যাতি নষ্ট করেছে। কার্যত এই সেনাবাহিনীই ক্ষমতা ধারণ করে, বখতিয়ার নয়।
৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯– বিবিসি : আয়াতুল্লাহ খোমেইনী বিপ্লবী কাউন্সিলে সানজাবীর সদস্যপদ দানে একটি পূর্বশর্ত আরোপ করে অস্থায়ীভাবে হলেও তাকে ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের কথা বলেছেন। পশ্চিমা শিক্ষিত ইরানের অধিকাংশ লোক ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ধারণাকে ভীতির দৃষ্টিতে দেখে।
(নিউজলেটার, ফেব্রুয়ারি ১৯৯২)