শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সংবাদ বিচিত্রা

পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০১৮ 

শত্রুদের কবল থেকে চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, শত্রুদের কবল থেকে চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে এবং বাস্তবতা পাল্টে দেয়ার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বায়তুল মুকাদ্দাস হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে গত ১৭ মে ২০১৮ রাজধানী তেহরানে ক্বারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি একথা বলেন। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকা এবং অন্য শত্রুদের কবল থেকে ফিলিস্তিন মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ এবং এসব ভাঁড় নিশ্চিত ঐশী ব্যবস্থার মুখে টিকতে পারবে না।
গত ১৪ মে ২০১৮ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরাইল যে গণহত্যা চালিয়েছে তার কঠোর নিন্দা করেন সর্বোচ্চ নেতা। সেদিনের বর্বর হামলায় অন্তত ৬০ ফিলিস্তিনি শহীদ ও ৩,০০০ আহত হন। রক্তাক্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়েই ওই দিনেই পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরে মার্কিন সরকার তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করে।
এসম্পর্কে সর্বোচ্চ নেতা বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন, এমন ঘটনার পরও কেন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় না আমেরিকা। তার কারণ হচ্ছে, আমেরিকা ও বহু পশ্চিমা দেশ এই অপরাধযজ্ঞে সহযোগিতা করে থাকে।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের মুখে পবিত্র কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহ ও মুসলিম সরকারগুলো কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন আমাদেরকে বলছে ধর্মের বিষয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে এবং নিজেদের মধ্যে দয়ামায়া প্রতিষ্ঠা করতে, কিন্তু বর্তমানে কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে আমরা মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অনৈক্য দেখছি এবং কাফেরদের কাছে নতি স্বীকার করতে দেখছি।

মুসলমানদের অর্জন কাজে লাগিয়ে পাশ্চাত্য আজকের অবস্থায় এসেছে : সর্বোচ্চ নেতা
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বকে আবারও জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে যাতে শত্রুরা বিশেষ করে আমেরিকা মুসলিম দেশগুলোর করণীয় ঠিক করে দেয়ার সুযোগ না পায়। গত ১২ মে ২০১৮ ইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিত্বরা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাহলো ঐক্য ও সংহতি এবং বিজ্ঞানের সব অঙ্গনে সাফল্য ও অগ্রগতি। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে এবং পাশ্চাত্যের বিরোধিতা সত্ত্বেও এ জাগরণ ইসলাম ধর্মের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি ও সুন্দর ভবিষ্যতের ক্ষেত্র সৃষ্টি করছে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণেই মুসলিম বিশ্বের ওপর অন্যরা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, পাশ্চাত্য শত শত বছর ধরে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা মুসলমানদের বৈজ্ঞানিক সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে অর্থ-সম্পদ এবং বৈজ্ঞানিক, সামরিক, রাজনৈতিক ও প্রচারণাগত ক্ষেত্রে শক্তি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এভাবেই পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক তৎপরতার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে বর্তমান খারাপ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতির মাধ্যমে বর্তমান এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে এবং মুসলিম বিশ্বকে আবারও মানব সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হবে। তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইরান আদর্শ সৃষ্টি করেছে এবং ইরানের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বিপরীতে ইসলামি ইরান নিজের বৈজ্ঞানিক সাফল্য ও অর্জন অন্য মুসলিম দেশগুলোকে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে সর্বোচ্চ নেতা জানান।

 বইয়ের অভাব অন্য কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় : সর্বোচ্চ নেতা
তেহরানের ইমাম খোমেইনী (র.) মুসাল্লায় দেশি-বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে ৩১তম আন্তর্জাতিক বই মেলা ২ মে শুরু হয়ে ১২ মে শেষ হয়। এতে আড়াই হাজারের বেশি ইরানি প্রকাশনা সংস্থা ও ১২৩টি বিদেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। বই মেলায় প্রায় পাঁচ লাখ দেশি-বিদেশি বই ছিল। এর মধ্যে আরবি বইয়ের সংখ্যা ৩৭ হাজার এবং ইংরেজি বইয়ের সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজার। এ বছর তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলার স্লোগান ছিল ‘বই না পড়াকে না বলুন’।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গত ৫ মে ২০১৮ তেহরানের ৩১তম আন্তর্জাতিক বইমেলা পরিদর্শন করেন। বইমেলায় তিনি প্রায় ৫০টি স্টল ঘুরে দেখেন এবং এসব স্টলের প্রকাশক ও বই বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চলতি বইমেলায় প্রকাশিত নতুন নতুন বইয়ের খোঁজখবর নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামি দিকনির্দেশনামন্ত্রী সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি তরুণ সমাজকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানবজীবনে বইয়ের চাহিদা অন্য কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে মানুষকে সেসব বই পড়তে হবে যেগুলো তাকে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং উন্নত মানবীয় মূল্যবোধের অধিকারী করবে।

 পরমাণু সমঝোতা বজায় রাখা প্রসঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি রাহবার
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তাঁর দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের গভীর শত্রুতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরানের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে আমেরিকার পরাজয় হবে অবশ্যম্ভাবী।
গত ২৩ মে ২০১৮ ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাঁদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টের পরিণতি বুশ ও রিগ্যানের মতো পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো কিছু হবে না এবং তাদের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
সর্বোচ্চ নেতা বলেন, পরমাণু আলোচনার শুরু থেকে ইরান যে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা হলো আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসা তেহরানের সাজে না। কারণ, দেশটি কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না।
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমেরিকা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে বলে উল্লেখ করেন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকতে চাইলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনতে হবে।
ইউরোপের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতা কয়েকটি শর্ত আরোপ করেন। তিনি বলেন, তিন ইউরোপীয় দেশের শীর্ষ নেতাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের উপস্থিতি নিয়ে কখনো কোনো অবস্থায় কথা বলবে না।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সাংঘর্ষিক সম্পর্ক নেই। তবে এসব দেশের প্রতি তেহরানের অবিশ্বাস আছে। ইউরোপীয়রা অতীতে ইরানকে দেয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে বলেই এ অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এ অবিশ্বাস ভাঙতে তিন ইউরোপীয় দেশকে (ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি) বাস্তব গ্যারান্টি দিতে হবে।
সর্বোচ্চ নেতা তার শর্তের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আরো বলেন, ইরানের তেল বিক্রি ও বৈদেশিক লেনদেন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ইউরোপকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু তারা যদি এসব কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে পরমাণু কর্মসূচি আবার চালু করার অধিকার সংরক্ষণ করে তেহরান।
ইরানের বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদেরকে তিনি এ ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন।
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী হাজার হাজার শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীর এক সমাবেশে অপর এক বক্তৃতায় পরমাণু সমঝোতা এবং আমেরিকার আচরণের ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাল্কাবুদ্ধি ও বোকামিপূর্ণ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে দশটিরও বেশি মিথ্যা কথা বলা ছাড়াও ইরানের সরকার ও জনগণকে হুমকি দিয়েছেন। আমি ইরানি জাতির পক্ষ থেকে বলছি, মি. ট্রাম্প আপনি আমাদের কিছুই করতে পারবেন না।’
আমেরিকার আচরণ ও বেআইনি কর্মকাণ্ডকে কোনোভাবেই হাল্কা করে দেখার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, আমেরিকার টার্গেট কোনো একটি দল বা ব্যক্তিকে উৎখাত করা নয়; বরং ইরানের জনগণ ও দেশটির ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়, ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠা এবং এদেশে আমেরিকার প্রভাব খর্ব হওয়ার কারণে ওয়াশিংটন ক্ষুব্ধ ও হতাশ এবং এ কারণেই তাদের শত্রুতা অব্যাহত রয়েছে। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী আরো বলেন, শত্রুরা চায় ইরানে ইসলামি শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাত করে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী ও ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ দেশটির ওপর ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। আমেরিকা গত ৪০ বছর ধরে নানা উপায়ে ও ছলচাতুরীর মাধ্যমে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থার পতন ঘটানোর চেষ্টা করে আসছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ ব্যাপারে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর চিঠিতে কিংবা বিভিন্ন বক্তব্যে ইরানের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিতেন অথচ দাবি করতেন ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করা তাঁর লক্ষ্য নয়।
তিনি বলেন, ইউরোপ যদি ইরানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মার্কিন অন্যায় দাবি মেনে নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে তাহলে বুঝতে হবে তারা আমেরিকার অনুগত হয়ে কাজ করছে। অবশ্য ইউরোপ এখন পর্যন্ত নিজেদেরকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের মুখের কথা যথেষ্ট নয়। ইউরোপকে কাজেকর্মে এটা প্রমাণ করতে হবে আমেরিকার ইরানবিরোধী নীতিতে তারা শামিল হবে না।

পরমাণু নিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন ট্রাম্প : বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত গত ৮ মে ২০১৮ ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার কথাও বলেছেন। এই সমঝোতার প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন রয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসলেও বাস্তবতা হচ্ছে পরমাণু ইস্যুতে আমেরিকা আরো বহু আগে থেকে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে আসছিল। অবশ্য পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে গিয়ে ওয়াশিংটন শুধু যে ইরানকে টার্গেট করেছে তাই নয় একই সঙ্গে এ হঠকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সমাজকেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ তারা সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগেও আমেরিকা আন্তর্জাতিক আরো বেশ কিছু চুক্তি যেমন জলবায়ু ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনবিরোধী চুক্তির মতো বহু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি এসব একতরফা আচরণের বিরুদ্ধে আমেরিকার মিত্র দেশগুলোও অসন্তুষ্টও ক্ষুব্ধ।
পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান ¯পষ্ট করলেন যা এতদিন ঝুলে ছিল। এখন থেকে এটি পাঁচ জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। বর্তমানে ইউরোপ পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তারা এতে টিকে থাকবে নাকি আমেরিকার স্বেচ্ছাচারী নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করবে সেটাই দেখার বিষয়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার দেশের পরমাণু শক্তি সংস্থাকে বেশি মাত্রায় ইউরেনিয়াম
সমৃদ্ধকরণ শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেছেন, ইউরোপ পরমাণু সমঝোতার প্রতি অটল থাকবে। তিনি বলেন, ১২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে পরমাণু চুক্তি
এবং এর প্রতি সমগ্র বিশ্বের সমর্থন রয়েছে। পরমাণু সমঝোতার ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্যও তিনি ইরানের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনও ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার প্রতি অটল থাকার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই চুক্তির প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন রয়েছে এবং এটি টিকে থাকা ইউরোপের এই তিন দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেসও পরমাণু সমঝোতা থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা অনেক বড় একটি সাফল্য যা মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইরান তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র প্রতিবেদনেও স্বীকার করা হয়েছে।

ইরান সরকারের বিবৃতি : প্রয়োজনে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হবে

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন সরকারের বেরিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইরান সরকারে মুখপাত্র মোহাম্মাদ বাকের নোবাখ্ত গত ১১ মে ২০১৮ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
ইরান সরকারের এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই আমেরিকা পরমাণু সমঝাতা লঙ্ঘন করে আসছিল এবং তারই ধারাবাহিকতায় দেশটি এটি থেকে বেরিয়ে গেছে। এ ছাড়া, ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের ‘নোংরা’ বক্তব্য তাঁর মূর্খতা ও বোকামির পরিচয় বহন করছে। এ ধরনের বক্তব্য সেই দেশের সরকার প্রধানকেই মানায় যে দেশ মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন চালিয়ে এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে।
ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা বেরিয়ে যাওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। সেইসঙ্গে বিশ্বের কোনো দেশ আর সেইসব দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চুক্তিতে সই করবে না যেখানে আমেরিকা স্বাক্ষর করেছে।
ট্রাম্পের ইরানবিরোধী হাস্যকর বক্তব্যের কারণে পরমাণু সমঝোতার কোনো ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমেরিকা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেও ইরান পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ ১১টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তাবয়ন করেছে।
ইরান সরকারের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পার তেহরান এখন এ সমঝোতায় বর্ণিত ধারা অনুসারে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে যাবে। সেখানে ইরানের স্বার্থ রক্ষিত না হলে প্রয়োজনে তেহরানও পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
সমঝোতা বাস্তবায়নে ‘পাল্টা পদক্ষেপ নীতি’ অনুসরণ করার জন্য ইরানের সংসদ সংসদ্যরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ওই নীতির তিন নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারের দায়িত্ব হলো প্রতিপক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করলে ইরানি জাতির অধিকার রক্ষায় পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চুক্তির কোনো পক্ষ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করলে কিংবা বাতিলকৃত কোনো নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করলে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইরানি সংসদ সদস্যরা আজ সংসদে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে গৃহীত এক বিবৃতিতে পরমাণু সমঝোতা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেছেন। সমঝোতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং তাদের কিছু আরব মিত্রসহ মোনাফেক গোষ্ঠী ইরানের বিরুদ্ধে একই ফ্রন্টভুক্ত।

ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে ইরানের সর্বত্র বিক্ষোভ হয়েছে। গত ১৮ মে জুমার নামাজের পর লাখ লাখ মুসল্লি রাস্তায় নেমে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘ইসরাইল ধ্বংস হোক, আমেরিকা নিপাত যাক’ সহ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নানা স্লোগান লেখা ছিল।
বিক্ষোভকারীরা বায়তুল মুকাদ্দাসে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর ও গাজায় গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন মুসলিম দেশের নীরবতার সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, ইরানিরা ফিলিস্তিনিদের পাশে রয়েছে এবং চূড়ান্তভাবে ফিলিস্তিনিরাই বিজয়ী হবে। ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানান ইরানি বিক্ষোভকারীরা।
গত ১৪ মে গাজায় ইসরাইলি হামলায় ৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হওয়ার পর থেকেই ইরানিরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছেন। ১৮ মে ইরানের প্রতিটি শহরেই জুমার নামাজের খুতবায় ইসরাইল ও আমেরিকার সমালোচনা করার পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইরানের সাড়ে চারশ’ মিলিয়ন ডলারের জ্ঞানভিত্তিক পণ্য রপ্তানি

গত ইরানি বছরে সাড়ে চারশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ইরানের জ্ঞানভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেনা সাত্তারি এই তথ্য জানিয়েছেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এবং ইরান এয়ারপোর্ট ও এয়ার নেভিগেশন কো¤পানির মধ্যকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ফাঁকে এই তথ্য জানান সুরেনা সাত্তারি।
ইরানি স্টার্টআপ বা উদ্যোগ তৈরি ও জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোক্তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জনগুলো তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ইরানের জ্ঞানভিত্তিক শিল্প অল্প কিছু দিন আগে শুরু করলেও রাশিয়া ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানিতে বৈশ্বিক মান অর্জন করেছে তাঁর দেশ।
সুরেনা সাত্তারি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত আন্তর্জাতিক মান অর্জনকে বিবেচনায় আনা এবং এই খাতে মহত ধারণাগুলোকে উৎসাহিত করা।
তেল রপ্তানি থেকে আসা অর্থের ওপর নির্ভরশীলতার সমালোচনা করে সাত্তারি মানব সম্পদ ও উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ দুটি বিষয়কে তিনি দেশের মূল্যবান সম্পত্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘তেলভিত্তিক অর্থ মানুষের ভেতরে এই ধারণা তৈরি করে যে, তারা টাকা দিয়ে সবকিছুই কিনতে পারে।’
শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা ইরানি এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা উদ্যোক্তা ও বিজ্ঞানী কিনতে পারি না। তবে আমরা তাদের তৈরি করতে পারি।’

৯ তেহরানে জ্বালানি মেলায় ৪ হাজার কোম্পানির অংশগ্রহণ 

গত ৭ মে ২০১৮ তেহরানে অনুষ্ঠিত ২৩তম আন্তর্জাতিক জ্বালানি মেলায় ৩৮টি দেশের ৪ হাজার কো¤পানি অংশ নেয়। আযারবাইজান, অস্ট্রিয়া, স্পেন, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটেন, ইতালি, বেলজিয়াম, তুরস্ক, চেক রিপাবলিক, চীন, রাশিয়া, জাপান, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ক্রোশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ভারত, ফিনল্যান্ড, হংকং, বাহরাইন, কাজাখাস্তান, মোনাকো, কানাডা, লিচেনস্টেইন, ওমান, ডেনমার্ক, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশ এ মেলায় অংশ নেয়।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান নামদর জানগানেহ, গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল ইয়ুরি সেনটিউরিন, ক্রোয়েশিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার মার্টিনা দালিক, ইরানি সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত সহ জালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১০ ইরান-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য বেড়েছে দেড়শ’ ভাগ

গত ইরানি বছরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তেল-বহির্ভূত বাণিজ্য হয়েছে ইরানের। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। এর মধ্য দিয়ে ইরানের বিশ্বের ১৪তম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য।
ইরানের শুল্ক প্রশাসনের তথ্য মতে, গত বছরে যুক্তরাজ্যে ১৭ হাজার ৯৫২ টন পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করেছে ইরান। এ থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৪৮ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের বছরের চেয়ে ওজনের দিক দিয়ে যা ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ ও মূল্যের দিক দিয়ে ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে, উল্লিখিত সময়ে ইরানে ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৩ দশমিক ০৪ মিলিয়ন টন মালামাল রপ্তানি করেছে যুক্তরাজ্য। যা ওজনের দিক দিয়ে আগের বছরের চেয়ে ২০০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি এবং মূল্যের দিক দিয়ে ১৬৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। ইরান যুক্তরাজ্য থেকে প্রধানত খইল, ক্ষেতের ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি করেছে।

১১ ইরান ও স্পেন পারস্পরিক শিক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও স্পেন পারস্পরিক শিক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে গত ২২ মে তেহরানে ইরানের যান্জন্ ইউনিভার্সিটি ও স্পেনের জায়েন্ ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এ সমঝোতা স্মারকের প্রধান বিষয় হচ্ছে দু’পক্ষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র বিনিময়। এছাড়া দু’পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক তৎপরতা বৃদ্ধির ব্যাপারে পারস্পরিক সহযোগিতার সুফলের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
উল্লেখ্য যে, স্পেনের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত জায়েন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি ও স্প্যানিশ্ ভাষায় বিভিন্ন ধরনের ৪০টি বিষয়ে ১৭ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা দেয়া হয়। অন্যদিকে ইরানের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত যান্জন্ ইউনিভার্সিটি দেশের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অন্যতম যেখানে ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করছে।
ইতিপূর্বে গত ফেব্রুয়ারি মাসে (২০১৮) তেহরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও স্পেনের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ যারীফ ও স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আল্ফন্সো মারিয়া দাস্তিস্ কুয়েসেদো উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরান ও স্পেনের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা মূলক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই প্রথম বার আমি ইরান সফর করছি, কিন্তু আমি আশা করছি যে, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভবিষ্যতে সম্ভব সর্বোত্তম পর্যায়ে শক্তিশালী হবে।
তিনি ইতিপূর্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ছয় বৃহৎ শক্তি এবং ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রকাশিত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ) বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সদস্য দেশ হিসেবে স্পেন এ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির প্রতি পুরোপুরি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
এ অনুষ্ঠানে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে মত বিনিময় কালে উভয় পক্ষ দু’দেশের মধ্যে পর্যটন ও পরিবেশের ক্ষেত্রে এবং উন্নততর প্রযুক্তি, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

 ইরান ও নেদারল্যান্ড্স্-এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ও নেদারল্যান্ড্স্-এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত ২ থেকে ৫ মে (২০১৮) নেদারল্যান্ড্স্-এর হেগ্-এ অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ কৃষি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ বৈঠকে ইরানি পক্ষে সভাপতিত্ব করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কৃষি বিষয়ক গবেষণা ও শিক্ষা এবং কৃষি সম্প্রসারণ সংস্থা (এর্আইইও)-র প্রধান এস্কার্ন্দা যান্দ্, অন্যদিকে নের্দাল্যান্ড্স্ এর পক্ষে সভাপতিত্ব করেন দেশটির কৃষি উপমন্ত্রী ও ওয়াগেনিঙ্গেন্ ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চ-এর ডেপুটি রের্ক্ট।
বৈঠকে উভয় পক্ষ শিক্ষা, যৌথ বিনিয়োগ উদ্যোগ, কৃষিজাত দ্রব্যাদি বাজারজাত করণ এবং পানি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে সমন্বিত চুক্তিতে উপনীত হয়।
বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত দু’টি সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহের মধ্যে রয়েছে পশু পালন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ, পানি ও মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা, লোনা ভূমির উন্নয়ন, গ্রীনহাউজ চাষাবাদ, আলু চাষ, জেনেটিক সম্পদ, মৎস্য চাষ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, কারখানাজাত ব্যবহার্য পণ্য সামগ্রীর ব্যবসায়, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও যৌথ গবেষণা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা।
উল্লেখ্য, দুই দেশের কৃষি মন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক চুক্তির ভিত্তিতে ২০১৬ সালে কৃষি বিষয়ক ইরান-নের্দাল্যান্ড্স্ জয়েন্ট কমিটি গঠিত হয়।

১৩ ইরানের তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতির ৮০ ভাগেরও বেশি উৎপাদন সক্ষমতা

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি ও উপকরণের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত হচ্ছে। ইরানিয়ান অয়েল পাইপলাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র চীফ এক্সিকিউটিভ আব্বাস আলী জাফারীনাসাব গত ১২ মে সাংবাদিকদের নিকট এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকেই এ দু’টি খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়। তিনি বলেন, এ কারণেই দেশ কখনোই, বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞার যুগে এ ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয় নি।
আব্বাস আলী জাফারীনাসাব বলেন, দেশের অভ্যন্তরে নাট্, বল্টু, ফ্ল্যাঞ্জেস্ ও ফিটিংস্ সহ ছোট ছোট পার্ট্স্ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন অভিমুখী এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্বয়ংসম্পূর্ণতার এ বিষয়টি মাথায় রেখে এরপর দেশের নিপুণ ও সুদক্ষ প্রকৌশলিগণ এ দুই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকতর জটিল যন্ত্রপাতি ও উপকরণাদি-উদাহরণস্বরূপ, পাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লুইডের মেকানিক্স্-উৎপাদনের জন্য বিরাট বিরাট প্রকল্প হাতে নেন।
তিনি বলেন, তেল পাইপ লাইন ও টেলিযোগাযোগ সিস্টেম্সমূহের ক্ষেত্রে দেশ বর্তমানে এতই সাফল্য অর্জন করেছে যে, কতক ইরানি কোম্পানি বিশ্বের সর্বাধিক সুনামসম্পন্ন কোম্পানিসমূহকে সরবরাহের লক্ষ্যে উন্নততর মানের র্টাবাইন উৎপাদনের জন্য স্বীয় প্রস্তুতির কথার ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, উদাহরণ স্বরূপ, এ ব্যাপারে সর্বশেষ যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে তা হচ্ছে ৩ মেগাওয়াট গ্যাস র্টাবাইন-তার জন্য প্রয়োজনীয় খুচরা যন্ত্রাংশ সহ-উৎপাদন সংক্রান্ত।
আব্বাস আলী জাফারীনাসাব বলেন, ইরানিয়ান অয়েল পাইপ্লাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র কাছে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানি কর্তৃক ১৬টি বিভিন্ন ধরনের মডেলের কাঠামোর আওতায় উৎপাদিত ১৬৫টি গ্যাস র্টাবাইন রয়েছে। এ কারণে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে ২০ বছর আগেই এগুলোর জন্য তখন থেকে পরবর্তীকালে প্রয়োজন হতে পারে এমন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ ও যন্ত্রপাতি উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
ইরানিয়ান অয়েল পাইপ্লাইন্স্ অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স্ কোম্পানি (আইওপিটিসি)-র চীফ্ এক্সিকিউটিভ্ তাঁর বক্তব্যের উপসংহারে বলেন, যেহেতু ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উযমা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী কর্তৃক (গত ২১ মার্চ ২০১৮ তারিখে সূচিত) চলতি ইরানি বছরকে ‘ইরানি পণ্যসমূহকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের বছর’ হিসেবে নামকরণ করেছেন সেহেতু আইওপিটিসি চলতি ইরানি বছরেই স্বীয় লক্ষ্যসমূহের সর্বাধিক অর্জনের জন্য সাধ্যানুযায়ী প্রচেষ্টা চালাবে।

ইরানি গবেষকদের উদ্ভাবিত মোবাইল অ্যাপ্. অভ্যন্তরীণ ন্যাভিগেশন সহজতর করেছে

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকদের উদ্ভাবিত একটি মোবাইল অ্যাপ্. দেশের অভ্যন্তরে ন্যাভিগেশনকে সহজতর করেছে। সংশ্লিষ্ট স্টার্টআপ্-এর অন্যতম সদস্য র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী গ৩ ১৩ মে বার্তা সংস্থা ইস্নাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, Indooria নামক এ মোবাইল অ্যাপ্.-টির সহায়তায় এটির ব্যবহারকারিগণ কোনোরূপ ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই দেশের অভ্যন্তরীণ স্পেস্ ব্যবহার করে ন্যাভিগেশন করতে এবং দেশের ভিতরকার যে কোনো জায়গাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম।
তিনি আরো জানান যে, Indooria ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই মোবাইলে এটির ব্যবহারকারীর রিয়াল-টাইম লোকেশন এবং সেখান থেকে তাঁর উদ্দিষ্ট লক্ষ্যস্থলে উপনীত হবার সংক্ষিপ্ততম পথ প্রদর্শন করে থাকে।
র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী বলেন, গ্লোবাল্ পজিশনিং সিস্টেম্ (জিপিএস্) সাধারণত ইর্ন্ডো স্পেস্সমূহে কাজ করে না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যখন প্রথম বারের মতো কোনো বড় সরকারি ভবনে বা বেসরকারি ভবনে, যেমন : শপিং সেন্টার, সিনেমা হল, স্টেডিয়াম্, বিশ^বিদ্যালয় ইত্যাদির কোনোটিতে কাজের প্রয়োজনে বা পরিদর্শনের জন্য যেতে মনস্থ করেন তখন তাঁর জন্য গাইডের প্রয়োজন হয়; সে ক্ষেত্রে এ অ্যাপ্.-টি খুব সহজেই তাঁকে তাঁর উদ্দিষ্ট স্থানে যেতে গাইড্ করতে পারে, এমনকি তাঁকে একটি বিরাট ভবনের বিভিন্ন অংশের ভিতর দিয়ে যথাস্থানে যেতেও গাইড করতে পারে। তিনি বলেন, তবে Indooria কেবল সেই সব ভবনের ভিতরে ন্যাভিগেশনে সহায়তা করে থাকে যেসব ভবনের ইর্ন্ডো ম্যাপ্ আগে থেকেই এ স্টার্ট্আপ্-এ দেয়া থাকে।
এ ধরনের একটি অ্যাপ্.-এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে র্ফাশীদ্ আব্দুল্লাহী বলেন, ইরানে Indooria হচ্ছে এ ধরনের প্রথম মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। তিনি আরো বলেন যে, Indooria-এর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এটি এর ব্যবহারকারীকে ব্যবহারের লোকেশনের ভিত্তিতে ডিস্কাউন্ট অফার দিতে পারে।
উল্লেখ্য, কাযভীন ইসলামিক ওপেন ইউনিভার্সিটির তরুণ ইরানি গ্রাজুয়েটদের সমন্বয়ে গঠিত এ স্টার্টআপ্ বর্তমানে একটি নলেজ্-বেস্ড্ কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

ইরানে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্লাড-ব্যাগ উৎপাদন কোম্পানির উদ্বোধন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আলবোর্জ প্রদেশের পায়াম স্পেশাল ইকোনোমিক যোনে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ব্লাড-ব্যাগ উৎপাদন কোম্পানির উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ১৪ মে (২০১৮) কোম্পানিটির উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান ক্বাযীযাদেহ্ হাশেমী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানি স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ বিরাট কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠা হচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও ছয় বৃহৎ শক্তি এবং ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রকাশিত যৌথ সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা (জেসিপিওএ)-র সুফল সমূহের অন্যতম। তিনি অর্থনীতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার সমূহের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন এবং তিনি এ লক্ষ্যে পুঁজি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে অধিকতর শক্তিশালী সহযোগিতা প্রদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, ইরানে উৎপাদিত পণ্য সমূহ কেবল ইরানের অভ্যন্তরে ব্যবহৃত হবে এমনটা মনে করা পুরোপুরি ভুল; বরং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের মান বৃদ্ধি করার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পণ্য বিদেশে রফতানি করা ও সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানে উপনীত হওয়া।

ইতালি কর্তৃক ইরানের মাদকদ্রব্য চোরাচালানবিরোধী লড়াইয়ের প্রশংসা

ইতালি সরকারের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশের প্রধান গিউসেপ্পে কোসিভেরা গত ১৩ মে (২০১৮) তেহরানে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় কালে মাদক দ্রব্য চোরাচালান বিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ও এ পথে বহু ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করার জন্য ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রশংসা করেছেন।
ইতালির মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ প্রধান বলেন, মাদকদ্রব্যবিরোধী লড়াইয়ে আমাদের সকলের জন্যই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভৌগোলিক দিক থেকে ইরান আফগানিস্তান থেকে অন্যান্য দেশে আফিম চোরাচালানের পথের কেন্দ্রে অবস্থিত। তিনি ইরানকে মাদকদ্রব্য চোরাচালানের বিরুদ্ধে একটি বিরাট বাঁধস্বরূপ বলে অভিহিত করেন এবং এ ব্যাপারে ইরানের ভূমিকাকে শক্তিশালী করার জন্য তেহরানের সাথে সম্মিলিত ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মাদকদ্রব্য চোরাচালান রোধের জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কোসিভেরা সে জন্য ইরান সরকারের প্রশংসা করেন এবং মাদকদ্র্রব্যবিরোধী অভিযানে ইরানের যে বস্তুগত ক্ষতি হয়েছে সে জন্য এবং এতে ইরানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শহীদ হওয়ার কারণে ইরান সরকারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উৎপাদিত হয় এবং এ দু’টি দেশ থেকে ঐ সব মাদকদ্রব্য মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ী হবার পর থেকেই ইরান সরকার মাদকদ্রব্য ব্যবহার ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দমন অভিযান চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ইরান সরকারের মাদকদ্রব্যবিরোধী আইন প্রয়োগকারী পুলিশ গত ২০১০ সাল থেকে সুবিন্যস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশব্যাপী তার মাদকদ্রব্য চোরাচালানবিরোধী অভিযানের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করেছে।
ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ সব সময়ই মাদকদ্রব্য চোরাচালানী ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি অভিযান চালিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে যে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে তার ফলে এ ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য নিরোধ অভিযানবিষয়ক প্রতিবেদনে ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশকে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রগামী ও আত্মত্যাগী মাদকদ্রব্যবিরোধী বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত প্রতিবেদনে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইরানের মাদকদ্রব্যবিরোধী পুলিশ সাত বছর আগে থেকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী দমন অভিযান চালিয়ে আসছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর আগ্রাসনের পর সেখানে মাদকদ্রব্যের উৎপাদন ৪০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি আফগানিস্তান ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাগণও ১৬ বছরেরও বেশিকাল পূর্বে আফগানিস্তানে হামলা চালানোর পর থেকে দেশটির মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত সমস্যাটিকে উপেক্ষা করার জন্য ওয়াশিংটন ও ন্যাটোকে দোষারোপ করেছেন।

শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় রোবটের খেলাঘর তৈরি করলো ইরান

খেলনার ছলে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দিতে রোবটের খেলনাঘর তৈরি করেছেন গবেষকরা। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘রোবোকিড্স’। সম্প্রতি ইরানের আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (এইউটি) গবেষকরা রোবটের এই খেলনাঘর তৈরি করেছেন।
আমির মোগুয়েই নামে প্রকল্পটির এক ব্যবস্থাপক গত ৫ মে ২০১৮ সংবাদ সংস্থা মেহর নিউজ এজেন্সিকে জানান, সম্পূরণ দেশীয় প্রযুক্তি দিয়ে রোবটের খেলনাঘর ‘রোবোকিড্স’ নকশা ও নির্মাণ করা হয়েছে। এই খেলাঘরটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে হলো শিশুদের বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি রোবট প্রযুক্তি সম্পর্কে আকর্ষণীয় পন্থায় পরিচয় করিয়ে দেওয়া।  সম্পরকে
খেলনাঘরটি সম্পর্কে তিনি জানান, ‘রোবোকিড্স’ মূলত রোবটের একটি খেলনাঘর। যেখানে আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (এইউটি) গবেষকদের তৈরি দুটি রোবট রয়েছে। রোবট দুটির একটির নাম ‘আসরু’, অপরটির নাম ‘সাম্মি’। রোবটদ্বয় যাতে শিশুদের সঙ্গে মজাদার ও বিনোদনমূলক কথোপকথন করতে পারে সেভাবে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে।
‘সাম্মি’ হলো এক ধরনের গোলগাল মোটা আকৃতির রোবট। এর রয়েছে বেশ কিছু সংখ্য খেলনা। অন্যদিকে ‘আসরু’ সাম্মির চেয়ে আকৃতিতে বড় এবং সাম্মির চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী।
প্রকল্প ব্যবস্থাপকের তথ্য মতে, রোবটদ্বয় ফারসি ভাষায় কথা বলতে পারে, হাসতে পারে এবং অবাক করার মতো কিছু করতেও পারে। এমনকি দুঃখে কাঁদতেও পারে রোবটদ্বয়। এছাড়া রোবট দু’টি প্রতিটি গেমস একইসাথে পাঁচ জন শিশুর সঙ্গে খেলতে পারে।

১৮ ইরানি যাযাবরদের জীবনধারা নিয়ে ফটোপ্রদর্শনী

ইরানিয়ান আর্টিস্ট ফোরাম (আইএএফ) এর বাহার গ্যালারিতে ইরানের কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ অঞ্চলে বসবাসরত যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকদের প্রাত্যহিক জীবনধারা নিয়ে একটি ফটোপ্রদর্শনী গত ১৮ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ছয় দিনব্যাপী এই ফটো প্রদর্শনীতে যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা ছবি প্রদর্শিত হয়।
‘সামথিং লাইক লাইফ’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীর যৌথভাবে আয়োজন করে রাদে নো আন্দিশ আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ইনস্টিটিউট ও ইরানের আর্ট ব্যুরোর য়াসুজ শাখা। কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ অঞ্চলের যাযাবর পরিবারে বেড়ে ওঠা ইরানি ফটোগ্রাফার ইসহাক আকায়ির সংগৃহীত বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনীতে দেখানো হবে।
প্রদর্শনীর ক্যাটালগে বলা হয়, কোহকিলুয়েহ বোয়ার আহমাদ ইরানের কেন্দ্রীয় জাগরোস অঞ্চলের একটি অংশ। এখানে রয়েছে ভিন্ন দুই ধরনের আবহাওয়া। যে কারণে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছে সেখানকার যাযাবররা। প্রতি বছর শরৎ ও বসন্তের মাঝামাঝি যাযাবররা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বাসস্থান পরিবর্তন করে থাকে। সমন্বিতভাবে এই বাসস্থান বদলের ঘটনা প্রতি বছর ঘটলেও বিগত কয়েক দশকে এর হার বিপুল হারে কমে গেছে। এই সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধেক তাদের যাযাবর জীবনধারা ত্যাগ করেছে।
ক্যাটালগের তথ্যমতে, বর্তমানে ইরানে যাযাবর সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ১২ লাখ। ধীরে ধীরে যাযাবর সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রাম ও শহরগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করছে। যে কারণে দিনদিনই কমছে যাযাবর জনগণের সংখ্যা।

অঙ্গদাতার কার্ড রয়েছে ৩০ লাখ ইরানির

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গদাতার কার্ড রয়েছে ৩০ লাখ নাগরিকের এবং অনলাইনে অঙ্গদানের সম্মতি জানিয়ে ফর্ম পূরণ করেছে দেশটির দশ শতাংশ জনগণ। ইরানের যক্ষা এবং ফুসফুস রোগবিষয়ক জাতীয় গবেষণা ইনস্টিটিউট মাসিহ দানেশভারি হাসপাতালের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রক্রিয়াকরণ কর্মসূচির প্রধান ফারাহনাজ সাদেক বেইগি গত ২১ মে জাতীয় অঙ্গদান দিবসের অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান। ১৯৮৯ সালের এ দিনে ইরানের প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গদানের বৈধতা দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করেন। সে থেকে দিনটির স্মরণে প্রতি বছর ২১ মে অঙ্গ দান দিবস পালন করে ইরান।
সাদেক বেইগি জানান, মস্তিষ্ক মৃতের মূল কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ময়না তদন্তে ৪ হাজার মস্কিষ্ক মৃতের ঘটনা পাওয়া গেলেও এদের মধ্যে অঙ্গদান করেছেন মাত্র ১ হাজার জন।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপক আলি আকবার বেলায়েতি জানান, তাঁর হাসপাতালে অঙ্গ সংযোজনের অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি।

শান্তির বার্তা নিয়ে ইরানের ১৫ শিল্পীর আঁকা ছবি প্রদর্শনী

ইরানের চিত্রশিল্পীরা ওয়ার্ল্ড রেড ক্রিসেন্ট ডে উপলক্ষে বিশাল এক ছবি এঁকেছেন। এটি প্রদর্শিত হয় তেহরানের আলী আকবার সানাতি জাদুঘরে। ১৫ জন প্রফেশনাল শিল্পী মানবতার আবেদন দিয়ে এ ছবি এঁকেছেন। মানুষের প্রতি দয়া ও শান্তি এ ছবিতে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে। ছবিটি ১০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার চওড়া।
ওয়ার্ল্ড রেড ক্রিসেন্ট ডে-র প্রতিপাদ্য সাতটি বিষয় হচ্ছে মানবতা, সাম্য, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছায় সেবা, একতা ও বিশ্বজনীনতা। প্রতি বছর ৬ থেকে ১২ মে আন্তর্জাতিক মানবতা আন্দোলনকারীরা বেশ ঘটা করেই দিবসটি পালন করেন।

সেরা ছবির পুরস্কার জিতলো ‘দ্য ডিস্টেন্স’

দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩৫তম বুসান আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ‘গ্রান্ড প্রিক্স’ জয় করে শর্ট ফিল্ম ‘দ্যা ডিস্টেন্স’। সেরা পিকচারের জন্য উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করেছে চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউসেফ কারগারের এই ছবিটি। গত ৩ মে ২০১৮ আয়োজকেরা উৎসবের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
বুসান ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালের আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইরানি ছবিটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৪ এপ্রিল উৎসব শুরু হয়ে চলে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
চলচ্চিত্র উৎসবের জুরি বোর্ড এক বিবৃতিতে বলে, ভালোবাসার যন্ত্রণা নিয়ে ছবিটিতে সাধারণ, আকর্ষণীয়, অন্তর্নিহিত কাহিনী ফুটে তোলা হয়েছে এবং কিছু সময় আমাদের ভালোবাসার মানুষটিকে সুরক্ষিত করতে সত্যকে যে অনিবার্যভাবে লুকিয়ে রাখি তা তুলে ধরা হয়েছে।
উৎসবে বেস্ট পিকচারের জন্য এক্সসিলেন্স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে ইকুয়েডরের ছবি ‘দ্য কিটম্যান’। ছবিটির পরিচালক অ্যান্দ্রেস কোরনেজো পিন্তোর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকরা।
জুরি পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্রকার চিয়া চি সামের নির্মিত মালয়েশীয় ছবি ‘হাইওয়ে’। এছাড়া ¯েপশাল মেনশন পেয়েছে রাশিয়ার ঝান্না বেকমামবেতোভার ‘ট্যুইট ট্যুইট’ চলচ্চিত্র।

ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীমের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীম জাপানের ওকিনাওয়ায় অনুষ্ঠিত এশীয় কারাতে ফেডারেশন (একেএফ্) আয়োজিত কারাতে প্রতিযোগিতায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে। গত ১০ থেকে ১৩ মে (২০১৮) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত একেএফ আয়োজিত ১৭তম ক্যাডেট, জুনিয়র ও ইউ-২১ কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় ইরানের ইউ-২১ মহিলা কারাতে টীম বিস্ময়কর নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যমে ২টি স্বর্ণপদক, একটি রৌপ্যপদক ও একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করে এ বিরাট গৌরবময় সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
এ প্রতিযোগিতায় ইরানের ইউ-২১ মহিলা টীমের পক্ষে জি. ফাতেমাহ্ খোনার্ক্দা ও নেগিন্ আল্তুনী দু’টি স্বর্ণপদক জয় করেন এবং মুবীনাহ্ হায়দারী ও হাদীছাহ্ জামালী যথাক্রমে একটি রৌপ্যপদক ও একটি ব্রোঞ্জপদক জয় করেন।
অবশ্য এ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ইউ-২১ পুরুষ টীম-ও অংশগ্রহণ করে, তবে কোনো শীর্ষ স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয় নি। ইরানের ইউ-২১ পুরুষ টীম দু’টি রৌপ্যপদক ও দু’টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে।
এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় ইরানের ক্যডেট টীম-ও এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে এবং ইরানি মেয়েদের টীম দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।

 তেহরানের আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় বাংলাদেশ বিষয়ক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ইরানের রাজধানী তেহরানের ৩১তম আন্তর্জাতিক বই মেলায় গত ৫ মে ২০১৮ যৌথভাবে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বই ‘শুরে কান্দে পারসি দার বাংলাদেশ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের ‘জাতীয় হলে’ যৌথভাবে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন সাদি ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং ইরানের সাবেক স্পিকার ড. গোলাম আলী হাদ্দাদ আদেল এবং ইরানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা।
এ দিনটিকে ‘বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ দিবসকে কেন্দ্র করে মেলায় এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটি প্রকাশ করেছে ইরানের সাদি ফাউন্ডেশন। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যাঁরা বক্তব্য রাখেন তাঁদের অন্যতম হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুস সবুর খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুমিত আল রশীদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাওলী মাহবুব। এ ছাড়া পুস্তকের লেখকদ্বয়ও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বইটি লিখেছেন ডক্টর ফারহাদ দারুদগারিয়ান এবং ডক্টর এলহাম হাদ্দাদি। বইতে বাংলাদেশে ফারসি ভাষার চর্চা এবং প্রভাব নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করা হয়েছে।

ঢাবির ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ডিন’স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা অনুষদভুক্ত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম সরকার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ‘বাংলাদেশে ফারসি অনুবাদ সাহিত্য ১৯৭১-২০০৫’ রচনার জন্য সেরা গবেষণা গ্রন্থ ‘ডিন্স মেরিট অ্যাওয়ার্ড ফর টিচারস’ লাভ করেন।
এছাড়া ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের স্নাতক সম্মান এবং স্নাতককোত্তর পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ এই বিভাগের ৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘ডিন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন।
ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহিউদ্দিন জাকারিয়া ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত এমএ পরীক্ষায় সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০ পেয়ে ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব এক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তিনি বর্তমানে ইরানের তেহরানে অবস্থিত খা’রেজমি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত আছেন। এছাড়া ফাহাদ মুমিন ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত অনার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব অনার’ এবং সাহিদা আক্তার সনি ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ‘ডিন্স মেরিট লিস্ট অব অনার’ ক্যাটাগরিতে ডিন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।

ইরানের ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশ সন্ধ্যা

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, শান্ত-স্নিগ্ধ হিসেবে সুপ্রসিদ্ধ। এর রয়েছে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, কিন্তু কিছুদিন হলো সে অন্যের ব্যথায় বিমর্ষ, কণ্ঠ নিস্তব্ধ। ভাষ্যকার খন্দকার মর্জিনা আখতার লাভলির কণ্ঠে বাংলা বিবরণী শুনে সারা শরীরের লোমগুলো শিহরিত হচ্ছিল! লালনের বিখ্যাত গান ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’ ব্যাকগ্রাউন্ড সুরে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিপন্ন জীবন নিয়ে চিত্রিত এই প্রামাণ্যচিত্রের নাম ‘শারমে বুদা’ (বাংলা নাম বিমর্ষ বুদ্ধ)।
৩৬তম ফজর আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালের (২০১৮) শেষ দিনে গত ২৮ এপ্রিল ইরানের রাজধানী তেহরানের তালারে ওহাদাত (ঐক্য হলে) ইরানি চিত্রনির্মাতা মুর্তজা অতাশ জমজমের ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মিত এই হৃদয়¯পর্শী প্রামাণ্যচিত্রটি দেখার জন্য উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। বাংলা, ফারসি, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় প্রচারিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি দেখে উপস্থিত অসংখ্য দর্শক অশ্রুসিক্ত নয়নে বাড়ি ফিরেছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রচার সংস্থার বাণিজ্যিক বিপণন প্রধান হাকশেনাস বলেন, প্রামাণ্যচিত্রটির সংগীতের সুর শুনলেই কেমন যেন একধরনের অসহায়ত্ববোধ জেগে ওঠে! নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে লজ্জা লাগে!
ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ কে এম মজিবুর রহমান ভূঁঞা বলেন, এখানে কেবল একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে। আরেকটি দিক হচ্ছে, এইসব শরণার্থীর আবাসন, খাদ্য, বস্ত্র সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে এবং দ্রুত এই শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিমর্ষ বুদ্ধ দেখার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রয়াত হাশেমি রাফশানজানির পুত্র বর্তমানে তেহরানের মেয়র মুহসেন রাফসানজানি বলেন, পৃথিবীতে গৌতম বুদ্ধের ধর্মকে বলা হয় অহিংস ধর্ম। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী বুদ্ধ বিশ্বের বুকে এই ধর্মের অহিংস বাণীর অপমান করে যাচ্ছে।
দর্শকের সারিতে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাওলি মাহবুব। তিনি বেশ আবেগঝরা কণ্ঠে বললেন, বিখ্যাত এই আন্তর্জাতিক ফজর ফিল্ম ফেস্টিভালের মাধ্যমে সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রকারদের নিকট রোহিঙ্গা সংকট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। চলচ্চিত্র যেহেতু মানুষের কথা বলে, তাই এটি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজম বাংলাদেশের মানুষের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, প্রামাণ্য দলিলটি নির্মাণ করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখে চোখ দিয়ে বারবার অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে। বিপুল জনসংখ্যার একটি দেশে, মানুষ রাতদিন পরিশ্রম করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। আমার এই প্রামাণ্যচিত্রের গতিপথ বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করে দিয়েছে।
পুরো প্রামাণ্য দলিলটিতে তিনি বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেনসহ অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। এই সন্ধ্যাটি মূলত বাংলাদেশ সন্ধ্যা হিসেবেই এবারের ফজর ফিল্ম ফেস্টিভালে পরিচিত হয়।
উল্লেখ্য, লেখক প্রামাণ্যচিত্রটি মূল ফারসি ভাষা থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন। এটি বর্তমানে ফ্রান্স ফেস্টিভালে যাওয়ার পথে রয়েছে। এ ছাড়া, আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে খুব শিগগিরই এটি প্রচার হবে বলে পরিচালক জানিয়েছেন। ইরানের বিখ্যাত পরিচালকেরা ইতালি, ফ্রান্স, ভারত, সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে মিলে যৌথ ছবি তৈরি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথ ছবির উদ্যোগ নেবেন বলে জানালেন মুর্তজা অতাশ জমজম।
উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও জার্মানি, ভারত, রোমানিয়া, ফ্রান্স, চেক রিপাবলিক, মোনাকো, লেবানন, বসনিয়া, তাইওয়ান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, রাশিয়া, ইতালি, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, আযারবাইজান, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ও কাজাখস্তানসহ অনেক দেশ অংশগ্রহণ করে। ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজা মীর কারিমির তত্ত্বাবধানে ২১ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই উৎসবে বিশ্ব বরেণ্য সব চিত্রনির্মাতা ও বিচারকেরা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৮২ সাল থেকে এই উৎসবটি চালু রয়েছে।

নাট্যকলার মাধ্যমে ইরান-বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে

বাংলাদেশের নাট্য-ব্যক্তিত্ব সুদীপ চক্রবর্তী গত ১৩ মে ২০১৮ রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরান বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে নাটকের। ২১তম ইরান আন্তর্জাতিক নাট্যমেলায় অংশ নেয়ার জন্য সরাসরি লন্ডন থেকে তেহরানে আসেন তিনি।
ব্রিটেনের গোল্ডস্মিথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমনওয়েলথ স্কলারশিপের আওতায় পিএইচডি করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদীপ চক্রবর্তী। নাট্যকলা বিষয়ে ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে তেহরানে আসেন তিনি। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগের সামিনে মোফাকখাম হলে নাট্যকলা বিষয়ক ভাষণ দেন তিনি।
ভাষণ শেষে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো তেহরানে আসলাম; আমি বিমুগ্ধ।’ ইরান স¤পর্কে দূর থেকে যে কথা বলা হয় এখানে এসে তা থেকে ভিন্ন এক ইরানের দেখা পান বলেও জানান তিনি। এ ভিন্নতার স্বরূপ তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশের বরেণ্য এই নাট্য-ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘আমার কাছে যে ভিন্ন ইরান মনে হয় তা ইরানের সংস্কৃতি এবং সংস্কৃতির আভিজাত্যে ভিন্নতার কারণে মনে হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যদিও ইরানের মানুষের রং ভিন্ন, উচ্চতা ভিন্ন এবং ভাষাও ভিন্ন, তারপরও ইরানিদের দেখে অনেকটাই আপনজন বলে মনে হয়েছে। চিনি ওদেরকে অনেক দিন ধরে। ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐক্যের কারণেই এমনটি মনে হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, একেবারে ঠিক কথাই বলা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ঐক্যের গভীরতা এবং দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের স¤পর্কের ইতিহাস থাকায় হয়ত তার ভেতরের মানুষটাকে ইরান এ ভাবে উজ্জীবিত করেছে। নাট্যকলার ক্ষেত্রে ইরান-বাংলাদেশ অপরূপ সমন্বয় হওয়া সম্ভব বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইরানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। দু’দেশের নাট্য-বিশেষজ্ঞদের আদান-প্রদানের বিষয়ের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবেই দু’দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হবে নাটকের ।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারের নাট্যমেলায় ৮টি দেশ অংশ নেয়। এসব দেশের নাট্য-বিশেষজ্ঞরা এ মেলায় বক্তব্য রাখবেন।