শুক্রবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ১, ২০১৬ 

‘সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীরা তাকফিরিদের লেলিয়ে দিয়েছে’- রাহবার
শিয়া-সুন্নি মতভেদ উস্কে দেয়ার যেকোনো পদক্ষেপ আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুাল্লহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, এই তিন শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র ও মূর্খ তাকফিরি সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা গত ১৩ অক্টোবর পবিত্র ঈদে গাদীরে খুম উপলক্ষে সর্বস্তরের জনগণের এক সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করে শুধু ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেক্যুলারদের এ দৃষ্টিভঙ্গির অসারতা প্রমাণের জন্য গাদীরে খুমের ঘটনাই যথেষ্ট; কারণ, ওই দিন শাসনকাজ পরিচালনায় ইসলামের সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করা হয়।
ইরানের ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে প্রতিহত করার জন্য শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ উস্কে দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং ‘ডিভাইড এন্ড রুল’-এর প্রবক্তা ব্রিটেন শিয়া-সুন্নি বিভেদ উস্কে দিয়ে মুসলমানদের আসল শত্রু থেকে তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছে।
ঠিক এ লক্ষ্যেই সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিবাদীরা ইরাক ও সিরিয়াসহ আরো কিছু দেশে তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ওরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানকে প্রতিহত করার জন্য আল-কায়েদা ও আইএসআইএল সৃষ্টি করেছে, কিন্তু এখন এসব গোষ্ঠী তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে।
আইএসআইএল বিরোধী কথিত বিমান হামলাকে ভণ্ডামি হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ইসলামের শত্রুরা এই হামলাকেও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ উস্কে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তিনি বলেন,  ইসলাম ও কুরআনের শাসনে বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমানের উচিত তাদের প্রকৃত শত্রু আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও ব্রিটেনের অপরাধী কার্যকলাপ স¤পর্কে সচেতন থাকা।

বিশ্বের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায় ইরান- প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, পুরো বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক চায় তাঁর দেশ। গঠনমূলক যোগাযোগ নীতির ভিত্তিতে তেহরান এ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমেরিকায় বসবাসরত ইরানী নাগরিকদের এক সভায় প্রেসিডেন্ট রুহানি গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের বাইরে এখন এ বিষয়ে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে ইরানের অনুপস্থিতি পরিস্থিতি জটিল কিংবা অসম্ভব করে তুলছে। তিনি আরো বলেন, সমস্যাসঙ্কুল মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ দেশ হিসেবে বিভিন্ন ইস্যুতে যেকোনো দেশের আগে ইরান বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরানী নাগরিকদের সভায় বক্তৃতা করেন।

‘সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান’- ড. হাসান রুহানি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেছেন, সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে তেহরান। গত ২২ সেপ্টেম্বর পবিত্র প্রতিরক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে এক সেনা সমাবেশে ড. রুহানি বলেন, কৌশলগত মধ্যপ্রাচ্যে ইরান হচ্ছে স্থিতিশীলতার নোঙর এবং সবসময় নিপীড়িত জাতিগুলোর পাশে দাঁড়াবে। তিনি আরো বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে; এক্ষেত্রে ইরানের সরকার ও সামরিক বাহিনী তাদেরকে সহযোগিতা করবে। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ শক্তিগুলোর ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।

ইরানের উদ্যোগে পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসলামী ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পবিত্র হজ উপলক্ষে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের হজ মিশনের উদ্যোগে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর (২০১৪) পবিত্র মক্কা নগরীতে ইসলামী ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র হজ পালনের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিরাট সংখ্যক হজযাত্রী ও ইসলামী মনীষী এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ ইসলাম ও মুসলিম ঐক্যের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে, বিশেষ করে নব উদ্ভূত তাকফিরি গোষ্ঠীসমূহ এবং তাদের পক্ষ থেকে ইসলামের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এ সম্মেলনে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের হজ মিশনের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম আলী গাযী আসগার তাঁর বক্তব্যে বলেন : ‘মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে তাকফিরি গোষ্ঠীগুলোকে গড়ে তোলার পিছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমানে ইসলামী জাহান যেসব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন সেগুলো থেকে, বিশেষ করে ফিলিস্তিন সমস্যা থেকে বিশ্বের মুসলমানদের দৃষ্টি ফেরানো।’
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্যের অবৈধ স্বার্থের হেফাযতের লক্ষ্যে মুসলিম জাহানে যে চরমপন্থী ধ্যানধারণার বিস্তার ঘটানো হচ্ছে তার মূলোচ্ছেদ করতে হলে অবশ্যই ইসলামী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ওলামা সম্মেলনে লারিজানি : ‘ইসলামী জাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে ইরান’
ইরান গোটা মুসলিম বিশ্বে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামী জাগরণ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে জানান ইরানের সংসদের স্পিকার ড. আলী লারিজানি। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে আন্তর্জাতিক ওলামা সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের সমর্থনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ড. লারিজানি আরও বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং মুসলমানদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়াতে ঐক্যের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ইসলামী বিপ্লবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর ভাষণ-বিবৃতিতে মুসলিম ঐক্যের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। আর কোনো শব্দ এতো বেশি উচ্চারিত হয়নি।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘মুসলমানেরা যাতে পাশ্চাত্যের কাছে ধোঁকা না খায়, সেজন্য তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তেহরান। কিন্তু আমরা কখনোই সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাই না, এমনকি আমরা কোনো পুতুল সরকারও চাই না।’ ইসলামী জাগরণ সৃষ্টির অংশ হিসেবেই ইরান ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি হেনরি কিসিঞ্জার বলেন, বিশ্বে ইরানের প্রভাব ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

ইরান-রাশিয়া ৭,০০০ কোটি ইউরোর বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর
ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য এবং অথনৈতিক স¤পর্ক আরো শক্তিশালী করার জন্য ৭,০০০ কোটি ইউরোর চুক্তি সই হয়েছে। রাশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক ৯ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানে এ তথ্য জানান। ইরান-রাশিয়া বাণিজ্য সহযোগিতা কমিশনের ১১তম বৈঠক অনুষ্ঠানের পর তিনি এ ঘোষণা দেন। আলেকজান্ডার নোভাক জানান, যৌথ এ বৈঠকে রাশিয়ার ৪০টি কো¤পানির প্রতিনিধি যোগ দেয়। তবে, কোন কোন ক্ষেত্রে এ চুক্তি বলবৎ হবে তা ¯পষ্ট করেননি তিনি।
নোভাক বলেন, ইরানে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করতে প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা আমদানি করতেও প্রস্তুত তারা। নোভাক আরো জানান, তেহরানের ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন একতরফা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর রাশিয়া ইরানের তেল ও গ্যাসের বাজার নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, ইরানের বাণিজ্য সহযোগিতা বিষয়ে কিছু নিয়ম-কানুন রদবদল করলে রাশিয়া ইরানের তেল শিল্পে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। রুশ বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, খুব শিগগিরি ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ¬াদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ইরানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়াতে চায় চীন
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ইরানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরো বাড়ানোর বিষয়ে তার দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তাজিকস্তানের রাজধানী দোশাম্বেতে গত ১২ সেপ্টেম্বর ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং। মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তেহরানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়াতে চায় বেইজিং। এছাড়া, আগামী বছর সরকারি সফরে ইরানে যাবেন বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি এ বৈঠকে তেহরান-বেইজিং সম্পর্ককে শক্তিশালী উল্লেখ করে বলেন, আগের সব চুক্তি বাস্তবায়নে ইরান ও চীনের তৎপরতা চালানো উচিত।
এছাড়া এ বৈঠকে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে মত বিনিময় করেন এ দুই নেতা। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা এসিও’র শীর্ষ বৈঠকের অবকাশে দু’নেতার মধ্যে এ বৈঠক হয়।

ইরান ও স্পেনের মধ্যে পর্যটন সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত
এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে স্পেনের শিল্প, জ্বালানি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী ম্যানুয়েল সোরিয়া লোপেয ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সফর করেন এবং এ উপলক্ষে তেহরানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত অনুষ্ঠানের আগে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ও স্পেনের মধ্যে একটি পর্যটন সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পর্যটন ও হস্তশিল্প সংস্থার প্রধান মাসউদ সুলত্বানীফার এবং স্পেনের পক্ষ থেকে দেশটির শিল্প, জ্বালানি ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী ম্যানুয়েল সোরিয়া লোপেয।
উক্ত চুক্তি অনুযায়ী স্পেন হোটেল নির্মাণ ও ঐতিহাসিক ভবনসমূহকে গেস্টহাউসে রূপান্তর ক্ষেত্রে স্বীয় অভিজ্ঞতা ইরানের সাথে বিনিময় করবে এবং এছাড়াও স্পেনীয় শেয়ারহোল্ডারদেরকে ইরানের হোটেল শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করবে।

ইরানে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদ্যাপিত
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পর্যটন ও হস্তশিল্প সংস্থার উদ্যোগে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদ্যাপিত হয়।
এ উপলক্ষে রাজধানী তেহরানে একটি অনুষ্ঠানের আযোজন করা হয় যাতে পর্যটন খাতে কর্মরত বিভিন্ন ইরানী সংস্থার প্রতিনিধিবর্গ এবং অনেক সরকারী কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ইরানী পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থাকে পুরস্কৃত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের আকাশ সীমা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ আকাশ সীমা। এছাড়া ইরানের অত্যন্ত চমৎকার আবহাওয়া বৈচিত্র্য ও দায়িত্বশীল সেবা কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা ইরানকে বিশ্বের সেরা ১০টি পর্যটন আকর্ষণীয় দেশের অন্যতম হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
এছাড়াও ইসলামী ও হালাল পর্যটন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরান তার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির কারণে বিশ্বের পর্যটকদেরকে ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে এবং অধিকতর ব্যাপকভাবে পর্যটকদেরকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ এ বিষয়টির প্রতি অধিকতর দৃষ্টি প্রদান করছেন।
উল্লেখ্য, ইরানী সমাজ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের সর্বাধিক প্রাণচঞ্চল ও বৈচিত্র্যময় সমাজ- যা ইতিহাসপ্রেমিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যের প্রতি আগ্রহী লোকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
বস্তুত পর্যটকদের জন্যে আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক নিদর্শনের দিক থেকে ইরান হচ্ছে বিশ্বের সমৃদ্ধতম দেশ। এখানকার নাকশে জাহান চত্বর, আর্মেনীয় মঠ ও গির্জা, বাম্ ও তার মনোরম সাংস্কৃতিক দৃশ্য, বিস্তূন্, পাসারগাদ, পার্সেপোলিস, শায়খ ছ¡াফীউদ্দীনের মাযারের সৌধ, শুশ্তারের ঐতিহাসিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, সুলত্বানীয়াহ্, ঐতিহাসিক তাবরীয বাজার কমúেøক্স, তাখ্তে সোলায়মান, চোগ¦া জাম্বিল, পারস্য বাগান ইত্যাদি হচ্ছে ইরানের ঐতিহাসিক নিদর্শনাদির অন্যতম যা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৭শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উদ্যাপিত হয়। বিশ্বের সকল দেশেই বহু মানুষ এ দিবসের অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে পর্যটনের গুরুত্ব বৃদ্ধি এবং এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিই হচ্ছে এ দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য।

রাহ্বারের পক্ষ থেকে ইরানী কুস্তিগীরদের প্রতি অভিনন্দন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কুস্তিগীরগণ দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন করায় রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী তাঁদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ন্যাশনাল ইরানীয়ান গ্রেকো-রোমান রেসলিং টীম চলতি ২০১৪ সালের রেসলিং ওয়ার্ল্ড্ চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করায় তিনি এ অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী এক বাণীতে এ বিজয়ের জন্য জাতীয় কুস্তিগীর টীমের সদস্যদেরকে এবং এ টীমের টেকনিক্যাল স্কোয়াডকে অভিনন্দন জানান। তিনি দেশের জন্য বিরাট সম্মান নিয়ে আসার কারণে এ টীমকে ধন্যবাদ জানান এবং এ বিজয় উপলক্ষে ইরানী জনগণকেও অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, উযবেকিস্তানের তাসখন্দে অনুষ্ঠিত রেসলিং ওয়ার্ল্ড্ চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ন্যাশনাল ইরানীয়ান গ্রেকো-রোমান রেসলিং টীম প্রথম বারের মতো ৪২ পয়েন্ট অর্জন করে।
উযবেকিস্তানের জিমন্যাস্টিক প্যালেসে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ৫৯ কেজি ক্যাটেগরিতে ইরানী কুস্তিগীর হামীদ সুরীয়ান তাঁর রুশ প্রতিদ্বন্দ্বী মিন্গিয়ান সেমেনোভকে ২-১ পয়েন্টে হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করেন। উল্লেখ্য, হামীদ সুরীয়ান ইতিপূর্বে ২০১২ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেম্স্-এ কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণ পদক জয় করেছিলেন। ঐ সময় পর্যন্ত তিনি মোট ছয়টি স্বর্ণ পদকের অধিকারী হন এবং এবারে স্বর্ণ পদক জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি সাতটি স্বর্ণ পদক বিজয়ী একমাত্র ইরানী কুস্তিগীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠত হলেন।

আবারো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ হলেন ইরানের সালিমি
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠানরত এশিয়ান গেমসে ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইরান। দেশটির ভারোত্তোলক বেহদাদ সালিমি গত ২৬ সেপ্টেম্বর চীন ও তাইওয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে হারিয়ে এ বিজয় ছিনিয়ে নেন। এর ফলে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। তাঁর এই শক্তিমত্তার জন্য তাঁকে বলা হয় ইরানের ‘হারকিউলিস’।
সালিমি এশিয়ান গেমসে ওজন তুলেছেন ২৫৫ কেজি। ২৪৫ কেজি ওজন তুলতে ব্যর্থ হয়েও দ্বিতীয় হন চীনা প্রতিদ্বন্দ্বী।
এদিকে, সালিমি ২৫৫ কেজি ওজন তুললেও বিশ্ব রেকর্ড ভাঙতে পারেন নি। এ রেকর্ডের মালিক হচ্ছেন তাঁর নিজ দেশের ক্রীড়াবিদ হোসেইন রেজাজাদেহ। তিনি ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে তুলেছিলেন ২৬৩ কেজি। সালিমি এবারের এশিয়ান গেমসে ইরানের পক্ষে পতাকা বহনের দায়িত্ব পালন করেন।

এশিয়ান গেম্স্-এ ইরানী ফ্রি-স্টাইল কুস্তিগীরের স্বর্ণ পদক জয়
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেম্স্ ২০১৪-এ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ফ্রি-স্টাইল কুস্তিগীর মাসউদ ইসমাঈল-র্পু চমৎকার নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দেশের জন্য একটি স্বর্ণপদক জয় করেন।
মাসউদ ইসমাঈল-র্পু এ প্রতিযোগিতায় সেমি-ফাইনালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কাযাকিস্তানের কুস্তিগীর দাউলাত নিয়ায্বেকোভকে ৮-৩ পয়েন্টে হারিয়ে ফাইনালে উন্নীত হন। ফাইনালে তিনি তাঁর ভারতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী বজ্রং বজ্রংকে ৬-৪ পয়েন্টে পরাজিত করে স্বর্ণপদকের অধিকারী হন।
এশিয়ান গেম্স্ ২০১৪-এ এছাড়াও ইরানী কুস্তিগীর রেযা ইয়ায্দানী পুরুষদের ৯৭ কেজি ক্যাটেগরিতে ফ্রি-স্টাঈল কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তাঁর কিরগিযিস্তানি প্রতিদ্বন্দ্বী মাহ্মূদ মূসায়েভকে ১৪-৪ পয়েন্টে পরাজিত করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

ভেনিসের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতা রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদের বিরাট সাফল্য
সম্প্রতি ইতালীর ভেনিস্-এ অনুষ্ঠিত একাত্তরতম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মহিলা চলচ্চিত্র নির্মাতা রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদ্ পুরস্কৃত হয়েছেন।
এ উৎসবে রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদ্-এর নির্মিত ঞধষবং (গল্পসমূহ) চলচ্চিত্রটি সেরা স্ক্রিন্প্লে হিসেবে নির্বাচিত হয় এবং উৎসবের সমাপ্তি দিবস গত ৬ই সেপ্টেম্বর (২০১৪) তারিখে ভেনিস্ লিদো-তে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে তাঁকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ চলচ্চিত্রটি আরো ১৮টি চলচ্চিত্রের সাথে উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গোল্ডেন লায়ন অ্যাওয়ার্ড লাভ করে।
রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদ্ তাঁর Tales চলচ্চিত্রটিতে সাতটি সংক্ষিপ্ত কাহিনী পরিবেশন করেছেন। এতে তিনি তাঁর ইতিপূর্বে নির্মিত চলচ্চিত্র The Blue-Veiled, Under the Skin of the City ও Mainline চলচ্চিত্রের কয়েকটি প্রধান চরিত্রের পরিণতিকে তুলে ধরেছেন।
উল্লেখ্য, রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদ্ তাঁর চলচ্চিত্রসমূহে সামাজিক সমস্যাবলির সমাধান নির্দেশের জন্য সুপরিচিত। তিনি এ পর্যন্ত অনেকগুলো ফিচার- পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছাড়াও বিভিন্ন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তাঁর নির্মিত এসব চলচ্চিত্র অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
রাখ্শান্ বানী এ‘তেমাদ্ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার চলচ্চিত্রসমূহের চরিত্রগুলো বাস্তব- যাদের মধ্য থেকে অনেকের সাথে আমার প্রতিদিনই দেখা হয়।’
উল্লেখ্য, ভেনিস্-এ অনুষ্ঠিত একাত্তরতম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আরেক জন ইরানী চলচ্চিত্র নির্মাতা নীমা জাভীদী-র নির্মিত প্রথম ফিচার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র Melbourne চলচ্চিত্র সমালোচকদের সর্বাধিক দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। এ চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের মাধ্যমে উৎসবের ক্রিটিক্স্ উইক সেকশনের উদ্বোধন করা হয়।
এ বছরের ভেনিস্ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান ছিলেন ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা আলেকজান্দার দেস্প্লাত্। এ উৎসবটি গত ২৭শে আগস্ট (২০১৪) তারিখে শুরু হয় এবং ৬ই সেপ্টেম্বর সমাপ্ত হয়।

বাগদাদ চলচ্চিত্র  উৎসবে বিরাট সংখ্যক ইরানী চলচ্চিত্রের অংশগ্রহণ
১৫ থেকে ১৯শে অক্টোবর (২০১৪) পর্যন্ত ইরাকের রাজধানী বাগদাদে আয়োজিত ষষ্ঠ বাগদাদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল বিপুল সংখ্যক ইরানী চলচ্চিত্র প্রদর্শন। এ উৎসবে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে প্রদর্শনের জন্য মোট ৬১টি ইরানী চলচ্চিত্র বাছাই করা হয় এবং এগুলোর মধ্য থেকে পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশগ্রহণের জন্য বাছাইকৃত চলচ্চিত্রের সংখ্যা দশটি।
উল্লেখ্য, ষষ্ঠ বাগদাদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত চলচ্চিত্র সমূহ দীর্ঘ গল্প, প্রামাণ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটক, মানবিক ভাবমূর্তি (মানবাধিকারের ওপর আলোকপাতকারী চলচ্চিত্র), আরব নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সম্প্রতি বাগদাদে একটি সিনেমাটিক ট্রেনিং সেন্টার খুলেছে। এ সেন্টারে বিভিন্ন ক্যাটেগরির চলচ্চিত্র নির্মাণ, অভিনয় ও স্ক্রিন্-প্লে লেখার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেন্টারটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বহু সংখ্যক ইরানী ও ইরাকী সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য যে, গত বছর বাগদাদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে বেশ কিছু সংখ্যক ইরানী চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং এতে পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনটি ইরানী চলচ্চিত্র পুরস্কৃত হয়।

ইরান চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১৮তম স্থান অর্জন করল
ইরানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি জ্ঞান-বিজ্ঞানে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে চলেছে। বিশেষ করে ওষুধ উৎপাদনে ইরানের সাফল্য উল্লেখ করার মতো।
চলতি ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান উৎপাদনে ইরান বিশ্বে ১৮তম স্থানে রয়েছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিষয়ক উপ-ব্যবস্থাপক আমির মোহসেন জিয়ায়ি বলেন, বিশ্বের ২৩৮টি দেশের মধ্যে ইরান ১৮তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ২০১১ সালে চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞান তথা উঁচু মানের গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশ্বে ইরান ২৩তম স্থান অধিকার করেছিল। ২০০০ সালে এ ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান ছিল ৫৩।
গত কয়েক বছরে ইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘থমসন রয়টার্স’ এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদন ও গবেষণায় ইরান বিশ্বে ২০তম স্থান অধিকার করেছে। ইন্সটিটিউট অব সায়েন্টিফিক ইনফরমেশন- আইএসআই জানিয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে ইরান ৬০,৯৭৯টি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে।
বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উৎপাদনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান সবার শীর্ষে। এছাড়া এর আগে ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ক গবেষণা কাজে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ও বিশ্বে অষ্টম স্থান অর্জন করে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।

দুটি অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থা উদ্বোধন করল ইরান
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দেশে তৈরি দু’টি অত্যাধুনিক রাডার ব্যবস্থার উদ্বোধন করেছে। দু’টি রাডারই স্টিলথ বিমান ও দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করতে সক্ষম। গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিমান প্রতিরক্ষা দিবস উপলক্ষে শীর্ষ সামরিক কমান্ডারদের উপস্থিতিতে এসব রাডার উদ্বোধন করা হয়।
রাডার ব্যবস্থা দু’টির নাম দেয়া হয়েছে অরাশ-২ এবং কেইহান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাতামুল আম্বিয়া বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফারজাদ ইসমাইলি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, কেইহান হচ্ছে দ্বিমাত্রিক রাডার ব্যবস্থা। এটি প্রচলিত জঙ্গি বিমানের পাশাপাশি স্টিল্থ বিমান শনাক্ত করতে পারে। স্টিল্থ বিমানগুলো অনেক উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। অরাশ-২ রাডার ব্যবস্থাও এক লাখ ফুট উঁচুতে অবস্থানকারী বিমানকেও শনাক্ত করতে পারে।

রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম হেলিকপ্টার তৈরি করছে ইরান
স¤পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম হেলিকপ্টার তৈরি করছে ইরান। ইরানের হেলিকপ্টার্স লজিস্টিক্স অ্যান্ড রিনোভেশন অর্গানাইজেশন বা আইএইচএলআরও’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মাদ আলী আহমাদাবাদি গত ৫ সেপ্টেম্বর এ খবর জানিয়ে বলেন, প্রতিরক্ষা শিল্পে উত্তরোত্তর সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এ হেলিকপ্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরনো হেলিকপ্টারগুলো সংস্কারের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে আগামী দিনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে নতুন তিন মডেলের হেলিকপ্টারের ডিজাইন স¤পন্ন করেছে আইএইচএলআরও। এই তিন মডেলের মধ্যে একটি হেলিকপ্টার শত্রুর রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারবে।
জেনারেল আহমাদাবাদি বলেন, ১৪ আসনের মাঝারি-ভারী ‘হোমা’ হেলিকপ্টারটি রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এবং এতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন ও নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট ৮ আসনের ‘সাবা’ হেলিকপ্টার নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা হলেও এটি দিয়ে দুর্যোগের মুহূর্তে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানো যাবে। স¤পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি তৃতীয় হেলিকপ্টারটি সামরিক প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইরান স্বয়ংস¤পূর্ণতা অর্জন করেছে। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে বিশ্বের বহু দেশের কাছে সমরাস্ত্র রপ্তানি করছে তেহরান। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বহুবার বলেছে, তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করছে না বরং নিছক আত্মরক্ষার স্বার্থে প্রতিরক্ষা ক্ষমতা শক্তিশালী করছে তেহরান।

আকাশে যুদ্ধের উপযোগী ক্ষেপণাস্ত্রসজ্জিত ড্রোন উন্মোচন করল ইরান
ইরান ক্ষেপণাস্ত্রসজ্জিত প্রথম ড্রোন উন্মোচন করেছে। আকাশ যুদ্ধের উপযোগী চালকবিহীন এ বিমান নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করেছে ইরান। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেন, যুদ্ধে ব্যবহারের উপযুক্ত এ ড্রোন এরই মধ্যে পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় পরীক্ষায় উতরে গেছে। পরীক্ষা চালানোর সময় এ ড্রোন দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানা হয়েছে। আকাশ যুদ্ধের উপযোগী ড্রোনটি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে।
জেনারেল হাতামি জানান, সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান চালানোর পরিধি আরো বাড়াতে সহায়তা করবে এ ড্রোন। এতে আগ্রাসী শত্রুর বিমানকে তাড়া করা, প্রতিহত করা এবং ধ্বংস করার সক্ষমতা বাড়বে ইরানের। তিনি বলেন, উড়ন্ত নানা ধরনের বিমানসহ জঙ্গি বিমান, হেলিকপ্টার, চালকহীন বিমান ধ্বংস করতে সক্ষম নতুন এ ড্রোন।

বিশ্বে ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান উৎপাদনে ৭ম স্থানে ইরান
গত ৬ অক্টোবর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ন্যানো টেকনোলজি ইনিশিয়েটিভ কাউন্সিল বা আইএনআইসি’র সচিব সায়িদ সারকর বলেছেন, ন্যানো প্রযুক্তি সংক্রান্ত জ্ঞান উৎপাদনে ইরান বিশ্বে সপ্তম স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর আগে ইরান অষ্টম স্থানে ছিল। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বে এখনো ইরান শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। তেহরানে সপ্তম আন্তর্জাতিক ন্যানোপ্রযুক্তি উৎসবের অবকাশে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ইরানের ন্যানো প্রযুক্তি গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অনেক দেশই এ বিষয়ে ইরানের সহযোগিতা চাইছে। বর্তমানে ২০ হাজার বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ন্যানো প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলে তিনি জানান।

ইরানী গবেষকদের স্ট্রেস ক্যালকুলেটর তৈরি
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের গবেষকগণ ব্রেসলেট আকারের একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যা মানুষের স্ট্রেস (মানসিক চাপ) পরিমাপ ও রেকর্ড করার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
উক্ত যন্ত্রটি তৈরির প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গবেষকদের অন্যতম ড. হোসাইন হাসানপুর বলেন, এ যন্ত্রটিতে একটি কম্পিউটার  গেম দেয়া হবে যা লোকদের মানসিক চাপ কমানোতে সাহায্য করবে।
তিনি জানান যে, এ যন্ত্রটি পেশাদার ক্রীড়াবিদরাও ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি বলেন, জাতীয় টীমসমূহের ক্যাম্পগুলোতে পেশাদার ক্রীড়াবিদদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে এমন ধরনের মানসিক চাপ যে সম্পর্কে এমনকি তাঁরা নিজেরাও সচেতন থাকেন না। অথচ অনেক সময় একজন ক্রীড়াবিদের এমনকি সামান্যতম মানসিক চাপও গেম্-এর ফলাফলকে পাল্টে দিতে পারে।
ড. হাসানপুর বলেন, মানসিক চাপ মানুষের হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বৃদ্ধি করে এবং তার চামড়ার প্রতিরোধক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। তিনি বলেন, সুতরাং আঙ্গুলসমূহের সাথে লাগানো সেন্সরের সাহায্যে চামড়ার প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যালকুলেট করে একজন লোকের পক্ষে এমন সঙ্কেত তৈরি করা সম্ভব যা মানসিক চাপের ১৬টি নিদর্শন নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, ব্রেসলেটটি ব্লুটুথ-এর সাহায্যে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করা হয়- যা তার মধ্যে সৃষ্ট মানসিক চাপের মাত্রাকে শব্দ, ছবি বা চার্টের আকারে প্রদর্শন করে ।