সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশী সংবাদ)
পোস্ট হয়েছে: জুন ২২, ২০১৬
পরমাণু সমঝোতায় সব পক্ষ লাভবান হবে : ফ্যাবিয়াসকে প্রেসিডেন্ট রুহানি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতার ফলে ইউরোপের সঙ্গে তেহরানের স¤পর্ক শক্তিশালী হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তিনি গত ২৯ জুলাই তেহরান সফররত ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াসের সঙ্গে বৈঠকে এ মন্তব্য করেন।
হাসান রুহানি বলেন, ভিয়েনা সমঝোতার ভিত্তিতে ইরান-ফ্রান্স সহযোগিতার ফলে দুই দেশের পার¯পরিক স¤পর্ক আরো জোরদার হবে।
গত ১৪ জুলাই ভিয়েনায় স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী তেহরান তার পরমাণু কর্মসূচিতে সুনির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করবে। অন্যদিকে পাশ্চাত্য ইরানের ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। ছয় জাতিগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাবিয়াস ওই সমঝোতায় সই করেন।
ফ্যাবিয়াসের সঙ্গে সাক্ষাতে ইরানের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমে ছয় জাতিগোষ্ঠী, ইরান এবং আঞ্চলিক দেশগুলো লাভবান হবে। এ সমঝোতা নানা ধরনের হুমকিকে সুযোগে পরিণত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এ সমঝোতা বাস্তবায়নে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
সাক্ষাতে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশের বহু কো¤পানি ইরানের বাজারে ফিরে এসে এমন কিছু খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে চায় যেখানে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়। তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদের পক্ষ থেকে ফ্রান্স সফরের একটি আমন্ত্রণপত্র প্রেসিডেন্ট রুহানির হাতে তুলে দেন।
মুসলিম ঐক্য ও সংহতিই শত্রুদের ষড়যন্ত্র রুখতে পারে : আয়াতুল্লাহ কাশানি
শত্রুদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সব মুসলমানকে ঐক্য ও সংহতি আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন তেহরানের জুমআর নামাযের খতিব। আয়াতুল্লাহ ইমামি কাশানি গত ৩ জুলাই তেহরানের জুমআর নামাযের খোতবায় এ আহ্বান জানান।
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিকে খুবই ¯পর্শকাতর বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলমানদের মাঝে যুদ্ধ-সংঘাত বাধিয়ে দিতে শত্রুরা উঠেপড়ে লেগেছে। তিনি বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ বিশ্বের আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো আইএসআইএল, আন-নুসরা ও তালেবানের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে মুসলিম বিশ্বে বিভেদের আগুন জ্বালানোর পরিকল্পনা করেছে। দুঃখজনকভাবে কয়েকটি আরব দেশ মুসলমানদের ধ্বংস করতে পশ্চিমাদের নির্দেশনায় কাজ করছে।
পরিণতির কথা চিন্তা না করেই মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশ ইসলামের শত্রুদের সাথে একাত্ম হয়েছে। তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের তেলের টাকা ব্যয় করে অস্ত্রশস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
আয়াতুল্লাহ ইমামি কাশানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পাশাপাশি ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মিডিয়ার ইসলামবিরোধী তৎপরতাকে মুসলিম উম্মাহর জন্য মারাত্মক সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। তিনি মুসলিম বিশ্বের আলেম ও খতিবসহ ইসলামী চিন্তাবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা যেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে ইসলামী মূল্যবোধ সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
তেহরানের জুমআর নামাযের খতিব বলেন, পশ্চিমা কোনো কোনো দেশ ভাবছে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সিরিয়া, ইরাক, লেবাননসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে শুধু মুসলমানদেরই ধ্বংস করবে আর তারা শুধু ফায়দা লুটবে। কিন্তু এই সন্ত্রাসের অগ্নিশিখা একদিন সন্ত্রাসের মদদদাতাদেরকেও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবে।
তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি। রমযানের শেষ জুমআর দিন বিশ্ব কুদ্স দিবস পালনের যে ডাক ইমাম খোমেইনী (রহ.) দিয়েছেন তার মূল লক্ষ্যই হলো বিশ্বের মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি রক্ষা করা।
কুয়েত এবং সৌদি আরবে সংঘটিত সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে তেহরানের জুমআর নামাযের অস্থায়ী খতিব বলেন, আশা করি শিয়া এবং সুন্নি ভাইয়েরা মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে বিজয়ী হবেন।
শিয়া-সুন্নি ঐক্য সম্মেলনের ডাক দিলেন আল-আযহারের গ্রান্ড ইমাম
মিশরের আল-আযহার মসজিদের গ্রান্ড ইমাম রাজধানী কায়রোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিয়া-সুন্নি ধর্মীয় আলেম ও চিন্তাবিদদের নিয়ে একটি সম্মেলনের ডাক দেন। গত ২২ জুলাই মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গ্রান্ড ইমাম আল-তায়িবের এই আহ্বান প্রচার করা হয়।
শিয়া মুসলমানদের হত্যার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতে আল-তায়িব সুন্নি ধর্মীয় আলেমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সুন্নি মুসলমানদের হত্যার বিরুদ্ধে একই ধরনের ফতোয়া দিতে তিনি শিয়া ধর্মীয় আলেমদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন।
এই অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ এবং রক্তপাত বন্ধ করার লক্ষ্যেই তিনি এ আহ্বান জানান বলে উল্লেখ করেন আল-তায়িব। মুসলমানদের মধ্যে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বজায় রাখার পাশাপাশি মুসলিম জাতিকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষার করার ওপরও জোর দিয়েছেন আল-আজহারের এই শেইখ।
মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও শত্রুতা সৃষ্টির পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর ভিতর যেসব নৃশংস এবং বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড চলছে এটি ইহুদিবাদীদের পরিকল্পনার অংশ বলেও অভিযোগ করেন আল-তায়িব।
‘ওবামা নয়, ইরানের প্রতিরোধই পরমাণু সমঝোতার কারণ’
মিশরের প্রখ্যাত সাংবাদিক মুহাম্মাদ হাসনাইন হাইকাল বলেছেন, ৬ বৃহৎ শক্তি ও ইরানের মধ্যে যে পরমাণু সমঝোতা হয়েছে তার বিরোধিতা করার ক্ষমতা সৌদি সরকারসহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব সরকারগুলোর নেই, তবে তারা এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের কাছে অভিযোগ তোলার ক্ষমতা রাখে।
তিনি ৬ বৃহৎ শক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমঝোতাকে তেহরানের দৃঢ় অবস্থানেরই সুফল বলে মন্তব্য করেন এবং ইরানের প্রতিরোধকে ‘কিংবদন্তীতুল্য’ বলে অভিহিত করেন।
গত ২১ জুলাই লেবাননের দৈনিক আসসাফিরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাইকাল এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইরানের প্রতিরোধের কারণেই পরমাণু সমঝোতা হয়েছে, ওবামার কারণে নয়।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আরব আমিরাত ইরানের পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে এবং সৌদি আরবও একই ধরনের নীতি গ্রহণ করতে পারে ভবিষ্যতে।
হাইকাল সিরিয়ার সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর সংঘাত প্রসঙ্গে বলেন, হিজবুল্লাহর এই পদক্ষেপ আত্মরক্ষামূলক। হিজবুল্লাহ সিরিয়াতে তার প্রভাব সৃষ্টির জন্য এই দেশটিতে প্রবেশ করেনি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মিশরের প্রবীণ এই সাংবাদিক আরও বলেন, সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর রয়েছে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমাদের দৃষ্টিতে প্রশংসনীয়। লেবাননে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্যই সিরিয়াতে তাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
তিনি ইয়েমেনে সৌদি হামলা প্রসঙ্গে বলেন, সৌদিরা চোরাবালিতে ডুবে যাবে এবং সৌদিরা কখনও ইয়েমেনে ঢুকতে পারবে না; তারা বাইর থেকেই হামলা চালিয়ে যাবে।
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ইরানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে : বেলায়েতি
মধ্যপ্রাচ্যের বৈধ সরকারগুলোর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ইরানের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর উপদেষ্টা আলী আকবর বেলায়েতি গত ৪ জুলাই এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ইরান সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে নিরাপদ দেশে পরিণত হয়েছে ইরান এবং দেশটিতে পূর্ণ নিরাপত্তা বিরাজ করছে। বেলায়েতি বলেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পরই পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসের প্রথম শিকারে পরিণত হয়েছিল ইরান।
মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশে পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ও দেশগুলো সন্ত্রাসীদের অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। এ ছাড়া, সন্ত্রাস বিস্তারের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
যেসব দেশ সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে সমন্বয় জোরদারের আহ্বান জানান বেলায়েতি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের অগ্রভাগে রয়েছে ইরান, সিরিয়া এবং ইরাক। এ তিন দেশ একযোগে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্বের ভূমিকায় ইরান : জারিফ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা রাখছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র। তেহরান সফররত সুইজারল্যান্ডের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভিস রোসিয়ারের সঙ্গে গত ২২ জুলাই ২০১৫ অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ মন্তব্য করেন তিনি।
জারিফ বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আঞ্চলিক দেশ বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পার¯পরিক সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে ইরান। এ ছাড়া, ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বিশেষ করে অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা বাড়াতেও ইরান আগ্রহী বলে জানান তিনি।
রোসিয়ার ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির পরমাণু সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে তেহরান-বার্ন স¤পর্ক উন্নয়ন করা উচিত।
ইরানের আটক অর্থের মোট পরিমাণ ২৯০০ কোটি ডলার
ইরানের আটক অর্থের পরিমাণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা নাকচ করে দিয়ে গত ২৬ জুলাই ২০১৫ ইরান বলেছে, এর মোট পরিমাণ দুই হাজার নয়শ’ কোটি ডলার। এ অর্থের বেশির ভাগই ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিবিআই-এর স¤পত্তি বলেও জানানো হয়েছে। এর আগে, বিদেশে আটক ইরানের এ অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার হতে পারে বলে কোনো কোনো মহল জল্পনা-কল্পনা করেছিল।
সিবিআই গভর্নর ওয়ালিউল্লাহ সেইফ ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, আটককৃত অর্থের মধ্যে ২৩০০ কোটি ডলারই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স¤পত্তি। তিনি আরো জানান, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর পরমাণু সমঝোতার ভিত্তিতে অর্থ অবমুক্ত করা হলে তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রির ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলারও আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অবমুক্ত হওয়া মাত্রই এ অর্থ প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সরকারকে দেয়া হবে।
ঐতিহাসিক পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমে ইরানের ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ অবমুক্ত হবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছিলেন। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বিবৃতি দেন সিবিআই প্রধান।
গান রচনার মাধ্যমে গাজাবাসীরা ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ইরানের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থনের জন্য ফিলিস্তিনি সংগীতশিল্পীদের একটি দল ইরানের জনগণকে তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে একটি গান রচনা করেছে।
‘ইরান তোমাকে ধন্যবাদ’ এই শিরোনামে গানটি গাজায় লেখা ও গাওয়া হয়েছে। গানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বসবাসরত অধিবাসীদের জন্য ইরানের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া, আল-কুদ্সকে মুক্ত করার জন্য মুসলিম উম্মাহর ঐক্য প্রতিষ্ঠার ওপরও গানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সাল থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজায় অবরোধ দিয়ে রেখেছে। এই অন্যায় অবরোধের ফলে গাজায় বেকারত্ব ও দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ইরানে সাদ্দামের রাসায়নিক হামলার কথা জানত ব্রিটেন
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জনগণ ও ইরাকের কুর্দি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দামের রাসায়নিক হামলার কথা জানত ব্রিটেন। কিন্তু ওই হামলা ঠেকাতে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয় নি ব্রিটিশ সরকার।
ব্রিটেনের অপ্রকাশিত গোপন দলিল থেকে এসব কথা জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, ইরাককে রাসায়নিক অস্ত্র বানানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দিয়েছিল ব্রিটেনের একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ইরাককে রাসায়নিক হামলা থেকে বিরত রাখার কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। ওই হামলায় হাজার হাজার ইরানী ও কুর্দি নাগরিক নিহত হয়েছিল। রাসায়নিক হামলার শিকার বহু মানুষ বেঁচে থাকলেও দীর্ঘ রোগ ভোগের মুখে পড়েছেন তারা।
‘ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন’ শীর্ষক ১৯৮৩ সালের ওই গোপন দলিলে ব্রিটেনের কূটনীতিকরা ইরাকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন, এতে আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানো যাবে না। উত্তর আয়ারল্যান্ডে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহারের বিষয়ে রাশিয়ার কড়া সমালোচনার কথা সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, ব্রিটিশ কো¤পানি ‘উইয়ার পাম্প’ ইরাকের সামারা রাসায়নিক কারখানায় কীটনাশক তৈরির নামে পা¤প সরবরাহ করেছিল সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই দলিলে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ার পর ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাদ্দাম সরকার ইরানের ওপর অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয় যা আট বছরের মুসলিম ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে পরিণত হয়।
যুদ্ধে ইরাককে সমর্থন দিয়েছিল আমেরিকা ও ব্রিটেনসহ তাদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মিত্ররা। এছাড়া, কোনো কোনো দেশ ইরাককে আর্থিক সমর্থন যোগানোর জন্য বিশেষ ঋণ পর্যন্ত দিয়েছিল এবং মার্কিন সরকার সামরিক সরঞ্জাম ও স্যাটেলাইট চিত্র দিয়ে ইরাককে সহায়তা করেছিল।
ইয়েমেনে কোনো ইরানী সামরিক পরামর্শক নেই
ইয়েমেনে কয়েকজন ইরানী সামরিক পরামর্শক নিহত হয়েছেন বলে যে খবর প্রচার করা হয়েছে গত ৪ জুলাই তারিখে তা নাকচ করে দিয়েছেন ইরানের অন্যতম উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যুদ্ধকবিলত আরব দেশ ইয়েমেনে কোনো ইরানী সামরিক পরামর্শক পাঠানো হয় নি।
তিনি বলেন, ইয়েমেনে শুধু ইরানের দূতাবাস রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি সেখানে প্রকাশ্যে সরকারি কাজকর্ম করে থাকে। গত ৪ জুলাই সৌদি আরবের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল আল-আরাবিয়া দাবি করে, ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশে সৌদি বিমান হামলায় ইরানের পাঁচজন সামরিক পরামর্শক ও প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। এ খবরের পর আমির আবদুল্লাহিয়ান ইয়েমেনে সামরিক পরামর্শক থাকার কথা নাকচ করেন।
ইয়েমেনে সৌদি আরবের অব্যাহত আগ্রাসন ও অবরোধের বিরোধিতা করে আরব ও আফ্রিকাবিষয়ক ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সৌদি আরবের এসব অপরাধের কারণে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হতে চলেছে। ইয়েমেনে সৌদি যুদ্ধাপরাধের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইরানে ২০ জার্মান কো¤পানির প্রতিনিধি ও অর্থমন্ত্রীর সফর
ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জার্মানির দশটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দশটি ছোট কো¤পানির প্রতিনিধিদল গত ১৯ জুলাই ২০১৫ তেহরান সফর করেন। ইরানের সঙ্গে ৬ জাতির পরমাণু আলোচনাশেষে একটি সমঝোতা অর্জিত হওয়ার পর ইরানী জ্বালানি উপমন্ত্রী হুসাইন ইসমাইলি এই খবর দেন। জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল সফরকারী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বিখ্যাত জার্মান কো¤পানি মার্সিডিস, সিমেন্স, বিএএসএফ, ভক্সওয়াগন, লিন্ডে ও জিআইজেড-এর প্রতিনিধিরা এই সফরে ছিলেন বলে ইসমাইলি জানান। জার্মান মন্ত্রী ইরানের পররাষ্ট্র, জ্বালানি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে জার্মানি ছিল ইসলামী এই দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য-অংশীদার।
ইরাক ও চীনের সাথে ইরানের কৃষিবিষয়ক সম্পর্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার ইরাক ও চীনের সাথে কৃষি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইতিপূর্বে স্বাক্ষরিত সমঝোতার বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের কৃষিমন্ত্রী জনাব মাহ্মূদ্ হুজ্জাতী জানান, ইরান ও ইরাক প্রাণী সম্পদের স্বাস্থোন্নয়ন সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারি মাসে (২০১৫) একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি কৃষিবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে সম্মত হয়।
সম্প্রতি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সফরে আগত ইরাকী কৃষিমন্ত্রী ফাল্লাহ্ হাসান আল-যাইদানের সাথে এক বৈঠকের পর ইরানী কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে দু’দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ ব্যাপারে ইরান স্বীয় অভিজ্ঞতা ইরাকি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদেরকে সরবরাহ করতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক পেশাদার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যাঁরা কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন; তাঁরা তাঁদের নতুন বৈজ্ঞানিক অর্জনসমূহে ইরাকি বিশেষজ্ঞদেরকে অংশীদার করতে পারেন।
ইরাকি কৃষিমন্ত্রী ফাল্লাহ্ হাসান আল-যাইদান বলেন, ইরাক নতুন সেচপদ্ধতি ব্যবহার করছে এবং মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তবে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা ইরানী প্রযুক্তিরও প্রয়োজন অনুভব করছি।
তিনি আরো বলেন, ইরাক গম ও বার্লি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইরানের সহযোগিতা নিতে চায়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইরাকের মোট গম উৎপাদনের শতকরা ৫০ ভাগ ও মোট বার্লি উৎপাদনের শতকরা ২০ ভাগই দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহে উৎপাদিত হয়ে থাকে, কিন্তু ঐ অঞ্চল বর্তমানে রণাঙ্গনে পরিণত হয়ে যাওয়ায় দেশের গম ও বার্লি উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে ইরাক সরকার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গম উৎপাদন করতে চাচ্ছে, কিন্তু সেখানে পানির ঘাটতি রয়েছে। তিনি ইরাকের ঐ অঞ্চলে সেচপদ্ধতির উন্নয়নের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাব দেন।
আলোচনার পর দু’পক্ষ চারাগাছের কোয়ারান্টাইন এবং কৃষি ক্ষেত্রের কীট ও রোগ মোকাবিলার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
এছাড়া চীনের ন্যাশন্যাল পিপল্স্ কংগ্রেস-এর কৃষি ও পল্লি অঞ্চলবিষয়ক কমিটির সভাপতি চেন জিয়াঙ্গু ইরানী কৃষিমন্ত্রীর সাথে এক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, কৃষির দিক থেকে ইরান একটি বিশাল দেশ, তাই ইরান চীনকে মূল্যবান কৃষি অভিজ্ঞতা সরবরাহ করে সাহায্য করতে পারে। তিনি ইরান ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কৃষি সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন।
ইরান থেকে চুরি হয়ে যাওয়া শিল্পকলা সামগ্রী ফেরত দিলো ইতালি
ইতিপূর্বে ১০ বছর ধরে চোরাচালানীদের দ্বারা ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান থেকে চুরি করে ইতালিতে নিয়ে যাওয়া ৩০টি শিল্পকলা সামগ্রী ঐ দেশের সরকার ইরানের কাছে ফেরত দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা র্ইনা-র দেয়া খবর অনুযায়ী, ইরানের একটি আইনি প্রতিনিধিদল ইতালির শিল্পকলা কর্তৃপক্ষের সাথে এক দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে জয়লাভ করে এবং ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মিলানের একটি আপিল আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত ৩১শে জুলাই (২০১৫) শিল্পকলা সামগ্রীগুলো ফেরত দেয়।
উক্ত শিল্পকলা সামগ্রীসমূহের মধ্যে ইরানের ইসলাম-পূর্ব ও ইসলাম-পরবর্তী উভয় যুগের সামগ্রী রয়েছে। ইতিপূর্বে ইতালি সরকারের শিল্পকলাবিষয়ক পুলিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উদ্ধারকৃত উক্ত শিল্পকলা সামগ্রীগুলো দেশটির রাজধানী রোমে অবস্থিত জাতীয় ন্যাশন্যাল মিউজিয়াম অব ওরিয়েন্টাল আর্টস্-এ অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ইতালিস্থ ইরান দূতাবাসের একজন প্রতিনিধির কাছে শিল্পকলা ফেরত দেয়া হয়। মিউজিয়ামের প্রশাসকের অফিসের কর্মকর্তা পাওলা পিয়াসেন্তিনী ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংস্থার উপপ্রধান মোহাম্মাদ হাসান ত্বালেবান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জনাব ত্বালেবান জানান যে, চুরি যাওয়া বা অবৈধভাবে রপ্তানিকৃত শিল্পকলা সামগ্রী সম্পর্কে ১৯৯৫ সালে রোমে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তি টঘওউজঙওঞ ঈড়হাবহঃরড়হ অনুযায়ী উক্ত শিল্পকলা সামগ্রীসমূহ ফেরত দেয়া হয়। উক্ত চুক্তিতে শিল্পকলা সামগ্রীর ক্রেতাদের জন্য সংশ্লিষ্ট দ্রব্যাদি বিক্রির আইনগত বৈধতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়াকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রোমের ইরান দূতাবাস যে সফল কর্মতৎপরতা চালিয়েছে সে জন্য জনাব ত্বালেবান দূতাবাস কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, উদ্ধারকৃত শিল্পকলা সামগ্রীসমূহ আপাতত রোমের ইরান দূতাবাসে থাকবে এবং আগামী সেপ্টেম্বরে (২০১৫) অনুষ্ঠিতব্য একটি অনুষ্ঠানে এগুলো ইরানের জাতীয় জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ইরানী আইনি প্রতিনিধি দলকে সহায়তাকারী রোমের ইরান দূতাবাসের আইনজীবী দুইলিও করতাস্সা জানান, চোরাচালানিরা ইসলাম-পূর্ব ও ইসলাম-পরবর্তী যুগের উক্ত শিল্পকলা সামগ্রীসমূহ ইরান থেকে ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর মোন্যা-য় নিয়ে যায় এবং ২০০৭ সালে ইতালির শিল্পকলাবিষয়ক পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে।
ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় কারিকুলামে কুর্দি ভাষা
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের পশ্চিম অংশের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে কুর্দি ভাষা ও সাহিত্যকে প্রধান বিষয় হিসেবে অধ্যয়ন করতে পারবে। এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কুর্দিস্তান বিশ্ববিদ্যালয় আগামী সেপ্টেম্বর থেকে যে শিক্ষা সেসন শুরু হতে যাচ্ছে তাতে কুর্দি ভাষা ও সাহিত্য প্রধান বিষয় হিসেবে অধ্যয়নের জন্য চল্লিশ জন ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি কুর্দিস্তান প্রদেশে তাঁর দু’দিনব্যাপী সফরের সমাপ্তি পর্যায়ে গত ২৫শে জুলাই (২০১৫) তারিখে প্রাদেশিক কেন্দ্র সানান্দাযে এক অনুষ্ঠানে এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তিনি আরো জানান যে, এখন থেকে সরকারি বার্তাসংস্থা র্ইনা কুর্দি ভাষায় সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
প্রেসিডেন্ট রুহানি কুর্দিভাষী জনগণকে সাহসী ও ভালো লোক বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সরকার সমগ্র ইরানে যেসব নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও পোশাকের সংরক্ষণ করাকে স্বীয় কর্তব্য বলে মনে করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে কুর্দিস্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফারদীন আখলাক্বিয়ান উল্লেখ করেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা সংস্থা ইতিমধ্যেই তার প্রকাশিত গাইড্-বুকে ছাত্রছাত্রীদেরকে কুর্দি ভাষা ও সাহিত্যকে প্রধান বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অনুমতি প্রদান করেছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, কুর্দি ভাষা ও সাহিত্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অন্যতম প্রধান বিষয় হিসেবে শিক্ষা দানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের কাজ ২০০২ সালে শুরু হয়।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের মোট জনসংখ্যা ৭ কোটি ৯৫ লক্ষ এবং এদের মধ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ (মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৬.৩ ভাগ) লোকের মাতৃভাষা হচ্ছে কুর্দি যাদের বেশির ভাগই পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তান, পশ্চিম আযারবাইজান, কেরমানশাহ ও ইলাম-এ বসবাস করে।
তুরস্কে ইরানী শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ইরানী শিল্পীদের শিল্পকর্মের একটি জমকালো প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। ‘পৃথিবী থেকে বেহেশ্ত’ শীর্ষক এ প্রদর্শনী গত ৭ই জুলাই (২০১৫) তারিখে শুরু হয় এবং এক মাসব্যাপী চলে।
ইস্তাম্বুলের কামাল রেসিত রেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করা হয়। তুরস্কে নিয়োজিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের কন্সাল জেনারেল জনাব মোহ্সেন মোরাতাযায়ীফার, তুরস্ক সরকারের বেশ কয়েক জন কর্মকর্তা, একদল শিল্পকর্ম সংগ্রাহক ও কয়েক জন গ্যালারির স্বত্বাধিকারী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ছয়টি বিভাগে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীতে প্রধানত ইরানী ক্যালিগ্রাফিভিত্তিক ও সাফাভী যুগের মটিফ্ প্রতিফলনকারী বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীর প্রধান ভাগে কাপড়ের ওপর অঙ্কিত কতগুলো অনন্য ও উদ্ভাবনীমূলক মিনিয়েচার চিত্র ও ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শন করা হয়। বায়সোনগে¦ারী ক্যালিগ্রাফি রীতির ওপরে ভিত্তি করে একদল ইরানী শিল্পী এ শিল্পকর্মগুলো তৈরি করেন।
উল্লেখ্য, স্বনামখ্যাত ইরানী ক্যালিগ্রাফি শিল্পী জা‘র্ফা বায়সোনগে¦ারী-র নামে ‘বায়সোনগে¦ারী ক্যালিগ্রাফি রীতি’র নামকরণ করা হয়েছে। তিনি ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দে মহাকবি ফেরদৌসির বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ‘শাহ্নামা’র ক্যালিগ্রাফিক পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন।
প্রদর্শনীতে এ ছাড়াও ফিরোযা পাথরের ও ইস্পাতের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প, ইরানী কার্পেট এবং কোরআনের আয়াত ও ফারসি কবিতার চিত্ররূপ প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনীর আরেকটি আকর্ষণীয় অংশ ছিল ইরানের ঐতিহাসিক শহর ইসফাহানের বিখ্যাত চেহেল সোতুন (চল্লিশ স্তম্ভ) প্রাসাদে অঙ্কিত চিত্রসমূহের অনুকরণে চুনা পাথরের মণ্ড দ্বারা তৈরি শিল্পকর্মসমূহ। প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মূল্যবান প্রস্তর খচিত ১৬৩ সেন্টিমিটার উঁচু একটি তামার পাত্র।
এ প্রদর্শনীতে আরো ছিল কাপড়ের চিত্র অঙ্কন, খোদাই চিত্র, এনামেলের কাজ ও দেয়াল চিত্র অঙ্কনের প্রদর্শনীমূলক ওয়ার্কশপ।
ইরান সফরের জন্য ৭ দেশের নাগরিকের ভিসার প্রয়োজন পড়বে না
গত ২৮ জুলাই আবনা জানিয়েছে, ইরান সফরের জন্য সাত দেশের নাগরিকের ভিসার প্রয়োজন পড়বে না। ইরানের পর্যটন শিল্পকে জোরদার করার লক্ষ্যে এসব দেশের নাগরিকের জন্য ভিসার বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে। এ সাতটি দেশ হলো তুরস্ক, লেবানন, আযারবাইজান, জর্জিয়া, বলিভিয়া, মিশর ও সিরিয়া।
নতুন ভিসা বিধি অনুযায়ী এ সাত দেশের নাগরিক ভিসা ছাড়া ইরানে ১৫ থেকে ৯০ দিন অবস্থান করতে পারবেন। এ ছাড়া, ভিসা ব্যবস্থা সহজ করার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে ইরান। নতুন এ ব্যবস্থায় বিশ্বের ৬০টি দেশের নাগরিকের জন্য ভিসা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা তুলে নেয়া হবে।
মুসলিম চিকিৎসকদের অষ্টম আন্তর্জাতিক সম্মেলন
আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থার উদ্যোগে এবং ইরানের কয়েকটি শহরের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় গত ২৯শে জুলাই থেকে ১০ই আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে মুসলিম চিকিৎসকদের অস্টম আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এতে মুসলিম বিশ্বের ৩০০ জন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, যিয়ারত, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহ পরিদর্শন ইত্যাদি কর্মসূচিতেও তারা অংশ নেন।
ইমামিয়া মেডিক্স ইন্টারন্যাশনাল, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মেডিকেল শিক্ষা বিভাগ, ইমাম রেযা (আ.)-এর মাযার পরিচালনা পরিষদ, মাশহাদ সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা এ সম্মেলন আয়োজনে আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থাকে সহযোগিতা করে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে মুসলিম চিকিৎসকরা এখানে সমবেত হয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে মত বিনিময় করেন।
চিকিৎসা খাতে ইরানের সাফল্যের কিছু নমুনা ইরানের বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে তেহরান ও মাশহাদে প্রদর্শিত হয়।
ইরানী রসায়নবিদের রজার টেলর পুরস্কার লাভ
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রসায়নবিদ মান্দানা আমীরী রসায়ন বিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রিটিশ কার্বন গ্রুপের রজার টেলর পুরস্কার লাভ করেছেন। মান্দানা আমীরী ইরানের মোহাক্বক্বেক্ব আরদেবিলী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা।
উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কেমিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ফিজিক্স ইনস্টিটিউট ও ইসলামিক ওয়ার্ল্ড সায়েন্স সাইটেশন ড্যাটাবেস (আইএসসি) কর্তৃক যৌথভাবে প্রতি বছর রজার টেলর পুরস্কার দেয়া হয়। কার্বনের ওপর মূল্যবান গবেষণা আঞ্জাম দানকারী ব্যক্তিদেরকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
মান্দানা আমীরী জানান যে, তিনি ইতিপূর্বে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে অনুষ্ঠিত অ্যাডভান্স্ড্ ন্যানো-স্ট্রাকচার কনফারেন্সে পুরস্কার লাভ করেন। তিনি এ পর্যন্ত আইএসআই-এ ৩২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন এবং ৬০টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া তিনি ২০১১ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশন্যাল ন্যানো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে ইয়ং রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
বিশ্বের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের তালিকায় ১৭৩ জন ইরানী বিজ্ঞানী
বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত শতকরা এক ভাগ শীর্ষ বিজ্ঞানীর তালিকায় ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ১৭৩ জন বিজ্ঞানগবেষক স্থান লাভ করেছেন। ইসলামিক ওয়ার্ল্ড সায়েন্স সাইটেশন ড্যাটাবেস (আইএস্সি)-র তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মাদ জাওয়াদ দেহ্ক্বানী গত ১৩ই জুলাই (২০১৫) তারিখে বার্তা সংস্থা আইএসএনএ-কে এ তথ্য জানান।
মোহাম্মাদ জাওয়াদ দেহ্ক্বানী উল্লেখ করেন যে, আইএসসি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং এভাবে উদ্ঘাটন করেছে যে, বিশ্বের বিজ্ঞানীদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত শতকরা এক ভাগ শীর্ষ বিজ্ঞানীর মধ্যে ১৭৩ জন ইরানী বিজ্ঞানী রয়েছেন। তিনি আরো জানান, আইএসসি ইরানের শীর্ষ বিজ্ঞানীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রস্তুত করেছে।
জনাব দেহ্ক্বানী আরো উল্লেখ করেন যে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে শতকরা ৫০.৮ ভাগ ফান্ডামেন্টাল সায়েন্সসমূহে কাজ করছেন এবং শতকরা ২১.৪ ভাগ চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে, শতকরা ২১ ভাগ টেকনিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিজ্ঞানসমূহে, শতকরা ৬.৪ ভাগ কৃষিবিষয়ক বিজ্ঞানসমূহে ও শতকরা ০.৬ ভাগ সামাজিক বিজ্ঞানসমূহে কাজ করছেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, শতকরা ৫০ ভাগ শীর্ষ বিজ্ঞানী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কর্মরত আছেন এবং শতকরা ২৩ ভাগ পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে, শতকরা ২১ ভাগ চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে, শতকরা ৩ ভাগ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্রে ও শতকরা ৩ ভাগ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে কর্মরত আছেন।
বিশ্বে গোলাপ পানি উৎপাদনে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে ইরান
ইরান প্রতিবছর ২৬ হাজার টন গোলাপ পানি উৎপাদন করে এবং গোলাপ পানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বর দেশে পরিণত হয়েছে ইরান। ইরানের উপ কৃষিমন্ত্রী মিত্রা মাজদজাদেহ গত ১ জুলাই এ কথা জানান। চলতি বছর ইরানের গোলাপ পানি উৎপাদনের পরিমাণ সাড়ে ২৭ হাজার টন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, লাল গোলাপ থেকে গোলাপ পানি উৎপাদনকারী প্রথম দেশ ইরান। লাল গোলাপকে ইরান থেকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সেখান থেকে এ ফুল ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে বলে ইউরোপে এ ফুল ‘দামেস্ক গোলাপ’ নামে পরিচিত।
সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২ থেকে ৩ হাজার মিটার উচ্চতায় লাল গোলাপ সবচেয়ে ভালো জন্মায় বলেও জানান তিনি। সমগ্র ইরানে লাল গোলাপ জন্মালেও প্রধানত এ ফুলের চাষ হয় ইরানের ইসফাহান, কেরমান, কেরমানশাহ, র্ফাস এবং পূর্ব আযারবাইজান প্রদেশে। ইরানের উৎপাদিত গোলাপের শুকনো পাপড়ি, কুঁড়ি এবং গোলাপ থেকে তৈরি গোলাপ পানি রপ্তানি করা হয়।
গোলাপ পানি উৎপাদনে বিশ্বে সবচেয়ে খ্যাতিমান দেশ ইরান। এ ছাড়া, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মরক্কো, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানের গোলাপ পানি উৎপাদনের খ্যাতি রয়েছে।
ইরানী গবেষকদের দস্তা বিশোধনের উন্নততম পদ্ধতি উদ্ভাবন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একদল বিজ্ঞানগবেষক দস্তা বিশোধনের উন্নততম পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন যার সাহায্যে দস্তাকে বিশোধন করে এতে মিশ্রিত অন্যান্য ধাতব দূরীভূত করে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ দস্তা সরবরাহ করা সম্ভবপর হবে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ওস্তানে র্মাকাযী (মধ্য প্রদেশ)-এর বিজ্ঞান পার্কের বিজ্ঞানগবেষকগণ এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ প্রকল্পের পরিচালক জনাব আলী আযীমী জানান যে, তাঁরা খনিজ দস্তা ও শিল্পবর্জ্য থেকে অত্যন্ত উন্নত মানের বিশুদ্ধ দস্তা বহির্গত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এর ফলে, বছরে শিল্পবর্জ্যে যে বিশ হাজার টন দস্তা যুক্ত হয়ে দূষণ ঘটাচ্ছে তা রোধ করা সম্ভব হবে এবং শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ বিশুদ্ধ দস্তা পাওয়া যাবে যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত দস্তাকে সর্বোচ্চ শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পর্যন্ত বিশোধন করা সম্ভব হতো, তবে বর্তমানে আর এ ধরনের দস্তা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না।
তিনি আরো জানান যে, এ ধরনের উন্নত মানের দস্তা উৎপাদনের লক্ষ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে ইতিমধ্যেই দু’টি কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রথমে কারখানা দু’টি দুই টন দস্তার উন্নততম বিশোধনের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করবে।
ইরানী গবেষকগণ মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম হাত তৈরি করেছেন
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের একদল গবেষক এমন এক ধরনের কৃত্রিম হাত তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন যা মানবদেহে সংযোজনের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি স্বাভাবিক হাতের ন্যায়ই স্বীয় মস্তিষ্কের দ্বারা তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। ইরানের ইউনিভার্সিটি অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন্-এর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকগণ এ কৃত্রিম হাতটি তৈরি করেছেন।
উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র এ কৃত্রিম হাত তৈরি করে। কেন্দ্রের পরিচালক জনাব র্ফাহাদ্ তাবাতাবায়ী জানান, এ কেন্দ্র বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করে- যার মধ্যে ব্রেন ওয়েভের দ্বারা পরিচালিত কৃত্রিম হাত তৈরি অন্যতম। তিনি বলেন, যারা নানা দুর্ঘটনায় হাত হারিয়েছে এমন লোকদেরকে সাহায্য করার জন্য এ কৃত্রিম হাত তৈরি করা হয়েছে। তিনি এ কৃত্রিম হাতটি কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার হাতটি দ্বারা কোনো কাজ করার ইচ্ছা করে তখন সে এ বিষয়ে চিন্তা করতে শুরু করে, এর ফলে তার মস্তিষ্কে ব্রেন ওয়েব তৈরি হয় এবং তা তার কৃত্রিম হাতে স্থানান্তরিত হয়, তখন কৃত্রিম হাতটি সংশ্লিষ্ট কাজটি আঞ্জাম দিতে সক্ষম হয়।
জনাব ফারহাদ তাবাতাবায়ী বলেন, এ কৃত্রিম হাতের সিস্টেমটি স্মার্ট টেক্নোলোজির ওপর ভিত্তি করে ডিজাইন করা হয়েছে- যা ব্রেন ওয়েভ গ্রহণ করতে সক্ষম। এতে একটি ব্রেন ওয়েভ প্রসেসর রয়েছে; প্রসেসরটি প্রাপ্ত ব্রেন ওয়েভকে প্রসেস করে তা হাতটির ড্রাইভিং মোটরে পাঠিয়ে দেয় এবং তখন মোটরটি কৃত্রিম হাতটিকে কাজ করতে সাহায্য করে।
ইরানের তেলবাহী সুপার ট্যাংকারের বহর বিশ্বে সবচেয়ে বড়
ইরানের অপরিশোধিত তেলবাহী সুপার ট্যাংকারের বহর বিশ্বে সবচেয়ে বড়। এ বহরে ৪২টি সর্ববৃহৎ তেলবাহী জাহাজ বা ভিএলসিসি রয়েছে এবং এসব জাহাজের প্রতিটি ২০ লাখ ব্যারেল তেল বহন করতে পারে।
ন্যাশনাল ইরানিয়ান ট্যাংকার কো¤পানি বা এনআইটিসি’র বাণিজ্যবিষয়ক পরিচালক নাসরুল্লাহ সারদাশি গত ৩ জুলাই এ কথা জানান। তিনি বলেন, বিশ্বের আর কোনো কো¤পানির এতো বেশি অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ বা ভিএলসিসি নেই।
তেলবাহী ট্যাংকারের বিষয়ে অভিজ্ঞ লন্ডনভিত্তিক এক বিশ্লেষক দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, তিনি মনে করেন, বিশ্বে সর্ববৃহৎ তেলবাহী সুপার ট্যাংকার বহরের মালিক ইরানের এনআইটিসি। এ দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরানী কো¤পানির প্রতিদ্বন্দ্বী জাপানের মিৎসুই ও.এস.কে লাইন্স ও নিপ্পন ইউসেন কাইশা এবং বেলজিয়ামের ইউরোন্যাভ এনভির কাছে অল্প কয়েকটি সুপার ট্যাংকার আছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এনআইটিসি নিজের উন্নয়ন তৎপরতা বন্ধ রাখে নি। এটি আরো ভিএলসিসি নির্মাণের জন্য চীনা কো¤পানিকে অর্ডার দিয়েছে এবং গত আড়াই বছরে ২০ সুপার ট্যাংকার এনআইটিসিকে দেয়া হয়েছে।
ইরান এবার চালু করল ‘গাদির-২’ রাডার ব্যবস্থা
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি গত ৪ জুলাই ২০১৫ দীর্ঘপাল্লার রাডারব্যবস্থা ‘গাদির-২’ চালু করেছে। ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নগরী আহভাজে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
গত বছরের জুন মাসে প্রথম ‘গাদির’ রাডারব্যবস্থা চালু করা হয়। এ রাডার ব্যবস্থার পাল্লা ১১০০ কিলোমিটার বা ৬৮০ মাইলের বেশি। অত্যাধুনিক এ রাডারব্যবস্থা আকাশ পথের শত্রুদের শনাক্ত করতে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এ ছাড়া, স্টিল্থ বিমান, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং লো অরবিট বা নি¤œকক্ষপথের কৃত্রিম উপগ্রহ শনাক্ত করতে পারে এ ব্যবস্থা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। দেশটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা তৈরিতেও সাফল্য পেয়েছে। তবে সামরিক শক্তি অর্জনের বিষয়ে ইরান বলেছে, দেশটির সেনাবাহিনী অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না। কারণ, সামরিক শক্তি অর্জনের প্রধান লক্ষ্য হলো আত্মরক্ষা।
ইরানের স্বর্ণ উৎপাদন ২ বছরে ৭ মেট্রিক টনে পৌঁছবে
ইরানের আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা) গত ২৪ জুলাই জানিয়েছে যে, ইরানের স্বর্ণ উৎপাদন ২০১৭ সালের মধ্যে সাত মেট্রিক টনে পৌঁছবে। এতে বিশ্বের স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে চলে যাবে ইরান।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় স্বর্ণ খনি ইরানের জাশুরান থেকেই এককভাবে ৬ মেট্রিক টন স্বর্ণ উৎপাদন করা হবে। এ ছাড়া, পূর্ব আযারবাইজান প্রদেশে ৭০০ কেজি এবং নিশাবুরের আরগাশ থেকে আরো ৩০০ কেজি স্বর্ণ উৎপাদন হবে।
ইরানের পশ্চিম আযারবাইজান প্রদেশের তাকাব শহরের কাছে অবস্থিত জাশুরান স্বর্ণ খনির উৎপাদন শুরু হয় ২০১৪ সালে। এ খনির প্রতি বছর ৩ মেট্রিক টন স্বর্ণ, ২.৫ টন রৌপ্য এবং ১ টন পারদ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে এ খনির উৎপাদন দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে, এ খনিতে উত্তোলনযোগ্য ৫৫ টন স্বর্ণের মজুদ রয়েছে। তবে আরো খনন চালিয়ে এ খনি থেকে ১১০ টন পর্যন্ত স্বর্ণ উৎপাদন করা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরানের শিল্প, খনিজ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত ১৫টি স্বর্ণখনি শনাক্ত করেছে এবং এসব খনি থেকে ৩২০ মেট্রিক টন স্বর্ণ উৎপাদন করা যাবে।
বিশ্ব রোবো-কাপ শিরোপা প্রতিযোগিতায় ইরানের বিরাট সাফল্য
সম্প্রতি চীনের হেফেই শহরে অনুষ্ঠিত ১৯তম বিশ্ব রোবো-কাপ শিরোপা প্রতিযোগিতা ২০১৫-তে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ইরানের আমীর কাবীর পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি বিভাগে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করেছে।
এ প্রতিযোগিতায় আমীর কাবীর পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ধার-রোবোট সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রথম স্থান দখল করে। এছাড়া টেকনিক্যাল সেকশনের প্রতিযোগিতায় ইরানী রোবোট দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। অন্যদিকে ইরানী রোবোট টীম মানবিক রোবোট সেকশনের প্রতিযোগিতায় জার্মানিকে পরাজিত করে তৃতীয় স্থান দখল করে।
ইরানী টীমসমূহের পরিচালক জনাব সোরূশ সাদেক-নেযাদ বলেন, প্রতিযোগিতাটি খুবই উন্নততর পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণ করার জন্য ইরানী টীমসমূহ যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল।
উল্লেখ্য, গত ১৯শে জুলাই (২০১৫) চীনের হেফেই শহরে পাঁচ দিনব্যাপী ১৯তম বিশ্ব রোবো-কাপ শিরোপা প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং এতে বিশ্বের ৪৭টি দেশ থেকে দুই হাজারেরও বেশি রোবোটিক্স্ পেশাজীবী ও এ বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তিগণ অংশগ্রহণ করেন।
এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী রেবোটসমূহ কোনো রকমের বাইরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং সেগুলোকে নিজে নিজেই হাঁটা, দৌড়ানো, লাথি মারা, ভারসাম্য বজায় রাখা, দর্শন ক্ষমতা ও স্বীয় অবস্থান সংক্রান্ত ধারণার প্রোগ্রাম দিয়ে তৈরি করা হয়।
উল্লেখ্য যে, সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে জাপানি গবেষকগণ রোবো-কাপ প্রবর্তন করেন- যার উদ্দেশ্য ছিল রোবোটিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের লক্ষ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতায় রোবোটের ব্যবহার। এ উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় যে, ২০৫০ সালের মধ্যে এমন একটি রোবোট ফুটবল টীম তৈরি করা হবে যা ঐ বছর বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় মানুষ টীমের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে। এ প্রকল্পটি অভাবিতভাবে জাপানের বাইরেও গবেষকদের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং এ কারণে তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে রোবো-কাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য অনুরোধ জানান। এর ভিত্তিতে ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর বিশ্ব রোবো-কাপ শিরোপা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এ প্রতিযোগিতার উপযোগী রোবোট তৈরি করার ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে
ইর্ন্টান্যাশন্যাল্ ফিজিক্স্ অলিম্পিয়াডে ইরানী ছাত্রদের পাঁচটি স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক লাভ
গত ১২ই জুলাই (২০১৫) তারিখে সমাপ্ত ৪৬তম ইন্টারন্যাশন্যাল ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ছাত্র প্রতিযোগীরা পাঁচটি স্বর্ণ ও রৌপ্যপদক লাভ করেছে। ভারতের হোমি ভব সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন-এ অনুষ্ঠিত এ অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৮৬টি দেশ থেকে চার শতাধিক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে।
এ প্রতিযোগিতায় জনাব আহমাদ র্শীযাদ ও জনাব আইয়ূব এসমাঈলীপূর-এর নেতৃত্বাধীন ইরানী টীমের সদস্য ছাত্ররা হলো মোহাম্মাদ আলী খাদেম, মোহাম্মাদ হোসেন দারেস্তানী, আলী শীরাযী, মোহাম্মাদ জাওয়াদ তাবাতাবায়ী ও আলী ফাত্হী। এদের মধ্যে মোহাম্মাদ হোসেন দারেস্তানী ও আলী শীরাযী স্বর্ণপদক এবং মোহাম্মাদ জাওয়াদ তাবাতাবায়ী ও আলী ফাত্হী রৌপ্যপদক লাভ করে।