সংবাদ বিচিত্রা (বিদেশি সংবাদ)
পোস্ট হয়েছে: জুন ১৯, ২০১৬
ইরানে ৩৭তম ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত
ইরানে গত ১ এপ্রিল পালিত হয়েছে ৩৭তম ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর এই দিনে অনুষ্ঠিত গণভোটে ইরানের বেশিরভাগ মানুষ ইসলামি প্রজাতন্ত্রী শাসনব্যবস্থার পক্ষে রায় দিয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে মার্কিন সমর্থিত পাহলভি রাজতন্ত্রের পতন হয়। সেই সঙ্গে ইরানের মাটি থেকে আড়াই হাজার বছরের রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা উৎখাত হয়ে যায়।
১৯৭৯ সালের ৩০ ও ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গণভোটে শতকরা ৯৮.২ ভাগ ভোটার ইসলামি শাসনব্যবস্থার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছিল। বিপ্লবের সময় ইরানি জনগণ শাহ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিত। এরকম একটি স্লোগান ছিল ‘মুক্তি, স্বাধীনতা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্র।’ বিপ্লব বিজয়ের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রূপকার ইমাম খোমেইনী (রহ.)-এর দৃঢ় সিদ্ধান্তেই মূলত ওই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
গণভোটে জনগণের এ দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটে। তখন থেকে প্রতি বছর ১ এপ্রিল ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে।
এ দিবস উপলক্ষে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র দিবস হচ্ছে ইসলামি মূল্যবোধের উপলব্ধির দিবস। তিনি আরো বলেন, বিপ্লব বিজয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় ইমাম খোমেইনী (রহ.) ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে গণভোটে ছেড়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
প্রেসিডেটে রুহানির পাকিস্তান সফর
ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর দেশের স¤পর্ককে কৌশলগত বলে অভিহিত করেছেন। দু’দিনের পাকিস্তান সফরে ইসলামাবাদের উদ্দেশে তেহরান ত্যাগের প্রাক্কালে গত ২৫ মার্চ ২০১৬ এ মন্তব্য করেন তিনি।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছলে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান।
পরমাণু সমঝোতার জের ধরে ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রুহানির এ সফর অনুষ্ঠিত হয়। এ কারণে এ সফরের ফলে প্রতিবেশী দু’টি দেশের স¤পর্কে আরো অনেক শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. রুহানি তেহরানের মেহরাবাদ বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তান ও ইরানের রয়েছে ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অভিন্নতা এবং এ বিষয়টি তেহরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দু’দিনের সফরে প্রেসিডেন্ট রুহানি তাঁর পাকিস্তানি সমকক্ষ মামনুন হুসাইনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব সাক্ষাতে অন্যান্য বিষয়ের মতো থেমে থাকা ইরান-পাকিস্তান গ্যাস পাইপলাইনের কাজ আবার শুরু করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ওয়াশিংটন ওই প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও তেহরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছে ইরান।
পাকিস্তানে বিদ্যুৎ রপ্তানি ৪০ শতাংশ বাড়াবে ইরান
গত ৩০ মার্চ ২০১৬ ইরানের জ্বালানিমন্ত্রী হামিদ চিতচিয়ান বলেন, পাকিস্তানে বিদ্যুৎ রপ্তানি ৪০ শতাংশ বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছে তেহরান। ইসলামাবাদ ইরান থেকে আরো বিদ্যুৎ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর পরিকল্পিত তেহরান সফরের সময়ে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে।
অবশ্য ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরের সময় এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তি সই হয়েছে। চিতচিয়ান এবং পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ গত ২৬ মার্চ এ চুক্তি সই করেন। এ সময় পাকিস্তানে ৩,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে দুই মন্ত্রী আলোচনা করেন।
ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশটি থেকে ১০ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রায় চার শতাংশ কেনে পাকিস্তান। গত ১৩ বছর যাবৎ পাকিস্তানে বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে ইরান। দুই দেশ এখন এর পরিমাণ ৪০ শতাংশ বাড়াতে চায়।
ইসলামাবাদ সফরকালে গত ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, বর্তমানে ইরান পাকিস্তানে ১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করে এবং একে বাড়িয়ে ৩,০০০ মেগাওয়াটে নিতে চায় ইরান।
ইরান-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণে সম্মত হয়েছে ইরান এবং পাকিস্তান। এ লক্ষ্যে দেশ দু’টি নিজেদের সক্ষমতাকে ব্যবহার করবে।
গত ২৭ মার্চ ২০১৬ পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুররেজা রাহমানি ফাযলি এবং পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের মধ্যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া, ইরান-পাকিস্তান যৌথ বাণিজ্য কমিটির ২০তম বৈঠক তেহরানে অনুষ্ঠিত হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ইসহাক দার আশা প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং ব্যাংকিং খাতের আইনগত বাধা অপসারণের পরিপ্রেক্ষিতে তেহরান ও ইসলামাবাদ বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা দ্রুততর করবে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তেহরানের বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে পাকিস্তান সফর করেন রাহমানি ফাযলি।
ছয় জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে ইরানের প্রশংসা করলেন আমানো
ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র প্রধান ইউকিয়া আমানো এবং ছয় জাতিগোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা ও প্রতিনিধিরা ইরানের সঙ্গে স¤পাদিত পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। গত ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত, আইএইএ’র প্রধান ইউকিয়া আমানো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
আইএইএ’র প্রধান ইউকিয়া আমানো এ বৈঠকে বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এবং ইরান ইস্যুতে এই সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, চূড়ান্ত পরমাণু সমঝোতা অনুযায়ী যেসব দায়িত্ব পালন করা উচিত তার চেয়ে আরো বেশি দায়িত্ব পালন করেছে ইরান। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সই করা চূড়ান্ত পরমাণু চুক্তি পালনে তেহরান অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমানো বলেন, আইএইএ’র সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তির পাশাপাশি এনপিটি’র বাড়তি প্রটোকলও বাস্তবায়ন করছে ইরান এবং এতে ইরানের পরমাণু স্থাপনা বিনা ঘোষণায় পরিদর্শন করার অনুমতি দেয়া আছে বলে তিনি জানান ।
ইরানের সাথে রাশিয়ান কোম্পানি সমূহের সম্প্রসারণ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি উঠে যাবার পর থেকে রাশিয়ার বিভিন্ন কোম্পানি ইরানের সাথে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স্-এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর বিভিন্ন রাশিয়ান কোম্পানি পুনরায় ইরানে প্রবেশের লক্ষ্যে কাতারবদ্ধ হয়েছে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ান বিমান নির্মাণকারী কোম্পানি সুখোই ইরানের পরিবহন বাজারে তার সুপারজেট এয়ারলাইনার বিক্রি করতে চায়, অন্যদিকে দেশটির আভ্তোভায্ কোম্পানি ইরানে তার লাদা গাড়ির সংযোজন কারখানা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করেছে।
উক্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কোম্পানি গয্প্রোম্ ও লুকোইল্ পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ইরানের একটি গ্যাস তরলীকরণ (এলএনজি) প্রকল্পে ও একটি তেল ক্ষেত্রে পূঁজি বিনিয়োগের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, তেলক্ষেত্রে সেবা প্রদানকারী অন্যতম রাশিয়ান কোম্পানি দ্য ইউরেশিয়া ড্রিলিং কোম্পানি এবং মস্কোর পূর্বে অবস্থিত রাশিয়ার অন্যতম মুসলিম জনঅধ্যুষিত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাতারিস্তানের দ্বিতীয় স্তরের রাশিয়ান কোম্পানি তাত্নেফ্ত্-এর জন্যও ইরানে ব্যবসায়ের ভালো সুযোগ লাভের সম্ভাবনা আছে।
ইউরেশিয়া ইরানকে বাণিজ্যের চেয়েও বেশি কিছু দিতে চাচ্ছে
মধ্য এশীয় মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশ কাযাকিস্তানের বিনিয়োগ ও উন্নয়ন মন্ত্রী আস্সেত্ ইস্সেকেশেভ্ বলেন যে, তাঁর দেশ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ইউরেশীয় বাজার করায়ত্ত করার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। ইরান ও কাযাকিস্তানের মধ্যে নতুন বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর নেতৃত্বে ২৬০ সদস্যের একটি বিরাট বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিনিধিদলের সাম্প্রতিক ইরান সফরকালে তিনি তেহরানে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
উভয় দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণ দুই দেশের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগিতার প্রচুর সম্ভাব্য খাতের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে কাযাকিস্তান ও ইরানের অর্থনীতি সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত।
বার্তা সংস্থা ইএফ্ই জানায়, কাযাকিস্তানের এজেন্সী র্ফ ফরেন ডাইরেক্ট ইন্ভেস্টমেন্ট্-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট আল্মাস্ আইদারোভ্ বলেন, আমরা এ কারণে এখানে এসেছি যে, আমরা আমাদের দেশের কোম্পানিসমূহের জন্য সুযোগ-সুবিধা পেতে চাই।
কাযাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের ইরান সফরকালে দুই দেশের কর্মকর্তাগণ পরস্পরের অর্থনীতিকে সহায়তা করার লক্ষ্যে উভয় দেশের জন্য ইউরেশীয় বাজার উন্মুক্তকরণ সম্পর্কে আলোচনা ও মত বিনিময় করেন।
জনাব আইদারোভ্ বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার অবসান সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃশ্যপট তৈরি করে দিয়েছে।
কাযাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনাকালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী মোহাম্মাদ রেযা নে‘মাত্যাদে বলেন, কাস্পিয়ান সাগর, পারস্য উপসাগর ও ওমান সাগরের মাঝখানে ইরানের অবস্থান আঞ্চলিক সংযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বের অধিকারী।
পারস্পরিক আলোচনাকালে কাযাকিস্তানের কর্মকর্তাগণ বলেন যে, কাযাক পূঁজি বিনিয়োগকারিগণ তাঁদের দেশের গম গুদামজাত করার লক্ষ্যে ইরানের বার্ন্দা শাহীদ রাজাই-তে কয়েকটি সাইলো নির্মাণে খুবই আগ্রহীÑ যেখান থেকে এ খাদ্যশস্য জাহাযযোগে অন্যান্য দেশে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিভিন্ন আফ্রিকান দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন করবে
দেশের নিজস্ব প্রয়োজন পূরণ ও রপ্তানি বাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে খাদ্যশস্য, বিশেষ করে গমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান বিভিন্ন আফ্রিকান দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন করার চিন্তা-ভাবনা করছে। এ লক্ষ্যে ইরানের বিভিন্ন কোম্পানি আফ্রিকান দেশ কেনিয়া, উগান্ডা ও তান্জানিয়ায় কৃষিজমি লিজ নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কেনিয়াস্থ রাষ্ট্রদূত জনাব হাদী ফারাজ্ভান্দ্ জানান, ইতিমধ্যেই কম পক্ষে দশটি ইরানি কোম্পানি পূর্ব আফ্রিকার দেশসমূহে ধান, ভুট্টা ও গম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, যে সব কোম্পানি দেশের বাইরে বিরাট আয়তনের কৃষিযোগ্য ভূমি লিজ নেবে এবং তাতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগ করে ইরানে রপ্তানির জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করবে ইরান সেসব কোম্পানিকে কৃষিকাজে কারিগরী সহায়তা দেবে।
জনাব ফারাজ্ভান্দ্ জানান, উক্ত কোম্পানিগুলো এছাড়াও সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের স্থানীয় বাজারে সরবরাহের ও ইরানে রপ্তানির লক্ষ্যে ঐ অঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা গড়ে তুলতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এ উদ্যোগের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে আফ্রিকা শৃঙ্গ অঞ্চলের দেশসমূহের সাথে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অনুকূলে যে বাণিজ্যিক ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনা।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে পূর্ব আফ্রিকান দেশসমূহের সংস্থা দ্য ইস্ট আফ্রিকান কমিউনিটি (ইএসি) প্রধানত চা, কফি ও গোশ্তের ন্যায় বিভিন্ন পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াই ইরানে রপ্তানি করে থাকে এবং ইরান থেকে তেলজাত দ্রব্যাদি, যন্ত্রপাতি ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামাদি আমদানি করে। স্থানীয় বিশেষজ্ঞগণ বলেন, এ অঞ্চলের দেশসমূহের উচিত চলতি বছরের শুরু থেকেই ইরানে আরো বেশি পরিমাণে প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য সামগ্রী রপ্তানির চেষ্টা করা।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ জানান যে, বিদেশের কৃষিজমিতে ইরান যেসব পণ্য উৎপাদন করতে চায় তার মধ্যে তেলবীজ এবং পশু পালনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি অন্যতম। এ প্রসঙ্গে তাঁরা আরো জানান যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দক্ষিণ আমেরিকান দেশ ব্রাজিলে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষিদ্রব্যাদি চাষ করার লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইরান উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেনে নেট্ওয়ার্ক সম্প্রসারণ করবে
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের সড়ক ও নগর পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আব্বাস আহ্মাদ অখুন্দী ঘোষণা করেছেন, ইরান সরকার কেবল দেশের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অংশে নয়, বরং সারা দেশে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চলাচলের উপযোগী রেলওয়ে নেট্ওয়ার্ক চালু করবে।
জনাব অখুন্দী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রেডিও (ওজওই)-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে তেহরান-কোম-ইসফাহান রুটে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে চীনের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এবং সেই সাথে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর বাস্তবায়ন মনিটরিং করার জন্য ইতালির সাথেও চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালু করার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে তেহরান-মাশহাদ রুটের প্রকল্প। এছাড়াও সারা দেশে উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন চালু করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অন্যান্য প্রকল্প প্রণয়নের জন্য ইতালির সাথে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
ইরান সরকারের সড়ক ও নগর পরিকল্পনা মন্ত্রী দেশের রেলওয়ে সেক্টরের তিনটি অক্ষের কথা উল্লেখ করেন, তা হচ্ছে : পণ্য পরিবহনের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে দেশের রেলপথের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, অন্যান্য দেশের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তেহরান ও অন্যান্য বড় শহরের উপশহরসমূহে যাত্রীবাহী ট্রেনের উন্নয়ন এবং আন্তঃনগর ট্রেনের সম্প্রসারণ।
ইরান ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের শিল্প ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ওয়ালী উল্লাহ্ আফ্খামী রাদ্ ইরান ও তুরস্কের মধ্যে ইরানি রিয়াল ও তুরস্কের লিরার মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিনিময়ের সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। গত ৪ এপ্রিল (২০১৬) তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন।
জনাব ওয়ালী উল্লাহ্ আফ্খামী রাদ্ বলেন, যদিও দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের পথে বিরাজমান বাধা হিসেবে আর্থিক ও ব্যাঙ্কিং বিধিনিষেধ রয়েছে, তবে ইরান ও তুরস্ক তাদের নিজ নিজ দেশের মুদ্রা ব্যবহার করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে পারে।
তিনি বলেন, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল এবং বিভিন্ন সময় দুই দেশ পারস্পরিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ক্রমান্বয়ে উঠে যাওয়ার পাশাপাশি তুরস্কের পুঁজি বিনিয়োগকারিগণ ইরানে আরো বেশি পুঁজি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।
জেনেটিক বিজ্ঞানে ইরানের অগ্রগতি
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জেনেটিক্স্ সোসাইটি-এর সভাপতি মাহ্মূদ তাভাল্লাঈ বলেন যে, ২০ মার্চ ২০১৬ তারিখে সমাপ্ত বিগত ইরানি বছরে ইরান জেনেটিক্স্ বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছেÑ যার মধ্যে মার্কেটিং-এর জন্য দু’টি জেনেটিক্স্ ওষুধের অথোরাইযেশন এবং বিটি কটোন্-এর উন্মোচন অন্যতম।
মাহ্মূদ তাভাল্লাঈ বার্তাসংস্থা মের্হে নিউজ-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানের জেনেটিক্স্ সোসাইটি ৬৫ বছরের ইতিহাসে গত বছর সর্বাধিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তিনি বলেন, গত ইরানি বছরে বিশেষ করে প্লান্ট্ জেনেটিক্স্, এনিম্যাল জেনেটিক্স্, এমনকি হিউম্যান জেনেটিক্সে ইরান যথেষ্ট সক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান যে, বর্তমানে ইরানে জেনেটিক্স্-এর ক্ষেত্রে ৬০টি বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, গত বছর ২৪ থেকে ২৬ মে (২০১৫) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক ও নবম জাতীয় বায়োটেক্নোলজির পাশাপাশি ইরানের প্রথম জেনেটিক্যালি মডিফাইড্ বিটি কটন্ উন্মোচন করা হয়Ñ যা ইরানের জেনেটিক্স্ সোসাইটির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। তিনি জানান, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ইরানে তুলার উৎপাদন পাঁচ থেকে সাত গুণ বৃদ্ধি পাবে।
ক্যান্সার নিরূপণে ইরানি গবেষকদের সাফল্য
ইরানি গবেষকগণ ক্যান্সার নিরূপণে গোল্ড ন্যানোপার্টিক্ল্স্ ব্যবহারে বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছেন। তাঁরা ল্যাবরেটরি স্যাম্প্ল্সমূহে কেলরিমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্যান্সারের সেল্ নিরূপণ করেন।
নিউ সায়েন্সেস অ্যান্ড টেক্নোলজিস্ ইউটি-এর প্রকল্প পরিচালক সাইয়্যেদ মোরতাযা হোসেইনী বলেন, এ গবেষণার লক্ষ্য ছিল রোগীর রক্তে ছড়িয়ে থাকা ক্যান্সার সেল গোল্ড ন্যানোপার্টিক্ল্স্-এর কেলরিমেট্রিক প্রপার্টিস্-এর সাহায্যে দ্রুত ও সহজে কার্যকরভাবে নিরূপণের জন্য একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করা।
তিনি এর কার্য ক্ষমতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, আলাদা করা গোল্ড পার্টিক্ল্স্-কে যদি পার্টিক্ল্-এর ডায়ামিটারের চেয়ে দূরে রাখা হয় তাহলে তা একটি লাল রং তৈরি করে, কিন্তু যদি আরো নিকটে রাখা হয় তাহলে ঐ লাল রংটি পার্পল্ রঙে পরিণত হয়ে যাবে। ক্যার্ন্সা সেল্-এর উপস্থিতিতে ন্যানোপার্টিক্ল্স্-এর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ক্যার্ন্সা সেল্-এর উপস্থিতিতে ফাংশনালাইয্ড্ গোল্ড ন্যানোপার্টিক্ল্স্ যোগ করা হলে মুক্ত ন্যানোপার্টিক্ল্সমূহ ঐ পরিবেশে থেকে যাবে এবং তার ফলে এক ধরনের লাল রং দেখা যাবে।
তিনি আরো বলেন, রক্তে যদি ক্যান্সারের সেল না থাকে তাহলে ফাংশনালাইয্ড্ গোল্ড ন্যানোপার্টিক্ল্স্ যোগ করার পরে এক ধরনের পার্পল্ রং দেখা যাবে। তিনি ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির সাথে এর পার্থক্য তথা উদ্ভাবিত পদ্ধতির সুবিধা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, গোল্ড ন্যানোপার্টিক্ল্স্-এর ব্যবহারের ফলে আর এ কাজে ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি ও সুদক্ষ বিশেষজ্ঞ ব্যবহারের প্রয়োজন থাকবে না। তেমনি এটা ক্যান্সার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সময়ের ও ব্যয়ের সাশ্রয় ঘটাবে। তিনি বলেন, এ পদ্ধতি যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক সেল্-এর ভেতর থেকে ক্যার্ন্সা সেল্ নির্ণয় নিশ্চিত করবে।
উল্লেখ্য, এ গবেষণার ফলাফল অ্যানালাইটিকা চিমিকা অ্যাক্টা-এর ৯০৪ নং ভলিউমে (২০১৬) ৯২-৯৭ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে।
ইরানে প্রথম থ্রি-ডি প্রিন্টার-এর বাণিজ্যিক ব্যবহার
তাব্রীয্ ইসলামিক আর্ট ইউনিভার্সিটির সফ্ট্ওর্য়্যা টেক্নোলজি ডেভেলপমেন্ট্ সেন্টারের পরিচালক ইবরাহীম ঈমানী এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্মিত প্রথম থ্রি-ডি প্রির্ন্টা-এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি প্রচারমাধ্যমসমূহের প্রতিনিধিদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, এ কেন্দ্রটি গত মে মাসে (২০১৫) কাজ শুরু করে এবং ইতিমধ্যেই বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, এ কেন্দ্র কর্তৃক তৈরি প্রথম পণ্য হচ্ছে থ্রি-ডি প্রিন্টার এবং তার বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উৎপাদন। আর ইরানে এটাই এ পণ্যের প্রথম বাণিজ্যিক উৎপাদন। তিনি আরো জানান যে, এ থ্রি-ডি পিন্টার প্রোগ্রামটি ফারসি ভাষার মুদ্রণের কাজেও ব্যবহার করা যাবে।
জনাব ঈমানী আরো উল্লেখ করেন যে, অন্যান্য বিদেশি থ্রি-ডি প্রিন্টারের তুলনায় অধিকতর পূর্ণতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানে তৈরি এ থ্রি-ডি প্রিন্টার মূল্যের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। তাছাড়া এটি শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা যাবে। এর মধ্যে রয়েছে অলঙ্কার ও ভাস্কর্যের ডিজাইন্ তৈরি এবং সেই সাথে মেডিকেল, ডেন্টাল, মেকানিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার।
নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাঁচালেন ইরানি শিক্ষক
আত্মোৎসর্গের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজের জীবনের বিনিময়ে তিন শিক্ষার্থীর প্রাণ রক্ষা করেছেন একজন ইরানি শিক্ষক। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান-বালুচিস্তান প্রদেশের নুকজু গ্রামে অবস্থিত শহীদ রাহিমি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন হামিদরেজা গাঙ্গোযেহি।
গত ৩ এপ্রিল ২০১৬ প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে তিনি দেখতে পান স্কুলের একটি কক্ষের মধ্যে তিন শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ওই কক্ষের ছাদ ধসে পড়তে পারে দেখে তিনি আরেক শিক্ষককে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে যান। শিক্ষার্থীদের কক্ষটি থেকে বের করে দেয়ার পরপরই ছাদ ধসে পড়লে ঘটনাস্থলেই হামিদরেজার মৃত্যু হয়। উদ্ধার তৎপরতায় অংশগ্রহণকারী দ্বিতীয় শিক্ষকের পা ভেঙে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি গত ৫ এপ্রিল এক টুইট বার্তায় নিহত শিক্ষকের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি লিখেন, ‘সাহসিকতা ও আত্মোৎসর্গের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শিক্ষক হামিদরেজা গাঙ্গোযেহির নাম ও স্মৃতি আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবে চিরকাল।’
আন্তর্জাতিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ইরানি শিশু কিশোরদের সাফল্য
সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত পরিবেশবিষয়ক ষোড়শ আন্তর্জাতিক শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দু’জন ইরানি কিশোর-কিশোরী বিরাট সাফল্যের অধিকারী হয়েছে। মিলাদ সাদেক্বী (১৬) ও মাশা কাযেমিনী (১১) এ দুই ইরানি কিশোর-কিশোরী যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে। জাপান কোয়ালিটি অ্যাস্যুর্যান্স্ অর্গানাইযেশন (জেকিউএ) ও ইউনিসেফ্-এর পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত সংগঠন দি ইন্টারন্যাশন্যাল সার্টিফিকেশন নেটওয়ার্ক (আইকিউনেট্)-এর যৌথ উদ্যোগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এ প্রতিযোগিতায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শীরাযের ১১ বছর বয়সী মাশা কাযেমিনী তার চিত্রে একটি গমের ক্ষেতের ভিতর দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার এবং স্থানীয় রঙ-বেরঙের পোশাক পরিহিতা একজন কিসানীর সেখানে কাজ করার দৃশ্য প্রতিফলিত করেছে। ছবিতে উক্ত কিস্থানী এক আঁটি সোনালি গম বুকে জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখা যায়। অন্যদিকে ইরানের আর্দেবিলের ১৫ বছর বয়স্ক কিশোর মিলাদ সাদেক্বী তার আঁকা চিত্রে গাছ কেটে ফেলার ভয়ঙ্কর শব্দ প্রতিফলিত করে তার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়া সে যে গাছটি কাটা হচ্ছে বলে তার অঙ্কিত চিত্রে দেখিয়েছে তার পাশে আরেকটি গাছের ডালে একজন লোককে এ ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত ও মলিন মুখে বসে থাকতে দেখিয়েছে।
এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নেগিন্ সাদেক্বীয়ান্ নামক ইরানের ইস্ফাহানের ১১ বছর বয়সী কিশোরীর বিশেষ সম্মাননা লাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে তার অঙ্কিত ছবিতে একটি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত একটি গ্রামের চিত্রায়ণ করেছে যেখানে মাঠের ভিতরে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় পোশাক পরিহিতা মেয়েরা খেলা করছে এবং তাদের মাথার ওপর পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে।
উল্লেখ্য, উক্ত প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে শিশু-কিশোরদের আঁকা মোট ১৮ হাজার ২৯৯টি চিত্র পাঠানো হয়। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শিশু-কিশোরদের আঁকা চিত্রের সংখ্যা ছিল ২৫টি।
উল্লেখ্য, গত বছর অনুষ্ঠিত একই প্রতিযোগিতায় ইরানের র্কেমানের ১০ বছর বযসী বালিকা ফাতেমাহ্ মাহাল্লাতী প্রথম পুরস্কার লাভ করে।
ইরানি গ্রান্ডমাস্টারের এফ্এস্টি খেতাব লাভ
ইরানি গ্রান্ডমাস্টার মোরতাযা মাহ্জুব দাবা খেলার অত্যন্ত সম্মানিত খেতাব এফ্আইডিএ সিনিয়র ট্র্ইেনার (এফ্এস্টি) লাভ করেছেন। উল্লেখ্য, দাবা খেলার ক্ষেত্রে এফএসটি হচ্ছে এমন একটি অতি সম্মানিত খেতাব যা এ পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি লাভ করেছেন। ইতিপূর্বে তেহরানের আর্মেনিয় দাবা খেলোয়াড় হ্যামলেট্ তুমানিয়ান এবং ইরানি আন্তর্জাতিক দাবা মাস্টার খসরু হারান্দী বিশ্ব দাবা ফেডারেশন (এফ্আইডিই)-তে এ মর্যাদার অধিকারী হন।
র্মোতাযা মাহ্জুব্ হলেন তৃতীয় ইরানি দাবা কোচ যিনি এফ্আইডিই সিনিয়র প্রশিক্ষকের তালিকায় স্থান লাভ করলেন। ৩৬ বছর বয়স্ক এ ইরানি কোচ ইতিপূর্বে ইরানের জুনিয়র ও ক্যাডেট্ ন্যাশনাল টিমের নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং বর্তমানে তিনি হচ্ছেন তরুণতম এফ্এস্টি।
দাবা খেলার গ্রান্ড মাস্টার ইরানি নাগরিক মোরতাযা মাহ্জুব ১৯৮০ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতিপূর্বেও বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। তিনি ২০০৯ সালের ১৩ আগস্টে যে রেকর্ড করেন তাতে ১৮ ঘণ্টায় ৫০০ গেমে অংশগ্রহণ করেন যার মধ্যে ৩৯৭ গেমে জয়লাভ করেন, ৯০টি ড্র হয় এবং মাত্র ১৩টিতে হেরে যান।
ইরানি চলচ্চিত্রের এন্আইএফ্এফ্ গোল্ডেন ক্যামেরা লাভ
ভারতে অনুষ্ঠিত ৮ম নাশিক ইন্টারন্যাশন্যাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (এন্আইএফ্এফ্)-এ অংশগ্রহণ করে ইরানি চলচ্চিত্র ‘দো’ (দুই) গোল্ডেন ক্যামেরা পুরস্কার লাভ করেছে। যথাক্রমে সোহেইলা গোলেস্তানী ও র্পাভীয্ পারাস্তুয়ী কর্তৃক পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘দো’ চলচ্চিত্রটি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক কর্তৃক পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান গোল্ডেন ক্যামেরা লাভ করে।
‘দো’ হচ্ছে বাহ্মানের বাড়িতে কর্মরত একজন কর্মজীবী নারীর স্মৃতিচারণমূলক চলচ্চিত্র, যে বহু বছর ইউরোপে কাটানোর পর স্বীয় বাড়িঘরে ফিরে আসে। এতে দেখা যায় যে, সে তার অতীত পুরোপুরি বিস্মৃত হয়েছে এবং এখন সে তার বাড়িটি বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে।
এ চলচ্চিত্রটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার লাভ করেছে। এসব উৎসবের মধ্যে এস্তোনিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯তম টলিন ব্লাক নাইট্স্ ফিল্ম্ ফেস্টিভ্যাল ও ডাব্লিনে অনুষ্ঠিত আইরিশ সিল্ক রোড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অন্যতম। এ চলচ্চিত্রটি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আর্ট অ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স সিনেমা গ্রুপ-এর সিনেমা-হলগুলোতে প্রদর্শিত হয়।
ইতালির আন্তর্জাতিক উৎসবে ইরানি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত
ইরানি এনিমেশন চলচ্চিত্র ‘অ্যালার্ম’ ইতালির অন্যতম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘কার্টুন্স্ অন্ দ্য বে’-তে প্রদর্শিত হয়। ‘কার্টুন্স্ অন্ দ্য বে’ হচ্ছে ইতালির অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
জালাল না‘ঈমী কর্তৃক পরিচালিত ও ন্যাশন্যাল মিডিয়া সেন্টার কর্তৃক প্রযোজিত এনিমেশন চলচ্চিত্র ‘অ্যালার্ম’ ‘কার্টুন্স্ অন্ দ্য বে’ শীর্ষক ১৯তম ইন্টারন্যাশন্যাল ফেস্টিভ্যাল অব টিভি এনিমেশন অ্যান্ড ক্রস-মিডিয়া-য় প্রদর্শিত হবে।
মাদকদ্রব্যের নেশা ও সংশ্লিষ্ট পরিবারসমূহের ওপর তার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামের লক্ষ্যে নিবেদিত ‘অ্যালার্ম’ চলচ্চিত্রের গল্পে দেখানো হয় যে, মাদক দ্রব্যে নেশাগ্রস্ত একজন লোক তার শিশুপুত্রকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা করে। সে যত বারই মাদক দ্রব্য গ্রহণ করে বা সিগারেট টানে তত বারই তার শরীরে কতগুলো দাগ পড়ে যায়। সে যত বেশি মাদক দ্রব্য গ্রহণ করে তত বেশি তার শরীরে দাগ পড়ে। ফলে তার সারা শরীরই দাগে ভরে যায় এবং সে পুরোপুরিভাবে শরীরে দাগপড়া একজন লোকে পরিণত হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ‘কার্টুন্স্ অন্ দ্য বে’ হচ্ছে এনিমেশন ফিল্ম, ক্রস-মিডিয়া, ভিডিও-গেম ও শিশুদের টেলিভিশন কর্মসূচির ক্ষেত্রে নিবেদিত অন্যতম প্রধান আন্তর্জাতিক উৎসব। ১৯তম ‘কার্টুন্স্ অন্ দ্য বে’ উৎসব ৭ থেকে ৯ এপ্রিল (২০১৬) ইতালির ভেনিসে অনুষ্ঠিত হয়।