শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

শেইখ নিমর কে? কেন তাঁকে মৃত্যু দণ্ড দেয়া হলো ?

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৬, ২০১৬ 

news-image

সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম আয়াতুল্লাহ শেইখ নিমর বাকের আন-নিমরের মৃত্যুদণ্ড গত ২ জানুয়ারি শনিবার কার্যকর করা হয়েছে। এরপর থেকেই শেইখ নিমর সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে কৌতুল সৃষ্টি হয়েছে। সবাই জানতে চান কেমন ছিলেন শেইখ নিমর? কেন তাঁকে হত্যা করা হলো?

জন্ম:

হিজরি ১৩৭৯ সাল মোতাবেক ইংরেজি ১৯৫৯ অথবা ১৯৬০ সালে সৌদি আরবের তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের কাতিফের আওয়ামিয়াহ শহরে শেইখ নিমর বাকের আন-নিমর জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন:

সৌদি আরবে নিজ শহরে শিক্ষালাভের পর ধর্মীয় ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৮৯ সালে তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান আসেন। দীর্ঘ দশ বছর তিনি তেহরানের হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষালাভ করেন। একপর্যায়ে তিনি  হজরত কয়েম (আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বও পালন করেন।

এরপর শেইখ নিমর ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশি গবেষণার জন্য সিরিয়ায় যান। সেখানে হজরত যেইনাব (সা.আ.) ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্রে ধর্ম সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা করেন। তিনি মুজতাহিদ পর্যায়ে উন্নীত হন।

নিজ শহরে প্রত্যাবর্তন:

ইরান ও সিরিয়ায় উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে নিজ শহরে ফিরে যান শেইখ নিমর। সেখানে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। তরুণদের ধর্ম শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে নানা উদ্যোগ নেন। তিনি আওয়ামিয়াহ শহরে ইসলামি কেন্দ্র ‘আল-ইমামুল কয়েম (আ.)’ প্রতিষ্ঠা করেন। শেখ নিমর আন-নিমর ছিলেন স্পষ্টবাদী।

নির্ভয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। মানুষের অধিকার রক্ষার কথা বলায় ২০১১ সালের আগেও তাঁকে দুই বার আটক করা হয়। সে সময় তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।

ইসলামি গণজাগরণ:

২০১১ সালে কাতিফে ইসলামি গণজাগরণ শুরু হয়। তাতে সমর্থন দেন শেইখ নিমর। এর পরের বছরই ২০১২ সালের ৮ জুলাই শেখ নিমর গ্রেপ্তার হন। তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায় সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী।

এ সময় তার পায়ে চার বার গুলি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর গুলিবিদ্ধ শেইখ নিমরকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়া হয় নি। গ্রেপ্তারের পর কাতিফে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তাতে কয়েক জন নিহত হন।

মৃত্যুর সময় নিমরের বয়স ছিল পঞ্চাশের ঘরে। তিনি রাজতান্ত্রিক সরকারের নানা অপকর্মের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু কখনোই অস্ত্র হাতে নেওয়ার জন্য উসকানি  দেন নি। সৌদি আরবের তরুণদের মধ্যে তার সমর্থন রয়েছে। সমর্থন রয়েছে বাহরাইনেও। ইরানের জনগণও শেইখ নিমরকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে সৌদি আরবের রাজকীয় আদালতের মাধ্যমে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তার পরিবার জানিয়েছে, সৌদি আরবে ‘বৈদেশিক অনধিকারচর্চা’ বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রের অভিযোগেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তার সমর্থকরা বলেছেন, শেইখ নিমর শুধু শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষেই ছিলেন। এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ পরিহার করেছিলেন।

২০১১ সালে গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শেইখ নিমর বলেছিলেন, তিনি অস্ত্রের চেয়ে জোরালো ভাষায় প্রতিবাদ করাকেই পছন্দ করেন। বুলেটের চেয়েও তা বেশি শক্তিশালী। কারণ অস্ত্র ব্যবহার করা হলে কর্তৃপক্ষই বেশি লাভবান হবে।

জুলুমের বিরুদ্ধে বক্তব্য:

শেইখ নিমর বলতেন, জুলুম জুলুমই। আপনি শিয়াই হন আর সুন্নিই হন, এ ক্ষেত্রে কোন তফাৎ নেই। মজলুমদের সহযোগিতা করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। শিয়া-সুন্নি বলে কোন কথা নেই। জালেমদের সঙ্গে কোন বন্ধুত্ব নেই। জালেমদের আমরা প্রতিহত করব।

আল্লাহ জালেমদের ভালবাসেন না। তাহলে আমরা কিভাবে ভালোবাসব? আমাদের পক্ষ থেকে মজলুমদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। জালেম শাসককে প্রতিহত করতে হবে।

মৃত্যু সম্পর্কে শেইখ নিমর:

আয়াতুল্লাহ নিমর বলতেন, আমরা কেন মৃত্যুকে ভয় করবো? মৃত্যুকে ভয় করা আমাদের উচিত নয়  বরং এটা আমাদের ঈমানকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আমাদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। আমরা কেন ইমাম হোসেন (আ.)’র আত্মা আর রক্ত থেকে উৎসাহ গ্রহণ করি না?

শেখ নিমরের বিরুদ্ধে সৌদি রাজার সমালোচনা করার অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া, তার বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বিপণ্ন করা, সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়া এবং রাজনৈতিক বন্দিদের পক্ষে কথা বলারও অভিযোগ আনা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না। এ ছাড়া, শেখ নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে এবং অনেক বিশ্ব নেতা এর নিন্দা জানিয়েছেন।

সূত্র: আইআরআইবি