মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

শালীনতার মধ্যেও শ্রেষ্ঠ বিনোদন ইরানি চলচ্চিত্র

পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭ 

news-image

ইসমাঈল সোহেল: এ দেশের সংস্কৃতির ওপর হলিউড, বলিউডের চলচ্চিত্র আগ্রাসন অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। রুচিহীন পোশাক ও যৌন সুড়সুড়িপূর্ণ উপস্থাপনা যখন এ দেশের চলচ্চিত্রকে কুরে কুরে খাচ্ছে, যখন ঐতিহ্য তথা শালীনতা হারানোর পথে দেশীয় চলচ্চিত্র, এ দেশের মানুষ যখন হারিয়ে ফেলছে নিজেদের ঐতিহ্যের ভাবধারার সেই মৌলিকত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র সেখানে সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ ও দর্শকপ্রিয় হওয়া বর্তমানে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। যখন উল্টোপথে হাঁটছে এ দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য যেখানে বিলীয়মান সেখানে সুস্থধারার চলচ্চিত্রও যে মানুষের মধ্যে দাগ কাটতে পারে তার দৃষ্টান্ত খুবই নগণ্য। সেই অনন্য দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করেছে ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব। শালীনতার মধ্যে চলচ্চিত্র যেসব শ্রেণীর মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ বিনোদন হতে পারে ইরানি চলচ্চিত্র তারই প্রমাণ রেখেছে। চলচ্চিত্রের প্রতি বিশেষ করে সুস্থধারার চলচ্চিত্রের প্রতি এ দেশের মানুষের আকর্ষণ এখনো হারিয়ে যায়নি এটাই প্রমাণ করেছে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৩৮তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।

গত শনিবার জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভায়েজি দেহনাভি ও প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন।

প্রদর্শনী উৎসবের প্রথম দিনের মতোই দ্বিতীয় দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। তবে প্রথম দিনের উপস্থিতি গতকালের চেয়ে বেশি ছিল বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ৭৫০ আসনের মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের দ্বারা। তাদের ভাষায় প্রথম দিনে সিনেমাপ্রেমীদের নজিরবিহীন উপস্থিতি ছিল।

সিনেমার জন্য এত বিশাল উপস্থিতি একটা বিষয় প্রমাণ করে যে, শালীনতার মধ্যেও বিনোদনের উৎস হিসেবে চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠত্ব অক্ষত রাখা যায়। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজনের উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। রুচিসম্মত উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রদর্শিত সিনেমার গল্পও আকর্ষণ করে সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের। সারা বিশ্বে ইরানি চলচ্চিত্রর শুধু নয়নাভিরাম নিমার্ণেই নয়; বরং এর কাহিনীও শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। এ চলচ্চিত্রের আছে স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার। জরিপেও ইরানি সিরিয়াল শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তাই তো বিদেশীদের কাছেও এর গুরুত্ব রয়েছে। ভাষা না বুঝে শুধু সাবটাইটেল পড়ে সিনেমাকে ভালোভাবে উপভোগ করেছেন এক জাপানি নাগরিক। তার বক্তব্য হলো বাংলা বুঝি না, কিন্তু ইংরেজি সাব-টাইটেল দেখেই ভালো লাগছে। পুরো ছবিটাকে উপভোগ করেছি।

গত শনিবার শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী এ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল-বিকেল শুরু হওয়া প্রদর্শনীতে রয়েছে বিনামূল্যে ছবি দেখার সুযোগ। সকালের প্রদর্শনী বেলা ১১টায় এবং বিকেলেরটা শুরু হয় ৩টায়। প্রতিদিন থাকছে একটি বাংলায় ডাবিংকৃত এবং একটি সাব-টাইটেলযুক্ত ছবি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সদস্য মো: সাইদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমা ও ভারতীয় ছবিগুলোতে ছোট ছোট পোশাক ও যৌন সুড়সুড়ি থাকে যাতে করে যুবকদের আকৃষ্ট করা যায়। কিন্তু শালীনতার মধ্য থেকেও যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় এ প্রদর্শনীতে তা প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি বলেন, প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছেন। তাদের চোখের পলক পর্যন্ত পড়েনি। অনেকে জানতে চেয়েছেন সময় আরো বৃদ্ধি করা যায় কিনা ?

ছবির মান নিয়ে তিনি বলেন, দুই একটা ছবি আছে একটু পুরনো তবে এর প্রিন্টিং খুব একটা খারাপ নয়। বাংলায় ডাবিং হওয়ায় দেশীয় দর্শকরাও অনেক বিনোদন পাবে বলে তিনি জানান।

মূলত, সুস্থধারার চলচ্চিত্রও মানুষের মনে দাগ কাটতে পারে। ছবি যদি ভালো হয় এবং চরিত্রগুলোকে যদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় তবেই চলচ্চিত্র তার আকর্ষণ মানুষের মনে আরো শতগুণে বৃদ্ধি করতে পারে। সূত্র: নয়াদিগন্ত।