শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
নিজেদের মধ্যকার সকল মতপার্থক্য ভুলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাকিদ দিলেন বিশিষ্ট জনেরা। শনিবার রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ‘মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শিক্ষায় ইসলামি ঐক্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তরা এ আহ্বান জানান।
ঢাকাস্থ ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে আমরা ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয়েছি যখন ইসলামি বিশ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের মুখাপেক্ষী। এমন পরিস্থিতিতে এ ধরনের আলোচনার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যকার ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বাধাগুলোকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। এই প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে আরো বেশি সচেতন করার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে একক ইসলামি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেভাবে রাসূলে খোদা হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর উম্মতের সকল মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ দেখিয়ে গেছেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি বলেন, মহান আল্লাহ রাসুলকে মানবজাতির জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরণ করেছিলেন। তিনি আমাদেরকে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা নবীর সেই শিক্ষা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। নিজেরা হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছি। অনৈক্যের কারণে মুসলমানরা আজ সারা বিশ্বে নির্যাতিত হচ্ছে। তাই এই মুহুর্তে আমাদের রাসুলের দেখিয়ে যাওয়া পথ অনুসরণের আর কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান সৈয়দ মুসা হুসাইনি বলেন, রাসূল (সা.)-এর শিক্ষায় ইসলামি ঐক্য সম্পর্কে আরো বেশি জানতে হলে প্রথমইে এই বিষয়টির অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা প্রয়োজন যে, রাসূল (সা.) পৃথিবীতে যে সমাজে জন্ম নিয়েছিলেন তার বৈশিষ্ট্য কী ছিল এবং তাঁর নবুওয়াত লাভের পর কত উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যম-িত সমাজ উপহার দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আল্লাহর সকল নবী ও রাসুলের দাওয়াতের প্রধান বিষয় ছিল তাওহিদ বা একত্ববাদ এবং ঐক্য ও সহমর্মিতা। যিনি ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী তিনিও তাঁর নবুওয়াতের ২৩ বছরে ইসলামি উম্মাহর মধ্যকার সকল মতবিরোধ দূর করে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন এবং পবিত্র কুরআনের শিক্ষায় তাঁদেরকে প্রশিক্ষিত করেছেন।
ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান আরো বলেন, ইসলামের শিক্ষায় যেসব যেসব ইবাদত-বন্দেগি সমষ্টিগতভাবে পালন করা হয় এবং যা ঐক্য ও সহমর্মিতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে সেগুলোকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, জামায়াতে নামায, জুমআর নামায, ঈদের নামায ও সবার বহুল প্রত্যাশিত সামষ্টিক ইবাদত হজ। কেবল হজের অনুষ্ঠানের কথাই উল্লেখ করলে বলতে হয়, যেখানে লক্ষ লক্ষ আল্লাহর দীনের অনুসারী কি চমৎকারভাবে একই পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে হজ পালন করে। এই অনুষ্ঠানে রং, বর্ণ, জাতি, ভাষা, গোত্র, সম্পদ, ভৌগোলিক অবস্থান, সমাজের শ্রেণিসহ যেকোন বৈশিষ্ট্য একাকার হয়ে যায়। সবাই একই পোশাক পরে ‘লাব্বাইক’ বলতে বলতে এক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি আল-মুস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ প্রতিনিধি ড. আমীর আনসারী বলেন, রাসুল (সা.) যখন নবুওয়্যত লাভ করেন তখন আরব উপদ্বীপে জাহেলিয়াতের সংস্কতি ছিল। আর জাহেলিয়াতের সংস্কৃতির ভিত্তি ছিল, জোর জবরদস্তি, তলোয়ার, রক্তপান, মূর্তিপূজা, প্রতিহিংসা পরায়নতা, সাম্প্রদায়িতকতা, বংশগত মূল্যায়ন, কন্যা শিশু থাকাটা লজ্জা ও অপমানের হওয়া,লেখা পড়ার প্রচলন না থাকা, শ্রেণী বিভাগ এবং দুর্নীতি ও অবিচারের উপর ভিত্তি করে জাহেলিয়াতের সংস্কৃতির গড়ে উঠেছিল। জাতিগত পক্ষপাত, গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে সমাজকে পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছিল।
অথচ রাসুলের যার জন্মের আশির্বাদে পৃথিবীর রুপ বদলে যায়, সকল শেরক একত্ববাদে পরিণত হয়। মূর্তিপূজার পরিবর্তে খোদার আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিসমাপ্তী ঘটে সকল অনৈক্য ও কলহ বিবাদের। বহু বছরের বিদ্বেষ ও শত্রুতা পরিণত হয় ইসলামী ভ্রতৃত্বে । আরব ও অনারবরা বন্দু হয়ে যায়, কালো ও সাদা এবং আনসার ও মোহাজের সবাই ভাইভাই হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান বলেন, হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সবচেয়ে পবিত্র ও সম্মানিত ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেন। এমন পরিবারে তিনি পালিত হন যার সদস্যগণ ছিলেন সম্ভ্রান্ত। পণ্ডিত ও মনীষিগণ তাঁর চরিত্র মাধুর্য সম্পর্কে যত কথাই বলেছেন, আর দার্শনিকগণ তাঁকে নিয়ে যতই চিন্তা করেছেন, তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। তিনি ছিলেন অতুলনীয় ব্যক্তি ও সৎ গুণাবলির আধার। তিনি মক্কা থেকে হিযরতকারী মুহাজির ও মদীনার আনসারদের মাঝে ভাই পাতিয়ে দিয়ে ঐক্যের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বনানী ডিওএইচএস মসজিদের খতিব জনাব মাওলানা ফাহিমুর রহমান। অনুষ্ঠানে আলোচনার ফাঁকে হামদ ও নাত পরিবেশ করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইরানি ইন্টারন্যাশনার স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল আব্দুল কুদ্দুস বাদশাহ।