মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ইরানের ত্রাণ সাহায্য

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধদের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মানবিক ত্রাণবাহী তৃতীয় কার্গো বিমান বাংলাদেশে পৌঁছেছে। গত ১১ অক্টোবর বিকালে ৩০ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ইরানের একটি কার্গো ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
ইরান দূতাবাসের প্রথম কাউন্সিলর এবং মিশনের ডেপুটি প্রধান নেয়ামতুল্লাহ জাদেহ এসব ত্রাণসামগ্রী চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। এসময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শেখ শফিউল আজম ও রেড ক্রিসেন্টের চট্টগ্রাম ইউনিটের সচিব আব্দুল জব্বার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ইরানের প্রথম ত্রাণবাহী কার্গো বিমান বাংলাদেশে পৌঁছে। ইরানের উপ পররাষ্ট্রন্ত্রী ইব্রাহিম রহিমপুরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। প্রথম দফায় পাঠানো ৪০ টন ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ছিল তাঁবু, কম্বল, চা, চিনি, তেল, কাপড়চোপড়, ওষুধসহ ৯ ধরনের পণ্য সামগ্রী।
এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ৩০ টন ত্রাণের দ্বিতীয় কার্গো বিমান বাংলাদেশে পৌঁছায়। এ দফায় পাঠানো ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল ৩০০ তাঁবু, ৫ হাজার ৫০০ কম্বল, ১০ হাজার টিনজাত খাবার এবং এক টন ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম।
ইরানের রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মোর্তেজা সালিমি এর আগে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মোট ১৫০ টন সাহায্য পাঠানো হবে।
ত্রাণবাহী কার্গো বিমানে রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন বলে ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান আলী আসগর পেইভান্দি জানান। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ইরান অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের সাথে ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ডা. সাইয়্যেদ হাদি আইয়াজির সাক্ষাৎ
গত ১২ অক্টোবর ২০১৭ বাংলাদেশ সফররত ইরানের সামাজিক বিষয়ক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ডা. সাইয়্যেদ হাদি আইয়াজি এবং ইরান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. আলী আসগর পায়ভান্দির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সচিবালয়ের দফতরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এসময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলামসহ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মানবতার এই দৃষ্টান্তের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ইরান খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সহায়তা দিচ্ছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় ইরান সরকার অস্থায়ীভাবে একটি রেফারেল হাসপাতাল ও পাঁচটি মোবাইল ক্লিনিকের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এজন্য সেই এলাকায় ভূমি বরাদ্দে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
ইরানের রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান শরাণার্থী ক্যা¤প ও তার আশেপাশে পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিপর্যয় ও সংক্রামক রোগের বিস্তার যেন না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসায় ইরানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব আরো জোরদার হবে। তিনি টেকনাফ ও উখিয়ায় হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনে দ্রুত জমি বরাদ্দের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এসময় মন্ত্রী বাংলাদেশে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ইরানের আরো শিক্ষার্থী পাঠানো এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ আমদানিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।