শুক্রবার, ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

রাবিতে ইতিহাস,সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন

পোস্ট হয়েছে: ডিসেম্বর ২২, ২০১৯ 

news-image

গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর শুক্র ও শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন অডিটরিয়ামে ইতিহাস,সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক দুইদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান।বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী এম জাকারিয়া ও প্রফেসর আনন্দ কুমার শাহা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান বলেন, ভালো মানুষ হিসেবে মানবিক গুণাবলীর উন্মেষ ঘটানোর জন্য সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, একটি দেশ ও জাতির জন্য উন্নয়ন জরুরি। তবে বস্তুগত উন্নয়নের সাথে সাথে যদি নৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন না হয় তাহলে ‍সে উন্নয়ন ঐ জাতির কোন কাজে আসবে না। আজকে যে বিষয়ের উপর এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর। এসব বিষয় মানুষকে পরশীলিত করে।এজন ছাত্র ফাইন আর্টস বা চারুকলায় পড়ে। অর্থাৎ শাব্দিক অর্থে বলতে গেলে সুন্দর কলায় পড়ে। কিন্তু বিষয়টির উপর লেখাপড়ার পর তার আচার, ব্যবহার যদি সুন্দর না হয়, ভাল না হয় তাহলে তার এই চারুকলায় পড়ালেখা কোন কাজে আসবে না। তেমনি কেউ যদি মিউজিকে ভর্তি হলো যে বিষয়টি ভালবাসা ও মহব্বতে পরিপূর্ণ সেই বিষয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্রটির হৃদয়ে যদি মহব্বত, ভালোবাসা না থাকে তাহলেও তার এই লেখাপড়া কোন কাজে আসবে না।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণকারী মানুষদেরকে অনেক সময় আলোকিত মানুষ বলে থাকি।আলোকিত মানুষ মানে আলোর অধিকারী যারা।আলো মানে স্বচ্ছ এবং যা সরল পথে চলে।অথচ এমন অনেক আলোকিত মানুষ রয়েছে যারা সব সময় বাঁকা পথে চলে। সরলতা তার মধ্যে নেই বললেই চলে। সুতরাং এমন মানুষকে আলোকিত মানুষ বলা যায় না। অর্থাৎ একটি দেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়ন হলেই বলা যাবে না যে ঐ দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। সার্বিক উন্নয়ন হতে হলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় উন্নয়নের সাথে সাথে মানবিক উন্নয়নও হতে হবে। তিনি এই জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে  আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর ড. সাইয়্যেদ হাসান সেহাত আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানবিক বিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মানবিক বিদ্যার মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে সংজ্ঞায়িত করে, নিজের সচেতনতায় পৌঁছায়, নিজের দুর্বলতাগুলোকে গ্রহণ করে ও পুনঃপ্রকৌশলের মাধ্যমে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিকবিজ্ঞান বিভাগ- যেখানে সংস্কৃতি ও সংস্কৃতির ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেয়া হয় তা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- যেখানে কেবল পণ্যের রি-ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষা দেয়া হয় তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


তিনি বলেন, সংস্কৃতি হলো সমুদ্রের পানিতে মাছ ধরার জালের মতো। যা জালের ভিতরের মাছকে সমুদ্রের বাইরের মাছ থেকে আলাদা করে। সংস্কৃতি হলো সমাজের আঠার মতো। সংস্কৃতি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস, আমাদের জীবনের সফ্্টওয়্যার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও মানবিক বিদ্যা বিভাগ সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ ও সাংস্কৃতিক মানুষ গড়ার দায়িত্ব পালন করে। অতএব, আমরা যদিও আধুনিক দুনিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা, সংস্কৃতিবিহীন মানুষ ত্রুটিপূর্ণ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে পণ্যটিই তৈরি হয় তার পেছনে একটি সংস্কৃতি রয়েছে। এজন্যই একটি দেশের হস্তশিল্প অন্যদেশের হস্তশিল্পের চেয়ে ভিন্ন। সুতরাং সংস্কৃতির ভূমিকা সমস্ত মানব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ভিত্তি। অপর দিকে প্রতিটি দেশের সাহিত্যও ঐদেশের সংস্কৃতির মধ্যেই গড়ে ওঠে। কেননা, সাহিত্য সংস্কৃতিরই অংশ এবং যেকোনোভাবে সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করে।

বক্তব্য রাখছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. ফজলুল হক

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ৩টি প্লেনারি স্পিচসহ ২১টি একাডেমিক সেশনের অধীনে প্রায় ১২৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য ৮টি দেশের গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা অংশ নেন। ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক রুবাইদা আক্তার অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রভাষ কুমার কর্মকার, অংশগ্রহণকারী বিদেশী প্রতিনিধি, অনুষদের শিক্ষক, গবেষক, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের পেশাজীবী ও উন্নয়নকর্মী, শিক্ষার্থী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।