মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের মানোন্নয়ন কোর্স

পোস্ট হয়েছে: জানুয়ারি ৩০, ২০১৭ 

news-image

গত ২৩-২৭ জানুয়ারি ২০১৭ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের নির্বাচিত ছাত্রছাত্রী ও বিভাগের শিক্ষকদের জন্য ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের মানোন্নয়ন কোর্সের আয়োজন করা হয়। কোর্সটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. ফরহাদ দরুদগারিয়ান ও ইরানের সাদী ফাউন্ডেশনের গবেষক ড. এলহাম হাদ্দাদি। গত ২২ জানুয়ারি ডীন্স কমপ্লেক্স ভবনে সকালে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কোর্সের উদ্বোধন করা হয়।

44

অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন বিভাগের শিক্ষকগণ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. এফএমএএইচ তাকী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী।

5

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সভাপতি ড. মো. আতাউল্যাহ এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিভাগের প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. মো. শামীম খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে উপস্থিত সকল অতিথিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সাথে ভাষা বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানান। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভাষা বিভাগ ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এ বছরই অর্থাৎ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধীনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করবে। আজ রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের উদ্যোগে মানোন্নয়ন কোর্সের আয়োজনের জন্য তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

1

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিন স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে ফারসি বিভাগের আত্মপ্রকাশের এই আনন্দঘন মুহূর্তে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষত তিনি ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগের জন্যও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাউন্সেলর মহোদয়ের তৎপরতা আমাদেরকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদিত হয়ে ইউজিসির নিকট পাঠানো হলে সেখানে তাঁরা তা অনুমোদন করেন। ফারসি ভাষা একটি সমৃদ্ধ এবং প্রাচীন ভাষা। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ফারসির সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইরান প্রাচ্যের একটি দেশ। ইরানিদের সাথে আমাদের সুগভীর সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। সে দেশ থেকে অনেক সুফি-সাধক আমাদের দেশে ইসলাম প্রচার করার জন্য এসেছেন। তাঁদের মাধ্যমে আমাদের দেশে যেমন ইসলাম প্রচারিত হয়েছে তেমনি ফারসি ভাষার প্রচলন হয়েছে। আমরা কথোপকথনে অনেক ফারসি শব্দ ব্যবহার করি। তিনি বলেন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের কার্যক্রম আরো জোরদার হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে, এর মাধ্যমে ইরানের সাথে ঐতিহাসিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। তিনি তাঁর বক্তব্যের শেষে ‘ফারসি ভাষা শিক্ষা মানোন্নয়ন কোর্স’ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

66

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জনাব সাইয়্যেদ মূসা হোসেইনী দ্রুততম সময়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানান। একই সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইরান স্টাডিজ রুম’ প্রতিষ্ঠার জন্যও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ও ইরান স্টাডিজ রুম সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইরানের জ্ঞানগত ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর নিয়োগের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইরানি কালচারাল কাউন্সেলর ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের মানোন্নয়ন কোর্সের অংশগ্রহণকারীদের হাতে (কোর্সের) শিক্ষা উপকরণ ফাইল তুলে দেন।

22

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ফারসি ভাষা ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আযারবাইজানের ভাষা। তিনি বিশ্বসাহিত্যে ফারসি ভাষার বিখ্যাত কবি জালাল উদ্দিন রুমী, ফেরদৌসী, হাফিজ সিরাজীর অবদানের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ইরান সরকারের সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হবেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. এফএমএএইচ তাকী কলা অনুষদের ১০টি বিভাগের সাথে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের এই নতুন বিভাগ চালু হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন ও  নতুন বিভাগের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। তিনি বলেন, প্রাচীনকাল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষের সাথে ফারসির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মাতৃভাষা আমাদের গর্ব। তবে আমরা অন্যান্য ভাষাও চর্চা করব। কেননা, ভাষা শিক্ষা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

55

ভাষা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. বিপুল কুমার বিশ্বাস বলেন, ভাষা বিভাগ আজ ফারসির একটি বীজ রোপন করল। এর পরিধি ধীরে ধীরে প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, যেসব বিশ^বিদ্যালয়ে ফারসি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনেক সুনাম বয়ে এনেছেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মো আতাউল্যাহ তাঁর দায়িত্বকালীন সকলের সহযোগিতায় ফারসি বিভাগের উদ্বোধন হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

77

অনুষ্ঠানে এম.ফিল প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী মুহাররম হোসেন রচিত একটি গান পরিবেশন করা হয়। গানের ভাষায় ইরানি অতিথিবৃন্দ, বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং ফারসি ভাষার প্রশংসা করা হয়। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানা ফারসিতে একক গান পরিবেশন করেন।

3

ইরান স্টাডিজ রুমের উদ্বোধন

গত ২২ জানুয়ারি ২০১৭ রোববার সকালে ইরানি অতিথিদের নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন ফিতা কেটে সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনে ইরান স্টাডিজ রুমের উদ্বোধন করেন। এসময় ইরানি অতিথিগণ উপাচার্য মহোদয়কে বই উপহার দেন। এরপর উপাচার্য অতিথিদের নিয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ পরিদর্শন করেন।

6