যথাযথ মর্যাদায় মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
![news-image](https://www.iranmirrorbd.com/wp-content/uploads/2017/02/197868_111.jpg)
ভাষার জন্য যারা দিয়েছেন প্রাণ, যাদের বুকের তাজা রক্ত রাঙিয়েছিল রাজপথ- সেই সব ভাষা শহীদকে মঙ্গলবার বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতি। যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে দেশের সব প্রান্তের প্রতিটি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। গান, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক ও আলোচনা অনুষ্ঠানসহ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। বাংলাদেশের সাথে সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সোমবার গভীর রাত থেকেই মানুষের ঢল নামতে থাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। দিবসটি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদেক্ষিণের এলাকায় ৪ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শহীদ মিনারকে ঘিরে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, আজিমপুর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন ও গ্রামগঞ্জে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারগুলোতেও সোমবার মধ্যরাত অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মহান ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। সারা দেশের শহীদ মিনারগুলোতে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে জনতার ঢল নামে।
অমর একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ বাজানো হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। এরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মন্ত্রিবর্গ ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুনরায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবর্গ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ আয়োজিত এ শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২টা বাজার ১০ মিনিট আগে শহীদ মিনারে পৌঁছান। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ১২টা বাজার ৭ মিনিট আগে শহীদ মিনারে আসেন। সেখানে তাদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্বাগত জানান।
পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। এরপর বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তারপর কূটনীতিকবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে একুশের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপরে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতৃবৃন্দ, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম ও মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন। রাত দেড়টায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য শহিদ মিনার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন।
পরে পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, জাতীয় প্রেস কাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক ফোরাম, ইয়ুথ জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)সহ বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব চলে।
মাতৃভাষা দিবসে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত হয় মানুষের মিলন মেলায়। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার এলাকার সুবিশাল চত্বর। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা সব বয়সী মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ এবং শরীরে ছিল একুশের ছাপ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের গালে, বাহুতে একুশের আল্পনা যেমন ছিল তেমনি একটু বয়স্কদের পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রে দেখা গেছে একুশের শোকের ছাপ। সাদাকালো ম্যাচ করে পোশাক পরিধানের সাথে সাথে অনেকের মাথায় ছিল একুশের স্লোগান লেখা ফিতা। কারো বুকে ছিল শোকের প্রতীক কালোব্যাজ।
বাঙালি জাতির জন্য এ দিবসটি চরম শোক ও বেদনার হলেও মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। সেই ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপই জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে ভাষাশহীদদের স্মরণে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত কয়েক বছর ধরেই দিবসটি পালিত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৯২টি দেশ এ দিবসটি পালন করছে।
এবার মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পূর্ণ হলো। একুশে ফেব্রুয়ারি শোকাবহ হলেও এর যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে, তা পৃথিবীর বুকে অনন্য। কারণ বিশ্বে এ পর্যন্ত একটি মাত্র জাতিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। আর সে জাতি হলো বাঙালি।
ভাষাশহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন ‘মায়ের ভাষা’র মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পায় নবপ্রেরণা। এরই পথ বেয়ে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযোজিত হয় নতুন এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশÑ বাংলাদেশ।
গতকাল ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দেন। সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এ ছাড়া দিবসটি উপলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে এবং সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সব শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া সকাল ৭টায় কালোব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আজ বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে নগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে উপস্থিত লোকজনকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিটে ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর সেখানে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পরিষদের সদস্যরা। তারপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আক্তার জাহান।
রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর নেতৃত্বে বিএনপির একটি অংশের নেতাকর্মীরা ও রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষ। নগরীর কোর্ট শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: শফিকুল ইসলাম ও রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়াসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনারে খুলনা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সংসদ সদস্যগণ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, রেঞ্জ ডিআইজি ও কেএমপি কমিশনার, সিটি করপোরেশন, চেম্বার অব কমার্স, খুলনা প্রেসকাবসহ পেশাজীবী সংগঠন এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের নেতরা পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে একে একে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানায়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ভবন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। ভোর হতেই প্রভাতফেরি সহযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে। সকালে নগরভবনে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর কালেক্টরেট জামে মসজিদসহ সব মসজিদে শহীদদের রূহের মাগফিরাত ও দেশের কল্যাণ, শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া মন্দির, গির্জা ও অন্য উপাসনালয়ে অনুরূপ বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন রাতের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এ ছাড়া আলোচনা সভার আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন।
গতকাল সকালে বগুড়া প্রেস কাবে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মীর্জা সেলিম রেজা, আবুল কালাম আজাদ, এম আর সাইন, আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ। এ ছাড়া বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন একই স্থানে আলোচনা সভা করে। এর আগে সোমবার বগুড়া প্রেস কাব চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করে। এতে আব্দুল মান্নান এমপি, মোজাম্মেল হক, আরিফ রেহমান, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকতার পর গাজীপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে গাজীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: সোলায়মান। এ সময় ভাষাশহীদ আবুল বরকতের পরিবারের সদস্যরাও শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়াও গাজীপুর প্রেস কাব, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে থাকে। বিভিন্ন বয়সী লোকজন একক বা দল বেঁধে শহীদ মিনারে আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। দিবসটিতে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়। বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের নাট মন্দিরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাভার (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সাভারে রাত ১২টা ১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষাশহীদদের প্রতি ঢাকা-১৯ আসনের (সাভার-আশুলিয়া) সংসদ সদস্য ডা: এনামুর রহমান, সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবু নাসের বেগের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। শ্রদ্ধা জানাতে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ছুটে আসা মানুষের পদভারে জেগে উঠে সাভারের কেন্দ্রীয় ভাষা স্মৃতির শহীদ মিনার।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে রাত ১২টা ১ মিনিটে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌসের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুষ্পস্তবক অর্পণ কার্যক্রম। একে একে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা পরিয়দ, প্রেস কাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানুর নেতৃত্বে জেলার সাংবাদিকবৃন্দ, সাংবাদিক সমিতি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, পৌরসভা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, রূপগঞ্জে রাত ১২টা ১ মিনিটে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আল-আমিন দুলাল প্রমুখ। অপর দিকে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করেছেন রূপগঞ্জ প্রেস কাবের সভাপতি, কলামিস্ট, গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম, সহসভাপতি মকবুল হোসেন, এ হাই মিলন, আবুল কালাম ভুইয়া শাকিল, সাধারণ সম্পাদক খলিল সিকদার, সাত্তার আলী সোহেল, জাহাঙ্গীর আলম হানিফ, গোলাম কাউসার দিলু, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, বাদ ফজর টঙ্গীর বড় দেওড়ায় আহসান উল্লাহ সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে ও সকাল ৮টায় তিলারগাতি হাজী এম এ গণি উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকর। সকাল ৯টায় টঙ্গী তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মাদরাসার অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলনা যাইনুল আবেদীন।
টঙ্গী সরকারি কলেজের উদ্যোগে শহীদমিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিকক্ষ পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মো: মোফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া টঙ্গীর সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, সিরাজ উদ্দিন সরকার বিদ্যানিকেতন অ্যান্ড কলেজ, টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ, আউচপাড়ার আল-হেলাল স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: আলাউদ্দিন রাত ১২টা ১ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, শিকক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।