মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

‘মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী ও হাকিম ওমর খৈয়াম’ স্মরণে সেমিনার ( ভিডিও )

পোস্ট হয়েছে: জুলাই ১৫, ২০১৯ 

news-image

পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসী ও হাকিম ওমর খৈয়াম ছিলেন পৃথিবীর শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকদের অন্যতম। আর ইরানকে বলা যায় পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ও শিক্ষাকেন্দ্র। কারণ, এখান থেকেই বিশ্বজুড়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন কবি ফেরদৌসী, শেখ সাদী, হাফিজ, ওমর খৈয়াম ও আল বিরুনির মতো সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

আনজুমানে ফারসি বাংলাদেশ ও ফারসি প্রোগ্রাম, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. শিশির ভট্টাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল কালাম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সেলর ড. মাহদী হোসেইনী ফায়েক।অনুষ্ঠানে ‘ওমর খৈয়ামের কবিতায় আনন্দ ও মুহূর্তকে কাজে লাগানোর দর্শন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট ফারসি গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ইরানি ভিজিটিং প্রফেসর ড. কাজেম কাহদূয়ী।

তিনি বলেন, খৈয়াম এমন পরিস্থিতিতে জন্মগ্রহণ করেন, যে যুগে মানুষ চতুর্মুখী গোলযোগ ও অরাজকতায় আচ্ছন্ন ছিল। এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতেই খৈয়াম তার ‘রূবাই’ রচনার মাধ্যমে মানুষকে মানবমুখী হওয়া ও জীবনের বর্তমান সময়টিকে কাজে লাগানোর দিকে আহ্বান জানান। তিনি ছিলেন বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান, যেমন প্রজ্ঞান, গণিত, জোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগশ্রেষ্ঠ। সাহিত্য, বর্ণনাভিত্তিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, যেমন তাফসীর, হাদীস, কুরআনের কেরাত সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনার ওপর তার পূর্ণ দখল ছিল। তার রচনার সবচেয়ে মুখ্য বৈশিষ্ট্য হলো ভাষার  সরলতা ও প্রাঞ্জলতা।

এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কে. এম. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, উপমহাদেশে খৈয়ামের প্রতি আমাদের জানার ও তাকে বুঝার যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তা মূলত ফিটজেরাল্ডের খৈয়ামের বই অনুবাদের মাধ্যমে। খৈয়াম ফুলের ভাষা এবং প্রকৃতির ভাষা দিয়ে তার কবিতা উপস্থাপন করেছেন। তিনি ছিলেন একজন কবি, দার্শনিক, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। খৈয়ামের কবিতায় যে শরাবের বর্ণনা রয়েছে তার সাথে কবি হাফিজের কবিতার সাদৃশ্য বিদ্যমান। সুফীকাব্যে যা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।


অনুষ্ঠানে মহাকবি হাকিম আবুল কাসেম ফেরদৌসী ও তার ‘শাহনামা’র ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহসীন উদ্দিন মিয়া। তিনি তার প্রবন্ধে কবি ফেরদৌসী সম্পর্কে বলেন, ইরানের ঐতিহ্যমণ্ডিত জাতীয় ঘটনাবলি ও ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবন দান এবং বিশুদ্ধ ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের নব দিগন্ত উন্মোচনের প্রেক্ষাপট বিনির্মাণের সফল সৈনিক ইরানের মহাকবি ফেরদৌসী। তিনি দেশমাতৃকার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, জাতীয়তাবোধ ও দেশাত্মবোধের অগ্নিমশাল জ্বালিয়েছেন তার কবিতার মাধ্যমে।

এক সময়কার অন্যতম পরাশক্তি পারস্যের হারানো গৌরবকে নাড়া দিতে পরাজয়ের আত্মগ্লানিতে আচ্ছন্ন নির্জীব জাতীকে পুনঃশক্তি অর্জনের মন্ত্রণা যোগাতে ষাট হাজার শ্লোকের বিশাল কাব্যসৌধনির্মাণ করেছেন তিনি। ইরানের প্রাচীন গৌরবগাথাগুলো পুনরায় দৃষ্টিগোচরে আনতেনিজ দেহকানি মানষপটে যে সাহিত্যবীজ লালন করেছিলেন কবিতার পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়ে তাই ধরা দিয়েছে ‘শাহনামা’ নামে। এর সাহিত্য সৌন্দর্য ও চিত্তাকর্ষক লালিত্যে মোহিত হয়নি এমন সাহিত্যবোদ্ধা খুঁজে পাওয়া ভার। বিশ্ব সাহিত্যের যে কয়েকটি কালজয়ী নিদর্শন স্বীয় রূপ-মাধুর্য দিয়ে সাহিত্যমোদীদের তৃষ্ণা নিবারণ করছে, স্বীয় জাতির জন্য রেখে যাওয়া তার এ অনবদ্য সাহিত্যকর্ম ‘শাহনামা’ তাঁকে ইরানের জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। এই প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য কবি আল মুজাহিদী।

তিনি বলেন, পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসী ছিলেন পৃথিবীর শক্তিমান কবি-সাহিত্যিকদের অন্যতম। বিশ্বের যে কয়টি মহাকাব্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত হয়েছে ‘শাহনামা’ তার অন্যতম। তার জ্ঞানের অগ্নিশিখা বিশ্বময় যেমন প্রজ¦লিত হয়ে আসছে তেমনি থাকবে সবসময়।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. শিশির ভট্টাচার্য মহাকবি ওমর খৈয়াম এর কবিতায় তাৎপর্যপূর্ণ রুপক শব্দাবলী সম্পর্কে বিভিন্ন মত তুলে ধরেন। তিনি তার সাম্প্রতিক ইরান সফরের অভিজ্ঞতায় ইরানীদের সৌজন্যতাবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আপনি ইরানের যে এলাকাতেই যাবেন সেখানেই দেখবেন প্রচুর বইয়ের দোকান। তারা বিশ্বের বিখ্যাত সব বই প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে অনুবাদ করে ফেলে। যা তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসারে শক্তি যোগায়।


অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সেলর ড. মাহদী হোসেইনী ফায়েক বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে এক হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যয়ন করছে। বিভিন্ন দেশে ফারসি ভাষা বিস্তারে এটি একটি উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত। এ অঞ্চলে ফারসি অপরিচিত কোন ভাষা নয়। এখানে অসংখ্য ফারসি শব্দ ব্যবহার হয়। এদেশের মানুষ ফারসি ভাষাকে বিদেশী ভাষা হিসাবে নয়, বরং নিজের ভাষার মতো আপন করে নিয়েছে বলেই এখানে দ্রুত এর প্রসার ঘটছে। তিনি ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের ইরানে পড়াশোনার সুযোগ তৈরিতে ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা করেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর কুলসুম আবুল বাসার ‘মহাকবি আবুল কাসেম ফেরদৌসী ও হাকিম ওমর খৈয়াম’ স্মরণে সেমিনারের আয়োজকদের উদ্দেশে ফারসিতে একটি প্রবাদ বাক্য উল্লেখ করে বলেন, দির অয়াদ, দুরস্ত অয়াদ। অর্থাৎ যা দেরিতে আসে তা সঠিকভাবে আসে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শততম বার্ষিকীকে সামনে রেখে আনজুমানে ফারসির উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. শামীম বানু।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. শামীম বানু।

অনুষ্ঠানে গজল পরিবেশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও আঞ্জুমানে ফারসির অনুবাদ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদি হাসান
অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করছেন আঞ্জুমানে ফারসির প্রচার সম্পাদক ও আহসানিয়া ইন্সটিটিউট অফ সুফিজম এর সহকারী অধ্যাপক শেইখ মোহাম্মদ ওসমান গণি