মঙ্গলবার, ৪ঠা মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

ভ্রমণ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

পোস্ট হয়েছে: মার্চ ১৭, ২০২০ 

বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ যেমন মানসিক শান্তি আনয়ন করে তেমনি শারীরিক ভাবেও মানুষকে সুস্থ রাখে। নিচে ভ্রমণ যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তেমন ৭টি বিষয় তুলে ধরা হলো।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : ভ্রমণে তুমি বিভিন্ন ধরনের পরিবেশের মুখোমুখি হও যা শক্তিশালী এন্টিবডি তৈরি করে এবং তোমার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বৃদ্ধি করে।
এন্টিবডি হলো ক্ষুদ্র প্রোটিন যা বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে তোমার রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতাকে রক্ষা করে। মূলত গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, সামান্য পরিমাণ ময়লা ও ছোটখাটো অসুস্থতা তোমার দেহ ও অন্ত্রকে শক্তিশালী করে। এর অর্থ এই নয় যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য যেসকল অবশ্য করণীয় রয়েছে তুমি চলার পথে সেগুলোর চর্চা পরিহার করবে। অবশ্যই যখন তোমার হাত অপরিষ্কার হবে তখন তা ধুতে হবে বা সামান্য পরিমাণ স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু জীবনে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এতটাও মন্দ নয়। একজন ভ্রমণকারী এমনও বলেছেন যে, সতের বছরে ভ্রমণই তার জন্য শ্রেষ্ঠ রোগ প্রতিরোধকারী হয়েছে। যখন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করা হয় তখন তোমার দেহ হাজার হাজার নতুন ব্যাকটেরিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শেখে, যা দেহকে আরো সবল হতে সাহায্য করে।
২. মানসিক চাপ হ্রাস পাওয়া : ভ্রমণ প্রচুর পরিমাণে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি হয়তো বা তোমার জন্য আশ্চর্যের বিষয় নাও হতে পারে, কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, ভ্রমণের ফলে সুখানুভূতি বৃদ্ধি পায়, উদাসীনতা হ্রাস পায় এবং ভ্রমণ তোমার মানসিক প্রশান্তিকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যায়। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, অবকাশ যাপনের তিন দিন পর ভ্রমণকারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অপেক্ষাকৃত কম উদ্বিগ্ন এবং সুন্দর মেজায অনুভব করে। আর শরীর ও মনের এই উন্নত অবস্থা বাড়িতে ফিরলেই দূর হয়ে যায় না। বাড়িতে ফেরার প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করতে পারে।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যেরে উন্নতি : ভ্রমণের ফলে মন-মানসিকতা প্রশস্ত হয়। নতুন নতুন ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় লাভের সুযোগ হয়, নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো শেখা যায়। ভ্রমণের মাধ্যমে তুমি বৈশি^ক ও সাংস্কৃতিকভাবে অধিকতর সচেতন হতে পার। এগুলোর সবই তোমার স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। কারণ, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা জ্ঞানগত নমনীয়তার সৃষ্টি করে এবং তোমার বুদ্ধিকে তীক্ষè করে তোলে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, সংস্কৃতি সম্বন্ধে গভীর সচেতনতাবোধ ও ব্যক্তিক বিকাশের সাথে ভ্রমণের সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক মনস্তত্ত্ব সম্পর্কিত ম্যাগাজিনের বক্তব্য অনুযায়ী, যারা ভ্রমণ করে এবং বিদেশে লেখাপড়া করে তারা অধিকতর উন্মুক্ত মনা ও মানসিকভাবে স্থিতিশীলতার অধিকারী হয়।
৪. হৃদরোগের আশঙ্কা হ্রাস : ভ্রমণের ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা কম হওয়ার কারণ হলো যে সকল ব্যক্তি তাদের বাড়ি থেকে দূরে কিছুদিন অবকাশে কাটায় তারা কম চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন থাকে অথবা নিদেনপক্ষে তাদেরকে যারা চিন্তিত করে তোলে তাদের থেকে দূরে অবস্থান করে। এ কারণে দীর্ঘকাল ধরে চলা ফ্রেমিংহাম হার্ট গবেষণায় এটি দেখা গেছে, যেসকল মহিলা বা পুরুষ বছরে একবার কোথাও ভ্রমণে গিয়েছে তাদের খুবই কম হার্ট অ্যাটাক অথবা হৃদরোগ হয়েছে।
৫. স্বাস্থ্য অটুট রাখা : ভ্রমণ মানেই হলো দীর্ঘ সময় ধরে একটি চলমান যানের ওপর বসে থাকা। কিন্তু এর মাধ্যমে নিজেকে সক্রিয় হতে বাধ্য করারও সুযোগের সৃষ্টি হয়। যখন আমরা ভ্রমণ করি তখন আমরা নতুন কিছু করার চেষ্টা করি এবং সেখানে যা কিছু আছে তার প্রায় সবকিছুই দেখার চেষ্টা করি। সেখানে পৌঁছতে আমরা অর্থ ব্যয় করি। এ কারণে আমরা আরও কঠিন কাজ করি ও বাড়িতে যতটুকু পথ চলি তার থেকে বেশি পথ ঘুরে ঘুরে দেখি বা সবথেকে সুন্দর দৃশ্যটি দেখতে কোনো স্থানে যাই বা উপরে উঠি। এমনকি যদি তুমি সারা দিন সমুদ্র সৈকতে থাকার পরিকল্পনা কর তা হলে বালুর মধ্যে হাঁটতে মাংসপেশীগুলোকে বরাবরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শক্তি ব্যবহার করতে হবে। এতে মাংসপেশী আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
৬. উপশমকারী স্থান : পৃথিবীতে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেগুলোর উপশমকারী গুণ রয়েছেÑ এমন স্থান সম্ভবত তোমার বাড়ির আশেপাশে নেই। কিন্তু তুমি যখন ভ্রমণ কর তখন তুমি এমন উপশমকারী স্থানে যেতে পার যেগুলোতে অন্যরা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, তুরস্কের গরম ঝরনা, আইসল্যান্ড বা কোস্টারিকাÑ যেগুলো পৃথিবীতে উপশমকারী স্থান নামে পরিচিত। এ স্থানগুলো খনিজ সমৃদ্ধ পানিতে পূর্ণ যা ত্বকের জন্য ভালো, ব্যথা ও চাপ উপশমকারী এবং আয়ুবর্ধক। প্রথমত শক্তি আবর্ত আসলেই বিদ্যমান এবং পবিত্র স্থানসমূহও রয়েছে যেগুলো বায়ু, পানি কিংবা বিদ্যুৎ প্রভৃতি প্রবহমান শক্তির অধিকারী। পৃথিবীতে এমন স্থানসমূহ রয়েছে যেখানে পৃথিবীর শক্তিগুলো মানুষের রোগ নিরাময়, শক্তি বৃদ্ধি ও পুনঃযৌবন দান করতে সক্ষম। প্রসিদ্ধ কয়েকটি স্থানের মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের স্টোনহেইঞ্জ বা মিশরের পিরামিড ইত্যাদি। কিছু কিছু উৎস যুক্তরাষ্ট্রেও রয়েছে যার মধ্যে সেডোনা, মাউন্ট ডেজার্ড আইল্যান্ড, মাইন উল্লেখযোগ্য।
৭. ভ্রমণ দীর্ঘায়ু লাভে সহায়ক : এটি সত্য যে, যারা ভ্রমণ করে তারা অন্যদের চেয়ে দীর্ঘায়ু হয়। এই ভ্রমণ হতে পারে দেশের অভ্যন্তরে অথবা দেশের বাইরে অর্থাৎ সকল ধরনের ভ্রমণই আমাদের জীবনকে ছন্দময় করে তোলে এবং আমাদের আয়ু দীর্ঘ হতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়ছে যে, ভ্রমণে দুুশ্চিন্তা কমে, ভেতর বাহির উভয় দিক থেকেই শরীরকে স্বাস্থ্যবান রাখে এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে উন্নত করে। এর ফলে দীর্ঘ জীবন লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং এতে জীবন আরো রসময় হয়ে ওঠে।