বিশ্ব কুদস দিবস : মুসলমানদের দায়িত্ব সচেতন হয়ে ওঠার দিন
পোস্ট হয়েছে: জুন ১৩, ২০২০
মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম –
ভূমিকা
শুধু নিজ দেশ বা জাতি নয় বরং গোটা বিশ্বকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যাঁরা সঠিক পথের দিশা দিতে পারেন তাঁরাই বিশ্ব নেতা। আজ কিংবা আগামী দু-চার-পাঁচদিনের ঘটনাবলি স¤পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করে সেজন্য জাতিকে প্রস্তুত করার মতো নেতার অভাব পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আগামী অর্ধশতাব্দী বা একশ’ বছর পর কী হতে পারে সেজন্য গোটা জাতি বা মুসলিম উম্মাহকে প্রস্তুত করে যেতে পারেন এমন নেতা সত্যিই বিরল। বিংশ শতাব্দীর এমন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ছিলেন ইমাম খোমেইনী (রহ.)।
কুদস দিবস পালনের ঘোষণা
শুরুতে ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা একজন বিশ্বনেতার কথা বলেছি। তিনি যেন এখন থেকে অর্ধশতাব্দী আগে আজকের এই প্রেক্ষাপটকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কালজয়ী ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের মাটি থেকে আড়াই হাজার বছরের রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠান করেন ইমাম খোমেইনী (রহ.)। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ওই বিপ্লব বিজয়ের পর এই মহান নেতা নিজ দেশের গ-ি পেরিয়ে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় মনোনিবেশ করেন।
তিনি সঠিকভাবে উপলব্ধি করেন, মানবতার শত্রু ইসরাইল নামক বিষফোঁড়াকে ঘৃণা করতে শেখাতে হবে মুসলিম উম্মাহকে। যতদিন না এই বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলা হচ্ছে ততদিন যাতে মুসলমানরা তাদের আসল শত্রুর কথা ভুলে না যায় সেজন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের স্থপতি ঘোষণা করেন, প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার পালিত হবে ‘বিশ্ব কুদস দিবস’। মুসলমানদের প্রথম কিবলাকে ইসরাইলি দখল থেকে মুক্ত করার জন্য এ দিবসের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ দিবসে ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক গণ-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে যেতে হবে।
ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১৩৯৯ হিজরির ১৩ রমজান (১৯৭৯ সালের ৭ আগস্ট) অর্থাৎ ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের ছয় মাস পর বিশ্ব কুদস দিবস পালনের কথা প্রথম ঘোষণা করেন। কুদস দিবসের ঘোষণায় তিনি বলেন : ‘আমি বিশ্বের সকল মুসলমান এবং মুসলিম দেশগুলোর সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দখলদার ইসরাইল এবং তাদের মদদদাতাদের ওপর থেকে সহায়তার হাত গুটিয়ে নিন। সেই সাথে পবিত্র রমজান মাসের কদরের মর্যাদাময় দিনগুলোর অন্তর্ভুক্ত সর্বশেষ শুক্রবারকে কুদস দিবস হিসেবে মনোনীত করে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করুন। এই আনুষ্ঠানিকতা ফিলিস্তিনি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে সহায়তা করবে।’
ইসরাইল কেন মুসলমানদের এক নম্বর শত্রু
ইহুদিবাদী ইসরাইল কেন মুসলমানদের প্রধান শত্রু সেকথা বিশ্ব মুসলিম যেন ভুলতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তো বিষয়টি একেবারেই আনকোরা। ইতিহাসের নানা পরিক্রমায় নানা ঘটনা প্রবাহের জের ধরে ফিলিস্তিনের মূল অধিবাসীদের বিতাড়িত করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে জায়নিস্ট বা ইহুদিবাদীরা সেখানে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল কায়েম করে। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।
ইহুদিবাদীরা জেরুসালেম হিসেবে খ্যাত ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ শহরে অবস্থিত মসজিদুল আকসা জবরদখল করে নেয় ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময়। এর অর্থ হচ্ছে, মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলার শহর আল-কুদসসহ ইসরাইল নামক যে রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বুকে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করে যাচ্ছে সেটি আসলে কোনো বৈধ রাষ্ট্র নয়। এখন থেকে ৭২ বছর আগেও এই নামের কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব পৃথিবীর মানচিত্রে ছিল না। মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী স¤পদ ফিলিস্তিন জবরদখল করে ব্রিটেন ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই কৃত্রিম ও অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়।
আরব-ইসরাইল সংঘাত ও ক্যা¤প ডেভিড চুক্তি
ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মাতৃভূমির ওপর ইহুদিবাদীদের এই অবৈধ দখলদারিত্ব মেনে নেননি। তাঁরা এর প্রতিবাদ জানান। কয়েকটি আরব দেশ ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ায়। ফলে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ফিলিস্তিনের বেশ কিছু ভূমি আরবদের হাতছাড়া হয়ে যায় যার মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস বা আল-কুদস শহর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ইহুদিবাদীরা তাদের অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছল-বল-কৌশল তিনটিরই আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথমে তারা আপোষে ফিলিস্তিনিদের ভূমি ক্রয় করে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সেখানে সারাবিশ্ব থেকে ইহুদিদের ধরে এনে বসবাসের সুযোগ করে দেয়Ñ যে প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীকালে তারা ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে এবং জীবিতদের বিতাড়িত করে। এরও পরে তারা মুসলমানদেরকে দলে ভেড়ানোর জন্য কৌশল ও প্রলোভনের আশ্রয় নেয়।
১৯৬৭ সালের ইসরাইলবিরোধী যুদ্ধে আরব বিশ্বের অন্যতম নেতৃত্ব দানকারী মিশরকে মাত্র এক দশকের মধ্যে কব্জা করে ফেলে তেল আবিব। ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যা¤প ডেভিডে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে কথিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মিশর। তৎকালীন মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মোনাচেম বেগিন ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উপস্থিতিতে ১২ দিনের গোপন বৈঠকের পর তাঁরা ওই চুক্তি সই করেন। আরব বিশ্বকে না জানিয়ে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করার কারণে ১৯৭৯ সালে মিশরকে আরবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বাকি আরব নেতাদেরও বাগে আনতে সময় নেয়নি ইহুদিবাদীরা। ১০ বছর পর ১৯৮৯ সালে মিশরকে আরব লীগের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আল-কুদসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
‘কুদস’-এর শাব্দিক অর্থ পবিত্র। তবে এটি অধিকৃত জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের একটি ঐতিহাসিক শহরের নাম যা বর্তমানে জেরুসালেম নামে সবার কাছে পরিচিত। মুসলমানরা এই শহরকে ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে চেনেন এবং এই পবিত্র ভূমিতে রয়েছে সেই ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা বা আল-আকসা মসজিদ। মুসলিম ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অসংখ্য নবী-রাসূলের (আ.) পদধূলিতে ধন্য এই নগরী। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর
নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর ছেলে হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের আল-কুদস শহরে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)-এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্নির্মাণ করেন। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা সফর করেন। সূরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতেই এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রিয় নবীজী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এই মসজিদেই অতীতের সব নবীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নামাজের ইমামতি করেন। অসংখ্য নবী-রাসূলের দাওয়াতি মিশন পরিচালিত হয়েছে এই মসজিদকে কেন্দ্র করে।
আদিতে ‘কাবা শরীফ’ মুসলমানদের কিবলা থাকলেও মসজিদুল আকসা স্থাপনের পর এটি কিবলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ওহি লাভ ও নবুওয়াত প্রকাশের সময় আল-আকসাই কিবলা ছিল। মদিনায় হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এই কিবলা পরিবর্তন হয়ে পুনরায় কাবা কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। হাদিসে এসেছে : কাবা শরিফ তথা মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করলে এক লক্ষ গুণ সওয়াব, মদিনা শরিফে অবস্থিত মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার গুণ সওয়াব এবং মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় করলে পঁচিশ হাজার গুণ সওয়াব। মানবতার শত্রু
ইসরাইলি দখলদারের কব্জায় থাকার কারণে মুসলিম উম্মাহ আজ মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে একমাত্র জোরালো ভূমিকা পালন করছে যে দেশ
ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর আজও বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশ এই অবৈধ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেয়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশসহ অধিকাংশ মুসলিম দেশের স¤পর্ক বা কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। তবে ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে কূটনৈতিক স¤পর্ক ও সব ধরনের সহযোগিতা বজায় রেখেছে মিশর, জর্দান ও তুরস্ক নামের তিন দেশ। বাকি মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের পাশবিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে একটু/আধটু প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান।
ইরানের যোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইরানসহ আরব বিশ্বে এই আন্দোলন ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ নামে বেশি পরিচিত।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী সু¯পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামে সমর্থন ও সহযোগিতা করা থেকে তেহরান কখনো বিন্দুমাত্র পিছপা হবে না; বরং এ সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, তাঁর দেশ কোনো স্থানে চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত নয়। ঘোষণা না দিয়ে কারো বিরুদ্ধ প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য যুদ্ধ ইরান করে না। তবে হ্যাঁ। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সমর্থন ইরানের ঘোষিত নীতি এবং এখান থেকে এক চুলও পিছ ুহটবে না তাঁর দেশ।
ইসলামি জিহাদ আন্দোলন ও হামাসসহ গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনগুলো ইরানের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এসব প্রতিরোধ সংগঠন ইহুদিবাদী ইসরাইলের আরামের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে তাদের গোপন স¤পর্ক প্রকাশ করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে হামাস। ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ও মহাপাপ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি সম্প্রতি গাজায় আরও বলেছেন, যারা ইসরাইলের সঙ্গে স¤পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় তারা আসলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অপরাধ চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিচ্ছে। মাত্র ৪৫ বর্গকিলোমিটার ভূখ-ের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে থেকে এভাবে জোর গলায় প্রতিরোধ নেতাদের কথা বলার নেপথ্য শক্তি যে ইরান তা বলা বাহুল্য।
কথিত ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রা¤প ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রমূলক চুক্তির রূপরেখা প্রকাশ করেছেন যার নাম ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর কথিত সেরা চুক্তি। এতদিন আমেরিকা ফিলিস্তিন সংকটের দুই-জাতিভিত্তিক সমাধানের কথা বলে এলেও এবার সাম্রাজ্যবাদী দেশটির আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’তে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। গাজা উপত্যকা, জিহুদিয়া পার্বত্য অঞ্চল ও পশ্চিম তীরের সামারিয়া অঞ্চল নিউ প্যালেস্টাইন নামে পরিচিত হবে। আর বাকি সব অঞ্চল, এমনকি এসব এলাকার ইহুদি বসতিগুলো সব স্বাধীন রাষ্ট্র ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আল-কুদস বা জেরুসালেম ইসরাইল ও নিউ প্যালেস্টাইনের যৌথ রাজধানী হবে। আরবরা নিউ প্যালেস্টাইন এবং ইহুদিরা ইসরাইলের নাগরিক হিসেবে গণ্য হবে। নিউ প্যালেস্টাইনের কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না। হালকা অস্ত্রধারী পুলিশ থাকবে। বহিঃশত্রু থেকে তাদের রক্ষার দায়িত্বে থাকবে ইসরাইল। অর্থাৎ সেনাবাহিনী অস্ত্রভা-ার সবই থাকবে ইহুদিদের ও ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে। জেরুসালেমের নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরাইলি পৌরসভার হাতে।
ভয়ঙ্কর এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে নিয়ন্ত্রণকারী মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন পিএলও, গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করে এর বাস্তবায়ন করা হবে। পিএলও যদি চুক্তিতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের সব সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যদিকে হামাস যদি রাজি না হয়, তাহলে সরাসরি যুদ্ধ করে হামাসকে নির্মূল করে দেয়া হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে এ চুক্তির পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছে।
এ বছরের কুদস দিবসের করণীয়
শুরুতে বলেছিলাম, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলার শহর তথা আল-কুদসকে ঘিরে একবিংশ শতাব্দীর এই নানামুখী ষড়যন্ত্র আগাম উপলব্ধি করেছিলেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেইনী (রহ.)। তাঁর পক্ষ থেকে ঘোষিত বিশ্ব আল-কুদস দিবস পালনের গুরুত্ব এই মুহূর্তে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে গেছে। ১৯৭৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রতি রমজানের শেষ শুক্রবার জুমার নামাজের আগে বা পরে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবেই কুদস দিবসের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ইরানে। রাজধানী তেহরানসহ সারা দেশের কয়েকশ’ শহরে এ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ফেব্রুয়ারির বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীর শোভাযাত্রার পর কুদস দিবসের শোভাযাত্রায় সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও গত চার দশক ধরে এই দিবসের শোভাযাত্রা এবং সেমিনার ও অন্যান্য সভা-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাস, কালচারাল সেন্টার এবং আল-কুদস কমিটি এসব আয়োজনের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে। এ বছর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতার প্রেক্ষাপটে হয়তো ভিন্ন আঙ্গিনে পালিত হবে কুদস দিবস। আমরা যে যার অবস্থানে থেকে সে দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করব অথবা নিদেনপক্ষে অন্তরের অন্তস্তল থেকে এ দিবসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করবÑ এই হোক এ বছরের বিশ্ব কুদস দিবসের প্রত্যাশা।