শনিবার, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বিশ্ব কুদস দিবস উপলক্ষে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সংসদের বিবৃতি

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২৭, ২০২২ 

news-image

ফিলিস্তিনি জাতির ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্ব কুদস দিবস পালনের প্রাক্কালে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইরানের সংসদ মজলিসে শুরায়ে ইসলামি। বিবৃতিতে এই দিবসের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার জন্য ইরানের সকল নাগরিক, সারাবিশ্বের পার্লামেন্টগুলোর সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্বের মুক্তিকামী জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি যুবকরা সম্প্রতি ইসরাইলে যেসব বীরোচিত অভিযান চালিয়েছে তাতে মাতৃভূমি মুক্তির প্রত্যাশী গোটা ফিলিস্তিনি জাতির মনে একবুক আশার সঞ্চার হয়েছে। ফিলিস্তিনি যুবকরা তাদের অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, কিছু আরব শাসকের বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন ইস্যু এখনও জাগ্রত রয়েছে এবং ফিলিস্তিনি জাতি প্রতিরোধ ও শাহাদাতের সংস্কৃতি বুকে ধারণ করে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।

মজলিসে শুরায়ে ইসলামির বিবৃতিটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

“سُبْحَانَ الذي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيع البَصِير

[পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। সূরা বনি-ইসরাইল: আয়াত ১]

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম খোমেনী (রহ.) পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবারকে বিশ্ব কুদস দিবস হিসেবে যে নামকরণ করেছিলেন তার বার্ষিকীকে সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করছে ইরানের জাতীয় সংসদ- মজলিশে শুরায়ে ইসলামি। একইসঙ্গে ইসলামি ইরানের সকল বিপ্লবী জনতা, সারাবিশ্বের পার্লামেন্টগুলোর সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্বের মুক্তিকামী জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠনগুলোর প্রতি এই দিবসের মহান, লক্ষ্যপূর্ণ ও ন্যায়কামী শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছে ইরানের সংসদ।

৪৫তম বিশ্ব কুদস দিবসের প্রাক্কালে সম্প্রতি ফিলিস্তিনি যুবকরা ১৯৪৮ সালে তাদের হাত থেকে বেদখল হয়ে যাওয়া ভূমিতে [ইসরাইলে] যেসব বীরোচিত অভিযান চালিয়েছে তাতে মাতৃভূমি মুক্তির প্রত্যাশী গোটা ফিলিস্তিনি জাতির মনে একবুক আশার সঞ্চার হয়েছে। ফিলিস্তিনি যুবকরা তাদের অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, কিছু আরব শাসকের বিশ্বাসঘাতকতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন ইস্যু এখনও জাগ্রত রয়েছে এবং ফিলিস্তিনি জাতি প্রতিরোধ ও শাহাদাতের সংস্কৃতি বুকে ধারণ করে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। মরহুম ইমাম কতটা দূরদর্শিতার সঙ্গে বিশ্ব কুদস দিবস পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন তা ফিলিস্তিনের চলমান ঘটনাপ্রবাহ দেখে সহজেই অনুমান করা যায়।

আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করছি এজন্য যে, ফিলিস্তিনি জাতির অটুট মনোবল ও প্রতিরোধকামিতা ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা ও ইউরোপের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।সেইসঙ্গে যেসব গণবিচ্ছিন্ন আরব শাসক সরল বিশ্বাসে একথা ভাবছে যে, ইহুদিবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে তাদের সামনেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলন। এই প্রতিরোধ আন্দোলনই মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে। একদিন যে ফিলিস্তিনিদের একমাত্র অস্ত্র ছিল গুলতি ও পাথর তারা আজ রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ইহুদিবাদীদের চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

ইরানের সংসদ মজলিসে শুরায়ে ইসলামির অধিবেশন (ফাইল ছবি)

নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের শক্তি ও সক্ষমতা আজ সবার সামনে প্রতিষ্ঠিত সত্যে পরিণত হয়েছে; আর এই প্রতিরোধ আন্দোলন মাকড়সার জালসম ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির ভিত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কাঁপিয়ে তুলেছে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী যেমনটি বলেছেন, বর্ণবাদী, দখলদার ও শিশু হত্যাকারী ইহুদিবাদী ইসরাইলের ধ্বংসের সময় ঘনিয়ে এসেছে।সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, লেবানন ও আফগানিস্তানে ইহুদিবাদীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার পরাজয় ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আন্দোলনের সম্ভাব্য বিজয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। সম্ভাব্য এ বিজয়ের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠিত হবে স্থায়ী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং এ অঞ্চলের মানুষ পাবে প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ।

ইরানের সংসদ মজলিসে শুরায়ে ইসলামি ফিলিস্তিনি জাতির প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতি ঐক্যবদ্ধ সমর্থন জানানোর জন্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সেইসঙ্গে আরেকবার বিশ্বের সবগুলো দেশ বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর পার্লামেন্টের সদস্যবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন ও সংস্থাগুলোর প্রতি এই আহ্বান জানাচ্ছে যে, তারা যেন কুদস দখলদার সরকারের আগ্রাসন ও অপরাধযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যায়, অত্যাচার ও বলদর্পিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রচেষ্টাকে রুখে দেয় এবং ফিলিস্তিনি জাতির ন্যায়সঙ্গত অধিকারের প্রতি সমর্থন জানায়।” পার্সটুডে/