শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বিশ্বে মহাকাশ শক্তিতে শীর্ষ ১১ দেশের তালিকায় ইরান

পোস্ট হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯ 

news-image

অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তির অধিকারী ইরান মহাকাশ শক্তিতে পশ্চিম এশিয়ায় এখন শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ ১১টি দেশের তালিকায় রয়েছে। ইরানের জাতীয় মহাকাশ কেন্দ্রের প্রধান মানুচেহর মানতেকি এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি এই অর্জনের জন্য তার দেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

মানতেকি বলেন, বিগত দুই বছরে বিশ্বে অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তিতে ইরান ১১তম স্থান অর্জন করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, গত বছর আন্তর্জাতিক মানের ক্ষেত্রেও তার দেশ অগ্রসর লাভ করেছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর থেকেই ইরানের মহাকাশ শিল্প ও কেন্দ্রসমূহ নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে আসছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানি এসব প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবুও অগ্রগতি থামাতে পারেনি। তবে এই সময়ে একই ধরনের সমস্যা দেশকে শতভাগ স্বনির্ভর হতে আরও সাহায্য করেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান দেশীয়ভাবে স্যাটেলাইট নির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি জানান।

গত বুধবার ইরানের মহাকাশ সংস্থা আইএসএ এর প্রধান মোরতেজা বারারি জানান, তার দেশ শিগগিরই কক্ষপথে  নতুন তিনটি স্যালেটাইন পাঠাবে। পূর্ণাঙ্গ মহাকাশ প্রযুক্তি চক্রে তেহরানের প্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি জানান।

মহাকাশ গবেষণা-ভিত্তিক এন্টারপ্রেনিউরশিপের ওপর একটি বৈঠকে বারারি তার দেশের মহাকাশ ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে অর্জনগুলো তুলে ধরনে। ইরানি এই কর্মকর্তা স্মরণ করিয়ে দেন, ইরান গত বছর দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। চলতি ইরানি বছরের শেষ নাগাদ (২০ মার্চ ২০২০) কক্ষপথে নতুন আরও তিনটি স্যাটেলাইট পাঠাতে তেহরান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি জানান।
 
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,তেহরান মহাকাশ সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নতুন ৫ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করতে যা যা করার তার সব প্রচেষ্টাই চালাচ্ছে।
 
গত মাসে বিশ্বব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞানভিত্তিক মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান স্কিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাঙ্কিং একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে মহাকাশ প্রকৌশল উন্নয়নে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে ইরান।
 
মহাকাশ প্রকৌশল হচ্ছে বিমান ও মহাকাশ যান নির্মাণ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলের প্রাথমিক ক্ষেত্র। এটার দুটি বড় শাখা রয়েছে- বৈমানিক প্রকৌশল ও মহাকাশচারী প্রকৌশল।

প্রতিবেদন মতে, মহাকাশ প্রকৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরান শীর্ষ স্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পেপারে দেশটির ৪৮৬টি নথি, ৪৪১টি উল্লেখযোগ্য দলিল ও ৫১৬টি উদ্ধৃতি স্থান পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান ২০১৮ সালে মহাকাশ প্রকৌশলে  মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তুরস্ক, ইসরাইল, সৌদি আরব, মিশর, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানকে পেছনে ফেলেছে। অন্যদিকে, বিশ্বে স্যাটেলাইট নির্মাতা শীর্ষ নয় দেশের তালিকায় আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ ও কানাডার পাশাপাশি অবস্থানে রয়েছে ইরান।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি ইরান ‘নাহিদ ১’ ও ‘আমির কবির’ নামে দুটি দেশীয় তৈরি স্যাটেলাইট উম্মোচন করে। সেইসাথে দেশে প্রথমবারের মতো দেশীয় তৈরি স্পেস টাগ উৎক্ষেপণ করে দেশটি। রাজধানী তেহরানে ইরানের মহাকাশ প্রযুক্তি দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে ওই তিনটি মহাকাশ যান উম্মোচন করা হয়।

‘নাহিদ ১’ হচ্ছে টেলিযোগাযোগ স্যাটেলাইট। এটি নির্মাণ করা হয় ইরানের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে। আর ‘পায়ামা-ই আমির কবির’ স্যাটেলাইটের নকশা ও নির্মাণ কাজ করা হয় আমির কবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে। এটি নিখুঁত ভাবে ছবি তুলতে সক্ষম।

উল্লিখিত সময়ে ইরানে প্রথমবারের মতো ‘সামান ১’ নামে স্পেস টাগ নির্মাণ করা হয় যেটি স্যাটেলাইটকে লো আর্থ অর্বিট (এলইও) থেকে হায়ার-এনার্জি অর্বিটে রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হয়।

ইরানের জাতীয় মহাকাশ কেন্দ্রের প্রধান মনুচেহর মানতেকি গত অক্টোবরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, মহাকাশে প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠাতে রাশিয়াকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা করছে ইরান। তেহরানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মহাকাশে মানুষ পাঠাতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় এবং বিভিন্ন দেশ এক্ষেত্রে একে অপরের সম্ভাবনাকে ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে রাশিয়ার মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই মিশনে রাশিয়াকে আমরা সহযোগিতা করব।

ইরান এরআগে কক্ষপথে ‘সিমোর্ঘ’ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। সূত্র: ফার্স নিউজ।