বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদের প্রতি ইব্রাহিমি তোর্কামনের বার্তা
পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ৬, ২০২০

ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও একতরফা হিংসাত্মক পদক্ষেপ অমানবিক
ইরানের ইসলামী যোগাযোগ ও সংস্কৃতি সংস্থার প্রধান এবং ধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক নীতি নির্ধারণী ও সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও একতরফা হিংসাত্মক পদক্ষেপকে অমানবিক।
ইরানের ইসলামী যোগাযোগ ও সংস্কৃতি সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের এই রিপোর্টে বলা হয়, ইরানের ইসলামী যোগাযোগ ও সংস্কৃতি সংস্থার প্রধান এবং ধর্মীয় সংলাপ বিষয়ক নীতি নির্ধারণী ও সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান আবুজার ইব্রাহিমি তুর্কামন বিশ্বের ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তায় বলেছেন, মারণঘাতি করোনা ভাইরাস বিশ্ব মানবকে যখন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ ও পরীক্ষার মুখোমুখি করেছে তখন মহান আল্লাহর কাছে আবেদন করছি তাঁর অনুগ্রহে আপনারা সম্পূর্ণ সুস্থ্য এবং নিরাপদ থাকুন এবং মানব সমাজের মধ্যে আশা ও ঈমানি বিশ্বাস ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর নির্ভর করুন।
এই বৈশ্বিক মহামারীটি আবার আমাদের দেখিয়েছে যে কীভাবে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষ এতটা অসহায় ও অভাবী;একারণে সে ঘৃণা, শত্রুতা এবং যুদ্ধ ছেড়ে দিতে পারে এবং তার পরিবর্তে প্রেম এবং বন্ধুত্ব প্রদর্শন করতে পারে। এটি আমাদের দেখিয়েছে যে জাতীয় সুরক্ষার মতো ধারণাগুলি বিবর্ণ হয়ে গেছে। লন্ডন এবং রোমের নিরাপত্তার সাথে বাগদাদ, দামেস্ক এবং সানার নিরাপত্তা অবিচ্ছেদ্য। একইভাবে নিউইয়র্ক, স্টকহোম এবং টোকিওর জনগণের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের সাথে দিল্লি, বেইজিং এবং তেহরানের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ অবিচ্ছেদ্য ।
এই বার্তাটির আরেকটি অংশে এসেছে, একসময় ইরানী কবি শেখ সাদি বলেছিলেন, যে মানব সম্প্রদায়ের এক সদস্য যখন বিপদে পড়ে, তখন মানব সম্প্রদায়ের সকল সদস্যের শান্তি বিনষ্টহয়ে যায়।সম্ভবত এই সুন্দর কবিতায় সাদি মানবসমাজের আদর্শিক সংহতি কামনা করেছিলেন।কিন্তু আজ আমাদের কাছে এই সংহতি বাস্তবে পরিণত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত এই মহামারী আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানবতার পরিণতি একে অপরের সাথে কতটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।কিন্তু এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে যখন বিশ্বের সমস্ত মানুষ এই অভূতপূর্ব সংকট মোকাবেলায় একত্রিত হয়েছে, ইরানী জনগণ তখন অতিরিক্ত জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে।কারণ দীর্ঘদিনযাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে অবরোধ আরোপের কারণে ইরানি জনগণ খাবারের অধিকার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
এই বার্তায় আরো ঈঙ্গিত করা হয়েছে, যদিও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত অস্থায়ীভাবে রায় দিয়েছে যে আমেরিকার পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে মানবিক, বাণিজ্য, বেসামরিক বিমান চালনা এবং ঔষধ আমদানির বিষয়াদিকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত হবেনা। এখন মহামারীটি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, অবৈধ মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলির কারণে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। মানবতা বিশ্বব্যাপী যখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে তখন সার্বজনিন সংহতির প্রয়োজন। মার্কিন সরকার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ এর রেজোলিউশন মেনে চলার ক্ষেত্রে কেবল তার আইনী বাধ্যবাধকতাগুলি পালন করতেই অস্বীকার করছে না বরংঅন্যান্য জাতিসমূহকে ঐ রেজোলিউশন মেনে চলতে হুমকী প্রদর্শন ও শাস্তি প্রদান করছে এবং নতুনকরে ঘৃণা, প্রতিশোধ এবং শত্রুতা করার ধরন প্রসারিত করছে।
জেনেভা কনভেনশনের চারটি বিধান অনুযায়ী রোগীদেরকে চিকিৎসা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়
প্রথাগত মানবাধিকার আইন এবং জেনেভা কনভেনশনের চারটি বিধান অনুযায়ী সশস্ত্র যুদ্ধের সময়েও রোগীদেরকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৪৯-এর দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশনের ১৮ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় শর্তারোপ করা হয়েছে যে যুদ্ধের দু’পক্ষকে অবশ্যই রোগীদের এবং যুদ্ধাহতদের পর্যাপ্ত যত্নের জন্য দেরি না করে সমস্ত সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সাম্প্রতিক, এমনকি সন্ত্রাসবাদী দলগুলি সরকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী অভিযানের সময় রোগীদের, বৃদ্ধ এবং শিশুদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যস্তু করে নি। এদিকে, একতরফা কঠোর ব্যবস্থাসমূহ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি এখন বেসামরিক রোগীদেরকেও ওষুধ ও চিকিত্সার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।
এই বার্তার অন্য একটি অংশে জোর দিয়ে বলা হয়েছে,বিশ্বব্যাপী করোনার হুমকি আজ সমস্ত মানবতার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ এবং অমানবিক নিষেধাজ্ঞাগুলি বিপজ্জনক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগীদেরকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে পরিণত করেছে এবং রোগীরা যখন হাসপাতালে বিশেষ যত্নাধীন তখন তাদেরকে রাজনৈতিক সেই ঘৃণ্য লক্ষে পরিণত করেছে।ধর্মীয় সংস্কারক ও নেতারা যদি এই অবৈধ একতরফা কঠোর ব্যবস্থাসমূহ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলি সম্পর্কে আজকে চুপ এবং উদাসীন থাকে, তবে নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে নেয়ার এবং রোগীদের বাঁচাতে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাতে আগামিকাল খুব দেরী হয়ে যাবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মানবাধিকারের প্রতি সমর্থনের তাগিদ
নৈতিক ও ঈমানি অঙ্গীকার আমাদেরকে আহ্বান জানায় যে, এই বিস্তৃত রোগের প্রাণঘাতী হুমকির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ এবং অমানবিক নিষেধাজ্ঞাগুলি অনৈতিক লড়াইয়ের মোকাবেলায় এই মুহূর্তে হাসপাতালে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ গ্রহন করি। এখন ইরানের বিভিন্ন শহরের হাসপাতলগুলিতে করোনা আক্রান্ত রোগীরা বিশেষ যত্নের মধ্যে রয়েছে, আসুন আমরা তাদের জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
জীবনের অধিকার এবং চিকিৎসা পাবার অধিকার করোনোভাইরাসে আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর মানবিক অধিকার।সুতরাং, এই নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব পালনের জন্য এবং এই রোগীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য দয়া করে এই অমানবিক, অবৈধ ও নিষ্ঠুর অবরোধের নিন্দা করুন এবং এর অপসারণের জন্য অনুরোধ করুন এবং বিশ্বের ঈমানদার, সত্যানুসারী এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার মতামত প্রকাশ করুন।
পরিশেষে, আমি সমস্ত রোগীদের, বিশেষত বিশ্বজুড়ে যারা করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছে তাদের সুস্বাস্থ্য এবং আরোগ্য কামনা করছি।
বলা বাহুল্য; এই বাণীটি মহামান্য ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের পোপ ও বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চের নেতা,ভিজেনা-অস্ট্রিয়ার মহান আর্চবিশপ মহামান্য বিশপ কার্ডিনাল ক্রিস্টোফার শোনাবরুন,সুইজারল্যান্ডের ক্যাথলিক বিশপস সম্মেলনের সভাপতি মহামান্য অ্যালান ডি রাইনী, মস্কো ও অল-রাশিয়ান আসকাফ প্যট্রিক কিরিল, অ্যাথেন্স এবং সমস্ত গ্রিসের আর্চবিশপ দ্বিতীয় মহান আয়ারমুস,সিসিলি অঞ্চলের আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক চার্চের মহামান্য ক্যাথলিকপ্রথম পুরোহিত,লুবলজানা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ রিলিজিয়াল সায়েন্সেসের প্রধান মহামান্যমেরি-জোসে-ওসার্ডকার, প্যারিসের ক্যথোলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্ডিনাল জেন নোয়েল অ্যালভিন,ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অফ গীর্জার সেক্রেটারি জেনারেল মহামান্য ওলভা ফিক্স টুইট, জর্জিয়ান অর্থোডক্স চার্চের রাহবার মহামান্য বিশপ ক্যাথলিক দ্বিতীয় ইলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার ধর্মীয় শান্তি বিষয়ক সম্মেলনের চেয়ারম্যান মহামান্য কিম হি জং, সীতাগো-মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ একাডেমির সভাপতি মহামান্য আশিন নিনিসারা, ভারতের দার্শনিক গবেষণা কাউন্সিলের সভাপতি মহামান্য অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র সিনহা, জিনজা হানচুর চেয়ারম্যানওজাপানের শিন্টোই মন্দির সংস্থার প্রধান তাসকানা কিউ তানাকা,কাজাখস্তানের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় নেতাদের কংগ্রেসের সিনেট ও সচিবালয়ের স্পিকার দরিগা নজরবায়েভ এবং রোডস সভ্যতা ও সংলাপ ফোরামের চেয়ারম্যান ড. ভ্লাদিমির ইয়াকুনিনের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।