বুধবার, ৯ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বিমান বাহিনীর অধিনায়ক ও সদস্যদেরকে দেয়া সাক্ষাতে রাহ্বার

পোস্ট হয়েছে: এপ্রিল ২২, ২০১৮ 

বিমান বাহিনীর অধিনায়ক ও সদস্যদেরকে দেয়া সাক্ষাতে রাহ্বার
ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা- যা প্রথম দিককার তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ়
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলামি বিপ্লবের বর্তমান রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়েী বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা; এ বিপ্লব বিজয়োত্তর প্রথম দিককার দিনগুলোর তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ় ও স্থিতিশীল। গত ৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৮) ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনী ও বিমান হামলা প্রতিরোধ বাহিনীর অধিনায়কগণ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ও একদল সদস্য রাহ্বারের সাথে সাক্ষাৎ করলে তাঁদের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ইরানের বিমান বাহিনীর অধিনায়ক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সদস্যগণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর বিমান হামলা প্রতিরোধ ইউনিটসমূহের সদস্যগণ ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর অনুকূলে বাই‘আত্ (আনুগত্য শপথ) করেন- যা বিপ্লবের বিজয়কে ত্বরান্বিত করে। এ যুগান্তকারী ঘটনার বার্ষিকী উপলক্ষে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর সাথে এ সাক্ষাতের আয়োজন করা হয়।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ৮ ফেব্রুয়ারি ও ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সহ বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির দিনগুলোকে আল্লাহ্ তা‘আলার জন্য নিবেদিত দিনসমূহ (আইয়ামুল্লাহ্) বলে অভিহিত করেন এবং এ দিবসগুলোকে ইরানের ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থিতি ও দৃঢ়তার উৎস বলে উল্লেখ করেন।
রাহ্বার বলেন, ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনা ও ১১ ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের বিজয়সহ বিপ্লবের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলোর স্মৃতি কেবল গৌরবময় স্মৃতিই নয়; বরং তার চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের বিকাশ ও বিজয়ের যুগের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলো ও বিপ্লবের বিজয় পরবর্তী বিগত ৩৯ বছরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির দিনগুলো নির্বিশেষে-যার সবগুলোই আইয়ামুল্লাহ্-এ দিনগুলো ছিল ইসলামি বিপ্লবের সঞ্চয় ও পুঁজি বৃদ্ধির উৎস এবং এ দিনগুলো ইসলামি বিপ্লবের ভিত্তি সমূহকে আরো বেশি সুদৃঢ় করবে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব এক জীবন্ত বাস্তবতা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ বিপ্লব বিজয়ের পরবর্তী প্রথম দিককার দিনগুলোর তুলনায় আজ অনেক বেশি সুদৃঢ় ও অনেক বেশি স্থিতিশীল। তিনি বলেন, আজকের বিপ্লবীরা ইসলামি বিপ্লবের প্রথম দিককার দিনগুলোর বিপ্লবীদের তুলনায় অধিকতর অটল, অধিকতর সচেতন ও অধিকতর দূরদৃষ্টির অধিকারী, আর এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই ইসলামি বিপ্লব অগ্রগতি লাভ করেছে ও পূর্ণতার অধিকারী হয়েছে।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার বলেন যে, অন্য সমস্ত প্রাণশীল অস্তিত্বে যেভাবে পরিবর্তন ও বিবর্তন সংঘটিত হয়ে থাকে ঠিক সেভাবেই বিপ্লবের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন ও বিবর্তন স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লব এখন এমন এক অবস্থায় চল্লিশতম বছরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যখন এ বিপ্লব স্বীয় মূলনীতিমালা ও মৌলিক ভিত্তি সমূহের ওপর স্থিতিশীল ও সুদৃঢ় রয়েছে, কিন্তু সেই সাথে সুগভীর মজবূত মূলবিশিষ্ট বিশাল ফলদাতা মহীরুহের ন্যায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফল প্রদান করে চলেছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইসলামি বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার লক্ষ্যে এ বিপ্লবের দুশমনরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তা হচ্ছে এ বিপ্লবের নতুন ফলাফলের প্রকাশকে রোধ করা এবং বিপ্লবের অব্যাহত থাকাকে ও সুদৃঢ়তাকে প্রতিহত করা। তিনি বলেন, ইসলামি বিপ্লবের দুশমন হচ্ছে তারা যারা ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের ফলে সংবেদনশীল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যাদের হাতের পুতুল ও অনুগত একটি সরকারের পতন ঘটেছিলো; এ দুশমনদের শীর্ষে রয়েছে আমেরিকার সরকার।
ইসলামি বিপ্লবের মোকাবিলা করার লক্ষ্যে বিপ্লবের দুশমন পক্ষ যেসব বিচিত্র ও ব্যাপকভিত্তিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে তার উল্লেখ করে রাহ্বার বলেন, তারা ইরানি জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চিন্তাবিদ সাজা ব্যক্তিদেরকে, ভুয়া বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার, ভাড়াটে সাংবাদিকদেরকে ও একদল ভাঁড়কে এবং ভার্চুয়াল জগতের সমস্ত রকমের উপায়-উপকরণ ব্যবহার করছে। কিন্তু ২০০৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩০ ডিসেম্বর এবং বিগত ৩০ ডিসেম্বর (২০১৭)-এর ন্যায় কতক আইয়ামুল্লায় ও এর পরবর্তীকালে যেসব স্বতঃস্ফূর্ত ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনাপূর্ণ গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয় জনগণ প্লাবনের ন্যায় রাস্তায় নেমে এসে সেসব গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন এবং অভিন্ন স্লোগান দিয়ে দুশমনদের সমস্ত হিসাব-নিকাশকে এলোমেলো করে দেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়েী বলেন, ইরানি জনগণের অকল্যাণকামীরা যেসব অপচেষ্টা চালিয়েছে তা কেবল ভার্চুয়াল জগতে গৃহীত তাদের পদক্ষেপ সমূহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, তারা ইরানে অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞাকে কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু এই জনগণ ইসলামি বিপ্লবের প্রতি তাঁদের ভালোবাসার কারণে ব্যাপকভাবে রাস্তায় নেমে আসছেন এবং এভাবে তাঁরা বিপ্লবকে মজবূত ও সুদৃঢ় করছেন।
রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামি বিপ্লবের প্রতি ইরানি জনগণের ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতার প্রশংসা করেন এবং বিপ্লবের সমর্থনে গণমিছিল সমূহে জনগণের অংশগ্রহণকে বিপ্লবের প্রতি তাঁদের এ ভালোবাসার প্রমাণ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও অপর কয়েকটি সরকারের কতক কর্তাব্যক্তির আবোল-তাবোল প্রলাপ বকার কারণে ইরানি জনগণ অনুভব করছেন যে, ইরান ও ইসলামের দুশমনরা দুশমনি চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ওঁৎ পেতে আছে এবং এ কারণে ইরানি জনগণ অধিকতর উচ্ছ্বাসের সাথে গণমিছিল সমূহে অংশগ্রহণ করছেন।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেসব আদর্শিক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো ইসলামি বিপ্লব থেকেই উৎসারিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আদর্শিক মূলনীতিসমূহের অন্যতম হচ্ছে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, মুক্তি এবং সর্বাত্মক বস্তুগত ও আত্মিক উন্নতি-অগ্রগতি- যেগুলোর মধ্য থেকে কতগুলো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে খুবই উন্নতি সাধিত হয়েছে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী সামাজিক সুবিচারকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার আদর্শিক নীতিমালার অন্যতম বলে উল্লেখ করে বলেন, সামাজিক সুবিচারের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস করা- যে ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজনের তুলনায় কম কাজ হয়েছে এবং পশ্চাদপদতা রয়েছে। তবে সকলেরই জানা আছে যে, আমরা এ আদর্শিক নীতি পরিত্যাগ করি নি, বরং এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে সামাজিক সুবিচার বাস্তবায়নের পন্থাসমূহের অন্যতম বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ এবং কয়েক বছর আগে যেমন আমি বলেছিলাম, দুর্নীতি ও অনাচার হচ্ছে রূপকথার সাত মাথাওয়ালা অজগরের ন্যায় যাকে নির্মূল করা খুব সহজে সম্ভব নয়, কিন্তু অবশ্যই এ কাজ সম্পাদন করতে হবে। তিনি বলেন, যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অন্য যে কোনো কাজের তুলনায় অধিকতর দৃঢ়তার সাথে কঠোরতরভাবে হতে হবে এবং সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরকে ও দেশের পরিচালকদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুলুম, দুর্নীতি ও অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও তাকে লাঞ্ছিত করাকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার আদর্শিক নীতিসমূহের অন্যতম বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, আজকের দিনে বিশ্বের বুকে সবচেয়ে বড় যালেম ও নিষ্ঠুর সংস্থা সমূহের অন্যতম হচ্ছে আমেরিকান সরকার- যে এমনকি জংলী দা‘এশ (আইএস্)-এর চেয়েও নিকৃষ্টতর।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, দা‘এশ্-কে আমেরিকানরাই তৈরি করেছিল এবং আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাঁর নির্বাচনী প্রচার অভিযানে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। রাহ্বার বলেন, আমেরিকানরা দা‘এশ্-কে কেবল তৈরিই করে নি, বরং তাকে পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদান করে এবং সম্ভবত আমেরিকার পৈশাচিক সংস্থাগুলো- যেমন : ব্লাক্ ওয়ার্টা- দা‘এশ্-কে কতক নৃশংস ও পৈশাচিক কর্মপন্থার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকবে। কিন্তু আমেরিকান সরকার তার এতো সব নির্মমতা ও পাষাণহৃদয়তা সত্ত্বেও নিজেকে মানবাধিকার, মযলূমদের অধিকার ও প্রাণীদের অধিকারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করে চলেছে। তাই সত্য ও প্রকৃত বিষয় সমূহ তুলে ধরার মাধ্যমে তাদেরকে লাঞ্ছিত করতে হবে।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার যুলুমের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হিসেবে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর বিগত দীর্ঘ সত্তর বছর যাবত যায়নবাদীদের যুলুমের প্রতি এবং একইভাবে ইয়ামানের জনগণকে হত্যা ও তাদের ওপর পরিচালিত যুলুমের প্রতি আমেরিকান সরকারের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইয়ামানের অবকাঠামোসমূহের ওপর ও দেশটির মযলূম জনগণের ওপর প্রতিদিনই আমেরিকার বিমানের সাহায্যে আমেরিকান বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে, অথচ আমেরিকান সরকার এর বিরুদ্ধে কোনোই আপত্তি করছে না এবং বিষয়টির প্রতি মোটেই ভ্রƒক্ষেপ করছে না, কিন্তু অত্যন্ত নির্লজ্জতার সাথে কয়েক টুকরা লোহা দেখিয়ে ইরান সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে বলে অযৌক্তিক দাবি করছে। তিনি বলেন, কিন্তু ইয়ামানের জনগণ যখন অবরুদ্ধ হয়ে আছেন তখন কী করে সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানো সম্ভব?
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, অবশ্য ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী যুলুমের মোকাবিলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং মযলূমদেরকে সাহায্য করতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘটনাবলিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্পৃক্ত হওয়া ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার অন্যতম দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের প্রতিরোধের ঘটনায় আমেরিকানরা প্রতিরোধ নির্মূল করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা সেখানে রুখে দাঁড়াই এবং বলি যে, আমরা তা করতে দেব না। আর আজ সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, আমেরিকানরা যা চেয়েছিল তারা তা করতে পারে নি, অন্যদিকে আমরা যা চেয়েছিলাম তা করতে পেরেছি।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার উল্লেখ করেন যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি একটি গণবিপ্লব এবং এ বিপ্লবের অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি একটি দ্বীনী গণবিপ্লব। তিনি বলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লব জনগণের বিপ্লব এবং এ জনগণ ইসলামে ঈমান পোষণকারী জনগণ, এ কারণে তাঁরা পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ ও তাতে তাঁদের সন্তানদের শাহাদাত বরণসহ প্রতিটি পর্যায়েই ধৈর্য ধারণ করেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন। কারণ, এ প্রতিরক্ষা ও শাহাদাত ছিল আল্লাহ্র পথে ও হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) প্রদর্শিত পথে।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিটি পরিকল্পনায়ই জনগণকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের কথা অনবরত উল্লেখ করা হয়; অবশ্য সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তাঁদের বক্তৃতা-ভাষণসমূহে জনগণের কথা পুনঃপুন উল্লেখ করা ও জনগণের ওপর তাঁদের নির্ভরশীলতা ভালো, কিন্তু তাঁদেরকে জনগণকে চিনতে হবে; আমাদেরকে জনগণকে চিনতে হবে।
তিনি ত্বাগ¦ূতী শাসনামলে বুদ্ধিজীবীদের কর্মতৎপরতা ও তাদের পক্ষ থেকে যে জনগণের নামে গালভরা বুলি আওড়ানো হতো তার উল্লেখ করে বলেন, ত্বাগ¦ূতী সরকার ঐ সব বুদ্ধিজীবী ও তাঁদের গ্রন্থাবলি ও লেখালেখির মোকাবিলায় খুব একটা কঠোরতার আশ্রয় নিতো না। কারণ, তখন না বুদ্ধিজীবীরা জনগণের কথা বুঝতেন, না জনগণ তাঁদের কথা বুঝতেন। কিন্তু মহান ইমাম যখন সংগ্রামের ময়দানে পদার্পণ করেন তখন তিনিও জনগণকে চিনতেন এবং জনগণও তাঁর কথা বুঝতেন, আর এ কারণে তাঁরা তাঁদের সমস্ত অস্তিত্ব সহকারে সংগ্রামের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, আপনারা জনগণকে জানুন। তিনি বলেন, জনগণ কারা? জনগণ হচ্ছেন তাঁরা যাঁরা প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারিকে প্রাণবন্ত করে তোলেন, জনগণ হচ্ছেন তাঁরা যাঁরা-এমনকি তাঁদের মনে অসন্তোষ থাকলেও-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা মাঠে নামার পর তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে নেন, কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর (২০১৭) তারিখে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরাই হচ্ছেন জনগণ। আপনারা যেন তাঁদেরকে ভুল বুঝেন। আপনারা জনগণকে জানুন এবং আন্তরিকতার সাথে ও আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য জনগণের জন্য কাজ করুন। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের অর্থাৎ দায়িত্বশীলদের কাছে এটাই চেয়েছেন যে, আমরা যেন জনগণের সেবক হই এবং তাঁদের সেবা করি।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী তাঁর ভাষণের শেষ পর্যায়ে দেশের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সকল পর্যায়ের অধিনায়ক ও সদস্যদের প্রতি গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য উপদেশ দেন। তিনি বলেন, গঠনমূলক কাজের মানে সর্বাগ্রে আত্মগঠন; সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সদস্যদেরকে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার মানদ-ে অর্থাৎ ঈমানদার, সাহসী, আত্মোৎসর্গ পরায়ণ ও দূরদৃষ্টির অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা- যারা দুশমনদের মোকাবিলায় সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ায়, কিন্তু বন্ধুদের সামনে বিন্দুমাত্র অহঙ্কার করে না।
ইসলামি বিপ্লবের রাহ্বার উল্লেখ করেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সশস্ত্র বাহিনীসমূহ, বিশেষ করে বিমান বাহিনী স্বনির্ভরতা অর্জনের জিহাদ এবং যুদ্ধোপকরণাদি উদ্ভাবন ও নির্মাণের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল অতীতের অধিকারী। তিনি বলেন, কোনো কোনো দেশ একমাত্র যে জিনিসটির অধিকারী তা হচ্ছে অর্থ, কিন্তু তারা দ্বীন, নৈতিক চরিত্র, বিচারবুদ্ধি, সক্ষমতা ও দক্ষতার অধিকারী নয়। কিন্তু আপনারা জওয়ানরা মেধা-প্রতিভা, চৈন্তিক সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। তাই আপনারা আপনাদের বাহিনীর প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাামাদি নতুন করে তৈরি করতে এবং এ বাহিনীর কাঠামোকে নতুন করে বিন্যস্ত করতে সক্ষম হবেন।
হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ী বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহে বিগত বছরগুলোতে সকল ঘটনায়ই ইসলামি বিপ্লবী বাহিনী বিজয়ের অধিকারী হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দুশমনদের চোখকে অন্ধ করে দিয়ে বিজয় হবে আপনাদের ও ইরানি জনগণের।
রাহ্বারের সাথে এ সাক্ষাতের অনুষ্ঠানে তাঁর ভাষণের আগে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহ্ ছ¡াফী তাঁর সূচনা বক্তব্যে বিমান বাহিনীতে স্বনির্ভরতার জিহাদ প্রবর্তনকে রাহ্বার হযরত আয়াতুল্লাহ্ খামেনেয়ীর দূরদর্শিতার ফসল বলে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিমান বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র ও যুদ্ধোপকরণাদি তৈরির ক্ষেত্রে সক্ষমতা এবং একই সাথে এ বাহিনীর প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধ সক্ষমতা সম্পর্কে রাহ্বারের সমীপে সংক্ষিপ্ত মৌখিক প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি বলেন, বিমান বাহিনীর সদস্যরা এ ছাড়াও কেরমানশাহ্ এলাকার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সাহায্যের কাজে, তেমনি মযলূম মুসলমানদের ও প্রতিরোধ ফ্রন্টের মুসলমানদের সাহায্যের কাজে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছে এবং আমরা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল থেকে যায়নবাদী সরকারের ও তাকফিরিদের ঘৃণ্য ও নোংরা কলঙ্ক মুছে ফেলার লক্ষ্যে স্বীয় সৈনিক শপথ অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
ফারসি থেকে অনুবাদ : নূর হোসেন মজিদী