সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

English

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ইরানের সাফল্য

পোস্ট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫ 

news-image

সাইদুল ইসলাম :  একটি দেশ তথা জাতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে জাতি যত বেশি এগিয়ে সে জাতি তত উন্নত। বলা হয়ে থাকে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ কোনো জাতি যেকোনো সময় যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। আর এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার নির্দেশে দেশটির বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা চরম আত্মত্যাগ ও সাধনার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকের শক্তিশালী অবস্থান বলে দিচ্ছে দেশটি কতটা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষা, বিজ্ঞান, উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখন নেতৃস্থানীয় দেশের তালিকায় রয়েছে ইরান। সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর একটি বই প্রকাশ করেছে। বইটিতে ইসলামি বিপ্লবের পর বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের সার্বিক উন্নয়নের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

বইটির নাম ‘সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইন ইরান : এ ব্রিফ রিভিউ ২০২৪’। বইটিতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের অর্জনগুলো পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
বইটি শুরু করা হয়েছে ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাস দিয়ে। এরপরেই বইটিতে বর্ণনা করা হয়েছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ইরানের জাতীয় নীতি। বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার দিক দিয়ে বিশ্বে ইরানের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশটির সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরিসংখ্যানের উপর একটি পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। ইরানে ২০২২-২০২৩ সালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মোট ২০ লাখ ৮৭ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। ইরানের নারী শিক্ষার্থীর হার ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ ও পুরুষ শিক্ষার্থীর হার ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক : দশকের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান দেশ ইরান
ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও) প্রকাশিত বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে (জিআইআই) বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল দেশ ইরান। জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে ইরান ২০২৩ সালে ৫৫তম অবস্থানে ছিল। ৬ ধাপ উন্নতি করে ২০২৪ সালে দেশটি ৪৯তম স্থান লাভ করে। অন্যদিকে, ব্যবসায়িক পরিশীলতায় ২০২৩ সালের ১১৭তম অবস্থান থেকে উন্নতি করে ২০২৪ সালে দেশটি ১১০তম স্থান লাভ করে।
এছাড়াও, বাজার পরিশীলতা এবং অবকাঠামোতে ইরানের র‌্যাংকিং ২০২৩ সালে যথাক্রমে ১৯তম এবং ৯৭তম থেকে ২০২৪ সালে ১৭তম এবং ৯৫তম’তে উন্নীত হয়েছে। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোকে তাদের উদ্ভাবন সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তালিকা প্রকাশ করে।
চলতি বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ইরান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বৈশ্বিক উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি সূচকগুলোর মধ্যে রয়েছে সৃজনশীল ফলাফল, জ্ঞান এবং প্রযুক্তির আউটপুট, মানব মূলধন ও গবেষণা এবং ব্যবসায়িক পরিশীলতার সূচক।
২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইরানের জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৫৯টিতে। এর মধ্যে স্টার্টআপের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৭৯টি, প্রযুক্তি কোম্পানি ৭৯৫টি এবং উদ্ভাবন ফার্ম ১ হাজার ৯৮৫টি। ইরানে ২০১২ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের সংখ্যা ছিল ৩৩টি, ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪টিতে। ২০১২ সালে ইনকিউবেটর ছিল ১৩১টি, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তা এসে দাঁড়ায় ২৯০টিতে। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সৃজনশীল কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯১৪টিতে, উদ্ভাবন কেন্দ্রের সংখ্যা ৪১৯টি এবং এক্সিলারেটরের সংখ্যা ১৫৯টি। বর্তমানে ইরানের ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও শতভাগ নগরবাসী ইন্টারনেট সুবিধা উপভোগ করছে।
বিশ্বের শীর্ষ ২ ভাগ আলোচিত গবেষকদের মধ্যে আড়াই হাজার ইরানি
বিশ্বের সর্বাধিক উদ্ধৃত বিজ্ঞানীদের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকের মধ্যে স্থান পেয়েছেন ২ হাজার ৫০৩ জন ইরানি। এর আগে ২০২৩ সালে এই তালিকায় ইরান থেকে স্থান পান ১ হাজার ৮৭০ জন গবেষক। আগের বছরের তুলনায় এবার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে আলোচিত ইরানি গবেষকদের সংখ্যা। এলসেভিয়ারের সরবরাহ করা স্কোপাস ডেটা ব্যবহার করে বিশ্বের শীর্ষ গবেষকদের তালিকা প্রকাশ করেছে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি। শীর্ষ ১ লাখ বিজ্ঞানীর গবেষণা পর্যালোচনা করে সেরা গবেষকদের বাছাই করা হয়েছে। এদিকে, নেচার ইনডেক্স রিসার্চ লিডারস রিপোর্টের ২০২৪ পর্বে ইরানকে বিশ্বব্যাপী গবেষণা নেতাদের মধ্যে ৩২তম স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত প্রকৃতি সূচক ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান
ওয়েব অব সায়েন্সের তথ্য মতে, এক দশক ধরে (২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত) ইরান ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশটি যথাক্রমে ৩৮৭, ১৫৬ এবং ৩০টি নথি নিয়ে জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, জ্ঞানীয় পুনর্বাসন এবং জ্ঞানীয় ভাষাবিজ্ঞানে প্রথম স্থানে রয়েছে। ইরান জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান (১২৪ নথি), জ্ঞানীয় শিক্ষা (৫৬১), মনের দর্শন (৩৪) এবং জ্ঞানীয় মূল্যায়নে (৮৯৮) দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। র‌্যাংকিংয়ে জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানে ইরান সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। জ্ঞানীয় বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রে দেশটি বিশ্বব্যাপী ১৫তম স্থানে রয়েছে। দেশের মধ্যে তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্স ৭৩টি নথি, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯টি নথি এবং শহিদ বেহেশতি ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্স ৩২টি নথি নিয়ে জ্ঞানীয় নিউরোসায়েন্সে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানে দেশের মধ্যে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়, মাশহাদের ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আল্লামা তাবাতাবাঈ বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। জ্ঞানীয় ভাষাবিজ্ঞানে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়, আল-জাহরা বিশ্ববিদ্যালয়, আল্লামা তাবাতাবাঈ বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
পানি বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বিশ্বে চতুর্থ ইরান
ইসলামিক ওয়ার্ল্ড সায়েন্স সাইটেশন (আইএসসি) ইনস্টিটিউটের প্রধান আহমদ ফাজেলজাদে বলেছেন, পানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রকাশনার সংখ্যার দিক দিয়ে ইরান ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, ওয়েব অব সায়েন্স ডাটাবেজ প্রকাশিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ইরান মাল্টি-স্টেজ ফ্ল্যাশ ডিস্টিলেশন, মাল্টি-ইফেক্ট ডিস্টিলেশন, স্টিম কম্প্রেশন ডিস্টিলেশন, রিভার্স অসমোসিস বা রিভার্স ব্যাপ্তিযোগ্যতা এবং মেমব্রেন ডিস্টিলেশনসহ পানি প্রযুক্তির অনেক ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ওয়েব অব সায়েন্সে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নথির সংখ্যার নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বলে জানান তিনি। ইরানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্সির একজন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেম্মত জানান, ২০২২ সালে ইরান পানি প্রযুক্তিতে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ দেশের স্থান লাভ করে।
বিশ্বে জেনেটিক কিট উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে ইরান
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি অর্জনে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করা সত্ত্বেও দেশটি বিশ্বজুড়ে জেনেটিক কিট উৎপাদনকারী ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ইরানের ফরেনসিক মেডিসিন অর্গানাইজেশনের ল্যাবরেটরি বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদ কাদি-পাশা এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান। বিবৃতিতে তিনি পশ্চিমের নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরানকে জেনেটিক কিট আমদানিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্বনির্ভরতা লাভে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
ইরানের কারিগরি-প্রকৌশল পরিষেবা রপ্তানিতে ইরানের সাফল্য
ইরানের কারিগরি-প্রকৌশল পরিষেবা রপ্তানি থেকে চলতি ইরানি ক্যালেন্ডার বছরের প্রথম সাত মাসে (মার্চ ২০ থেকে অক্টোবর ২১) আয় হয়েছে ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান শুল্ক প্রশাসন (আইআরআই সিএ) এই তথ্য জানিয়েছে। ইরান পাওয়ার ইন্ডাস্ট্রি সিন্ডিকেটের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পেয়াম বাকেরির তথ্যমতে, বিদেশে প্রযুক্তিগত ও প্রকৌশল সেবা রপ্তানির জন্য ইরানের ভালো সক্ষমতা রয়েছে, যা ইরানের অর্থনীতির ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ। বাকেরি মে মাসের শুরুতে বলেছিলেন, দেশের আট-শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দেশীয় বা বিদেশী সব সক্ষমতা সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করা উচিত।
ন্যানো প্রযুক্তিতে ইরানের অসাধারণ উত্থান
ন্যানো প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে ইরান। দেশটির বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা এবং ন্যানো পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি এই ক্ষেত্রে বিশ্ব নেতা হিসেবে ইরানের উত্থানকে প্রমাণ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানে যে শিল্পগুলো ভালো প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তার মধ্যে একটি ন্যানো প্রযুক্তি শিল্প। এই শিল্প সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচে রয়েছে ইরানের অবস্থান। শীর্ষস্থানীয় ন্যানোটেকনোলজি ওয়েবসাইট স্ট্যাটন্যানোর তথ্যমতে, ইরান ন্যানো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি লাভ করেছে। ন্যানোপ্রযুক্তি প্রকাশনার ক্ষেত্রে দেশটি পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই র‌্যাংকিং ইরানের উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের প্রমাণ বহন করে। ইরান ন্যানোটেকনোলজি ইনোভেশন কাউন্সিলের সেক্রেটারি এমাদ আহমাদভান্দ বলেছেন, গত ফারসি বছরে দেশটির ন্যানো-পণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ১১০ শতাংশ বেড়েছে। আইআরআইবি-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আহমাদভান্দ জানান, ইরানের উৎপাদকরা উল্লিখিত বছরে ১৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ন্যানো প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি করেছে। এর আগের বছর ২১ মার্চ ২০২২ থেকে ২১ মার্চ ২০২৩ এর মধ্যে দেশটি ৬৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ন্যানো প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি করে।
ইরানি এই কর্মকর্তা বলেন, আগের বছরে ইরানের ন্যানো-পণ্যের মোট মূল্য ছিল ১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ন্যানো প্রযুক্তি খাত ইরানে সাফল্যের একটি প্রধান উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও প্রোগ্রাম-ভিত্তিক মানবসম্পদ নিয়ে গঠিত এই অঙ্গনটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। দেশের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্রে রতেœর মতো জ্বলজ্বল করছে খাতটি।
আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ফেস মাস্ক ও লেজার থার্মোমিটার, গৃহস্থালির যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী, টেক্সটাইল, এয়ার পিউরিফায়ার, ক্যাটালিস্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট ফিল্টার, তেল কূপ খননের সরঞ্জাম, ভাল্্ভ এবং পাইপ ফিটিং, পানি জীবাণুনাশক এবং জলরোধী আবরণ দেশীয় ন্যানোটেকনোলজি কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
মহাকাশবিজ্ঞানে মধ্যপ্রাচ্যে শীর্ষে ইরান
মহাকাশবিজ্ঞানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। ইরানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মহাকাশবিজ্ঞানে র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে ইরান। মহাকাশবিজ্ঞানে ইরানের সাফল্য তুলে ধরে দেশটির মহাকাশ সংস্থার (আইএসএ) প্রধান হাসান সালারি বলেন, দেশীয়ভাবে তৈরি ১৪টি স্যাটেলাইট অদূর ভবিষ্যতে উৎক্ষেপণের জন্য তাঁর দেশ প্রস্তুত করেছে। এছাড়া অন্যান্য আরও ৩০টি স্যাটেলাইট বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বার্তা সংস্থা ইরনা সালারিহের বরাত দিয়ে বলেছে, এই ৩০টি উপগ্রহের মধ্যে ২০টি নির্মাণ করছে বেসরকারি খাত। এই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০২১ সালে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসির প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১২টি স্যাটেলাইট সফলভাবে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। আইএসএ বেসরকারি খাতের সাথে যৌথ প্রকল্প স্থাপন করায় দেশীয় স্যাটেলাইট ডিজাইন এবং তৈরির গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। স্যাটেলাইট তৈরি এবং উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে ইরান। সম্প্রতি দেশটি কওসার ও হুদহুদ উপগ্রহ দুটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে। পৃথিবীর ৫০০ কিলোমিটার কক্ষপথে সফলভাবে এটি স্থাপন করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, দেশীয়ভাবে তৈরি ইরানের এই উপগ্রহ দুটি সংকেত পাঠানো শুরু করেছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, উপগ্রহ দুটি নিখুঁত অবস্থায় কক্ষপথে সঠিকভাবে পরিক্রমণ করছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে ইরান সফলভাবে মাহদা গবেষণা স্যাটেলাইট, দুটি গবেষণা কার্গোসহ অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি উন্নত সিমোর্গ (ফিনিক্স) স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যান (এসএলভি) মহাকাশে পাঠিয়েছে।
ইরানের মহাকাশ সংস্থার প্রধান হাসান সালারি বলেছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইরান ‘তোলু-৩’ এবং ‘জাফর-২’ নামে আরো দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে। এর আগে সেপ্টেম্বরে ইরানের মহাকাশ সংস্থার প্রধান ঘোষণা দিয়েছিলেন, চলতি ১৪০৩ সালের শেষ নাগাদ ইরান ৫-৭টি স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। হাসান সালারি বলেন, ইরানি মহাকাশ সংস্থা ১৪০৩ সালে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এরোস্পেস ফোর্সের সহযোগিতায় সাব-অরবিটাল উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে।
গত ফারসি বছরে ইরানের সর্বোচ্চ মহাকাশ পরিষদে মহাকাশ শিল্পের ১০ সালা পরিকল্পনা পাস হয়েছে। এছাড়া, মহাকাশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইরানের সহযোগিতা বেড়েছে গত বছর। চাবাহার এলাকায় ইরানের সর্ববৃহৎ মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। শহীদ সোলাইমানি স্যাটেলাইট সিস্টেমের নির্মাণ কাজও পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর কক্ষপথে নুর-৩ ইমেজিং স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়। কাসেদ নামক রকেটের মাধ্যমে এই উপগ্রহ মহাকাশে পাঠানো হয় এবং তা ভূপৃষ্ঠের ৪৫০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করে এই স্যাটেলাইট পরিমাপ ও নজরদারি মিশন পরিচালনা করছে। নূর-থ্রি স্যাটেলাইট প্রতি সেকেন্ডে ৭.৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় এবং মাত্র ৮ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে তা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়। ইরান সফলভাবে নতুন বায়ো-স্পেস ক্যাপসুলও মহাকাশে পাঠিয়েছে। নিজেদের তৈরি লঞ্চার ‘সালমান’ এর সাহায্যে এটি পাঠানো হয়েছে। ইরানের বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অ্যারোস্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই ক্যাপসুলটি নির্মাণ করেছে। এটিকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছে ‘সালমান’ লঞ্চার। ক্যাপসুল ও লঞ্চার উভয়ই তৈরি করেছেন ইরানি বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্যে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি হিসেবে বায়ো-স্পেস ক্যাপসুল উৎক্ষেপণ করা হয়। মহাকাশে মানুষ বা জীবন্ত প্রাণী আনা-নেওয়ার কাজে বায়ো-স্পেস ক্যাপসুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ২০১০ সালে ইরান ‘কাভেশগার’ বা এক্সপ্লোরার নামক ক্যারিয়ার ব্যবহার করে মহাকাশে জীবন্ত প্রাণীসহ প্রথম বায়ো-ক্যাপসুল পাঠায়। এরপর এ সংক্রান্ত তৎপরতায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। বায়ো-ক্যাপসুল পাঠানোর মাধ্যমে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তেহরান শিগগিরই নতুন প্রজন্মের বায়ো-ক্যাপসুলগুলোর সাব-অরবিটাল পরীক্ষা চালাবে। ইরান যে বায়ো ক্যাপসুলটি পাঠিয়েছে তা একজন মানুষকে বহন করার ক্ষমতা রাখে। গত জানুয়ারিতে ইরান স্যাটেলাইট বহনকারী রকেট কায়েম-১০০ এর সাহায্যে সুরাইয়া নামক একটি স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করতে সক্ষম হয়। এই স্যাটেলাইটটি এখন পর্যন্ত ইরানের উৎক্ষেপণ করা স্যাটেলাইটগুলোর মধ্যে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। ইরানের স্যাটেলাইট বহনকারী রকেট কায়েম-১০০ হচ্ছে তিন ধাপের সলিড ফুয়েল পরিচালিত রকেট, যা ১০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে এবং তৃতীয় পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে কক্ষপথে আনুমানিক ৫০ কেজি ওজনের সুরাইয়া স্যাটেলাইটকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার উপরে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সফল উৎক্ষেপণকে মহাকাশে আরও বেশি উচ্চতায় ইরানের স্যাটেলাইট স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ইরানের সাফল্য
ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ ইরান। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শত্রুর লক্ষবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত করতে সক্ষম। সম্প্রতি ইসরাইলে ইরানের দুই দফা হামলায় তার প্রমাণ মেলেছে। গেল এপ্রিলে ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-১’ এ ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পুরোপুরিভাবে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। অপরদিকে গত অক্টোবরে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ ২’ এ ব্যবহৃত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ও তাদের সমর্থকদের প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা খুবই অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ইরান অধিকৃত ফিলিস্তিনে আক্রমণের বিরুদ্ধে ১ অক্টোবর রাতে দেশে তৈরি প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) দাবি করেছে, তাদের নিক্ষেপ করা ৯০ শতাংশ মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।
এক নজরে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রদর্শিত ক্ষেপণাস্ত্র
চলতি বছর ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটের ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিরক্ষা ও সামরিক শক্তির একটি অংশকে চিত্রিত করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাত্তাহ, খাইবার শেকান, হজ কাসিম, কদর, ইমাদ, খোররামশাহর, সাজিল এবং জিহাদ ক্ষেপণাস্ত্র।
ফাত্তাহ
ফাত্তাহ-২ ইরানের তৈরি হাইপারসনিক মিসাইলের একটি নতুন সংস্করণ। এটি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল (এইচজিভি) এবং হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের (এইচসিএম) সমন্বয়ে তৈরি। ভবিষ্যতে এর আরও সংস্করণ তৈরি হবে বলে ধারণা। ফাত্তাহ-২ হাইপারসনিক ক্রুজ মিসাইলটির পাল্লা ১৪০০ কিলোমিটার। এটির ডিজাইন এমনভাবে করা যে, সহজেই এটি শনাক্ত করা সম্ভব না। ফলে শত্রুদের চোখ ফাঁকি দিয়েই আঘাত হানতে সক্ষম।
খাইবার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র
মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র খাইবার শেকানের পরিচালনায় রয়েছে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোরের অ্যারোস্পেস ডিভিশন। ২০২২ সালে এটি উন্মোচন করা হয়। এটি কঠিন জ্বালানি ব্যবহার করে। এর পাল্লা ১৪০০ কিলোমিটার। খাইবার শেকানকে নতুন প্রজন্মের এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নের রূপান্তর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খাইবার শেকান ক্ষেপণাস্ত্রের আলাদা বিস্তৃত লঞ্চার ব্যবহারের ক্ষমতা রয়েছে। এর জন্য ব্যবহৃত লঞ্চারটি ছদ্মবেশ ধারণ করে শত্রুদের চোখ ফাঁকি দিতে পারে।
হজ কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র
বিশ্বখ্যাত ইরানি জেনারেল শহিদ কাসেম সোলাইমানির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে এটি ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে রয়েছে। হজ কাসেম ইরানের তৈরি মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর রেঞ্জ ১৫০০ থেকে ১৮০০ কিলোমিটার। হজ কাসেম ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ফতেহ-১১০ এর নতুন প্রজন্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা রয়েছে এটির। এটিকে সহজেই শনাক্ত করা যায় না, ফলে শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম।
কদর ক্ষেপণাস্ত্র
এই ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের দ্রুততম ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি প্রায় ৬ ম্যাক স্কেলের গতিতে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। অর্থ্যাৎ এর গতি ঘণ্টায় ৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি।
ইমাদ ক্ষেপণাস্ত্র
এটি একটি মাঝারি-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যার বিস্ফোরণের মুহূর্ত পর্যন্ত নির্দেশিত থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। ইমাদের পাল্লা প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার।

খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র
এটি একটি তরল জ্বালানি ক্ষেপণাস্ত্র যার পাল্লা ২০০০ কিমি এবং এটি ১৫০০ কেজি ওয়ারহেড ক্ষমতা বহনে সক্ষম।
রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম দূর পাল্লার ড্রোন তৈরিতে ইরানের সাফল্য
হালকা ও রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম দূরপাল্লার ড্রোন তৈরিতে ইরানের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। এসব ড্রোনের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে ওড়ার সক্ষমতা রয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরানের পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোনের সক্ষমতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ইরানের এসব ড্রোন শত্রুর কৌশলগত ও দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম । রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম এই ড্রোনগুলো অনেক নিচ দিয়েও উড়ে যেতে পারে এবং স্থির বা চলমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এছাড়া অন্ধকারে ছবি তুলতে সক্ষম ড্রোন, অগ্নিনির্বাপক ড্রোন, পার্সেল ডেলিভারির ড্রোনসহ নানা ধরনের বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোন তৈরিতে ইরান নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইরানের সাফল্য
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ইরানের সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স ফোর্সের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ খোশগালব বলেছেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বৈচিত্র্যময় এবং বড় ধরনের হুমকি মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছ। তিনি বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে কর্তৃত্ব তৈরি করে এবং এই কর্তৃত্ব শত্রুর হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গঠনের দিকে পরিচালিত করে। খোশগালব বলেন, বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর সরঞ্জামগুলোর একটি বড় অংশ দেশীয়ভাবে নির্মিত হয়। তিনি বলেন, শত্রুর আক্রমণ শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের খুব অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। রাডার ও সনাক্তকরণ ব্যবস্থার বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এবং বিভিন্ন রেঞ্জে রাডার ব্যবহার করি এবং শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সর্বাধিক নির্ভুলতা এবং সর্বনি¤œ ত্রুটি রয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ইরানের সাফল্য
ইসলামি বিপ্লবের পর গত সাড়ে চার দশকে ইরান চিকিৎসাবিজ্ঞানে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিপ্লবের আগে যে দেশটির অনেক শহরে ইরানি ডাক্তার খুঁজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার ছিল সেই ইরানের নাম এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায়। ওষুধ উৎপাদন এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসায় ইরানের সাফল্য আজ চোখে পড়ার মতো। ইরানের প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রায় ৯৯ শতাংশই দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন করছে। ইরান এখন অঞ্চলের অন্যতম সফল ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ইরানের একটি জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি পাঁচটি মহাদেশের ৫০টি দেশে ১৭ হাজারের অধিক উন্নত চিকিৎসা ডিভাইস রপ্তানি ও ইনস্টল করেছে। রোগীর অত্যাবশ্যক লক্ষণ মনিটর, উন্নত আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাফ, এইডি ডিফিব্রিলেটর এবং সাকশন ডিভাইস সহ উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জামের নকশা ও উৎপাদনে কোম্পানিটির বিশেষত্ব রয়েছে।
ভেষজ এবং ঐতিহ্যবাহী ওষুধ উৎপাদনে ইরান বিশ্বে চতুর্থ
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ভেষজ ও ঐতিহ্যবাহী ওষুধ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ রেজা শামস আরদাকানি বলেছেন, ইরানি গবেষকরা ভেষজ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ক্ষেত্রে জ্ঞান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। ভেষজ ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারে ইরানের কয়েক হাজার বছরের রেকর্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে ভেষজ ও ঐতিহ্যবাহী ওষুধ অনুষদ গঠনের পর আমরা এ ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জন এবং গবেষণায় নিজেদের সামর্থ্য অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে প্রমাণ করেছি। ২০২২ সাল থেকে এ ধরনের ওষুধ উৎপাদনে বিশ্বে আমরা চতুর্থ স্থান অর্জন করেছি যা আমাদের জন্য একটি বিশেষ সাফল্য।
গুরুতর স্ট্রোক চিকিৎসায় শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে ইরান
গুরুতর স্ট্রোক চিকিৎসায় ইরান বিশ্বের দশটি সফল দেশের মধ্যে একটি। ন্যাশনাল ইরানি স্ট্রোক কমিটির সদস্য এহসান শরিফিপুর একথা বলেছেন। তিনি জানান, ইরানে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। এটি বিশ্বের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্বব্যাপী শারীরিক অক্ষমতার অন্যতম প্রধান কারণ। স্ট্রোক ব্রেন অ্যাটাক নামেও পরিচিত। সাধারণত মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হলে এটি ঘটে থাকে। এই ক্ষেত্রে হয় ভেসেলগুলো ব্লক হয় বা সেগুলোর রক্তপাত হয়, উভয় ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের যে কোনো অংশে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয়।
পশ্চিম এশিয়ায় চক্ষু চিকিৎসায় প্রথম স্থানে ইরান
ইরান পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চক্ষুবিদ্যার ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে এবং দেশটি এই ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চক্ষুবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মাহমুদ জাব্বারভান্দ বলেছেন, ইরান বছরে লক্ষাধিক মেডিকেল পর্যটককে স্বাগত জানাচ্ছে এবং কোনো ইরানি রোগীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয় না। তিনি বলেন, চক্ষুবিদ্যার ক্ষেত্রে গবেষণা ও গবেষণার সুযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তুলনীয়।
ইরানে ইনজেকশনযোগ্য অ্যান্টি-ক্যান্সার ওষুধ উন্মোচন
ইরানের একটি জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানি ইনজেকশনযোগ্য একটি ওষুধ তৈরি করেছে। ওষুধটি বিস্তর পরিসরে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ‘সাইক্লোফসফামাইড’ নামের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যটি আলবোর্জ প্রদেশে অবস্থিত একটি ইরানি কোম্পানি উন্মোচন করেছে।
এদিকে, ফুসফুস ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য সিলিকন ভ্যালি ইন্টারন্যাশনাল ইনভেনশন ফেস্টিভাল (এসভিআইআইএফ) ২০২৪-এ প্রথম স্থান লাভ করেছেন ইরানি উদ্ভাবক মোস্তফা শামলুই।
ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হামেদানের বাসিন্দা শামলুই বার্তা সংস্থা ইরনাকে বলেছেন, ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য তাঁর প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুমোদন করে। তিনি উৎসবে ১১ সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন প্রদর্শনী। তিনি বলেন, ৪০টি দেশ থেকে উৎসবে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২শ জনের মধ্যে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
বেদনানাশক ক্রিম তৈরিতে ইরানের সাফল্য
বেদনানাশক ক্রিম তৈরি করেছেন ইরানের একদল গবেষক। দেশটির জ্ঞানভিত্তিক একটি কোম্পানির গবেষকরা জীবাণুবিরোধী উপাদান সংবলিত এই ক্রিম উৎপাদন করেছেন। এটা বাতগ্রস্ত রোগীরা ব্যবহার করতে পারবেন।
ওষুধশিল্পের প্রযুক্তি রপ্তানিতে ইরানের সাফল্য
বিশ্বে ওষুধ শিল্পের বৃহত্তম প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। দেশটির সবচেয়ে বড় ওষুধ কোম্পানি সিন্নাজেন ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. হালেহ হামেদিফার এই তথ্য জানিয়েছেন।
তেহরান চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইনস অ্যান্ড এগ্রিকালচার (টিসিসিআইএমএ) এর রিপ্রেজেনটেটিভ বোর্ডের এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ইরানে প্রথম বারের মতো সিন্নাজেন ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ ওষুধ শিল্পের নেতৃস্থানীয় রপ্তানিকারক ফার্ম হিসেবে পরিচিত হতে যাচ্ছে।
বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে ইরানের অবস্থান
বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ের ২০২৪-২০২৫ সংস্করণে ৬৯টি ইরানি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। বিশ্বের সেরা ২ হাজার ২৫০টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এসব ইরানি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। আগের বছর ২০২৩ সালে দেশটি থেকে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় স্থান পায়। ১০৪টি দেশের এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ১৩টি সূচকের উপর ভিত্তি করে তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। অ্যাকাডেমিক গবেষণা কর্মক্ষমতা, বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক খ্যাতি পরিমাপ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে মূল্যায়ন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের নিজ দেশের সীমানার বাইরে বিদ্যমান উচ্চ শিক্ষার বিকল্পগুলি অন্বেষণ এবং বিদ্যালয়ের গবেষণার মূল দিকগুলির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। বেস্ট গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ে ইরানের ১ম থেকে ৫ম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় (বৈশ্বিক র‌্যাংকিং ২৭৫), ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় (৩৭৪), শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং তেহরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিক্যাল সায়েন্স (৫১৬), তাবরিজ বিশ্ববিদ্যালয় (৫২১) এবং আমিরকবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (৬৪৯)।
বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতায় ইরানি শিক্ষার্থীদের ৯ পদক
ইরান থেকে মোট ১৮ জন ছাত্র ৪৭তম বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একটি রৌপ্যপদকসহ মোট ৯টি পদক জিতেছে। প্রতিযোগিতাটি ১০ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের লিওনে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের ৬৫টির অধিক দেশ এবং অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় হাজার প্রতিযোগী বিভিন্ন দক্ষতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ইরানের হাসান মোহাম্মাদি এবং হামিদ-রেজা হামিদি রৌপ্যপদক জিতেছেন।
এছাড়াও, আলিরেজা পাউচালি, আরিয়ান তাহেরি, আরমিন তাহেরি, আমির-মোহাম্মদ আবুই, মোহাম্মদ হোসেইনি, আমির-আব্বাস কাসেমি, মেহরদাদ শিরভানি এবং রেজা গোলামি যথাক্রমে ক্লাউড কম্পিউটিং, গ্রাফিক ডিজাইন প্রযুক্তি, আইটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনার, জুয়েলারি, ওয়েব টেকনোলজিস, ব্যবসার জন্য আইটি সফটওয়্যার সলিউশন এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে শ্রেষ্ঠত্ব পদক পেয়েছেন।
বিশ্ব অলিম্পিয়াডে তৃতীয় শীর্ষ দেশ ইরান
২০২৪ সালে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে ইরানি শিক্ষার্থীরা ১০টি স্বর্ণপদক, ১০টি রৌপ্যপদক এবং দুটি ব্রোঞ্জপদক জিতে পদক তালিকায় বিশ্বব্যাপী তৃতীয় স্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারত উভয়ই চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এবছর ইরানি শিক্ষার্থীরা ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স (আইওআই), জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার উপর আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড, আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা অলিম্পিয়াড (আইপিএইচও), আন্তর্জাতিক রসায়ন অলিম্পিয়াড (আইসিএইচও), আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (আইএমও) এবং আন্তর্জাতিক জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে (আইবিও) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ইরানি ছাত্ররা ৩৬তম আইওআই-এ একটি স্বর্ণপদক, দুটি রৌপ্যপদক এবং একটি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে। এতে ৯৬টি দেশের মধ্যে ৯ম স্থান লাভ করে তারা। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো রাজ্যের ভাসুরাসে ১৭ থেকে ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১৭তম আইওএএ-তে ইরানি শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান অধিকার করে পাঁচটি স্বর্ণপদক জিতেছে। পাঁচ সদস্যের দলে হান্নানেহ খোররামদশতি, মোহাম্মদ-মেহেদি কেশভারজি, আর্য ফতে-কেরদারি এবং আলি নাদেরি-লর্ডজান রয়েছে। এই বছর ৫৭টি দেশের আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে। ৫৪তম আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণকারী পাঁচজন ইরানি ছাত্র একটি স্বর্ণপদক এবং চারটি রৌপ্যপদক জিততে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, তুরস্ক এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশ সহ ৪৭টি দেশের মোট ২০০ জন অভিজাত ছাত্র নয় দিনব্যাপী এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে। ২২ থেকে ৩০ জুলাই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৫৬তম আইসিএইচওতে ইরান একটি স্বর্ণ এবং তিনটি রৌপ্যপদক জিতেছে।
বিশ্বের শীর্ষ পরমাণু প্রযুক্তিধর দেশগুলোর অন্যতম ইরান
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা বা এইওআই-এর প্রধান মোহাম্মদ এসলামি বলেছেন, তাঁর দেশ সফলতার সাথে বিশ্বের শীর্ষ পরমাণু প্রযুক্তিধর দেশগুলোর কাতারে পৌঁছেছে। এজন্য তিনি ইরানের তরুণ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
সম্প্রতি শিরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অধ্যাপকদের সাথে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ইরান পরমাণু বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রগতি লাভ করেছে। ইরানের পরমাণু সংস্থার প্রধান বলেন, ‘এখন আমরা নকশা ও নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কম্পিউটিং কোড এবং সফ্টওয়্যার পেতে সফল হয়েছি। এই কোডগুলো পারমাণবিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।’
২০ হাজার মেগাওয়াটের ৫টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে ইরান
২০৪১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইরান পাঁচটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। পারমাণবিক সুবিধার উন্নয়নে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এই তথ্য জানান। এসময় তিনি এই প্রকল্পের জন্য একটি অর্থায়ন মডেল নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। ইরানের এই ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটি প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে উন্নত করে দেশকে সামনের দিকে ধাবিত করবে। ফলে আমরা নির্মাণ এবং প্রকৌশলের সকল পর্যায়ে ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’
জ্ঞান-বিজ্ঞানের আরো অনেক শাখায় ইরান একের পর এক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। একটিমাত্র লেখার মধ্যে এসব সাফল্যের সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরানের সফলতার এই ধারা অব্যাহত থাকলে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশটি এক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের মাঝে স্থান করে নেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন, বিপ্লবের পর অর্থনৈতিকসহ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে ধারা সূচীত হয়েছে তার দীর্ঘমেয়াদি ফল এখন আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি। হাজার হাজার গবেষণা কেন্দ্র, হাজার হাজার অবকাঠামো নির্মাণ, যোগাযোগ, শিল্প, জ্বালানি, খনিজ, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়ন ছাড়াও পরমাণু জ্বালানি চক্র, মৌলিক কোষ নিয়ে গবেষণা, ন্যানো প্রযুক্তি, তেল-বহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন প্রভৃতি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অগ্রগতিরই ফসল।